তিলা বাজ | Crested Serpent Eagle | Spilornis cheela
তিলা বাজ | ছবি: ইন্টারনেট স্থানীয় প্রজাতির পাখি। সুলভ থেকে অসুলভ দর্শন হয়ে পড়েছে। কয়েক দশক আগেও দেশে যত্রতত্র দেখা যেত। দেখা যেত রাস্তার পাশে টেলিফোনের তারে বা খুঁটিতে বসে থাকতে। হাওর-বাঁওড় কিংবা চা বাগান এলাকায়ও দেখা যেত। হালে নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া খুব কম নজরে পড়ে। তবে বড় দলটি এখনো সুন্দরবন অঞ্চলে দেখা যায়। এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, শ্রীলঙ্কা, হিমালয়, দক্ষিণ-পূর্ব তিব্বত, দক্ষিণ-পূর্ব চীন, বালি ও ফিলিপাইন পর্যন্ত। মূলত এরা শিকারি পাখি। বিচরণ করে একাকি কিংবা জোড়ায়। স্বভাবে হিংস্র। ঠোঁট এবং পায়ের নখ তীক্ষè-ধারালো। অনেক উঁচু থেকেও নিশানা ঠিক করতে পারে। মাছ কিংবা সাপ নাগালের মধ্যে পেলেই হলো, ঝপাৎ করে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারের পিঠে বড়শির মতো নখ বিঁধিয়ে শিকার কব্জা করে। অনেক সময় উড়তে উড়তেও শিকারে ঠোঁকর লাগায়। বেগতিক দেখলে গাছের ডালে বসে শিকারের মাথা ঠুঁকরিয়ে কাবু করে। এ থেকে রেহাই পায় না সাপও। অবশ্য সাপই এদের প্রধান খাবারের মধ্যে অন্যতম। এদের মাঝে মধ্যে উড়তে দেখা যায় দলবল নিয়ে। বেশিরভাগই শীতকালে দেখা যায় আকাশে ভেসে বেড়াতে। অনেক উঁচুতে উঠতে পারে। আকাশে ভাসতে ভাসতে ‘টি-ই, টি-ই, ঠি-ই’ সুরে ডাকতে থাকে। পাখির বাংলা নাম: ‘তিলা বাজ’, ইংরেজি নাম: ‘ক্রেস্টেড সারপেন্ট ঈগল’ (Crested Serpent Eagle) বৈজ্ঞানিক নাম: Spilornis cheela | এরা ‘তিলা নাগঈগল’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কম-বেশি ৬৫-৭৫ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড় ও গলা কালো। ঘাড়ে ঝুঁটি আকৃতির পালক। যা শুধু ফোলালে বড় দেখায়। পিঠে গাঢ় বাদামির ওপর সাদা চিতি। ডানার বলয় কালো। দেহতলে হালকা বাদামির ওপর অসংখ্য ছোট চিতি। কালো লেজের নিচে সাদাডোরা। শিং কালো রঙের ঠোঁট, বড়শির মতো বাঁকানো। ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখের বলয় পর্যন্ত উজ্জ্বল হলুদ। চোখের তারা হলুদ, মাঝখানে কালো। পা ও পায়ের পাতা হলদেটে। প্রধান খাবার: সাপ, মাছ ও ব্যাঙ ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে মার্চ। অঞ্চলভেদে ভিন্ন। জলাশয়ের কাছাকাছি গাছের উঁচু ডালে বাসা বাঁধে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চিকন ডালপালা। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৫ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে মাস দু’য়েক। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 21/08/2015
বন খঞ্জন | Forest Wagtail | Dendronanthus indicus
বন খঞ্জন | ছবি: ইন্টারনেট বাংলা নাম: ‘বনখঞ্জন,’ ইংরেজি নাম: ‘ফরেস্ট ওয়াগটেল’ (Forest Wagtail), বৈজ্ঞানিক নাম: Dendronanthus indicus | এরা লম্বায় ১৬-১৮ সেন্টিমিটার। ঘাড়ের দুপাশ জলপাই রঙা। বুক ও পেট সাদা। তার ওপর চওড়া কালো দুটি দাগ। ডানার প্রান্তের পালক ময়লা হলুদ। লেজ পাটকিলে কালো। তবে লেজের দুপাশের পালক সাদা। শরীরের তুলনায় লেজটা বড়। চোখ দুটো বেশ মায়াবী। চোখের ওপরে সাদা বাঁকানো টান। পা হালকা গোলাপি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে প্রায় একই রকম। সব ধরনের খঞ্জনই দেখতে সুন্দর। সে তুলনায় বনখঞ্জন একটু নিষ্প্রভ। তবে চেহারাটা মায়াবী। বনখঞ্জন হিংসুটে কিংবা ঝগড়াটে নয়। বিচরণ করে একাকী। এরা পরিযায়ী পাখি। শীত শুরু হওয়ার আগেই উপমহাদেশে চলে আসে। থেকে যায় গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। অন্যসব খঞ্জন সাধারণত মাঠ-প্রান্তরে বিচরণ করলেও এরা বনে জঙ্গলে বেশি বিচরণ করে। তুলনামূলকভাবে ফাঁকা জঙ্গল এদের পছন্দ। সাধারণত আমাদের দেশে প্রায় আট প্রজাতির খঞ্জন দেখা যায়। বনখঞ্জন, সাদা খঞ্জন, বড় পাকড়া খঞ্জন, পাকড়া খঞ্জন, ধূসর খঞ্জন, হলুদ খঞ্জন, হলদে মাথা খঞ্জন, কালো মাথা খঞ্জন। বড় পাকড়া খঞ্জন ছাড়া অন্যরা পরিযায়ী হয়ে আসে। কয়েক প্রজাতি এ দেশে ডিম বাচ্চাও ফোটায়। সব ধরনের খঞ্জনই চঞ্চল প্রকৃতির। স্থিরতা এদের মাঝে নেই বললেই চলে। নাচের ভঙ্গিতে লেজ দোলাতে থাকে সর্বক্ষণ। অবশ্য কোমরের গড়ন ভিন্নতার কারণে কোমরটা সারাক্ষণ কাঁপতে থাকে। ফলে মনে হয় এরা বুঝি সারাদিন নেচে বেড়ায়। প্রকৃতপক্ষে তা নয়। সব ধরনের খঞ্জনের প্রিয় খাবার পোকামাকড়। বনখঞ্জনরাও তদ্রুপ বনপ্রান্তরে ঘুরে ঘুরে পোকামাকড় খেয়ে থাকে। প্রজনন সময় মে-জুলাই। বাসা বাঁধে ঘাসবনে অথবা গাছের গোড়ার খোঁদলে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, নরম লতাপতা। বাসার আকৃতি লম্বাটে। ডিমের সংখ্যা ২-৫টি। ডিম ফুটতে সময় নেয় ১৭-১৯ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 12/10/2012
দাগিলেজ গাছআঁচড়া | Bar tailed Treecreeper | Certhia himalayana
দাগিলেজ গাছআঁচড়া | ছবি: ইন্টারনেট বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, রাশিয়া, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও ইরান পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাসস্থল খোলা সরলবর্গীয় বন এং নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চল। এরা একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। হিংস নয়। অত্যন্ত চঞ্চল স্বভাবের পাখি। কাঠঠোকরা পাখির মতো গাছের খাড়া কাণ্ডে খুব দ্রুত হেঁটে উঠতে পারে। সারাদিন গাছের কাণ্ডে ঠোঁট চালিয়ে কীট-পতঙ্গ খুঁজে বেড়ায়। গাছ-গাছালিতে বিচরণকালে অনেক সময় ওদেরকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ ওদের গায়ের বর্ণ গাছের শুকনো ডালপালার সঙ্গে মিশে যায়, যার ফলে এ ধরনের ভ্রম তৈরি হয়। প্রজাতির বিচরণ দেশে সন্তোষজনক না হলেও বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘দাগিলেজ গাছআঁচড়া’, ইংরেজি নাম: ‘বার-টেইলড ট্রিক্রিপার’ (Bar-tailed Treecreeper), বৈজ্ঞানিক নাম: Certhia himalayana, এরা ‘বাঁকা-ঠোঁট কীট-কুড়ানি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৮ গ্রাম। গায়ের রং বাদামি-সাদা-লালচে ডোরাকাটা। ডানার প্রান্ত পালক ধূসর কালো। লেজ ডোরাকাটা। দেহতল হালকা বাদামি-সাদা। ঠোঁট লম্বা বাঁকানো, কালচে রঙের। পা কালচে। প্রধান খাবার: কীট-পতঙ্গ, পোকামাকড়, মাকড়সা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শৈবাল, তন্তু, শুকনো ঘাস, পালক ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৭ দিন। লেখক: আলমশাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/02/2017
দাঁড় কাক | Large Billed Crow | Corvus macrorhynchos
দাঁড় কাক | ছবি: ইন্টারনেট ইতিপূর্বে পাতি কাক নিয়ে লেখা হলেও ‘দাঁড় কাক’ নিয়ে লেখা হয়নি। প্রজাতির কণ্ঠস্বর একইরকম হলেও চেহারায় তফাৎ রয়েছে। পাতি কাকের তুলনায় এদের চেহারাও আকর্ষণীয়। নীলাভ-কুচকুচে কালো। পর্যবেক্ষণ দৃষ্টিতে তাকালে এদের সৌন্দর্য যে কারো চোখে ধরা পড়বেই। এরা দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বিচরণ যত্রতত্র করলেও পাতি কাকের মতো বাড়ির আশপাশে বিচরণ করে না। দূরত্ব বজায় রাখে। বিশেষ করে বনভূমির কাছাকাছি বেশি দেখা যায়। শহরাঞ্চলে নজরে পড়লেও যত্রতত্র নয়। সামাজিক পাখি। দলের কেউ অন্যায় করলে নিজেদের ভেতর বোঝাপড়া করে। মানুষ বা অন্য কারো দ্বারা আক্রান্ত হলে দলের সবাই মিলে একত্রিত হয়ে সমবেদনা জানায়। স্বভাবে চৌর্য্যবৃত্তি লক্ষ্য করা যায়। মানুষের অগোচরে খাবার বা অন্য যে কোনো জিনিস নিয়ে পালায়। এমনকি সাবানও চুরি করে। সর্বোপরি পচাগলা খেয়ে মানুষের যথেষ্ট উপকারও করে। প্রজাতির অবস্থান দেশে সন্তোষজনক। বিশ্বেও ভালো অবস্থানে রয়েছে। মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপক নজরে পড়ে। ইরান, কম্বোডিয়ায়ও দেখা যায় দাঁড় কাক। পাখির বাংলা নাম: ‘দাঁড় কাক’, ইংরেজি নাম: ‘লার্জ-বিল্ড ক্রো’ (Large-billed Crow), বৈজ্ঞানিক নাম: Corvus macrorhynchos। দেশে দুই প্রজাতির কাক দেখা যায়। যথা: পাতি কাক ও দাঁড় কাক। গড় দৈর্ঘ্য ৪৬-৫৯ সেন্টিমিটার। ওজন ৪৫০-৫০০ গ্রাম। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ কুচকুচে কালো। ডানার প্রান্ত পালক নীলাভ কালো। দেহতল কুচকুচে কালো। চোখের মনি কাজল কালো। ঠোঁট ও পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রধান খাদ্য: যে কোনো ধরনের উচ্ছিষ্ট খাবার। বলা যায় সর্বভুক পাখি এরা। প্রজনন মৌসুম বছরের যে কোনো সময়। বাসা বাঁধে গাছের উঁচু শাখায় অথবা বাড়ির কার্নিসে এবং বিদ্যুতের খুঁটিতেও। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে সরুডাল, ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৯ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 18/08/2017
পাতি সোনাচোখ | Common Goldeneye | Bucephala clangula
পাতি সোনাচোখ | ছবি: ইন্টারনেট হাঁস প্রজাতির অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি। বাংলাদেশে আগমন ঘটে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে। দেখতে মন্দ নয়। অনেকটা দেশি পাতি হাঁসের মতো দেখা গেলেও পার্থক্য রয়েছে বিস্তর। এদের মাথাটা উঁচু, শীতের টুপির মতো। আকর্ষণীয় চোখ। সোনালি বর্ণের চোখের সঙ্গে মিল রেখে নামকরণ হয়েছে ‘পাতি সোনাচোখ’। প্রজাতিটি বিশ শতকের গোড়ার দিকে সিলেটের হাওরাঞ্চলে দেখা যেত, হালে দেখার নজির নেই। এদের বিচরণ ক্ষেত্র নদী, হ্রদ এবং হাওর-বাঁওড় বা বড় ধরনের জলাশয়ে। বিচরণ করে ছোট দলে, একাকী কম দেখা যায়। বিশেষ করে অগভীর জলে সাঁতার কেটে শিকার সংগ্রহ করে। খুব ধীরগতিতে শিকারের পিছু ধাওয়া করে। আবার ওড়েও ধীরগতিতে, ডানা ঝাঁপটিয়ে ওড়ে। তাই বলে অলস নয়, স্বভাবটাই অমন। ওড়ার সময় শিস কাটে। প্রজনন মৌসুমে কর্কশ কণ্ঠে ‘স্পির..স্পির..’ সুরে ডাকে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল পর্যন্ত। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানে দেখা যায়। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপদমুক্ত। দর্শন নেই বিধায় বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘পাতি সোনাচোখ’, ইংরেজি নাম: ‘কমন গোল্ডেন আই’, (Common Goldeneye), বৈজ্ঞানিক নাম: Bucephala clangula | এরা ‘সোনালি চোখ হাঁস’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ৪৫-৫২ সেন্টিমিটার। ওজন ৮০০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখি প্রজননকালীন রং বদলায়। এ সময় মাথা কালচে-সবুজ এবং মুখে গোলাকার সাদাপট্টি দেখা যায়। পিঠের পাশ থেকে দেহতল চকচকে সাদা। ডানা খাটো, সুঁচালো কালো রঙের। ঠোঁট কালো, অগ্রভাগ সামান্য বাঁকানো। চোখ সোনালি, পা ও পায়ের পাতা হলুদ-কমলা। প্রজননের বাইরে মাথা চকলেট-বাদামি। কালচে দেহের ডানায় সাদা পট্টি দেখা যায়। লেজ সেøট ধূসর। স্ত্রী পাখির দেহ ভিন্ন। মাথা বাদামি। চোখ ফ্যাকাসে হলুদ। পা ও পায়ের পাতা বাদামি-হলুদ। প্রধান খাবার: জলজ পোকামাকড়, শামুক, ছোট চিড়িং ও উদ্ভিদের কচিডগা। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। সাইবেরিয়াঞ্চলের গাছের প্রাকৃতিক গর্তে নরম পালক বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৮-১৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। শাবক শাবলম্বী হতে সময় লাগে ৫৫-৬৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 02/01/2015
ধূসর সারস | Demoiselle Crane | Anthropoides virgo
ধূসর সারস | ছবি: ইবার্ড বিপন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। দেশে আগমন ঘটে শীতে। হিমালয় পাড়ি দিয়ে মাঝেমধ্যে সিলেটের হাওরাঞ্চলে উপস্থিত হয়। বিচরণ করে জলাশয়ের কাছাকাছি তৃণভূমি, কৃষি ক্ষেত, চারণভূমি, অগভীর আশ্রিত উপসাগরীয় অঞ্চল, নদী ও অগভীর হ্রদে। মাঝেমধ্যে হাঁটু পরিমাণ জলে নেমে খাবার খুঁজতে দেখা যায়। মরু অঞ্চলেও দেখা যাওয়ার নজির রয়েছে। খাদ্যের সন্ধানে বের হয় জোড়ায় অথবা বড়সড়ো ঝাঁকে। চলার পথে কারো ফসলের খেতে দলবেঁধে নামলে মুহূর্তেই ফসল তছনছ করে দেয়। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করতে নাচের কসরৎ দেখায়। এ সময় উভয়ে জোরে জোরে দ্বৈত সঙ্গীতের মতো গান গায়। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, উত্তর-পূর্ব চীন, মঙ্গোলিয়া, তুরস্ক, পশ্চিম ইউরেশিয়া ও আফ্রিকা পর্যন্ত। সমগ্র বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন লাল তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশে সঙ্কটাপন্ন বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে ধূসর সারস। পাখির বাংলা নাম: ‘ধূসর সারস’, ইংরেজি নাম: ‘ডেমোজিল ক্রেন’, (Demoiselle Crane), বৈজ্ঞানিক নাম: Anthropoides virgo | দেশে তিন প্রজাতির পরিযায়ী সারস দেখা যায়। যথাক্রমে: দেশি সারস, পাতি সারস ও ধূসর সারস। গড় দৈর্ঘ্য ৮৫-৯০ সেন্টিমিটার। প্রশস্ত ডানা ১৫০-১৭০ সেন্টিমিটার। ওজন ২-৩ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। মাথার তালু ধূসর। মাথার পেছন থেকে কালো রঙ শুরু করে ঘাড়, থুঁতনি ও গলা হয়ে বুকের ওপর গিয়ে নিচে ঝুলে পড়েছে। চোখের পেছন থেকে সাদা পালক ঘাড়ের ওপর ঝুলে পড়েছে। সারা দেহ গাঢ় ধূসর। ওড়ার পালক কালো। লেজে সাদা-কালো লম্বা পালক, যা ঝুলে পড়েছে নিচে। দেহতল গাঢ় ধূসর। ঠোঁট সবুজাভ, ডগা হলুদ। কমলা-লাল রঙের চোখ দুটি আকারে ছোট। পা ও পায়ের পাতা ময়লা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা ভিন্ন। প্রধান খাবার: শস্যবীজ, ঘাসবীজ, কন্দ, গাছের কচিডগা, ব্যাঙ, টিকটিকি, কাঁকড়া, কেঁচো, মাকড়সা, ছোট পাখি ও কীটপতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। বাসা বাঁধে জলাশয়ের কাছাকাছি মাটির ওপরে। শুকনো চিকন ডালপালা, লতাপাতা উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৭-২৯ দিন। শাবক উড়তে শিখে ৬ সপ্তাহের মধ্যে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 01/04/2016
পাতারি হাঁস | Common teal | Anas crecca
পাতারি হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট প্রচণ্ড শীতে সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী হয়ে আসে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে। শীতের শুরুতে লতাগুল্ম আচ্ছাদিত বৃহৎ জলাশয়ে কিংবা হাওর-বাওরে ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করতে দেখা যায়। দেখা যায় জলাশয়ের ওপর ওড়াউড়ি করতেও। এদের ওড়ার গতিও ভালো। উড়তে উড়তে অনেক সময় পুরুষ পাখি নিচুস্বরে ডাকে ‘ক্রিট..ক্রিট’। প্রজাতিটি সুলভ দর্শন হলেও আমাদের দেশে এরা নিরাপদ নয়। বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। গত দশক আগেও দেশে এদের ব্যাপক বিচরণ ছিল। সে তুলনায় বর্তমান সময়ে নজরে পড়ছে না তেমনটি। ১৯৯৭ সালের দিকেও ঢাকা চিড়িয়াখানার লেকে ব্যাপক দর্শনের নজির রয়েছে। দ্রুত এদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার প্রধান কারনটিই হচ্ছে শিকারিদের দৌরাত্ম্য। দেখতে ভীষণ সুন্দর, ওজনে সামান্য হলেও এরা রেহাই পায় না নিষ্ঠুর শিকারিদের হাত থেকে। রসনাবিলাসিরা যদি একটু সংযত হন বোধ করি দেশের শিকরিরাই বিপাকে পড়ে যাবে এবং তারা পাখি শিকারে নিরুৎসাহী হয়ে পড়বে। তাতে করে হ্রাস পাওয়া প্রজাতির সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এ পাখির বাংলা নাম: ‘পাতারি হাঁস’, ইংরেজি নাম: ‘কমন টিল’ (Common teal), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘আনাস ক্রেককা’ (Anas crecca)। এরা ‘পাতি তিলিহাঁস’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ৩৪-৩৮ সেন্টিমিটার। ওজন ২৮০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির বর্ণে পার্থক্য রয়েছে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রঙ বদলায়। এ সময় এদের মাথার রঙ লালচে-বাদামি এবং শরীরে গুঁড়ি গুঁড়ি রেখা দেখা যায়। মাথার দু’পাশে লম্বা দুটি সাদা ডোরা। চোখের ওপর থেকে ঘাড় পর্যন্ত দেখা যায় চওড়া ধাতব-সবুজ পট্টি। ডানা কালো, ধাতব সবুজ ও হলদেটে। লেজের নিচের পালক হলুদাভ ছোপ। স্ত্রী পাখির রূপ নিষ্প্রভ। মাথার তালু ও ঘাড় কালচে-লালচের মিশ্রণ। উভয়ের চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা জলপাই-ধূসর। অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাখির সঙ্গে মা পাখির বর্ণের খানিকটা মিল রয়েছে। প্রধান খাবার: জলজ উদ্ভিদের কচিডগা ও বীজ। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট। জন্মভূমি সাইবেরিয়া অঞ্চলের জলাশয়ের পাশের ভূমিতে শুকনো লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৮-১২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১-২৩ দিন। শাবক উড়তে শিখে ২৫-৩০ দিনের মধ্যেই। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 28/02/2014