ধলাভ্রু চুটকি | Snowy Browed Flycatcher | Ficedula hyperythra
ধলাভ্রু চুটকি | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন। প্রচণ্ড শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে দেশে। সুন্দরবন ব্যতীত দেশের প্রায় বনাঞ্চলেই যৎসামান্য নজরে পড়ে। বিচরণ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বনাঞ্চলে এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পার্বত্য অরণ্যে। স্যাঁতসেঁতে এলাকা দারুণ পছন্দ এদের। বেশিরভাগ সময় একাকী বিচরণ করে। স্বভাবে মোটামুটি শান্ত। মাঝারি আকৃতির গাছের চিকন ডালে বসে অকারণে এদিক সেদিক ঘাড়টাকে ফেরাতে থাকে। কণ্ঠস্বর সুমধুর। গান গায় ‘সিট-সি-সি’ সুরে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, কম্বোডিয়া, তাইওয়ান, লাওস, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত। যে পাখিটি নিয়ে লিখছি তার বাংলা নাম: ‘ধলাভ্রু চুটকি’, ইংরেজি নাম: স্নোয়ি ব্রোয়েড ফ্লাইকেচার (Snowy-browed Flycatcher), বৈজ্ঞানিক নাম: Ficedula hyperythra | এরা ‘সাদাভ্রু চটক’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কম-বেশি ১১-১৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির চোখের ওপর মোটা সাদাভ্রু। থুতনি, কপাল, চোখের সামনের দিক কালচে। মাথা পিঠ গাঢ় নীল। ডানার মধ্য পালক লালচে। গলা এবং বুক লালচে-কমলা। পেট সাদা। স্ত্রী পাখির ভ্রু কমলা-বাদামি। বুকে ফুটকি। ডানার মধ্য পালক এবং লেজ লালচে। উভয়ের ঠোঁট শিঙ কালো। পা ধূসর। প্রধান খাবার: শুককীট, মাকড়সা, কেঁচো ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে অক্টোবর। শৈবাল বা তন্তু দিয়ে গাছের ডালে কাপ আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৪টি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 05/06/2015
সাদালেজ ফিদ্দা | White tailed Stone Chat | Saxicola leucurus
সাদালেজ ফিদ্দা | ছবি: ইন্টারনেট প্রাকৃতিক আবাসস্থল ঝাউবন, গুল্মলতাদির ঝোঁপ। এছাড়াও জলাশয়ের কাছাকাছি ঘাসবন ও নলখাগড়ার বনে বিচরণ রয়েছে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও পাকিস্তান পর্যন্ত। চেহারা বেশ আকর্ষণীয়। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি নিষ্প্রভ। বিচরণ করে একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে। স্বভাবে চঞ্চল। উড়ন্ত অবস্থায় পোকামাড়ক শিকার করতে পটু। নিচে নেমেও শিকার ধরে। খেয়েদেয়ে ঘাসের ডগায় ঠোঁট ঘঁষে পরিষ্কার করে নেয়। এরা ভূমিতে খুব বেশি বিচরণ করে না। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। লম্বা ঘাসের ডগায় বসে দোল খেতে পছন্দ করে। গান গাওয়ার সময় শরীরের পেছনের অংশ দোলাতে থাকে। দেশে প্রজাতিটি বিরল দর্শন। শুধু দেখা মিলে পদ্মা তীরবর্তী অঞ্চলে। বিশেষ করে ঘাসবনে। প্রজাতিটি বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়। আইইউসিএন এদেরকে উদ্যোগ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘সাদালেজ ফিদ্দা’, ইংরেজি নাম: হোয়াইট টেলড স্টোন চ্যাট (White-tailed Stone Chat), বৈজ্ঞানিক নাম: Saxicola leucurus | এরা ‘ধলালেজ শিলাফিদ্দা’ ‘সাদালেজি শিলাফিদ্দা’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ১২-১৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৩০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা ও ঘাড় কালো। ঘাড়ের দু’পাশ সাদা। পিঠ কালচে বাদামি। ডানার প্রান্ত পালক হালকা বাদামি। লেজ সাদা-কালো। গলা কালো। বুক গাঢ় কমলা। দেহতল ফিকে সঙ্গে পীতাভ আভা। ঠোঁট ও পা কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির দেহের ওপরের দিকটায় গাঢ় ধূসর এবং নিচের দিকটায় কমলার আভা লক্ষ্য করা যায়। প্রধান খাবার: শুঁয়োপোকা, গুবরেপোকা, ফড়িং, মাছি, পিঁপড়াসহ অন্যান্য পোকামাকড়। এ ছাড়া শস্যবীজের প্রতি আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ঝাউ প্রজাতির গাছপালায়। পেয়ালা আকৃতির বাসা। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে পালক, ঘাস, তন্তু ও শিকড় ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৪ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ২০-২১ দিন। লেখক: আলমশাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 13/01/2017
লম্বাঠোঁটি শকুন | Cinereous Vulture | Aegypius monachus
লম্বাঠোঁটি শকুন | ছবি: ইন্টারনেট হিংস্র চেহারার মনে হলেও তত হিংস্র নয়। আকারে বড়সড়ো। অধিক ওজনের কারণে হাঁটাচলা করতে খানিকটা বেগ পেতে হয়। ভারিক্কিচালে হেলেদুলে কিংবা লাফিয়ে হাঁটাচলা করে। পাহাড়ি অঞ্চলে বেশি নজরে পড়ে। দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, হিমালয় অঞ্চল, আফগানিস্তান, পর্তুগাল, দক্ষিণ ফ্রান্স, গ্রিস, স্পেন, তুরস্ক, মঙ্গোলিয়া, চীন পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘লম্বাঠোঁটি শকুন’, ইংরেজি নাম: ‘সিনেরিয়াস ভালচার’, (Cinereous Vulture) বৈজ্ঞানিক নাম: Aegypius monachus। দৈর্ঘ্য কমবেশি ৯৮-১১০ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ২৫০-২৯৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৭-১২ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। মাথা, পিঠ গাঢ় বাদামি সঙ্গে নীলচে ধূসরের মিশ্রণ রয়েছে। ঘাড় নীলচে ধূসর। ডানার পালক প্রান্ত কালচে বাদামি। ওড়ার পালক সাদা-কালো। লেজ খাটো কালচে বাদামি। গলা ময়লা সাদা চামড়ায় আবৃত। দেহতল কালচে বাদামি। ঠোঁটের গোড়া নীলচে ধূসর, অগ্রভাগ কালো। ওপরের ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। পা ধূসর হলেও গোলাপি আভা বের হয়। প্রধান খাবার: সব ধরনের মৃতদেহ বা উচ্ছিষ্ট খাবার শামুক, পাখির ডিম, ছোট পাখি, খরগোশ, সরীসৃপ ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে উঁচু গাছের ডালে সরু লাঠি দিয়ে। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৫০-৫৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/01/2018
খয়রা কাঠকুড়ালি | Rufous Woodpecker | Celeus brachyurus
খয়রা কাঠকুড়ালি | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন আবাসিক পাখি। দেখতে মন্দ নয়। দেশের সর্বত্রই কম-বেশি নজরে পড়ে। চিরসবুজ, পাতাঝরা বন অথবা আর্দ্র পাতাঝরা বন, বাঁশবন, শালবন এমনকি গ্রামীণ বন-বনানীতেও বিচরণ রয়েছে। খাদ্যের সন্ধানে উইঢিবিতে হানা দিতে দেখা যায়। বিচরণ করে একা কিংবা জোড়ায় জোড়ায়। একাকী বিচরণের ক্ষেত্রে জোড়ের পাখির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে। এ সময় ওরা নাকি সুরে ‘কুয়িন-কুয়িন-কুয়িন-’ আওয়াজ করে একে অপরের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান চালিয়ে যায়। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করতে মরা গাছের কাণ্ডে ঠোঁট দিয়ে জোরে জোরে ড্রাম বাজানোর মতো শব্দ করে। এ ছাড়াও ডানা জাপটিয়ে উড়ে ভন ভন আওয়াজ করে স্ত্রীর মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। বাংলাদেশ ছাড়া প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্নমুক্ত। বাংলাদেশে বিপন্নমুক্ত হলেও দেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়নি। অবশ্য এদের শত্রু সংখ্যা তেমন একটা নেই। বলা যায় আমাদের দেশে মোটামুটি ভালো অবস্থানে রয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘খয়রা কাঠকুড়ালি’, ইংরেজি নাম: ‘রূপাস উডপেকার (Rufous Woodpecker), বৈজ্ঞানিক নাম: Celeus brachyurus | এরা ‘লালচে কাঠঠোকরা’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি লম্বায় ২৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১০৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে সামান্য তফাৎ লক্ষ্য করা যায়। উভয়ের দেহের বর্ণে সামান্য পার্থক্য রয়েছে এবং স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য ছোট। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখির দেহের রং লাল-বাদামি। মাথায় ঝুঁটি আকৃতির খাড়া পালক। পিঠে কালো আড়াআড়ি ডোরা। কাঁধ-ঢাকনি, ডানা, লেজের পালকে কালো-ডোরার উপস্থিতি রয়েছে। গলার পালক ফ্যাকাসে এবং মাছের আঁশের মতো দেখায়। স্ত্রী পাখির কান-ঢাকনি পীতাভ-ফ্যাকাসে। চোখের নিচে অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির উজ্জ্বল লাল পট্টি। উভয়ের চোখ বাদামি-লাল। ঠোঁট কালো, শক্ত-মজবুত। ঠোঁটের অগ্রভাগ সূচালো। পা ও পায়ের পাতা নীলচে সবুজ। নখ কালো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের বুকে ও তলপেটে আড়াআড়ি ডোরা ও অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির দাগ দেখা যায়। প্রধান খাবার: উইপোকা, গাছ পিঁপড়া, বুনো ডুমুর ও ফুলের মধু। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। মরা গাছের কাণ্ডে নিজেরা খোড়ল করে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 27/02/2015
হলদে পা নাটাবটের | Yellow Legged Buttonquail | Turnix tanki
হলদে পা নাটাবটের | ছবি: ইন্টারনেট বিরল প্রজাতির আবাসিক পাখি। উনিশ শতকের দিকে চট্টগ্রাম বিভাগে দেখা গেছে। সম্প্রতি ঢাকা ও সিলেট বিভাগে দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড ও কোরিয়া পর্যন্ত। হলদে পা নাটাবটের বিশ্বে বিপন্মুক্ত বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। দেশের বন্যপ্রাণী আইনে এদের সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়নি। প্রজাতিটি স্বভাবে হিংসুটে নয়। স্বগোত্রীয়দের আগমনে বিরক্ত হয় না। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় তৃণভূমিতে বিচরণ করে। খুব সাবধানে হেঁটে বেড়ায়। প্রজননকালীন সময়ে হাঁকডাক বেড়ে যায়। এ সময় জোরে জোরে ডাকে ‘হু-ওন… হু-ওন…’ সুরে। প্রজাতিটি দেশের সর্বত্র যত্রতত্র দেখা না গেলেও খুলনা, বাগেরহাট, ফকিরহাট, যশোর, কুষ্টিয়ার আখমহালে দেখা মেলে। পাখির বাংলা নাম: ‘হলদে পা নাটাবটের’, ইংরেজি নাম: ‘ইয়োলো লেগড বাটন কোয়েল’ (Yellow-legged Buttonquail), বৈজ্ঞানিক নাম: Turnix tanki | বাংলাদেশে তিন প্রজাতির নাটাবটের সাক্ষাৎ মেলে। যেমন দাগি নাটাবটের, হলদে পা নাটাবটের, ছোট নাটাবটের। লম্বায় ১৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৪০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির রং ভিন্ন। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রং বদলায়। এ সময় মাথার তালু পীতাভ ডোরাসহ কালচে দেখায়। পিঠ বাদামি-ধূসর। ডানার কোভার্ট পীতাভ। পিঠ, বুকের পাশ ও বগলে কালো চিতি। থুঁতনি ও গলা সাদাটে। অপরদিকে স্ত্রী পাখির ঘাড় লালচে। গলা ও ঘাড়ের পাশ এবং বুক লাল-কমলা। অপ্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী পাখির মাথার তালুতে পীতাভ ডোরা থাকে। তা ছাড়া ঘাড় থাকে লাল-ধূসর। লেজের গোড়ার দিকের পালক ধূসরাভ। উভয়ের চোখ সাদা। ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা হলুদ। প্রধান খাবার: শস্যবীজ, পিঁপড়া ও পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে নভেম্বর। ঝোপ-জঙ্গলের ভেতর মাটির ওপর ঘাস-লতা দিয়ে গম্বুজ আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/02/2015
বড় বনলাটোরা | Large Woodshrike | Tephrodornis gularis
বড় বনলাটোরা | ছবি: ইন্টারনেট মিশ্র পর্ণমোচী বন, বন প্রান্তর এবং চিরহরিৎ বনের বাসিন্দা। স্থানীয় প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশ ছাড়া বড় বনলাটোরার বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর পর্যন্ত। দূরদর্শনে ‘পাতি বনলাটোরা’ মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। চেহারায়ও খুব একটা ভিন্নতা নেই। শুধু আকারে একটু বড় এরা। প্রজাতির কারোই আহামরি রূপ নেই। তবে চেহারাটা মায়াবি ধাঁচের। বিশেষ করে ওদের কাজল কালো চোখ পাখি প্রেমীদের মায়া জাগিয়ে তোলে। প্রজাতির দেখা মেলে শুষ্ক বন-বনানী কিংবা ঘন পাতার গাছগাছালির ডালে। ভাওয়াল শালবনে বেশি দেখা মেলে। স্বভাবে শান্ত। কিছুটা লাজুকও। উঁচু গাছের ঘন পাতার আড়ালে বিচরণ করে। শিকারে বের হয় জোড়ায় কিংবা ছোট দলে। পতঙ্গভুক অন্যান্য পাখির সঙ্গেও শিকারে বের হয়। মাটিতে নেমেও শিকার খোঁজে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি সুর করে গান গায়। সুর শুনতে মন্দ নয়। উভয় প্রজাতিই কিছুটা বোকা কিছিমের। স্ত্রী পাখি যখন ডিমে তা দেয় ঠিক তখনই পুরুষ পাখি মনের আনন্দে সামান্য দূরের গাছের ডালে বসে গান গাইতে থাকে। ফলে চতুর শিকারি পাখিরা বুঝে যায় ওদের বাসার অবস্থান। এবার অন্য প্রসঙ্গে যাচ্ছি। একটি ভালো খবর দিতে চাই আপনাদের। পত্রিকায় প্রকাশিত পাখি নিয়ে আমার লেখাগুলো যারা এক সঙ্গে পেতে চান তারা https://pakhi.tottho.com ঠিকানায় ক্লিক করতে পারেন। এমন একটি সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন বগুড়া জেলার একজন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ হাবিবুর রহমান। ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাকে, পাখি সংক্রান্ত সব ক’টি লেখা একত্রিত করার জন্য। এ পাখির বাংলা নাম: ‘বড় বনলাটোরা’, ইংরেজি নাম: ‘লার্জ উডশ্রাইক’ (Large Woodshrike), বৈজ্ঞানিক নাম: Tephrodornis gularis| এরা ‘বড় সুধুকা’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ১৮-২৩ সেন্টিমিটার। ওজন ২৮-৪৬ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। উভয়েরই কাজল কালো চোখ। চোখের দু’প্রান্তে চওয়া কালো টান। মাথা নীল কালো। ঘাড় ও পিঠ কালচে-ছাই রঙের। ডানার প্রান্ত কালচে-বাদামি। লেজ গাঢ় খয়েরি। লেজের মধ্যখানের পালক দুটোতে ছাই রঙের ছোপ, বাইরের পালক ময়লা সাদা। গলার নিচে থেকে বুক পর্যন্ত ছাই রঙ। বুকের নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত সাদাটে। ঠোঁট সে্লট কালো। পা সিসে-কালো। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ। বিশেষ করে পঙ্গপাল, ফড়িং ও ঝিঁঝিঁ পোকার প্রতি আসক্তি বেশি। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন সময়ের হেরফের লক্ষ্য করা যায়। বাসা বাঁধে গাছের উঁচুতে তে-ডালের ফাঁকে। ঘাস, লতাপাতা, শিকড় ও মাকড়সার জাল দিয়ে পেয়ালা আকৃতির বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/11/2015
চিতিপাক গোশালিক | Spot winged Starling | Saroglossa spiloptera
চিতিপাক গোশালিক | ছবি: ইন্টারনেট বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাস্থল পরিষ্কার বনপ্রান্ত, খোলা বন, কৃষিজমি। এ ছাড়াও পর্বতের ৭০০-১০০০ মিটার উঁচুতে দেখা যায়। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না। বেশির ভাগই জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। বিচরণ করে ছোট দলেও। স্বভাবে অন্যসব শালিকের মতোই ঝগড়াটে। সারাদিন খুনসুটি করে কাটায়। তবে ওদের ঝগড়া খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায় না, কিচির-মিচির পর্যন্তই ঝগড়া। পরক্ষণে আবার মিলেও যায়। আবার শুরু। এভাবেই দিন কাটে। পারতপক্ষে কেউ কাউকে আক্রমণ করে না। চলাফেরায় খুব হুঁশিয়ারি। বিশ্বে এদের অবস্থান তত ভালো নয়। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘চিতিপাক গোশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘স্পট-উইংড স্টার্লিং’ (Spot-winged Starling), বৈজ্ঞানিক নাম: Saroglossa spiloptera। এরা ‘লালচেগলা শালিক’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১০ প্রজাতির শালিক নজরে পড়ে। যথাক্রমে: গো-শালিক, ভাত শালিক, ঝুঁটি শালিক, গাঙ শালিক, পাতি কাঠশালিক, গোলাপি কাঠশালিক, চিতিপাখ গোশালিক, খয়রালেজ কাঠশালিক, বামুন কাঠশালিক ও ধলাতলা শালিক। এরা লম্বায় ১৯-২০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা বাদামি। ঘাড় ও পিঠ ধূসর এবং কালো-বাদামি। ডানার প্রান্ত নীলাভ কালো। লেজ লালচে বাদামি। গলা লালচে। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত সাদাটে। বুকের দু’পাশ শেয়ালে লাল। ঠোঁট নীলাভ কালো। চোখের বলয় সাদা। পা বেগুনি কালো। দেখতে একই রকম মনে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। আকারেও সামান্য ছোট। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, পিঁপড়া, ছোট ফল, ফুলের মধু। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বাঁধে ৬-১০ মিটার উচ্চতার গাছের প্রাকৃতিক কোটরে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, লতাপাতা, দড়ি, কাপড়ের টুকরো ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/08/2017