তামাটে কাঠকুড়ালি | Bay Woodpecker | Blythipicus pyrrhotis
তামাটে কাঠকুড়ালি | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন আবাসিক পাখি। দেশে কালেভদ্রে দেখা মেলে। বিচরণ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার বাঁশবনে কিংবা ঘন প্রশস্ত পাতার চিরহরিৎ অরণ্যে। নিজেদের আড়ালে-আবডালে রাখতে পছন্দ করে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত। এতদাঞ্চলে ক্রান্তীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বনে অথবা পার্বত্য অরণ্যে দেখা মেলে। এ ছাড়াও হিমালয়াঞ্চলে এদের বিচরণ রয়েছে। খাদ্যের সন্ধানে বের হয় একাকী, জোড়ায় কিংবা পারিবারিক দলে। দিনভর মৃত গাছের কাণ্ডে অথবা শ্যাওলায় ঢেকে থাকা গাছের কাণ্ডে ধারালো মজবুত ঠোঁট চালিয়ে খাবার খোঁজে। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্নমুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। এছাড়াও প্রজাতিটি বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘তামাটে কাঠকুড়ালি’, ইংরেজি নাম: ‘বে উডপেকার’(Bay Woodpecker), বৈজ্ঞানিক নাম: Blythipicus pyrrhotis | এরা ‘লালমাথা কাঠঠোকরা’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কম-বেশি ২৭ সেন্টিমিটার। ওজন ১৭০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। তাছাড়া স্ত্রী পাখি আকারে খানিকটা ছোট। পুরুষ পাখির কান ঢাকনি ও ঘাড়ের পাশে টকটকে লাল পট্টি দেখা যায়। উভয়ের মাথা বাদামি লাল। পিঠে লালের ওপর বাদামি ডোরা। কাঁধ ঢাকনি ও ডানায় প্রশস্ত কালচে বাদামি ডোরা। দেহতল কালচে বাদামি। ঠোঁট ফ্যাকাসে। চোখ অনুজ্জ্বল গাঢ় লাল। পা কালচে বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা ভিন্ন। প্রধান খাবার: সাদা পিঁপড়া ও গোবরে পোকার লার্ভা। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। গাছের কাণ্ডে নিজেরা গর্ত বানিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/10/2015
রাজ শকুন | Red Headed Vulture | Sarcogyps calvus
রাজ শকুন | ছবি: ইন্টারনেট ভয়ঙ্কর দর্শন হতে পারে, তাই বলে তেড়ে এসে আক্রমণ করে না। বেশিরভাগই দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। যে কোনো ধরনের মৃতদেহ বিশেষ করে গবাদি কিংবা বন্যপশুর মৃতদেহের সন্ধান পেলেই হামলে পড়ে। মানুষের উপকার করে ময়লা-আবর্জনা কিংবা উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে। মানব বসতি আছে এমন এলাকার কাছাকাছি বসবাস করে। মূলত প্রাকৃতিক আবাসস্থল নিচুভূমির খোলা বন অথবা আংশিক গাছ-গাছালি আছে এমন জায়গায় বিচরণ করে। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২৫০০ মিটার উচ্চতায়ও দেখা যায়। দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর পর্যন্ত। বিশ্বে এরা ভালো অবস্থানে নেই। পাখির বাংলা নাম: ‘রাজ শকুন’, ইংরেজি নাম: ‘রেড-হেডেড ভালচার’ (Red-headed Vulture), বৈজ্ঞানিক নাম: Sarcogyps calvus | দৈর্ঘ্য কমবেশি ৭৬-৮৬ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ১৯৯-২২৯ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। মাথা, ঘাড় ও গলা লাল কুঁচকানো চামড়ায় আবৃত। চামড়ার ওপরে সামান্য কালচে পশম রয়েছে। পিঠ নীলচে কালো। ডানা এবং লেজের পালক বাদামি কালো। গলা লম্বা সাপের মতো। গলা ও বুকে সাদা পালক। বুকের নিচ কালো। বড়শির মতো বাঁকানো ঠোঁট কালো, শক্ত মজবুত, গোড়া গোলাপি ত্বক বর্ণের। পা গোলাপি। যুবাদের রঙ ভিন্ন। প্রধান খাবার: যে কোনো ধরনের মৃতদেহ বা উচ্ছিষ্ট খাবার। এ ছাড়া শামুক, পাখির ডিম, ছোট পাখি কিংবা সরীসৃপও খায়। প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে সেপ্টেম্বর। বাসা বাঁধে উঁচু গাছের মাথায় সরু লাঠি দিয়ে। ডিম পাড়ে ১টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৫৫-৫৮ দিনের মতো। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 19/05/2017
লম্বাঠোঁটি শকুন | Cinereous Vulture | Aegypius monachus
লম্বাঠোঁটি শকুন | ছবি: ইন্টারনেট হিংস্র চেহারার মনে হলেও তত হিংস্র নয়। আকারে বড়সড়ো। অধিক ওজনের কারণে হাঁটাচলা করতে খানিকটা বেগ পেতে হয়। ভারিক্কিচালে হেলেদুলে কিংবা লাফিয়ে হাঁটাচলা করে। পাহাড়ি অঞ্চলে বেশি নজরে পড়ে। দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, হিমালয় অঞ্চল, আফগানিস্তান, পর্তুগাল, দক্ষিণ ফ্রান্স, গ্রিস, স্পেন, তুরস্ক, মঙ্গোলিয়া, চীন পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘লম্বাঠোঁটি শকুন’, ইংরেজি নাম: ‘সিনেরিয়াস ভালচার’, (Cinereous Vulture) বৈজ্ঞানিক নাম: Aegypius monachus। দৈর্ঘ্য কমবেশি ৯৮-১১০ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ২৫০-২৯৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৭-১২ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। মাথা, পিঠ গাঢ় বাদামি সঙ্গে নীলচে ধূসরের মিশ্রণ রয়েছে। ঘাড় নীলচে ধূসর। ডানার পালক প্রান্ত কালচে বাদামি। ওড়ার পালক সাদা-কালো। লেজ খাটো কালচে বাদামি। গলা ময়লা সাদা চামড়ায় আবৃত। দেহতল কালচে বাদামি। ঠোঁটের গোড়া নীলচে ধূসর, অগ্রভাগ কালো। ওপরের ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। পা ধূসর হলেও গোলাপি আভা বের হয়। প্রধান খাবার: সব ধরনের মৃতদেহ বা উচ্ছিষ্ট খাবার শামুক, পাখির ডিম, ছোট পাখি, খরগোশ, সরীসৃপ ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে উঁচু গাছের ডালে সরু লাঠি দিয়ে। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৫০-৫৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/01/2018
ছোট নাটাবটের | Kurrichane Buttonquail | Turnix sylvatica
ছোট নাটাবটের | ছবি: ইন্টারনেট দেখতে হুবহু গৃহপালিত কোয়েল পাখির মতো। এরা আমাদের দেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি। এক সময়ে ঢাকার আশপাশের গ্রামের তৃণভূমিতে বিচরণ ছিল। হালে বাংলাদেশে দেখা যাওয়ার রেকর্ড নেই। তবে এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, এবং মালয়েশিয়া পর্যন্ত। এ ছাড়াও আফ্রিকা মহাদেশের কিছু কিছু জায়গায় এদের বিস্তৃতি রয়েছে। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত হলেও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। এরা বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। মূলত ‘ছোট নাটাবটের’ খাদ্যের সন্ধানে তৃণভূমির আশপাশের ঝোপে ঘুরে বেড়ায়। ছোটাছুটি করে ঝোপের ফাঁকফোকরে। একাকী কিংবা জোড়ায় বিচরণ করে। ঝরাপাতা উল্টিয়ে পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। আবার তৃণভূমিতে ঘুরে শস্যদানা কিংবা ঘাসের বীজ খায়। এরা স্বভাবে কিছুটা হিংসুটে। নিজেদের এলাকায় স্বগোত্রীয়দের অনুপ্রবেশ সহজে মেনে নেয় না। ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। প্রয়োজনে যুদ্ধংদেহী রূপ ধারণ করলেও সহজে আক্রমণ করে না। অর্থাৎ যে করেই হোক অনুপ্রবেশকারীকে তাড়ানো চাই-ই চাই। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির মাঝে অস্থিরতা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় হাঁকডাকও। এ সময় ‘ডররর-র-র-র-র..’ সুরে ডাকতে থাকে। মজার বিষয়টি হচ্ছে, স্ত্রী পাখি ডিম পেড়ে কেটে পড়ে। পুরুষ পাখিকে তখন একাই ডিমে তা দিতে হয়। বাচ্চা ফুটিয়ে লালন-পালনও করতে হয় পুরুষ পাখিকে একাই। পাখির বাংলা নাম: ‘ছোট নাটাবটের’, ইংরেজি নাম: ‘ক্যারিচেন বাটন কোয়েল’ (Kurrichane Buttonquail),বৈজ্ঞানিক নাম: Turnix sylvatica | লম্বায় ১৩ সেন্টিমিটার। ওজন ৪০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। আকারে স্ত্রী পাখি খানিকটা বড়। উভয়ের মাথার চাঁদি বাদামি। ঘাড়, মরচে রঙা। পিঠ লালচে কালো। কাঁধ-ঢাকনিতে পীতাভ ডোরা। গলা সাদা। বুক কমলা-পীতাভ। লেজতল-ঢাকনি সাদাটে। ঠোঁট ফ্যাকাসে। চোখ হালকা হলুদ। পা ও পায়ের পাতা ধূসর নীল। অপ্রাপ্তবয়স্কদের পিঠ লালচে-বাদামি। দেহতল ফ্যাকাসে পীতাভ। ঘাড়ের পাশে ও বুকে কালো চিতি রয়েছে। প্রধান খাবার: শস্যদানা, ঘাস বীজ, কালো পিঁপড়া ও পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম বছরের যে কোনো সময়। নিজেরা পা দিয়ে মাটি খুঁড়ে ঘাস-লতা বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪টি। ডিম ফুটতে সময় ১২ দিন। শাবকের গায়ে ওড়ার পালক গজায় দুই সপ্তাহের মধ্যে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 13/02/2015
মরুর ফিদ্দা | Desert wheatear | Oenanthe deserti
মরুর ফিদ্দা | ছবি: ইন্টারনেট শরৎকালে পরিযায়ী হয়ে আসে মরু কিংবা রুক্ষ অঞ্চল থেকে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি পশ্চিম সাহারা, মিসরের পশ্চিম অংশ, চীন, পাকিস্তানের বেলুচিস্তান, আফগানিস্তান, তুর্কিস্তান, দক্ষিণ ককেশাস, উত্তর মঙ্গোলীয়া, মরক্কো, ইরাক, ইরান, উত্তর আরব উপদ্বীপ ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা। ইউরোপের কিছু কিছু অঞ্চলেও দেখা যায়। প্রজাতিটি তেমন বাহারি রঙের না হলেও দেখতে মন্দ নয়। গায়ের রং বালির মতো। বালির ওপর বিচরণকালীন দূর থেকে চেনা কঠিন হয়ে পড়ে। বিচরণ করে একাকী। জোড়ায়ও খুব বেশি দেখা যায়। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। মরুময় কিংবা পাথুরে এলাকায় ঘুরেফিরে পোকামাকড় শিকার করে। তবে এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা যে কোনো রুক্ষ পরিবেশে অনায়াসে টিকে থাকতে পারে। তথাপিও বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে ইতিমধ্যে। পাখির বাংলা নাম: ‘মরুর ফিদ্দা’, ইংরেজি নাম: ডেজার্ট হুইটইয়ার (Desert wheatear), বৈজ্ঞানিক নাম: Oenanthe deserti | এরা ‘ঊষর কানকালি’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৪-১৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৩৪ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির রঙে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। গ্রীষ্মে পুরুষ পাখির মাথা ও ঘাড় ফ্যাকাসে। চিবুক, গলা ও কানের দু’পাশ কুচকুচে কালো, যা ঘাড়ের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। পিঠ ফ্যাকাসে বাদামি। ডানার প্রান্ত পালকে কালো-সাদার মিশ্রণ। লেজের গোড়ার দিক ফ্যাকাসে বাদামি। লেজের পালক কালো। বুকের ওপর বাদামি-সাদা, দেহতল ফ্যাকাসে বাদামি। শীতে রং উজ্জ্বল হয়। স্ত্রী পাখির চিবুক, গলা ও কানের দু’পাশের কালো অংশের পরিবর্তে বালি বাদামি। পিঠ বালি বাদামি। ডানার প্রান্ত পালক ধূসর কালো। উভয়ের চোখ গাঢ় বাদামি। ঠোঁট ও পা কালো। প্রধান খাবার: শুঁয়োপোকা, গুবরেপোকা, মাছি, পিঁপড়াসহ অন্যান্য পোকামাকড়। এছাড়া শস্যবীজের প্রতি আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে পাথুরে পাহাড়ের ওপর। এ ছাড়াও চিরহরিৎ কাঁটাঝোঁপের ভেতরও সংসার পাতে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে ঘাস, শিকড় ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৪ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ২০-২১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 23/10/2015
সাদামাটা নাকুটি | Pale Martin | Riparia diluta
সাদামাটা নাকুটি | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি হলেও দেশে যত্রতত্র দেখা মেলে না। প্রাকৃতিক আবাস্থল খোলা মাঠ-প্রান্তর, কৃষি জমি এবং জলাশয়ের আশপাশ। ছোট-বড় দলে বিচরণ করে। বাসাও বাঁধে দলবদ্ধ হয়ে। টানেল আকৃতির বাসা। অন্তত ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার সেই টানেলের দৈর্ঘ্য। চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। চেহারায় কিছুটা হিংস তার ছাপ ফুটে উঠলেও আসলে ওরা হিংস নয়। কণ্ঠস্বর শ্রুতি মধুর নয়, বিরক্তিকর। অস্থিরমতির পাখি। উড়ন্ত পতঙ্গ শিকারের উদ্দেশ্যে সারাদিন ওড়াউড়ি করে। বিরতিহীন ওড়াউড়ি। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ব্যতিত উপমহাদেশীয় বিভিন্ন অঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্ব চীন, মরোক্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল পর্যন্ত। বিশ্বে প্রজাতিটি তেমন সন্তোষজনক না হলেও হুমকি নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘সাদামাটা নাকুটি’, ইংরেজি নাম: ‘পেল মার্টিন’ (Pale Martin), বৈজ্ঞানিক নাম: Riparia diluta | এরা ‘ম্লান নাকুটি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১২-১৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা অভিন্ন। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ বাদামী। তবে ডানা এবং লেজের প্রান্ত পালক গাঢ় বাদামী। ডানা লম্বা, লেজের প্রান্তে মিশেছে। দেহতল সাদা হলেও গলা বুকের মাঝ বরাবর বাদামী ছোপ। চোখ কালো। ঠোঁট খাটো, কালো। পা কালো, নখ বড় বড়। প্রধান খাবার: উড়ন্ত পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। কলোনি টাইপ বাসা। পাহাড়, নদ-নদীর পাড়ে মাটির খাড়া দেওয়ালের গর্তে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ফোটে ১২-১৩ দিনে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 27/10/2017
দাঁড় কাক | Large Billed Crow | Corvus macrorhynchos
দাঁড় কাক | ছবি: ইন্টারনেট ইতিপূর্বে পাতি কাক নিয়ে লেখা হলেও ‘দাঁড় কাক’ নিয়ে লেখা হয়নি। প্রজাতির কণ্ঠস্বর একইরকম হলেও চেহারায় তফাৎ রয়েছে। পাতি কাকের তুলনায় এদের চেহারাও আকর্ষণীয়। নীলাভ-কুচকুচে কালো। পর্যবেক্ষণ দৃষ্টিতে তাকালে এদের সৌন্দর্য যে কারো চোখে ধরা পড়বেই। এরা দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বিচরণ যত্রতত্র করলেও পাতি কাকের মতো বাড়ির আশপাশে বিচরণ করে না। দূরত্ব বজায় রাখে। বিশেষ করে বনভূমির কাছাকাছি বেশি দেখা যায়। শহরাঞ্চলে নজরে পড়লেও যত্রতত্র নয়। সামাজিক পাখি। দলের কেউ অন্যায় করলে নিজেদের ভেতর বোঝাপড়া করে। মানুষ বা অন্য কারো দ্বারা আক্রান্ত হলে দলের সবাই মিলে একত্রিত হয়ে সমবেদনা জানায়। স্বভাবে চৌর্য্যবৃত্তি লক্ষ্য করা যায়। মানুষের অগোচরে খাবার বা অন্য যে কোনো জিনিস নিয়ে পালায়। এমনকি সাবানও চুরি করে। সর্বোপরি পচাগলা খেয়ে মানুষের যথেষ্ট উপকারও করে। প্রজাতির অবস্থান দেশে সন্তোষজনক। বিশ্বেও ভালো অবস্থানে রয়েছে। মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপক নজরে পড়ে। ইরান, কম্বোডিয়ায়ও দেখা যায় দাঁড় কাক। পাখির বাংলা নাম: ‘দাঁড় কাক’, ইংরেজি নাম: ‘লার্জ-বিল্ড ক্রো’ (Large-billed Crow), বৈজ্ঞানিক নাম: Corvus macrorhynchos। দেশে দুই প্রজাতির কাক দেখা যায়। যথা: পাতি কাক ও দাঁড় কাক। গড় দৈর্ঘ্য ৪৬-৫৯ সেন্টিমিটার। ওজন ৪৫০-৫০০ গ্রাম। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ কুচকুচে কালো। ডানার প্রান্ত পালক নীলাভ কালো। দেহতল কুচকুচে কালো। চোখের মনি কাজল কালো। ঠোঁট ও পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রধান খাদ্য: যে কোনো ধরনের উচ্ছিষ্ট খাবার। বলা যায় সর্বভুক পাখি এরা। প্রজনন মৌসুম বছরের যে কোনো সময়। বাসা বাঁধে গাছের উঁচু শাখায় অথবা বাড়ির কার্নিসে এবং বিদ্যুতের খুঁটিতেও। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে সরুডাল, ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৯ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 18/08/2017