দাঁড় কাক | Large Billed Crow | Corvus macrorhynchos
দাঁড় কাক | ছবি: ইন্টারনেট ইতিপূর্বে পাতি কাক নিয়ে লেখা হলেও ‘দাঁড় কাক’ নিয়ে লেখা হয়নি। প্রজাতির কণ্ঠস্বর একইরকম হলেও চেহারায় তফাৎ রয়েছে। পাতি কাকের তুলনায় এদের চেহারাও আকর্ষণীয়। নীলাভ-কুচকুচে কালো। পর্যবেক্ষণ দৃষ্টিতে তাকালে এদের সৌন্দর্য যে কারো চোখে ধরা পড়বেই। এরা দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বিচরণ যত্রতত্র করলেও পাতি কাকের মতো বাড়ির আশপাশে বিচরণ করে না। দূরত্ব বজায় রাখে। বিশেষ করে বনভূমির কাছাকাছি বেশি দেখা যায়। শহরাঞ্চলে নজরে পড়লেও যত্রতত্র নয়। সামাজিক পাখি। দলের কেউ অন্যায় করলে নিজেদের ভেতর বোঝাপড়া করে। মানুষ বা অন্য কারো দ্বারা আক্রান্ত হলে দলের সবাই মিলে একত্রিত হয়ে সমবেদনা জানায়। স্বভাবে চৌর্য্যবৃত্তি লক্ষ্য করা যায়। মানুষের অগোচরে খাবার বা অন্য যে কোনো জিনিস নিয়ে পালায়। এমনকি সাবানও চুরি করে। সর্বোপরি পচাগলা খেয়ে মানুষের যথেষ্ট উপকারও করে। প্রজাতির অবস্থান দেশে সন্তোষজনক। বিশ্বেও ভালো অবস্থানে রয়েছে। মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপক নজরে পড়ে। ইরান, কম্বোডিয়ায়ও দেখা যায় দাঁড় কাক। পাখির বাংলা নাম: ‘দাঁড় কাক’, ইংরেজি নাম: ‘লার্জ-বিল্ড ক্রো’ (Large-billed Crow), বৈজ্ঞানিক নাম: Corvus macrorhynchos। দেশে দুই প্রজাতির কাক দেখা যায়। যথা: পাতি কাক ও দাঁড় কাক। গড় দৈর্ঘ্য ৪৬-৫৯ সেন্টিমিটার। ওজন ৪৫০-৫০০ গ্রাম। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ কুচকুচে কালো। ডানার প্রান্ত পালক নীলাভ কালো। দেহতল কুচকুচে কালো। চোখের মনি কাজল কালো। ঠোঁট ও পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রধান খাদ্য: যে কোনো ধরনের উচ্ছিষ্ট খাবার। বলা যায় সর্বভুক পাখি এরা। প্রজনন মৌসুম বছরের যে কোনো সময়। বাসা বাঁধে গাছের উঁচু শাখায় অথবা বাড়ির কার্নিসে এবং বিদ্যুতের খুঁটিতেও। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে সরুডাল, ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৯ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 18/08/2017
মরুর ফিদ্দা | Desert wheatear | Oenanthe deserti
মরুর ফিদ্দা | ছবি: ইন্টারনেট শরৎকালে পরিযায়ী হয়ে আসে মরু কিংবা রুক্ষ অঞ্চল থেকে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি পশ্চিম সাহারা, মিসরের পশ্চিম অংশ, চীন, পাকিস্তানের বেলুচিস্তান, আফগানিস্তান, তুর্কিস্তান, দক্ষিণ ককেশাস, উত্তর মঙ্গোলীয়া, মরক্কো, ইরাক, ইরান, উত্তর আরব উপদ্বীপ ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা। ইউরোপের কিছু কিছু অঞ্চলেও দেখা যায়। প্রজাতিটি তেমন বাহারি রঙের না হলেও দেখতে মন্দ নয়। গায়ের রং বালির মতো। বালির ওপর বিচরণকালীন দূর থেকে চেনা কঠিন হয়ে পড়ে। বিচরণ করে একাকী। জোড়ায়ও খুব বেশি দেখা যায়। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। মরুময় কিংবা পাথুরে এলাকায় ঘুরেফিরে পোকামাকড় শিকার করে। তবে এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা যে কোনো রুক্ষ পরিবেশে অনায়াসে টিকে থাকতে পারে। তথাপিও বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে ইতিমধ্যে। পাখির বাংলা নাম: ‘মরুর ফিদ্দা’, ইংরেজি নাম: ডেজার্ট হুইটইয়ার (Desert wheatear), বৈজ্ঞানিক নাম: Oenanthe deserti | এরা ‘ঊষর কানকালি’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৪-১৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৩৪ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির রঙে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। গ্রীষ্মে পুরুষ পাখির মাথা ও ঘাড় ফ্যাকাসে। চিবুক, গলা ও কানের দু’পাশ কুচকুচে কালো, যা ঘাড়ের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। পিঠ ফ্যাকাসে বাদামি। ডানার প্রান্ত পালকে কালো-সাদার মিশ্রণ। লেজের গোড়ার দিক ফ্যাকাসে বাদামি। লেজের পালক কালো। বুকের ওপর বাদামি-সাদা, দেহতল ফ্যাকাসে বাদামি। শীতে রং উজ্জ্বল হয়। স্ত্রী পাখির চিবুক, গলা ও কানের দু’পাশের কালো অংশের পরিবর্তে বালি বাদামি। পিঠ বালি বাদামি। ডানার প্রান্ত পালক ধূসর কালো। উভয়ের চোখ গাঢ় বাদামি। ঠোঁট ও পা কালো। প্রধান খাবার: শুঁয়োপোকা, গুবরেপোকা, মাছি, পিঁপড়াসহ অন্যান্য পোকামাকড়। এছাড়া শস্যবীজের প্রতি আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে পাথুরে পাহাড়ের ওপর। এ ছাড়াও চিরহরিৎ কাঁটাঝোঁপের ভেতরও সংসার পাতে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে ঘাস, শিকড় ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৪ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ২০-২১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 23/10/2015
আমুর শাহিন | Amur Falcon | Falco amurensis
আমুর শাহিন | ছবি: ইন্টারনেট পাখির নাম ‘আমুর শাহিন’। আমুরল্যান্ডে বিচরণ আধিক্য বিধায় হয়তো এই নাম ওদের। এরা উপমহাদেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। সুদর্শন, স্লিম গড়নের পাখি। দেখতে কিছুটা ককাটিল পাখিদের মতো। পুরুষদের চেহারা চকচকে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ; ভিন্ন বর্ণের। প্রাকৃতিক আবাসস্থল খোলা মাঠপ্রান্তর, খোলা বনাঞ্চল। শিকারি পাখি হলেও স্বভাবে হিংস নয়। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আমুরল্যান্ড, ট্রান্সবিকালিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব সাইবেরিয়া, উত্তর-পূর্ব মঙ্গোলিয়া উত্তর-পূর্ব চীন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়, উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে আইসিইউএন এদের শনাক্ত করেছে তাই। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘আমুর শাহিন ’, ইংরেজি নাম: ‘আমুর ফ্যালকন’, (Amur Falcon), বৈজ্ঞানিক নাম: Falco amurensis | এরা ‘লালপা তুরমুতি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ৩০-৩৬ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৬৫-৭৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৯৭-১৫৫ গ্রাম। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি খানিকটা বড়। চেহারায় বিস্তর তফাৎ। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ গাঢ় ধূসর। ডানা খানিকটা লম্বা। দেহতল ধূসর। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত লাল। চোখের বলয় কমলা হলুদ। ঠোঁটের অগ্রভাগ কালচে বাঁকানো, গোড়া কমলা হলুদ। পা লালচে কমলা। অপরদিকে স্ত্রী পাখির চেহারা ভিন্ন। শরীরে ধূসর, হলুদ, সাদা, বাদামির মিশ্রণ ছিট। বাদবাকি পুরুষের মতো। প্রধান খাবার: ঘাসফড়িং, পতঙ্গ, ছোট পাখি ও ছোট সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। গাছের উঁচু ডালে চিকন ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। মাস খানেকের মধ্যেই শাবক স্বাবলম্বী হয় এবং বাবা-মাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/10/2017
সোনালি গলা বসন্ত বউরি | Golden throated barbet | Megalaima franklinii
সোনালি গলা বসন্ত বউরি | ছবি: ইন্টারনেট দেশের স্থানীয় প্রজাতির পাখি ছাড়াও পরিযায়ী প্রজাতির পাখিরাও আমাদের দেশীয় পাখির তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ কোনো প্রজাতির পাখি যদি একবারের জন্যও বাংলাদেশে আসে তাহলে ওই প্রজাতিটি দেশীয় পাখির তালিকায় স্থান পাচ্ছে। তেমনি তালিকায় রয়েছে, ‘সোনালিগলা বসন্ত বউরি’ পাখি। কিন্তু ওদের দেখা আমাদের দেশে মিলে না সহসাই। বসন্তের শুরু থেকেই এই প্রজাতির খোঁজে আমি হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ালেও নজরে মিলেনি অদ্যাবধি। তবে বন্যপ্রাণী বিশারদ ড. রেজা খান তার লেখা ‘বাংলাদেশের পাখি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘প্রজাতিটি দেশে দেখা যাবার তথ্য না থাকলেও দুইজন ভিনদেশী পাখি পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে সোনালিগলা বসন্ত বউরি পাখির সাক্ষাত পেয়েছেন।’ তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘প্রজাতিটি অতি বিরল। আর হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি, ওরা বসন্তকালের পাখি। সারা বছর আড়ালে-আবডালে লুকিয়ে থাকলেও বসন্ত বউরি পাখিরা বসন্তকালের শুরু থেকে লোকালয়ে চলে আসে। গাছের ফল-ফলাদি খেয়ে সামান্য ক্ষতি করলেও বিনিময়ে মিষ্টি করুণ সুর আমাদের কানে দিয়ে যায়। আওয়াজ করে, ‘টুক্-টুক্-টুক..’ (প্রজাতি ভেদে আওয়াজ ভিন্ন) সুরে। অনেক দূর থেকে শোনা যায় সেই আওয়াজ। হঠাৎ আওয়াজটি কানে গেলে যে কেউ কামারের হাতুড়ির আওয়াজ মনে করতে পারেন।’ বিদঘুটে আওয়াজ হলেও সুরে রয়েছে চমৎকার তাল-লয়। শোনার আগ্রহ জাগে। এরা বৃক্ষচারী পাখি। দেখতে সুশ্রী। শরীরের তুলনায় মাথা বড়। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম ও তিব্বত পর্যন্ত। পাখির বাংলা নাম: ‘সোনালিগলা বসন্ত বউরি’, ইংরেজি নাম: ‘গোল্ডেন থ্রোটেড বারবেট’(Golden-throated barbet), বৈজ্ঞানিক নাম: Megalaima franklinii | দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ২৩ সেন্টিমিটার। কপাল লাল। তালুতে সোনালি পট্টি। সমস্ত দেহ সবুজ। ডানার গোড়ার পালক নীল। কান ঢাকনি সাদাটে। গলা সোনালি। বুকের দিকে সোনালি আভা দেখা যায়। নিচের দিকে বাদবাকি সবুজ। ঠোঁট ত্রিভুজাকৃতির, শক্ত মজবুত, কালচে। পা জলপাই রঙের। প্রধান খাবার: ছোট পাকা ফল ও ফুলের মধু। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। অঞ্চলভেদে ভিন্ন। গাছের কাণ্ডে নিজেরা খোড়ল করে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 23/11/2018
চেরালেজ বাতাসি | Fork Tailed Swift | Apus pacificus
চেরালেজ বাতাসি | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন পরিযায়ী পাখি। চেহারায় হিংস্রতার ছাপ লক্ষ করা যায়। তবে ততটা হিংস্র নয়। আক্রান্ত হলে কেবল আক্রমণ করে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল পার্বত্য এলাকায়। এ ছাড়াও জলাশয়ের কাছাকাছি বিচরণ করে। দেশে শীতে পাহাড়ি এলাকায় দেখা যায়। ছোট-বড় দলে সারাদিন উড়ে বেড়ায়। উড়ন্ত অবস্থায় এদের ঠোঁট, মাথা ও লেজ সমান্তরাল থাকে। ফলে দূর থেকে মাথা এবং লেজ শনাক্ত করা কঠিন হয়। শুধু উড়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার কারণে মাথা-লেজ শনাক্ত করা যায়। শরীরের তুলনায় ডানা লম্বা থাকার কারণে উড়ন্ত অবস্থায় ডানা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। লেজ মাছের লেজের মতো মধ্যখানে চেরা। কণ্ঠস্বর কর্কশ, জোরে জোরে শিস দেয়। মাঝেমধ্যে জোড়ায়ও দেখা যায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, জাপান, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, মঙ্গোলিয়া, সাইবেরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত। পাখির বাংলা নাম: ‘চেরালেজ বাতাসি’, ইংরেজি নাম: ‘ফর্ক-টেইলড সুইফট’ (Fork-tailed Swift), বৈজ্ঞানিক নাম: Apus pacificus। অনেকের কাছে এরা ‘পার্বত্য বাতাসি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৭-১৮ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৪৩-৫৪ সেন্টিমিটার। পুরুষ ওজন ৪২ গ্রাম। স্ত্রী ওজন ৪৪ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। কপাল কালো পালিশ করা। ঘাড় বাদামি কালো। পিঠ নীলাভ কালো। কোমর সাদা। লেজ কালো। গলা সাদাটে। দেহতল কালোর সঙ্গে সাদার মিশ্রণ, অনেকটাই মাছের আঁশের মতো দেখায়। ঠোঁট কালো, ছোট। ঠোঁটের অগ্রভাগ কিঞ্চিত বাঁকানো। পা ছোট। পায়ের তুলনায় নখ বড় এবং ধারালো। প্রধান খাদ্য: উড়ন্ত পোকামাকড়, পিঁপড়া। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। অঞ্চলভেদে ভিন্ন। বাসা বাঁধে কাঁটাওয়ালা গাছে। বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ বস্তু; বিশেষ করে সরু লতা, তন্তু দিয়ে কাপ আকৃতির বাসা বাঁধে। মুখের লালা দিয়ে বাসা জোড়া দেয়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 22/09/2017
বালিহাঁস | Cotton Pygmy goose | Nettapus coromandelianus
বালিহাঁস | ছবি: ইন্টারনেট বিশেষ করে পুরুষ পাখিটির রূপ অতুলনীয়। চেহারাটাও বেশ মায়াবী। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়। এমনিতেই তো দেখতে ভীষণ সুন্দর তার ওপর আরো সুন্দর লাগে তখন। এরা উড়তে উড়তেই ডাকে। ‘ডিক ডিক, ডিরিক ডিরিক’ সুরে আওয়াজ করে জলাশয় বা গাছ-গাছালির ওপর চক্কর মারে। আমাদের দেশে এক সময়ে যত্রতত্র দেখা যেত। বর্তমানে হাওরাঞ্চল বা বড় ধরনের জলাশয় ছাড়া খুব একটা দেখা যায় না। পাখি নিধনকারীদের অধিক লোভের কারণে আজ ওরা হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ একটা সময়ে এ পাখিরা যত্রতত্র বিচরণ করত দেশে। বিচরণ করতে দেখেছি আমার বাল্য বেলায় নানাবাড়ির পুকুরে। মামার মাধ্যমে পরিচিত হয়েছি এ পাখির সঙ্গে তখন। এক মামা ধরার চেষ্টাও করেছেন। অধিক চাতুরিতার কারণে ফাঁদে ফেলতে পারেননি। এ পাখি সাধারণত মরা তাল, নারিকেল, খেজুর গাছের প্রাকৃতিক গর্তে বাসা বাঁধে। তবে ওদের প্রথম পছন্দ তালগাছ, দ্বিতীয় পছন্দ নারিকেল গাছের কোটর। এসব মরাগাছের মাথায় বৃষ্টির জল জমে প্রকৃতিগতভাবে গর্তের সৃষ্টি হলে এরা সেখানে বাসা বাঁধে। আমাদের দেশের বিশিষ্ট পাখি গবেষক শরীফ খান এ পাখি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি নিজের তত্ত্বাবধানে এদের ডিম মুরগির তা দিয়ে ফুটিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাচ্চাগুলো বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি, তিনদিন পর্যন্ত বেঁচে ছিল।’ এ পাখির বাংলা নাম: ‘বালিহাঁস,’ ইংরেজি নাম: ‘কটন পিগমি গুজ বা কটন টিল,’ (Cotton Pygmy-goose or Cotton Teal) বৈজ্ঞানিক নাম: ‘নেট্টাপাস কোরোমানডেলিয়ানাস,’ (Nettapus coromandelianus) গোত্রের নাম: ‘আনাটিদি’। এরা বেলেহাঁস নামেও পরিচিত। বালিহাঁস লম্বায় ৩০-৩২ সেন্টিমিটার। আমাদের দেশের হাঁস প্রজাতির মধ্যে এরা সবচেয়ে ছোট আকৃতির। ঠোঁটের গোড়া থেকে মাথার তালু পর্যন্ত কালো। পুরুষ পাখির গলার নিচে চওড়া কালো ফিতার মতো বন্ধনী রয়েছে। পিঠ, ডানা কালো। চোখের চারপাশ, বুক, পেট সাদা। লেজের আগা কালচে। সূর্যের আলো পড়লে উজ্জ্বল সবুজের আভা ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে স্ত্রী পাখি পুরুষের তুলনায় অনেকখানি নিষ্প্রভ। ওদের গলায় সুদৃশ্য বন্ধনী নেই। গায়ের বর্ণ হালকা বাদামি ও সাদার মিশেল। আকারে পুরুষের চেয়ে সামান্য ছোট। বালিহাঁসের প্রিয় খাবার জলজ পোকামাকড়, জলজ উদ্ভিদের কচিডগা, শস্যবীজ ও ছোট মাছ। প্রজনন সময় জুন থেকে সেপ্টেম্বর। মরা নারিকেল, তাল, খেজুরগাছের কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৮-১২টি। স্ত্রী পাখি একাই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭দিন। ডিম থেকে বেরুলেই শাবক গাছের কোটর থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ে। অনেক সময় গাছের গর্ত গভীর হলে মা-বাবা ঠোঁট দিয়ে ঠেলে ওদের গর্ত থেকে বের করে দেয়। বালিহাঁসের বাচ্চারা ভীষণ দুষ্টু। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 16/11/2013
দাগিলেজ গাছআঁচড়া | Bar tailed Treecreeper | Certhia himalayana
দাগিলেজ গাছআঁচড়া | ছবি: ইন্টারনেট বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, রাশিয়া, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও ইরান পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাসস্থল খোলা সরলবর্গীয় বন এং নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চল। এরা একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। হিংস নয়। অত্যন্ত চঞ্চল স্বভাবের পাখি। কাঠঠোকরা পাখির মতো গাছের খাড়া কাণ্ডে খুব দ্রুত হেঁটে উঠতে পারে। সারাদিন গাছের কাণ্ডে ঠোঁট চালিয়ে কীট-পতঙ্গ খুঁজে বেড়ায়। গাছ-গাছালিতে বিচরণকালে অনেক সময় ওদেরকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ ওদের গায়ের বর্ণ গাছের শুকনো ডালপালার সঙ্গে মিশে যায়, যার ফলে এ ধরনের ভ্রম তৈরি হয়। প্রজাতির বিচরণ দেশে সন্তোষজনক না হলেও বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘দাগিলেজ গাছআঁচড়া’, ইংরেজি নাম: ‘বার-টেইলড ট্রিক্রিপার’ (Bar-tailed Treecreeper), বৈজ্ঞানিক নাম: Certhia himalayana, এরা ‘বাঁকা-ঠোঁট কীট-কুড়ানি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৮ গ্রাম। গায়ের রং বাদামি-সাদা-লালচে ডোরাকাটা। ডানার প্রান্ত পালক ধূসর কালো। লেজ ডোরাকাটা। দেহতল হালকা বাদামি-সাদা। ঠোঁট লম্বা বাঁকানো, কালচে রঙের। পা কালচে। প্রধান খাবার: কীট-পতঙ্গ, পোকামাকড়, মাকড়সা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শৈবাল, তন্তু, শুকনো ঘাস, পালক ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৭ দিন। লেখক: আলমশাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/02/2017