দেশি কানিবক | Indian Pond Heron | Ardeola grayii
দেশি কানিবক | ছবি: ইন্টারনেট স্থানীয় বাসিন্দা। সুলভ দর্শন। এ প্রজাতির পাখি মানুষের কাছে অতি পরিচিত। দেশে বেশ ভালো অবস্থানেও রয়েছে এরা। গ্রামাঞ্চলের জলাশয়গুলোতে এদের রয়েছে ব্যাপক বিচরণ। জলাশয়ের কিনারে বা ঝোঁপের ভেতর ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। কোনো রকম শিকারের অনাগোনা নজরে পড়লেই ওদের তীক্ষ চঞ্চুটা তরবারির মতো চালিয়ে দেয়। শিকার দর্শন না পেলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধ্যানমগ্নের ন্যায় কাটিয়ে দেয়। এরা বেশির ভাগই একাকী শিকারে বের হয়। আবার কখনো কখনো দলবদ্ধ হয়েও শিকারে বের হয়। তবে যে যেখানেই থাকুক না কেন, রাত কাটায় দলবদ্ধভাবেই। বিশেষ করে বাঁশগাছে রাত্রিযাপন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। বাসাও বাঁধে বেশিরভাগ বাঁশগাছেই। দর্শন সহজলভ্য বিধায় এরা শিকারিদের খপ্পরে পড়ে বেশি। গুলি ছাড়াও ফাঁদ পেতে দেশি কানিবক শিকার করে গ্রামের দুষ্ট ছেলেরা। পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এরা শিকারির কবলে পড়ে। এ পাখির বাংলা নাম: ‘দেশি কানিবক’, ইংরেজি নাম: ‘ইন্ডিয়ান পন্ড হেরন’ (Indian Pond Heron), বৈজ্ঞানিক নাম: (Ardeola grayii)। এরা কোঁচবক, কানিবক বা কানাবক নামেও পরিচিত। এরা লম্বায় ৪৬ সেন্টিমিটার। মাথা, গলা ও বুক বাদামি-সাদা ডোরার মিশ্রণ। পিঠ ধূসর বাদামি। বুকের নিচ থেকে লেজ পর্যন্ত সাদা। চোখের তারা হলুদ। ঠোঁট লম্বা তীক্ষè। ঠোঁটের গোড়া হলদেটে, অগ্রভাগ কালচে। পা হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার: মাছ, এছাড়াও ছোট ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড় শিকার করে। প্রজনন সময় মধ্য জুন থেকে আগস্ট। বড় গাছের ডালে অথবা বাঁশগাছে কলোনি টাইপ বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২৪ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 22/11/2013
ঝুঁটিয়াল বাতাসি | Crested Tree swift | Hemiprocne coronata
ঝুঁটিয়াল বাতাসি | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন। একসময় শীতে পার্বত্য এলাকায় দেখা যেত। হালে দেশে এদের দেখা যাওয়ার তেমন একটা নজির নেই। আশির দশকেও পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে দেখা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল বিক্ষিপ্ত গাছ-গাছালি, পর্ণমোচী বন। বন প্রান্তরের ন্যাড়া গাছ বেশি পছন্দ। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। অবসরে দলের সবাই ন্যাড়া গাছের ডালে বসে গা খোঁটাখুঁটি করে। চেহারা অনেকটাই ভিনদেশি ‘ককাটিল’ পাখির মতো। পাখিবিশারদ ছাড়া প্রজাতি শনাক্ত করা কঠিনই বটে। দেখতে হিংস্র মনে হতে পারে। তবে পারতপক্ষে ওদের আচরণে হিংস্রতা প্রকাশ পায় না। আক্রান্ত হলেই কেবল আক্রমণ করে। আত্মরক্ষার্থে অনেক সময় মানুষকেও ছাড় দেয় না। বন্দি হলে ঠোঁট ও নখের আঁচড়ে জখম করে দেয়। শরীরের তুলনায় ডানা লম্বা। এ কারণে উড়ন্ত অবস্থায় ডানা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। মূলত এরা বন-পাহাড়ি অঞ্চলে বিচরণ করে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৬৫ মিটার উচ্চতায়ও ওদের বিচরণ করতে দেখা যায়। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। একাকী অথবা দলবদ্ধভাবে সারা দিন ওড়াউড়ি করে কাটায়। উড়ন্ত অবস্থায়ই পতঙ্গ শিকার করে। বেশ দ্রুত উড়তে পারে। জলপান ব্যতিরেকে পারতপক্ষে ভূমি স্পর্শ করে না। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, দক্ষিণ চীন ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে বিরল দর্শন। ফলে আইইউসিএন এদের ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত পাখি হিসেবে শনাক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ঝুঁটিয়াল বাতাসি’, ইংরেজি নাম: ‘ক্রেস্টেড ট্রি সুইট’ (Crested Tree swift), বৈজ্ঞানিক নাম: Hemiprocne coronata | এরা ‘খোঁপাযুক্ত বাতাসি’ নামেও পরিচিত। পাখিটির গড় দৈর্ঘ্য ২৩ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য ভিন্নতা আছে। মাথা আসমানি-ধূসর। মাথায় ২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার উঁচু সবুজাভ নীল ঝুঁটি। পিঠ আসমানি ধূসর। ডানা লম্বা সুচালো কালচে, নিচের দিকে ধূসরাভ। লেজ লম্বা ও দ্বিখণ্ডিত। পুরুষ পাখির মুখাবয়ব লালচে-বাদামি। আর স্ত্রী পাখির মুখাবয়ব ধূসর। গলা ধূসরাভ। দেহতল ধূসরাভ-সাদা। চোখ বাদামি-কালো। ঠোঁট কালো এবং যথেষ্টই খাটো। পা কালচে। যুবাদের রং ভিন্ন। ঝুঁটিয়াল বাতাসির প্রধান খাদ্য কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড়। গোবরে পোকার প্রতি আসক্তি লক্ষ করা যায়। এদের প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। অঞ্চলভেদে ভিন্ন। গাছের ধ্বংসাবশেষে ওরা বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে তিন থেকে পাঁচটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫ থেকে ১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 25/05/2018
ক্ষুদে ঘুঘু | Little brown dove | Streptopelia senegalensis
ক্ষুদে ঘুঘু | ছবি: ইন্টারনেট সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে দেখা যাওয়ার নজির নেই। ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে মাত্র দুই-তিনবার দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। ফলে এরা স্থানীয় নাকি পরিযায়ী প্রজাতির তা নিশ্চিতভাবে নিরূপণ করা যায়নি। বলা যায় অতি বিরল দর্শন ‘ক্ষুদে ঘুঘু’। দেখতে অনেকটাই তিলা ঘুঘুর মতো। কণ্ঠস্বরও সেরকম। সুরে মাদকতা রয়েছে। বারবার শুনতে ইচ্ছে করে। চেহারা কবুতর আদলের। দেখতে মায়াবী। স্বভাবে শান্ত। পারতপক্ষে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয় না। বিচরণ করে মাঠে-ঘাটে। তবে সেটি অবশ্য শুষ্ক শস্যভূমি হতে হবে। ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে এলাকা এদের একদম অপছন্দ। জলপান ব্যতিরেকে জলাশয়ের কাছে ঘেঁষে না। গোসল করে নিয়মিত। তবে গায়ে জলের পরিবর্তে ধূলি ছিটিয়ে গোসল করে। খাদ্যের সন্ধানে বের হয় জোড়ায় কিংবা ছোট দলে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির হাঁকডাক বেড়ে যায়। তখন ‘কুকু..ক্রো..ক্রো..’ সুরে ডেকে স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ ছাড়া এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি পূর্ব ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইসরাইল, লেবানন, সিরিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব অমিরাত, সৌদি আরব, ইরান পর্যন্ত। আফ্রিকা অঞ্চলেও দেখা যায়। তুলনামূলক এদের আবাসস্থল কিছুটা মরুময় এলাকায়। পাখির বাংলা নাম: ‘ক্ষুদে ঘুঘু’, ইংরেজি নাম: ‘লিটল ব্রাউন ডাভ’ (Little brown dove), বৈজ্ঞানিক নাম: Streptopelia senegalensis | ইংরেজিতে এরা খধঁমযরহম উড়াব নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৬-২৭ সেন্টিমিটার। মাথা ও ঘাড় গোলাপি-বাদামি। পিঠ বালু মিশ্রিত বাদামি বর্ণ। লেজের বাইরের পালক সাদা। লেজের গোড়া ও কাঁধের পালক ধূসর। ডানার প্রান্ত পালক কালো। ওড়ার পালক কালো। বুক গোলাপি-বাদামি। পেট বালু মিশ্রিত বাদামি। চোখ বাদামি কালো। ঠোঁট শিং কালো। পা গোলাপি লাল। নখর কালো। প্রধান খাবার: শস্যবীজ, ঘাসের কচি ডগা ও মাটি। মাঝেমধ্যে উইপোকা খেতে যায়। প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। গাছের তেডালে অথবা দালানের ফাঁকে খড়কুটা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ১-২টি। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫ দিন। শাবক সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে উড়তে শেখে। লেখক: আলম শাইন, কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/07/2015
খয়রামাথা গাঙচিল | Brown headed gull | Larus brunnicephalus
খয়রামাথা গাঙচিল | ছবি: ইন্টারনেট কেয়ারি সিন্দাবাদের সওয়ার হয়ে নাফ নদী পার হচ্ছি। গন্তব্য সেন্টমার্টিন দ্বীপ। কনকনে শীতে জবুথবু হয়ে বসে আছি জাহাজে। মাঝে-মধ্যে জানালার কাচ সরিয়ে নাফের সৌন্দর্য উপভোগ করছি। ওপারে মিয়ানমারের ভূখণ্ড নজরে পড়তে অভিভূত হয়ে পড়ি। আরও অভিভূত হয়ে পড়েছি এক দঙ্গল জলচর পাখির কলকাকলিতে। ওরা ভেসে বেড়াচ্ছে নাফ নদীর জলে, আবার কিছু পাখি ডানা মেলে হাওয়ায় ভেসে ভেসে ডাকছে ‘কি-ই-য়া’ সুরে। বেশ পরিচিত সুশ্রী গড়নের পাখি এরা। নজর পড়লে প্রকৃতির এ বর্ণাঢ্য অলঙ্কার থেকে কেউ চোখ ফিরিয়ে নিতে পারবে না। শীত মৌসুমে ডাকাতিয়া, পদ্মা, মেঘনা, রজতরেখা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গার জলে ওদের ভেসে বেড়াতে দেখেছি অসংখ্যবার। বছরখানেক আগে দেখেছি ধলেশ্বরীর বুকে জেলেদের ভাসমান ডিঙ্গিতে বেড়ানোর সময়। আজ ওই প্রজাতির পাখিগুলোকে দেখে সে কথা মনে পড়েছে। এরা পরিযায়ী হলেও সুলভ দর্শন। শীতের শুরুতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার নদ-নদী কিংবা সমুদ্র উপকূলে আশ্রয় নেয়। ছোট-বড় দলে ভেসে বেড়ায় জলাশয়ে। দিনের বেশির ভাগ সময় উড়ে উড়ে ব্যস্ত সময় পার করে। এ পাখির বাংলা নাম: ‘খয়রামাথা গাঙচিল’, ইংরেজি নাম: ‘ব্রাউনহেডেড গাল’,(Brown-headed gull), বৈজ্ঞানিক নাম: Larus brunnicephalus | গোত্রের নাম: ‘লারিদি’। অঞ্চলভেদে ‘গঙ্গা কৈতর’ নামেও পরিচিত। এরা লম্বায় ৩৮-৪৫ সেন্টিমিটার। প্রজনন সময়ে টুপি আকৃতির মাথাটা গাঢ় বাদামি রং ধারণ করে। শীতে রং বদলিয়ে হয় ধূসর-সাদা-কালো। পিঠ ধূসর। লেজ কালো। শরীরের বাকি অংশ ধবধবে সাদা। ঠোঁটের গোড়া রক্তিম, ডগা কালো। পা উজ্জ্বল লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে প্রায় একই রকম। এদের প্রধান খাবার মাছ। মরা মাছের প্রতি আসক্তি বেশি। প্রজনন সময় মধ্য জুন থেকে জুলাই। তখন নিজ বাসভূমিতে ফিরে যায়। বাসা বাঁধে লাডাখ, তুর্কিস্তান ও দক্ষিণ মঙ্গোলিয়ার দ্বীপাঞ্চলে। এরা সরাসরি মাটিতে ঘাস, লতা-পাতা বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৩টি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 15/06/2018
লাল কপাল ছাতারে | Rufous fronted Babbler | Stachyris rufifrons
লাল কপাল ছাতারে | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। প্রাকৃতিক আবাসস্থল আর্দ্র নিম্নভূমির বন, ঘাসবন ও বাঁশবন। ভূপৃষ্ঠ থেকে ২১০০ মিটার উঁচুতেও দেখা মেলে। খোলা বনবাদাড়ে অল্পবিস্তর নজরে পড়ে। সুশ্রী গোবেচারা টাইপ চেহারা। বিশেষ করে কপালের লাল চওড়া টান চেহারায় বৈচিত্র্যতা এনেছে। অনেকটাই সিঁদুর রাঙা মনে হয়। স্বভাবে হিংস নয়। এরা চঞ্চল ও অস্থিরমতির হলেও বেশ সামাজিক। বিপদে-আপদে কেউ কাউকে ছেড়ে চলে যায় না। সহমর্মিতা দেখায়। শত্রুর উপস্থিতি নজরে এলে একে অপরকে হুঁশিয়ার করে। এদের গানের গলা ভালো। জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। কোনো কোনো সময় ৫-৬টি পাখির ছোট দলও দেখা যায়। এরা মূলত বেশিরভাগই বাঁশবন এলাকায় বিচরণ করে। এ ছাড়াও শনবন, ঘাসবন ও নলখাগড়ার বনেও বিচরণ রয়েছে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, লাওস, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘লাল কপাল ছাতারে’, ইংরেজি নাম: ‘রুফাস-ফ্রন্টেড ব্যবলার’ (Rufous-fronted Babbler), বৈজ্ঞানিক নাম: Stachyris rufifrons | এরা দৈর্ঘ্যে ১১-১২ সেন্টিমিটার। ওজন ৯-১২ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। কপালে লালচে টান। মাথা ও ঘাড় বাদামি। ডানার প্রান্ত পালক ও লেজ গাঢ় বাদামি। দেহের তুলনায় লেজ খানিকটা লম্বা। দেহতল বাদামির ওপর হলদে আভা। চোখের মনি বাদামি। ঠোঁট ত্বক-গোলাপি। পা ত্বক-হলদে। প্রধান খাবার: শুঁয়োপোকা, গোবরেপোকা ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ। ছোট ফল-ফলাদির প্রতিও আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট। ভূপৃষ্ঠ থেকে এক মিটারের মধ্যে গাছ-গাছালিতে বাসা বাঁধে। বিশেষ করে বাঁশবন, ঘাসবন কিংবা লতাগুল্মের ভেতর কাপ অথবা অর্ধ গম্বুজ আকৃতির বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৬ দিন। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/11/2017
চিতিপাক গোশালিক | Spot winged Starling | Saroglossa spiloptera
চিতিপাক গোশালিক | ছবি: ইন্টারনেট বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাস্থল পরিষ্কার বনপ্রান্ত, খোলা বন, কৃষিজমি। এ ছাড়াও পর্বতের ৭০০-১০০০ মিটার উঁচুতে দেখা যায়। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না। বেশির ভাগই জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। বিচরণ করে ছোট দলেও। স্বভাবে অন্যসব শালিকের মতোই ঝগড়াটে। সারাদিন খুনসুটি করে কাটায়। তবে ওদের ঝগড়া খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায় না, কিচির-মিচির পর্যন্তই ঝগড়া। পরক্ষণে আবার মিলেও যায়। আবার শুরু। এভাবেই দিন কাটে। পারতপক্ষে কেউ কাউকে আক্রমণ করে না। চলাফেরায় খুব হুঁশিয়ারি। বিশ্বে এদের অবস্থান তত ভালো নয়। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘চিতিপাক গোশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘স্পট-উইংড স্টার্লিং’ (Spot-winged Starling), বৈজ্ঞানিক নাম: Saroglossa spiloptera। এরা ‘লালচেগলা শালিক’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১০ প্রজাতির শালিক নজরে পড়ে। যথাক্রমে: গো-শালিক, ভাত শালিক, ঝুঁটি শালিক, গাঙ শালিক, পাতি কাঠশালিক, গোলাপি কাঠশালিক, চিতিপাখ গোশালিক, খয়রালেজ কাঠশালিক, বামুন কাঠশালিক ও ধলাতলা শালিক। এরা লম্বায় ১৯-২০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা বাদামি। ঘাড় ও পিঠ ধূসর এবং কালো-বাদামি। ডানার প্রান্ত নীলাভ কালো। লেজ লালচে বাদামি। গলা লালচে। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত সাদাটে। বুকের দু’পাশ শেয়ালে লাল। ঠোঁট নীলাভ কালো। চোখের বলয় সাদা। পা বেগুনি কালো। দেখতে একই রকম মনে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। আকারেও সামান্য ছোট। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, পিঁপড়া, ছোট ফল, ফুলের মধু। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বাঁধে ৬-১০ মিটার উচ্চতার গাছের প্রাকৃতিক কোটরে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, লতাপাতা, দড়ি, কাপড়ের টুকরো ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/08/2017
গোলাপি কাঠশালিক | Rosy starling | Strunus roseus
গোলাপি কাঠশালিক | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন পরিযায়ী পাখি। মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে। তবে যেখানে সেখানে দেখা যায় না। দেখা মেলে সিলেটের বনাঞ্চল এবং সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চলে। দেখা মেলে দীপাঞ্চলেও। আইইউসিএন এই প্রজাতির পাখিকে বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। এরা বিচরণ করে স্যাঁতসেঁতে তৃণভূমিতে। কাঁটা ঝোপ কিংবা ছোট ফল গাছেও বসতে দেখা যায়। বিচরণ করে একাকী কিংবা ছোট দলেও। দেখতে অনেকটাই ভাত শালিক কিংবা ঝুঁটি শালিকের মতো। সাধারণের ধারণা এরা বুনো ময়না। অনেকে তাই ‘লাল ময়না’ নামেও চেনে। এরা ডাকে ‘চিক-ইক-ইক-ইক’ ধ্বনিতে। পাখির বাংলা নাম: ‘গোলাপি কাঠশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘রোজি স্টার্লিং’, (Rosy starling), বৈজ্ঞানিক নাম: Strunus roseus | গোত্রের নাম: ‘স্টুরনিদি’। এরা ‘গোলাপি শালিক’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড়, গলা, ডানা ও লেজ কালো। পিঠ, বুক এবং লেজের নিচের গোড়া পর্যন্ত হালকা গোলাপি। ঠোঁট ও পা ফিকে গোলাপি। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম মনে হলেও প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রং বদলায়। এ সময় পুরুষ পাখির গায়ের রং চকচকে গোলাপি দেখায়। মাথার ঝুঁটিও খানিকটা বেড়ে ওঠে। যুবাদের তুলনায় প্রাপ্তবয়স্কদের রং তুলনামূলক উজ্জ্বল। প্রধান খাবার: পোকামাকড় হলেও ছোট ফল, ফুলের মধু ও শস্যবীজে ভাগ বসায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। বাসা বাঁধে খাড়া মাটির দেয়ালে। বিশেষ করে উঁচু পাহাড়ের গায়ে গর্ত করে বাসা বানায়। দলের অনেকে মিলে কলোনি টাইপ বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। প্রকৃতির এক বর্ণিল প্রজাতি এই পাখি, যাদের জীবন প্রক্রিয়াও বেশ বর্ণাঢ্য। এদের রক্ষায় কী কোনো উদ্যোগ নেবে পাখিপ্রেমীরা? লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 01/06/2018