ছোট তুর্কী বাজ | Eurasian Sparrowhawk | Accipiter nisus
ছোট তুর্কী বাজ | ছবি: ইন্টারনেট বৈশ্বিক বিস্তৃতি উত্তর ইউরোপ, পূর্ব-দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে বাংলাদেশ ও ভারতে। প্রজনন মৌসুমে নিজ বাসভূমে চলে যায়। স্বভাবে হিংস ; দেখতেও। ছোট পাখিদের যম। ‘কেক কেক কেক’ সুরে ইনিয়ে-বিনিয়ে ডাকাডাকি করে। অনেক উঁচুতে উঠতে পারে। উড়ে উড়ে শিকার খোঁজে। একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। শিকার নাগাল পেলে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। পাখির বাংলা নাম: ‘ছোট তুর্কী বাজ’, ইংরেজি নাম: ‘ইউরেশিয়ান স্পারোহাউক’ (Eurasian Sparrowhawk), বৈজ্ঞানিক নাম: Accipiter nisus| এরা ‘ইউরেশীয় চড়–ই শিকারে’ নামেও পরিচিত। স্ত্রী-পুরুষ পাখির গায়ের রঙে এবং আকারে তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির দৈর্ঘ্য ২৯-৩৪ সেন্টিমিটার। প্রসারিত পাখা ৬০-৭৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১১০-১৯৫ গ্রাম। স্ত্রী পাখির দৈর্ঘ্য ৩৫-৪১ সেন্টিমিটার। ওজন ১৮৫-৩৪২ গ্রাম। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও ডানা নীলাভ-ধূসর। ডানার প্রান্ত পালক ও লেজ কালচে। দেহতল সাদার সঙ্গে লালচে-বাদামি আড়াআড়ি রেখা। গলা থুতনির তুলনায় পেটের দিকে এ রেখা বেশি পরীক্ষিত হয়। অপরদিকে স্ত্রী পাখির পেটের দিকের রেখা গাঢ় লালচে-বাদামি। উভয়ের ঠোঁট খাটো, নীলাভ, বড়শির মতো বাঁকানো। পা লম্বা। যুবাদের রঙ ভিন্ন। প্রধান খাবার: চড়–ই পাখি, কবুতরসহ অন্যান্য ছোট পাখি, সরীসৃপ, ইঁদুর ইত্যাদি। সুযোগ পেলে ছোট খরগোশও শিকার করে। প্রজনন মৌসুম আগস্টের দিকে। বৃক্ষের উঁচু শাখায় ছোট ছোট ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে। বিশেষ করে কাঁটা গাছের ডালে বাসা বাঁধতে পছন্দ করে। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ফুটতে সময় লাগে ৩২-৩৪ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 16/02/2018
বড়ঠোঁটি গাংচিল | Gull billed tern | Gelochelidon nilotica
বড়ঠোঁটি গাংচিল | ছবি: ইন্টারনেট ভবঘুরে প্রজাতির পাখি। স্লিম গড়ন। উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে দেখা মেলে। বিচরণ করতে দেখা যায় বালুবেলাতেও। এছাড়া কৃষি জমিতে বিচরণ রয়েছে। মিঠা জলের চেয়ে লবণ জলে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সাগরের কাছাকাছি এলাকায় বেশি দেখা যাওয়ার মূল কারণই এটি। বিচরণ করে ঝাঁক বেঁধে। কলোনি টাইপ বাসা বাঁধে। চলাচলরত নৌযানকে অনুসরণ করতে দেখা যায় প্রায়ই। নৌযানের পেছন পেছন চক্কর মেরে উড়ে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে। স্বভাবে শান্ত। ঝগড়াঝাটি পছন্দ নয়। তবে নিজেদের মধ্যে কমবেশি ঝগড়া বাধে। এ সময় বিরক্ত হয়ে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে ওঠে ‘ক্রাআ-ক্রাআ’ সুরে। প্রজাতির উপস্থিতি দেশে সন্তোষজনক। শিকারি পাখি ব্যতীত এদের পারতপক্ষে কেউ তেমন একটা বিরক্ত করে না। ফলে এরা আমাদের দেশে ভালো অবস্থানে রয়েছে বলা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি, পূর্ব এশিয়ার উপকূল, উত্তর আমেরিকার, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, নিউজিল্যান্ডে ও অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। সোজাসাপ্টা বলতে গেলে একমাত্র এন্টার্কটিকা মহাদেশ ছাড়া বাদবাকি সব মহাদেশেই কমবেশি নজরে পড়ে। পাখির বাংলা নাম: ‘বড়ঠোঁটি গাংচিল’, ইংরেজি নাম: ‘গাল-বিল্ড টার্ন’ (Gull billed tern), বৈজ্ঞানিক নাম: Gelochelidon nilotica | এরা ‘কালাঠোঁট পানচিল’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ৭৬-৯১ সেন্টিমিটার। ওজন ১৫০-২৯২ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রজনন পালক ভিন্ন। মাথায় টুপি আকৃতির ঘন কালো পালক, যা ঘাড় অবধি নেমে গেছে। ঘাড়ে মিশে যাওয়া কালো অংশ ছাড়া ঘাড়ের দু’পাশ সাদা দেখায়। পিঠ ও ডানা ধূসর। লেজ গাঢ় ধূসর। দেহতল ধবধবে সাদা। ওড়ার পালক সাদা। চোখের বলয় কালো। ঠোঁট মোটা কালো। পা ও আঙ্গুল কালো। প্রধান খাবার: ছোট মাছ, সামুদ্রিক কৃমি। এছাড়াও বালুচরে ঘুরে পোকামাকড়, সরীসৃপ, শুককীট খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মধ্য মার্চ থেকে মে পর্যন্ত। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। জলাশয়ের কাছাকাছি বেলাভূমি এলাকায় ঘাস, লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২২-২৩ দিন। শাবক শাবলম্বী হতে সময় লাগে ২৮-৩৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 25/12/2015
ছোট পানকৌড়ি | Little Cormoran | Phalacrocorax niger
ছোট পানকৌড়ি | ছবি: ইন্টারনেট পাখিটার বর্ণ কাক কালো। দূর থেকে দেখতে কাকই মনে হয়। আসলে কিন্তু তা নয়। এমনকি কাক গোত্রীয়ও কেউ নয়। তারপরও নামের শেষে অনেকে যোগ করে দেয় ‘কাউয়া’। এটি দেশীয় পাখি। একযুগ আগেও আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের পুকুর কিংবা জলাশয়ে এদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। বর্তমানে যত্রতত্র দেখা না গেলেও বর্ষাকালে হাওর-বাঁওড়, নদীতে সন্তোষজনকহারে বিচরণ করতে দেখা যায়। শীতকালে নদী বা জলাশয়ের তীরে কঞ্চি অথবা লাঠিসোঁটায় বসে পাখা মেলে রোদ পোহাতে দেখা যায়। কিছু সময় গায়ে রোদ লাগিয়ে ঝপাত করে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলে। তারপর ডুব সাঁতার দিয়ে পিছু নেয় মাছের। শিকার ধরতে পারলে ভুস করে ভেসে ওঠে জলের ওপরে। ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরা মাছটাকে গলাটানা দিয়ে গলাধঃকরণ করে। এরা একটানা দীর্ঘক্ষণ ডুবাতে পারে বলে অনেকেই এদের ডুবুরি পাখি নামে ডাকে। এ পাখিদের সঙ্গে আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যের একটা ব্যাপার-স্যাপারও জড়িয়ে আছে। আছে অনেক কবিতায়, উপন্যাসেও এদের চরিত্র। আমার নিজের লেখা একাধিক (বারোটি গল্প-উপন্যাসে) গ্রন্থেও এদের চরিত্র বিভিন্নভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এতই প্রিয় এ পাখি আমার কাছে। অথচ পাখিটির বর্ণ কুচকুচে কালো। চেহারাটা মায়াবী না হলেও দেখতে বিরক্ত লাগে না। কেন জানি একবার দেখলে বারবার দেখতে ইচ্ছে করে পাখিটাকে। শিকারিরা এদের বাগাড়ে পেলে সহজে পিছু ছাড়ে না। কারণ এ পাখির মাংস বেশ মজাদার। অনেকটা হাঁসের মাংসের মতো। মাংসের লোভে নির্দয়ভাবে একবার একটি পাখিকে গুলি করে মেরেছি প্রায় দুই যুগ আগে। ক্ষমাপ্রার্থী প্রকৃতির কাছে তাই আমি। পাখিটার বাংলা নাম: ‘ছোট পানকৌড়ি’, ইংরেজি নাম: ‘লিটল করমোর্যান্ট’ (Little Cormoran), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘ফালাক্রোকোরাক্স নিগার’ (Phalacrocorax niger), গোত্রের নাম: ‘ফালাক্রোকোরাসিদি’। অঞ্চলভেদে এ পাখিদের ডাকা হয়, পানিকাবাডি, পানিকাউর, পানিকাউয়া, পানিকুক্কুট ইত্যাদি। আমাদের দেশে তিন ধরনের পানকৌড়ির সাক্ষাৎ মেলে। যথাক্রমে : বড় পানকৌড়ি, মাঝারি পানকৌড়ি ও ছোট পানকৌড়ি। এ পাখি লম্বায় ৪৮-৫০ সেন্টিমিটার। এদের শরীরটাই কালো পালকে আবৃত। সূর্যালোকে পিঠ থেকে নীলাভ-সবুজের আভা বের হয়। অন্য সময় ধূসর কালো দেখায়। গলা মলিন সাদা। ঠোঁট বড়শির মতো বাঁকানো, বর্ণ কমলা হলদে তবে ডগা কালো। পা হাঁসের পায়ের পাতার মতো জোড়া লাগানো। চোখ লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার মাছ। ছোট ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড়ও খায়। প্রজনন সময় জুন থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে শুকনো ডালপালা দিয়ে। পানকৌড়িরা দলবদ্ধভাবে বাসা বাঁধে। দেখা গেছে একই গাছে অসংখ্য দম্পতি বাসা তৈরি করছে। বাসার শ্রীছাদ নেই। ডিমের সংখ্যা ৪-৫টি। ডিম ফোটে ১৭-১৯ দিনে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 26/10/2012
চিতিপাক গোশালিক | Spot winged Starling | Saroglossa spiloptera
চিতিপাক গোশালিক | ছবি: ইন্টারনেট বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাস্থল পরিষ্কার বনপ্রান্ত, খোলা বন, কৃষিজমি। এ ছাড়াও পর্বতের ৭০০-১০০০ মিটার উঁচুতে দেখা যায়। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না। বেশির ভাগই জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। বিচরণ করে ছোট দলেও। স্বভাবে অন্যসব শালিকের মতোই ঝগড়াটে। সারাদিন খুনসুটি করে কাটায়। তবে ওদের ঝগড়া খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায় না, কিচির-মিচির পর্যন্তই ঝগড়া। পরক্ষণে আবার মিলেও যায়। আবার শুরু। এভাবেই দিন কাটে। পারতপক্ষে কেউ কাউকে আক্রমণ করে না। চলাফেরায় খুব হুঁশিয়ারি। বিশ্বে এদের অবস্থান তত ভালো নয়। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘চিতিপাক গোশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘স্পট-উইংড স্টার্লিং’ (Spot-winged Starling), বৈজ্ঞানিক নাম: Saroglossa spiloptera। এরা ‘লালচেগলা শালিক’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১০ প্রজাতির শালিক নজরে পড়ে। যথাক্রমে: গো-শালিক, ভাত শালিক, ঝুঁটি শালিক, গাঙ শালিক, পাতি কাঠশালিক, গোলাপি কাঠশালিক, চিতিপাখ গোশালিক, খয়রালেজ কাঠশালিক, বামুন কাঠশালিক ও ধলাতলা শালিক। এরা লম্বায় ১৯-২০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা বাদামি। ঘাড় ও পিঠ ধূসর এবং কালো-বাদামি। ডানার প্রান্ত নীলাভ কালো। লেজ লালচে বাদামি। গলা লালচে। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত সাদাটে। বুকের দু’পাশ শেয়ালে লাল। ঠোঁট নীলাভ কালো। চোখের বলয় সাদা। পা বেগুনি কালো। দেখতে একই রকম মনে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। আকারেও সামান্য ছোট। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, পিঁপড়া, ছোট ফল, ফুলের মধু। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বাঁধে ৬-১০ মিটার উচ্চতার গাছের প্রাকৃতিক কোটরে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, লতাপাতা, দড়ি, কাপড়ের টুকরো ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/08/2017
কালচে প্রিনা | Ashy Prinia | Prinia socialis
কালচে প্রিনা | ছবি: ইন্টারনেট গোবেচারা টাইপ চেহারা। স্লিম গড়ন। দেহের তুলনায় লেজ খানিকটা লম্বা। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। গাছের চিকন ডালে লাফিয়ে বেড়ায়। সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটায় ওড়াউড়ি করে। স্থিরতা এদের মাঝে খুবই কম। মন ভালো থাকলে উপরের দিকে ঠোঁট উঁচিয়ে ‘জিট-জিট-জিট’ সুরে গান গায়। সুর বেশ মধুর। শুনতে ইচ্ছে করে বারবার। বিভিন্ন সুরে গান গাইতে পারে। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় থাকে। প্রজননের বাইরে ছোট দলে বিচরণ করে। বেশিরভাগই একাকী বিচরণ করে। স্থানীয় প্রজাতির পাখি। সুলভ দর্শন। দেখা মেলে দেশের গ্রামাঞ্চলে, অনেক সময় শহরাঞ্চলেও দেখা মেলে। বিশেষ করে ঘাসবনে, জঙ্গলময় বাগানে এবং কৃষিজমিতে ওদের বিচরণ। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও পশ্চিম মিয়ানমার পর্যন্ত। হিমালয়ের পাদদেশে বিচরণ রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উঁচুতেও দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। দেশে এদের অবস্থান মোটামুটি সন্তোষজনক। বিশ্বব্যাপী এরা হুমকি নয়, ভালো অবস্থানেই রয়েছে। ভূমি থেকে কাছাকাছি বাসা বাঁধার কারণে অনেক সময় বিড়াল দ্বারা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাখির বাংলা নাম: ‘কালচে প্রিনা’, ইংরেজি নাম: ‘এ্যাশি প্রিনা’, (Ashy Prinia), বৈজ্ঞানিক নাম: Prinia socialis | এরা দৈর্ঘ্যে ১২-১৩ সেন্টিমিটার। ওজন ৬-৭ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় ও পিঠ কালচে-ধূসর। ডানার পালক এবং লেজ বাদামি রঙের। লেজতলে রয়েছে কালচে ডোরা। গলা থেকে বুক ক্রিম-সাদা। পেটের দু’পাশ হালকা হলদেটে-সাদা। ঠোঁট কুচকুচে কালো, ঠোঁটের অগ্রভাগ সুচালো। চোখ বাদামি। পা ত্বক বর্ণের। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ধূসর বাদামি। দেহতল ফ্যাকাসে সাদা। ঠোঁট বাদামি-কালোর মিশ্রণ। মৌসুমি পালক ভিন্ন। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, মাকড়সা ও ফুলের মধু। প্রজনন সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। এলাকাভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ডিম পাড়ে। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে এক-দেড় মিটার উঁচুতে গাছের পাতা সেলাই করে মোচাকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 13/05/2016
বড় খোঁপাডুবুরি | Great Crested Grebe | Podiceps cristatus
বড় খোঁপাডুবুরি | ছবি: ইন্টারনেট পরিযায়ী প্রজাতির জলচর পাখি। স্বাদুজলে বিচরণ করে। বিরল দর্শন। এক সময় দেশের বড় জলাশয়, নদ-নদী এবং মোহনা অঞ্চলে দেখা যেত। হালে সে রকমটি নজরে পড়ে না। বিচরণ করে জোড়ায় জোড়ায়। ছোট অথবা মাঝারি দলেও নজরে পড়ে। সাঁতারে খুব পটু। ঘন ঘন ডুব সাঁতার দিয়ে জলাশয় মাতিয়ে রাখে। জনমানবের সাড়া পেলে মুহূর্তে চুপসে যায়। নিরাপদবোধ মনে না হলে জলাশয়ের ত্রিসীমানায় ঘেঁষে না। খুব হুঁশিয়ারি পাখি, ভীতুও সাংঘাতিক। এতই হুঁশিয়ারি যে, ডিমে তা দেয়া থেকে উঠে যাওয়ার সময় ডিমের ওপর আগাছা দিয়ে ঢেকে রাখে। ফিরে এসে আগাছা সরিয়ে পুনরায় ডিমে তা দেয়। যেখানে বাসা বাঁধে সেখানে ডুবসাঁতার দিয়ে পৌঁছে। এদের গড়নও আজব। লম্বা গলা, মাথার ওপর খোঁপাবিশিষ্ট ঝুঁটি। লেজহীন। হাঁস আকৃতির হলেও ঠোঁট চেপ্টা নয়, সুচালো। ঠোঁট মাঝে মাঝে পিঠের পালকের ভেতর ঢুকিয়ে রেখে জলে ভেসে বেড়ায়, তখন দূর থেকে মনে হয় বুঝি কোনো ফুলের গুচ্ছ জলে ভাসছে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি ইউরোপ, দক্ষিণ-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া, উত্তর টেরিটরি, কুইন্সল্যান্ড, ক্রান্তিয় আফ্রিকা ও এশিয়া পর্যন্ত। বাংলা নাম: ‘বড় খোঁপাডুবুরি’, ইংরেজি নাম: ‘গ্রেট ক্রেস্টেড গ্রিব’, (Great Crested Grebe), বৈজ্ঞানিক নাম: Podiceps cristatus | এরা ‘খোঁপাযুক্ত ডুবুরি’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ৩৬-৬১ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৫৯-৭৩ সেন্টিমিটার। ওজন ৮০০-১৫০০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে অভিন্ন। কপাল বাদামি-কালো। মাথার তালুতে খোঁপাকৃতির বাদামি-কালো ঝুঁটি। মাথার পেছন থেকে গলার উপরিভাগ মদ-বাদামি। লম্বা গলা ও ঘাড়ের দু’পাশ বাদামি-সাদা। দেহের উপরের দিকটা কালচে-বাদামি। পিঠের দু’পাশ লালচে-বাদামি। লেজ একেবারেই খাটো, নেই বললেই চলে। লেজের দেহতল বাদামি-সাদা। দেহের পালক রেশমী এবং নরম। ঠোঁট ছোট সুচালো, কালচে-বাদামি। চোখ লালচে-বাদামি। চোখের পাশটা সাদা। পা কালচে। নখ চওড়া এবং চেপ্টা। শীতে রং বদলায়। যুবাদের রং ভিন্ন। প্রধান খাবার: ছোট মাছ। এছাড়াও ছোট ব্যাঙ জলজ পোকামাকড় শিকার করে। প্রজনন মৌসুম আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ভাসমান জলজ ঝোপের ভেতর। ঝোপটি যেন ভেসে না যায় তার জন্য স্থায়ী আগাছা বা ঝোপের সঙ্গে বেঁধে রাখে বাসাটি। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৪-২৬ দিন। শরীরে পালক গজাতে সময় লাগে ১০-১১ সপ্তাহ। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 13/11/2015
ঘুরঘুরি | Baillon’s Crake | Porzana pusilla
ঘুরঘুরি | ছবি: ইন্টারনেট হিমালয় অঞ্চলের পাখি হলেও দেখা মেলে ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন এলাকায়। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে আমাদের দেশে। বিচরণ করে সুপেয় জলের জলাশয়ের কিনারে। বিশেষ করে বাদাবনে এরা আশ্রয় নেয় বেশি। হোগলা বন এদের খুবই প্রিয়। হোগলা বনের ভেতর হেঁটে হেঁটে পোকামাকড় খুঁজে ব্যস্ত সময় পার করে। এ ছাড়াও বড় বড় হাওর-বাঁওড়ের কিনারেও এদের দেখা যায়। অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির পাখি এরা। খুব সহজে নজরে পড়ে না, লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে সবসময়। অন্যসব প্রজাতির মতো এরা প্রজনন মৌসুমে খুব একটা ডাকাডাকি করে না। অনেকটাই নীরবে নিভৃতে কাটিয়ে দেয় এ বিশেষ মুহূর্ত। প্রিয় পাঠক, এরা অতি বিরল প্রজাতির পাখি। দেশে খুব বেশি দেখা যায় না। এরা নির্যাতিত হলে বা শিকারির খপ্পরে পড়লে উদ্ধার করার চেষ্টা করবেন। শুধু এদেরকে নয়, যে কোনো প্রজাতির পাখি নির্যাতিত হলে আপনারা এগিয়ে আসবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পশু-পাখির ভূমিকা অপরিসীম। কাজেই শিকারিদেরকে প্রতিহত করতে হবে। সবাই মিলে পরিবেশটাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। ইচ্ছে করলে তরুণসমাজ দেশ থেকে শিকারিমুক্ত করতে পারেন। পাড়া-মহল্লায় শিকারিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে বোধকরি দেশ শিকারিমুক্ত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ঘুরঘুরি’, ইংরেজি নাম: ‘বেলুনস ক্রেক’ (Baillon’s Crake), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘পরজানা পুসিল্লা’ (Porzana pusilla), গোত্রের নাম: ‘রাল্লাদি’। এরা ‘বেইলন গুরগুরি’ নামেও পরিচিত। বাদাবনে খানিকটা বেশি পরিলক্ষিত হয় বিধায় পাখি বিশারদদের কেউ কেউ ‘বাদা কুক্কুট’ নামে ডাকেন। মূলত এরা ডাহুক গোত্রের পাখি। দেখতেও কিছুটা সেরকম। পাখি লম্বায় ১৭-১৯ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির রঙ ভিন্ন। ওদের মাথা পাটকিলে বাদামি। মুখ, গলা ও বুক নীলাভ-ধূসর। পিঠ পাটকিলে-বাদামির ওপর সাদা-কালো ফুটকি। বুকের মাঝখান থেকে লেজের নিচের অংশ কালচে ধূসর। ঠোঁট সবুজ। পা ও পায়ের পাতা জলপাই রঙের। চোখের মণি লালচে। স্ত্রী পাখি পুরুষের তুলনায় অনুজ্জ্বল। উভয়েরই ডানা ও লেজ খাটো। প্রধান খাবার জলজ পোকামাকড়। এ ছাড়াও জলজ উদ্ভিদের কচি পাতা খায়। প্রজনন সময় মে-আগস্ট। বাসা বাঁধে জলজ ধান ক্ষেতে কিংবা পাহাড়ি জলাশয়ের কাছাকাছি। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে ঘাস লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 24/01/2014