পাতি সারস | Common Crane | Grus grus
পাতি সারস | ছবি: ইন্টারনেট পরিযায়ী পাখি। হালে দেখা যাওয়ার নজির নেই। বিচরণ করে জলাশয়ের কাছাকাছি তৃণভূমি, কৃষি ক্ষেত, চারণভূমি, অগভীর আশ্রিত উপসাগরীয় অঞ্চল, নদী ও অগভীর হ্রদে। মাঝেমধ্যে হাঁটু পরিমাণ জলে নেমে খাবার খুঁজতে দেখা যায়। খাদ্যের সন্ধানে বের হয় জোড়ায় অথবা ছোট-বড় দলে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করতে নাচের কসরৎ দেখায়। নাচের কসরৎ দেখতে দেখতে স্ত্রী পাখি তখন আর নিজকে ধরে রাখতে পারে না। নিজেও নাচে অংশ নিয়ে প্রেমে মজে যায়। এ সময় জোরে জোরে দ্বৈত সংগীতের মতো গান গায়। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ-পূর্ব চীন, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত। সমগ্র বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন লাল তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশে সংকটাপন্ন বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে দেশি সারস। পাখির বাংলা নাম: ‘পাতি সারস’, ইংরেজি নাম: ‘কমন ক্রেন’ (Common Crane), বৈজ্ঞানিক নাম: Grus grus | দেশে তিন প্রজাতির সারস দেখা যায়। যথাক্রমে: দেশি সারস, পাতি সারস ও ধূসর সারস। এরা সবাই পরিযায়ী প্রজাতির। গড় দৈর্ঘ্য ১১৫ সেন্টিমিটার। প্রশস্ত ডানা ১৮০-২০০ সেন্টিমিটার। ওজন পুরুষ পাখি ৫.১-৬.১ কেজি। স্ত্রী পাখি ৪.৫-৫.৯ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। কপাল কালো। মাথার তালুর রক্ত লাল। মাথার পেছন থেকে শুরু করে ঘাড়, থুতনি ও গলা কালো। চোখের পেছন থেকে ঘাড় ও গলার কালো দ্বিখণ্ডিত হয়ে সাদায় রূপ নিয়েছে। পিঠ গাঢ় ধূসর। ডানার পালকের ওপর কালো ছোপ। ওড়ার পালক কালো। লেজ কালো। ডানার বাড়তি পালক লেজের ওপর ঝালরের মতো ঝুলে থাকে। দেহতল গাঢ় ধূসর। ঠোঁট সবুজাভ, ডগা হলুদ। চোখের তারা লাল। পা ও পায়ের পাতা কালো। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের চেহারা ভিন্ন। প্রধান খাবার: শস্যবীজ, ঘাসবীজ, কন্দ, গাছের কচিডগা, ব্যাঙ, কাঁকড়া কেঁচো, মাকড়সা, ছোট পাখি, কীটপতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম বর্ষাকাল। বাসা বাঁধে জলাশয়ের কাছাকাছি মাটির ওপরে। শুকনো চিকন ডালপালা, লতাপাতা উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩১ দিন। শাবক উড়তে শিখে ৬ সপ্তাহের মধ্যে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 30/10/2015
ডোরাকাটা ছোট বুনো ছাতারে | Striated Yuhina | Yuhina castaniceps
ডোরাকাটা ছোট বুনো ছাতারে | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। দেখতে খানিকটা বুলবুলি পাখির মতো। চটপটেও সেরকম। আমুদে পাখি বলতে যা বোঝায়, তাই এরা। সোজা কথা স্বভাবে ভারি চঞ্চল। প্রাকৃতিক আবাসস্থল চিরহরিৎ বনের ঝোপজঙ্গলে। লোকালয়ে খুব একটা দেখা যায় না। চিরহরিৎ বনের মাঝারি আকৃতির পরিচ্ছন্ন গাছ-গাছালির ডালে লাফিয়ে বেড়ায়। এ ছাড়াও ফুল লেগেছে এমন গাছের উঁচু শাখে পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। গাছের ডালের বাকল ঠুকরিয়ে পোকামাকড় শিকার করে। এরা বেশিরভাগই বিচরণ করে জোড়ায় জোড়ায়। ছোট-বড় দলেও দেখা যায়। দলের সবাই মিলে ফূর্তি করে। গোসলও করে বেশ আমুদ করে। কণ্ঠস্বর তীক্ষè হলেও সুমধুর। দুই ধরনের কণ্ঠস্বরে ডাকতে পারে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান মোটামুটি সন্তোষজনক। পাখির বাংলা নাম: ‘ডোরাকাটা ছোট বুনো ছাতারে’| ইংরেজি নাম: ‘স্টিরিয়েটেড উহিনা’ (Striated Yuhina)| বৈজ্ঞানিক নাম: Yuhina castaniceps| এরা ‘দাগি উহিনা’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির দৈর্ঘ্য ১৩-১৪ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ১০-১৭ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। মাথায় ধূসর ঝুঁটি। মাথা লালচে বাদামীর সঙ্গে সাদা ছিট। পিঠ বাদামী। লেজ ও ডানার প্রান্ত পালক গাঢ় বাদামী। দেহতল সাদা। ঠোঁট বাদামী। চোখের মণি কালচে বাদামী। পা হলদেটে। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, ছোট ফল, ফুলের মধু, ঘাস বীজ । প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুলাই। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। কাপ আকৃতির বাসা বাঁধে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চিকন লতা, তন্তু, ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৬ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী vবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/03/2018
বুট পা ঈগল | Booted Eagle | Hieraaetus pennatus
বুট পা ঈগল | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন পরিযায়ী পাখি। কেবল ভরা শীতে দেশে দেখা যায়। তবে যত্রতত্র দেখা মেলে না। প্রাকৃতিক আবাসস্থল খোলা বনপ্রান্তর, পাবর্ত্য অঞ্চল। এ ছাড়া মরুভূমি কিংবা চারণভূমিতেও দেখা যায়। সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ৩০০০ মিটার উঁচুতেও দেখা যায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল, উত্তর ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউরোপ পর্যন্ত। শিকারী পাখি হলেও মাছ শিকারে আগ্রহ নেই। স্বভাবে হিংস। সরীসৃপ, ছোট পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণীর নাগাল পেলে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরা সাধারণত একাকী কিংবা জোড়ায় বিচরণ করে। প্রজাতিটি বিশ্বব্যাপী ভালো অবস্থানে নেই, হুমকির সম্মুখীন। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘বুট পা ঈগল’, ইংরেজি নাম: ‘বুটেড ঈগল’ (Booted Eagle), বৈজ্ঞানিক নাম: Hieraaetus pennatus | কারো কারো কাছে এরা ‘কাটুয়া চিল’ নামে পরিচিত। পুরুষ পাখির গড় দৈর্ঘ্য ৪৬-৫৩ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ১১০-১৩৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। প্রজাতির তিনটি বর্ণ। সাদাটে, কালচে ও বাদামি। তবে সবার কাঁধে সাদা ছোপ থাকে। দেহতল ক্রিম সাদার ওপর বাদামি খাড়া দাগ। ঊরু এবং পা যথাক্রমে সাদা, কালচে ও বাদামি পালকাবৃত। ওড়ার পালক কালচে। যুবাদের রং ভিন্ন। ঠোঁট শিং কালো, তীক্ষè, বড়শির মতো বাঁকনো। চোখ লালচে বাদামি। ঠোঁটের গোড়া এবং মুখের কিনার হলদে। পায়ের পাতা হলদে, নখ কালো। প্রধান খাবার: ছোট পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী ও সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। কোথাও কোথাও সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর। বাসা বাঁধে ৬-৩৫ মিটার উঁচু গাছের শাখে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চিকন ডালপালা। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৭-৪০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 15/12/2017
উদয়ী পাপিয়া | Oriental cuckoo | Cuculus saturatus
উদয়ী পাপিয়া | ছবি: ইন্টারনেট অনিয়মিত পান্থ পরিযায়ী পাখি (চলার পথের পরিযায়ী)। অতি বিরল দর্শন। কোকিল গোত্রের পাখি। কালেভদ্রে বসন্তকালে সিলেটের চা বাগানে দেখা মেলে। এ সময় চা বাগান হয়ে হিমালয় কিংবা মিয়ানমার যাতায়াত করে ওরা। বলা হচ্চে উদয়ী পাপিয়ার কথা। মূলত ওরা মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। এ ছাড়াও খোলা বনভূমি অথবা ফলের বাগানে বিচরণ রয়েছে। পারতপক্ষে ভূমি স্পর্শ করে না। বিচরণ করে একাকী। স্বভাবে লাজুক। গাছের পাতা কিংবা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। সহসা কারও নজরে পড়ে না, তবে ডাক শোনা যায়। সুরে মাদকতা আছে। প্রজনন মুহূর্তে পুরুষ পাখি ডাকে ‘উউপ…উউপ’ সুরে। স্ত্রী ডাকে ‘কুঁইকুঁই কুঁইকুঁই’ সুরে। প্রজনন ক্ষণ ঊষা কিংবা গোধূলিলগ্ন। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, মিয়ানমার ও চীন পর্যন্ত। তবে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে শীতে দেখা যায়। বিশ্বে ভালো অবস্থানে রয়েছে, ফলে আই ইউ সি এন প্রজাতিটিকে বিপদমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘উদয়ী পাপিয়া’, ইংরেজি নাম: ‘ওরিয়েন্টাল কুক্কু’, (Oriental cuckoo), বৈজ্ঞানিক নাম: Cuculus saturatus | এরা ‘হিমালয়ের কোকিল’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ৩০-৩১ সেন্টিমিটার। ওজন ৯০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা ও পিঠ ধূসর-বাদামি ডোরা। লেজ কালচে ধূসর, অগ্রভাগ সাদা। গলা থেকে বুকের উপরিভাগ ধূসর ডোরা। নিচের দিকে পীতাভ-সাদার ওপর কালো ডোরা। স্ত্রী পাখির মাথা ও পিঠ লালচে-বাদামি, ওপর কালচে ডোরা। দেহতলে পীতাভ-সাদার ওপর কালচে বাদামি ডোরা। লেজে লালচে বাদামির ওপর কালচে ডোরা, লেজের নিচে সাদা খাঁজকাটা। উভয়ের চোখের বলয় হলুদ। চোখের মণি কমলা-লাল। ঠোঁট শিংঙ সবুজ। পা হলুদ। প্রধান খাবার: লোমশ শুঁয়োপোকা ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না, বিধায় ডিম পাড়ে হরবোলা ও চুটকি পাখির বাসায়। প্রাকৃতিকভাবে ডিমের রং পালক মাতার ডিমের সঙ্গে মিলিয়ে যায়। ডিমের সংখ্যা ১-২টি। ডিম ফোটার দিনক্ষণ নির্ভর করে পালক মাতার ডিমের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। ধাত্রী মাতার আশ্রয়েই শাবক লালিত হয়। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 30/11/2018
বাদা তিতির | Swamp Francolin | Francolinus gularis
বাদা তিতির | ছবি: ইন্টারনেট দেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি। পূর্বে ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের তৃণভূমিতে দেখা যেত। হালে দেখা যাওয়ার নজির নেই। এরা সাধারণত নলবনে বা নদীর কাছাকাছি ঝোপে অথবা তৃণভূমিতে বিচরণ করে। একাকী খুব একটা দেখা যায় না। জোড়ায় অথবা ৫-১০টি দলে দেখা যায়। খুব ভোরে ও গোধূলিলগ্নে জলজ তৃণভূমি ও জোয়ারেসিক্ত ভূমিতে খাবার খোঁজে। এ সময় মাঝে মধ্যে কর্কশ কণ্ঠে ‘চুক্রির..চুক্রির’ সুরে ডেকে ওঠে। ভয় পেলে স্বর পাল্টে যায়। মাঝে মাঝে তীক্ষèস্বরে গান গায়। খুব বেশি উড়তে পারে না। কিছুক্ষণ জোরে-সোরে ডানা ঝাঁপটিয়ে বাতাসে ভেসে থাকার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত ও নেপালের তৃণভূমি অঞ্চলে। এ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার আরো কিছু অঞ্চলে দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। প্রজাতিটি বিশ্বে সংকটাপন্ন এবং বাংলাদেশে মহাবিপন্নের তালিকায় রয়েছে। এরা বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। প্রিয় পাঠক, ইতিপূর্বে তিতির নিয়ে লেখা হয়েছে কয়েকবারই। দেখতে একই রকম মনে হলেও প্রজাতিভেদে ওরা ভিন্ন। আশা করি বিষয়টি নিয়ে আপনাদের বিভ্রান্তি কেটে যাবে। পাখির বাংলা নাম: ‘বাদা তিতির’, ইংরেজি নাম: সায়াম্প ফ্রানকলিন (Swamp Francolin), বৈজ্ঞানিক নাম: Francolinus gularis | এরা ‘জলার তিতির’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ৩৭ সেন্টিমিটার। ওজন ৫০০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষের চেহারায় পার্থক্য নেই। উভয়ের মাথার চাঁদি ও ঘাড় বাদামির সঙ্গে পীত বর্ণের মিশ্রণ। গলা ও ঘাড়ের উপরের অংশ কমলা। ভ্রু রেখা পীত বর্ণের। পিঠে বাদামি ডোরা ও লালচে বাদামি পট্টি। লেজ তামাটে। লেজের প্রান্ত পালক ফিকে। দেহতল বাদামির সঙ্গে সাদা ডোরা। ঠোঁট পাটকিলে। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা কমলা-হলুদ। পুরুষ পাখির পায়ে শক্ত খাড়া নখ যা স্ত্রী পাখির নেই। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, শস্যদানা, ঘাসের কচিডগা ও আগাছার বীজ। উইপোকা প্রিয় খাবার। রসালো ফলের প্রতি আসক্তি রয়েছে। সুযোগ পেলে ছোট সাপও শিকার করে। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। জলাশয়ের পাশের জঙ্গলে কিংবা গাছের নিচে মাটিতে লতাগুল্ম বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। স্ত্রী পাখি একাই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 22/05/2015
সরু ঠোঁট ডুবরি হাঁস | Common Merganser | Mergus merganser
সরু ঠোঁট ডুবরি হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট পুরুষ পাখি দেখতে ভারি চমৎকার। সে তুলনায় স্ত্রী পাখির চেহারা কিছুটা ম্লান। উভয়েরই লম্বা ধাঁচের শরীর, গড়নে হেরফের নেই তেমন একটা। বাংলাদেশে এরা অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি। শীতে এদের আগমন ঘটে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে। কালেভদ্রে দেখা মেলে আমাদের দেশে। এক সময় দেশের যমুনা নদীতে কিছুসংখ্যক পাখি দেখা যেত। দেখা যেত সিলেটের হাওরাঞ্চলেও। অবশ্য এতদাঞ্চলে দেখা যাওয়ার রেকর্ড খুব বেশি নেই। আর হালেও তেমন একটা দেখা যায় না। মূলত এরা প্রবহমান নদ-নদীতে ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করে। বিচরণকালীন ছোট-বড় দলে দেখা যায়। হাঁস গোত্রের অন্যসব পাখির মতো এরাও ডুবে ডুবে খাবার খুঁজে। তবে একটু ব্যতিক্রমী হচ্ছে, এরা স্রোতের বিপরীতে ডুবে শিকার খোঁজে।বছরের অন্যান্য সময়ে তেমন একটা হাঁকডাক না করলেও প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি ব্যাঙের মতো ‘ক্রে-ক্রে…’ সুরে ডাকে। এ সময় স্ত্রী পাখি মৃদু স্বরে ডাকে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ পর্যন্ত। এরা বিশ্বে বিপন্মুক্ত। প্রজাতিটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘সরু-ঠোঁট ডুবরি হাঁস’, ইংরেজি নাম: ‘কমন মারগেঞ্জার’ (Common Merganser), বৈজ্ঞানিক নাম: Mergus merganser| লম্বায় ৫৮-৭২ সেন্টিমিটার (লেজ ১১ সেন্টিমিটার)। ওজন ১.২ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। প্রজননকালীন সময়ে পুরুষ পাখির রং বদলায়। এ সময় মাথা উজ্জ্বল সবুজাভ-কালো দেখায়। ঘাড় সাদা। পিঠের পাশের দিকটা সাদা। মধ্যখানের পালক কালচে। ডানার প্রান্তর কালচে। উড়ার পালক সাদা। লেজ ঢাকনি ধূসর। লেজ রুপালি-বাদামি। দেহতল সাদা। অন্যদিকে স্ত্রী পাখির মাথায় ঝুঁটি রয়েছে। মাথা, ঝুঁটি ও ঘাড় গাঢ় তামাটে। থুতনি সাদা। পিঠের মধ্য পালক নীলচের ওপর ধূসর-বাদামি ছিট দাগ। লেজ ধূসর-বাদামি। দেহতল সাদা। উভয় পাখির ঠোঁট সরু, অগ্রভাগ বাঁকানো। ঠোঁটের রং লাল-কমলা। চোখ লাল। পা ও পায়ের পাতা লাল। প্রধান খাবার: মাছ, শামুক, কেঁচো, ব্যাঙ, কীটপতঙ্গ ও জলজ উদ্ভিদ। প্রজনন মৌসুম জুন থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে সাইবেরিয়া অঞ্চলের গাছের প্রাকৃতিক কোটরে। বাসাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো পাতা, আর্বজনা, নরম পালক ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৮-১২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: মানব কণ্ঠ, 14/11/2014
বাদামি জলদস্যু পাখি | Pomarine Skua | Stercorarius pomarinus
বাদামি জলদস্যু পাখি | ছবি: ইন্টারনেট সামুদ্রিক পাখিদের মধ্যে প্রজাতিটি হিংস্রতায় অদ্বিতীয়। দেখতে বোকাসোকা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে স্বভাব দস্যুদের মতো। ছোট পাখিদের খাবার ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ওদেরকেও বধ করার চেষ্টা করে। জলদস্যুদের মতো রুক্ষ আচরণের ফলে এবং শরীরের পালক অধিকাংশ বাদামি বর্ণের কারণে প্রজাতিটি ‘বাদামি জলদস্যু পাখি’ নামে পরিচিতি পায়। এরা সর্বভুক পাখি। পচাগলা থেকে শুরু করে ফল-পাকুড়ও খেতে দেখা যায়। প্রজাতিটি স্বভাবে পরিযায়ী। শীতে এতদঞ্চলে দেখা মেলে। বিচরণ করে দক্ষিণ আমেরিকা, অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। এ ছাড়াও তুন্দ্রা অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন সময়ে মহাসমুদ্র এলাকার মহীসোপানে এবং উপকূলীয় এলাকার জলাভূমিতে বিচরণ করে। বিচরণ করে ছোট-বড় দলে। সারাদিন সমুদ্রের বুকে উড়ে উড়ে শিকার খুঁজে বেড়ায়। প্রজাতিটি বিশ্বে হুমকি না হলেও আইইউসিএন এদের উদ্বেগ প্রজাতি হিসাবে শনাক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘বাদামি জলদস্যু পাখি’, ইংরেজি নাম: ‘পোমারাইন স্কুয়া’ (Pomarine Skua), বৈজ্ঞানিক নাম: Stercorarius pomarinus | এরা ‘পোমারাইন জেগার’ নামেও পরিচিত। দেশে দুই প্রজাতির জলদস্যু পাখির সাক্ষাৎ মেলে। যথা: বাদামি জলদস্যু ও জলদস্যু পাখি। প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ৪৩-৫৪ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ১১০-১৩৮ সেন্টিমিটার। ওজন ৫৪০-৯২০ গ্রাম। মাথায় কালো টুপি। ঘাড় পানউবর্ণের সাদা। পিঠ, ডানা ও বাদামি কালো। চামচ আকৃতির লেজ। গলা, বুক ও তলপেট পাণ্ডুবর্ণের সাদা। ঠোঁটের গোড়া ত্বক বর্ণ। কালো ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। চোখ বাদামি, পা ও পায়ের পাতা কালো। পায়ের পাতা হাঁসের পায়ের মতো জোড়া লাগানো। যুবাদের চেহারা ভিন্ন। প্রধান খাবার: মাছ। এছাড়াও ছোট পাখি এবং পাখির ডিম, ইঁদুর, সরীসৃপ, পোকামাকড়, পচাগলাও খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মে থেকে সেপ্টেম্বর। বাসা বাঁধে উত্তর আমেরিকা, উত্তর ইউরেশিয়া এবং তুন্দ্রা অঞ্চলের মাটির ওপর শৈবাল, শ্যাওলা ও ঘাসলতা বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৫-২৮ দিন। শাবক উড়তে শেখে ২৫-৩০ দিনের মধ্যে। প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় ৩-৪ বছর। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 29/07/2016