বড় সুইচোরা | Blue bearded Bee eater | Nyctyornis athertoni
বড় সুইচোরা | ছবি: ইন্টারনেট সুইচোরা, পুরো নাম ‘বড় সুইচোরা’। দুর্লভ আবাসিক পাখি। স্লিম গড়ন। সুদর্শনও বটে। চাহনি রুক্ষ হলেও স্বভাবে অহিংস। যত্রতত্র দেখা মেলে না। মাঝে-মধ্যে এদের খোঁজ মেলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আর্দ্র পাতাঝরা ও চিরসবুজ অরণ্যের স্রোতধারায়। আবাদযোগ্য জমির আশপাশেও দেখা যায়। সুইচোরা অরণ্যের ভেতর ফাঁকা স্থানে বা জলাশয়ের কিনারে গাছের ওপর একাকী বসে থাকে শিকারের প্রতীক্ষায়। তবে যেখানেই বসুক না কেন, আশপাশটা ঝাপ-জঙ্গল-লতাপাতা কিংবা ঘন ডালপালাবিহীন মুক্তাঞ্চল হওয়া চাই-ই। যাতে কিছু সময় পর পর উড়তে সুবিধা হয়। সব ধরনের সুইচোরা পাখি উড়ন্ত অবস্থায়ই পতঙ্গ শিকার করে। দৃষ্টিসীমার মধ্যে যে কোনো ধরনের কীটপতঙ্গ দেখলেই ছোঁ মেরে ধরে ফেলে এ পাখি। জলপানেও রয়েছে এদের বৈচিত্র্যতা। জলের ওপর উড়ে উড়ে ছোঁ মেরে এরা জল পান করে। স্থিরতা এদের মাঝে খুবই কম। কোথাও একদণ্ড বসে থাকার ফুরসত নেই যেন। বিরক্ত হলে ‘কর-র-র…কর-রর…’ কণ্ঠে আওয়াজ করে। বাংলাদেশ ছাড়া সুইচোরার বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ত পর্যন্ত। আইইউসিএনের ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে এ পাখি অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বণ্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘বড় সুইচোরা’, ইংরেজি নাম: ‘ব্লুবারডেড বী-ইটার’ (Blue-bearded Bee-eater), বৈজ্ঞানিক নাম: Nyctyornis athertoni | এরা ‘নীলদাড়ি সুইচোর’ বা ‘পাহাড়ি সুইচোরা’ নামেও পরিচিত। সুইচোরা লম্বায় ৩৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তফাৎ নেই। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কপাল নীল। ঘাড়, পিঠ ও লেজ সবুজ। লেজের নিচের দিক হলুদাভ। লেজের ডগা ভোঁতা। ডানার নিচের পালক হলুদাভ-পীতাভ। গলায় রয়েছে দাড়িসদৃশ নীল রঙের পালক, যা বুকের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। বুক কালচে নীল। পেট হলুদাভ-পীতাভ ডোরা। বাঁকানো ঠোঁট শিঙ বাদামি রঙের। নিচের ঠোঁটের গোড়া ধূসর। চোখ উজ্জ্বল সোনালি-কমলা। পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে সবুজ। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের নীলদাড়ি থাকে না। প্রধান খাবার: মৌমাছি, ফড়িং, বোলতা, গুবরে পোকা ইত্যাদি। ফুলের মধুর প্রতি যথেষ্ট আসক্তি রয়েছে। এদের প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট। বন-জঙ্গল বেষ্টিত জলাধারের খাড়া কিনারে অথবা পাহাড়ের গায়ে এরা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২০-২১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 26/10/2018
সাদাভ্রু দামা | Eyebrowed Thrush | Turdus obscurus
সাদাভ্রু দামা | ছবি: ইন্টারনেট মূলত পরিযায়ী পাখি। তৈগা ও সাইবেরিয়া অঞ্চলের সরলবর্গীয় বনে বিচরণ করে। শীতে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, তাইওয়ান, উত্তর চীন, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়াতে পরিযায়ী হয়ে আসে। এ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি বেরিং সাগরের দ্বীপ, উত্তর আমেরিকার আলাস্কা, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ইউরোপের কিছু অংশ পর্যন্ত। এরা ভূচর পাখি। গানের গলা ভালো। মিষ্টি সুরে গান গায়। গাছের উঁচু ডালে বসে খুব ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে গান গায়। স্বভাবে লাজুক। বেশিরভাগই একাকি বিচরণ করলেও শীতে ছোট ঝাঁকে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুমে দেখা যায় জোড়ায় জোড়ায়। এরা পরিত্যক্ত বা স্যাঁতস্যাঁতে এলাকার লতাপাতা উল্টিয়ে এবং ঘন ঘন ঠোঁট চালিয়ে খাবার খোঁজে। মন ভালো থাকলে মাঝে মাঝে পেটের পালক ফুলিয়ে উল্লাস করে। গাছের উঁচুতে খুব একটা দেখা যায় না। দেশের সর্বত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রজাতিটির বাংলা নাম: ‘সাদা-ভ্রু দামা’, ইংরেজি নাম: ‘আইব্রোড থ্রাস’(Eyebrowed Thrush), বৈজ্ঞানিক নাম: Turdus obscurus | এরা ‘ভ্রুলেখা দামা’ নামেও পরিচিত। এরা দৈর্ঘ্যে ২১-২৩ সেন্টিমিটার লম্বা। ওজন ৬১-১১১ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন হলেও সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় ও পিঠ বাদামি-ধূসর। চিবুক কালচে বাদামি। চোখের ওপর চওড়া সাদা ভ্রু। চোখের নিচের দিকে এবং গালেও সাদা দাগ রয়েছে। গলা সাদা। বুক এবং বুকের দু’পাশ কমলা। পেট থেকে লেজতল সাদা। চোখের বলয় সাদাটে। উপরের ঠোঁট শিং কালো, নিচের ঠোঁটের গোড়ার দিকে হলুদ এবং অগ্রভাগ শিং কালো। পা ময়লা-হলুদ। অপরদিকে স্ত্রী পাখির চেহারা পুরুষের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ। প্রধান খাবার: কেঁচো, পোকামাকড়, ছোট শামুক। এ ছাড়াও ছোট ফল-ফলাদির প্রতি আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুলাই। মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে আগস্টের দিকে প্রজনন ঘটে। এ ছাড়াও অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ৪-২০ ফুট উঁচুতে। কাপ আকৃতির বাসা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শৈবাল, শুকনো ঘাস ও লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে সপ্তাহ দুয়েক। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 27/05/2016
গৃহবাসী বাতাসি | Little Swift | Apus affinis
গৃহবাসী বাতাসি | ছবি: ইন্টারনেট চড়–ইদের মতো এরাও ঘরকুনো পাখি। দিনে উড়ে বেড়ায় খোলা প্রান্তরে। রাতে পুরনো দর-দালানে আশ্রয় নেয়। বছরের পর বছর একই স্থানে কাটিয়ে দেয়। অতি সুলভ দর্শন, স্থানীয় প্রজাতির পাখি। ছোট-বড় দলে বাস করে। চেহারা তত আকর্ষণীয় নয় বরং হিংস রাগী দেখায়। কেবল আক্রান্ত হলে আক্রমণ করে। সারাদিন উড়ে বেড়ায়। উড়ন্ত অবস্থায় এদের ঠোঁট, মাথা ও লেজ সমান্তরাল থাকে। ফলে দূর থেকে মাথা এবং লেজ শনাক্ত করা কঠিন হয়। শুধুমাত্র উড়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার কারণে মাথা-লেজ শনাক্ত করা যায়। শরীরের তুলনায় ডানা লম্বা থাকার কারণে উড়ন্ত অবস্থায় ডানা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। কণ্ঠস্বর কর্কশ, জোরে জোরে শিস দেয়। ছোট-বড় দলে বিচরণ করে। মাঝেমধ্যে জোড়ায়ও দেখা যায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, দক্ষিণ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত। সমগ্র বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক। বাংলাদেশে সুলভ দর্শন, কোথাও কোথাও অতি সুলভ দর্শন। পাখির বাংলা নাম: ‘গৃহবাসী বাতাসি’, ইংরেজি নাম: ‘লিটল সুইফট’ (Little Swift), বৈজ্ঞানিক নাম: Apus affinis | এরা ‘ঘর বাতাসি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ১২-১৩ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৩৩-৪২ সেন্টিমিটার। ওজন ২৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। কপাল বাদামি কালো পালিশ করা। মাথা, ঘাড় বাদামি কালো। পিঠ নীলাভ কালো। কোমর সাদা। লেজ কালো। গলা সাদা। দেহতল কালো। ঠোঁট কালো, ছোট। ঠোঁটের অগ্রভাগ কিঞ্চিত বাঁকানো। পা ছোট। পায়ের তুলনায় নখ বড় এবং ধারালো। প্রধান খাদ্য: উড়ন্ত পোকামাকড়, পিঁপড়া। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। অঞ্চলভেদে অক্টোবর থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে পুরনো দর-দালানে অথবা পুরনো পুলের বিমের ফাঁকে। ডিম পাড়ে ১-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 28/07/2017
ধলাচোখ ফুটকি | White Spectacled Warbler | Seicercus affinis
ধলাচোখ ফুটকি | ছবি: ইন্টারনেট স্বভাবে পরিযায়ী। প্রাকৃতিক আবাসস্থল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় চিরহরিৎ বনাঞ্চল। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না। সুশ্রী গড়ন। পুরুষ পাখির নজরকাড়া রূপ। স্ত্রী পাখির চেহারা নিষ্প্রভ। অনেক সময় স্ত্রী-পুরুষ পাখিকে ভিন্ন প্রজাতি মনে হয়। পুরুষ পাখির চোখের বলয় সাদা, ফলে দূর থেকে মনে হতে পারে চশমা পরে আছে। তাই অনেকে এদের ‘চশমাপরা পাতা ফুটকি’ নামে ডাকে। অস্থিরমতি পাখি। কোথাও একদণ্ড বসে থাকার জো নেই। প্রজনন মৌসুমে নিজ বাসভূমিতে চলে যায়। বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায়। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল, ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল এবং পশ্চিম আফ্রিকা পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়, তবে স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। আইইউসিএন এদের কম উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ধলাচোখ ফুটকি’, ইংরেজি নাম: ‘হোয়াইট স্পেক্ট্যাকাল ওয়ার্বলার (White-spectacled Warbler), বৈজ্ঞানিক নাম: Seicercus affinis। গড় দৈর্ঘ্য ১১-১২ সেন্টিমিটার। ওজন ৪-৬ গ্রাম। মাথা ও ঘাড় উজ্জ্বল ধূসর। পিঠ উজ্জ্বল জলপাই। ডানার প্রান্ত পালক ধূসর। লেজ ধূসর। দেহতল সবুজেটে জলপাই। চোখের বলয় সাদা, মণি বাদামি। ঠোঁট ওপরের অংশ ত্বক কালচে, নিচের অংশ ত্বক বর্ণের। পা হলদে। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম হিমালয়াঞ্চলে এপ্রিল থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। শুকনো ঘাস দিয়ে প্যাঁচিয়ে কাপ আকৃতির বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৪ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 29/09/2017
ছোট তুর্কী বাজ | Shikra | Accipiter badius
ছোট তুর্কী বাজ | ছবি: ইন্টারনেট বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, দক্ষিণ চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইরান, আজারবাইজান, দক্ষিণ রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইথিওপিয়া থেকে সাহারা পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাস্থল পর্ণমোচী বদ্ধ শামিয়ানা বনভূমি। এ ছাড়াও শহরাঞ্চলেও বিচরণ রয়েছে। অন্যসব শিকারি পাখিদের মতো এরাও স্বভাবে হিংস। সাধারণত শিকারে বের হয় একাকী। তবে জোড়ায় জোড়ায়ও দেখা যায়। বন-বনানী কৃষিজমি কিংবা জলাশয় এলাকায় শিকার খুঁজে বেড়ায়। উড়তে উড়তে তীক্ষস্বরে ডাকে। হিমালয় অঞ্চলে ১৪০০ মিটার উঁচুতেও এদের দেখা যায়। দেশে প্রজাতিসুলভ দর্শন হলেও বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ছোট তুর্কী বাজ’, ইংরেজি নাম: ‘শিকরা’ (Shikra), বৈজ্ঞানিক নাম: Accipiter badius। এরা ‘পাতি শিকরে’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ৩০-৩৬ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৫৮-৬০ সেন্টিমিটার। ওজন ৭৫-১৬০ গ্রাম। মাথা নীল ধূসর। ঘাড়ে আবছা লালচে দাগ। পিঠ গাঢ় ধূসর। গলা সাদাটে। বুক ও পেট লালচে ডোরাকাটা। ধূসর লেজ কিছুটা লম্বা। উরু সাদা। চোখ লাল। ঠোঁট কালচে, নিচের দিকে বাঁকানো। ঠোঁটের গোড়া হলুদ। পা হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য তফাৎ রয়েছে। স্ত্রী পাখি আকারে খানিকটা বড়। ওদের দেহতল বেশি লালচে-বাদামি। চোখ হলুদাভ কমলা। যুবাদের রঙে পার্থক্য রয়েছে। প্রধান খাবার: ছোট পাখি, মাছ, টিকটিকি, ইঁদুর, ব্যাঙ পোকামাকড় ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে মার্চ। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের লক্ষ করা যায়। অগোছালো বাসা, শ্রীছাদ নেই। বাসা বাঁধে গাছের উঁচু ডালে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো চিকন ডালপালা। নিরাপদ হলে একই বাসায় ফি বছর ডিম-বাচ্চা ফোটায়। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩০-৩৫ দিন। শাবক শাবলম্বী হতে প্রায় মাস খানেক সময় লাগে। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/02/2017
ধলাগলা বাতাই | White cheeked Partridge | Arborophila atrogularis
ধলাগলা বাতাই | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন আবাসিক পাখি। দেখতে অনেকটাই কোয়েলের মতো। তবে প্রজাতিভেদে ভিন্ন। দেশের সর্বত্র দেখার নজির নেই। কেবল বৃহত্তর সিলেট জেলার চিরসবুজ অরণ্যে দেখা মেলে। একসময় চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরসবুজ অরণ্যে বিচরণ ছিল। দেখা যেত ওদের প্রিয় বিচরণ স্থান বাঁশবনে। সিলেট অঞ্চলের চিরসবুজ বনের ঝোপঝাড়ে ছোট দলে হেঁটে বেড়ায় এখনো। তবে সংখ্যায় খুবই কম। খাদ্যের সন্ধানে বেশিরভাগই খোলামাঠে বিচরণ করে। খাবার সংগ্রহ করে লতাপাতা উল্টিয়ে। চলাফেরায় খুব হুঁশিয়ারি ভাব লক্ষ্য করা যায়। সামান্য ভয় পেলে দৌড়ে ঝরা পাতার নিচে লুকিয়ে পড়ে। শুকনো পাতার সঙ্গে দেহের বর্ণ একাকার হয়ে যাওয়ায় দূর থেকে চেনার উপায় থাকে না। মন ভালো থাকলে গোধূলিলগ্নে ‘হুইও-হুইও’ সুরে গান গায়। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রজাতিটির যৎসামান্য সাক্ষাৎ মেলে ভারত, মিয়ানমার ও চীনে। এরা বিশ্বে বিপদগ্রস্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। আমাদের দেশে এ প্রজাতির পাখিগুলো সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয় বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ায় এমন মানুষের হাতে। বিশেষ করে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের লোকরা এদের বিভিন্ন কৌশলে শিকার করে। এ ছাড়াও প্রকৃতিতে এদের প্রধান শত্র“ হচ্ছে বেজি। আড়ালে আবডালে ঘাপটি মেরে থেকে হঠাৎ করে এদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কামড়িয়ে মাথাটা আলাদা করে ফেলে। এভাবে অপঘাতে প্রাণ হারিয়ে কোনো রকম অস্তিত্ব নিয়ে টিকে আছে প্রজাতিটি। প্রজাতিটির প্রতি সহানুভূতি না দেখাতে পারলে যে কোনো সময় এরা আমাদের দেশ থেকে বিলীন হয়ে যেতে পারে। সিলেট অঞ্চলের প্রিয় পাঠক ভাইদের প্রতি অনুরোধ রইল এদের বাঁচিয়ে রাখার। পাখির বাংলা নাম: ‘ধলাগলা বাতাই’, ইংরেজি নাম: হোয়াইট-চিকেড পারট্রিজ (White-cheeked Partridge), বৈজ্ঞানিক নাম: Arborophila atrogularis | লম্বায় ২৮ সেন্টিমিটার। ওজন ২২৫ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কপাল ধূসর। মাথার তালু বাদামি। ঘাড়ের পালকে রয়েছে কমলা-হলুদের মিশ্রণ। পিঠের কালো দাগে রয়েছে হালকা বাদামির মিশ্রণ। চোখের পাশে কালো ডোরা। মণি লালচে বাদামি। গলা সাদা। কাঁধ কালো-লালচে ডোরা। বুক ধূসর। তলপেট কালো। লেজের তলা সাদা। পুরুষ পাখির ঠোঁট কালো। পা ও পায়ের পাতা হালকা গোলাপি। প্রধান খাবার: পোকামাকাড়, রসালো ফল, ছোট শামুক ও শস্যবীজ। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। বাসা বাঁধে ঝোপ-জঙ্গলের ভেতর মাটির গর্তে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৬-১৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 07/03/2014
ঝুঁটিয়াল বাতাসি | Crested Tree swift | Hemiprocne coronata
ঝুঁটিয়াল বাতাসি | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন। একসময় শীতে পার্বত্য এলাকায় দেখা যেত। হালে দেশে এদের দেখা যাওয়ার তেমন একটা নজির নেই। আশির দশকেও পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে দেখা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল বিক্ষিপ্ত গাছ-গাছালি, পর্ণমোচী বন। বন প্রান্তরের ন্যাড়া গাছ বেশি পছন্দ। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। অবসরে দলের সবাই ন্যাড়া গাছের ডালে বসে গা খোঁটাখুঁটি করে। চেহারা অনেকটাই ভিনদেশি ‘ককাটিল’ পাখির মতো। পাখিবিশারদ ছাড়া প্রজাতি শনাক্ত করা কঠিনই বটে। দেখতে হিংস্র মনে হতে পারে। তবে পারতপক্ষে ওদের আচরণে হিংস্রতা প্রকাশ পায় না। আক্রান্ত হলেই কেবল আক্রমণ করে। আত্মরক্ষার্থে অনেক সময় মানুষকেও ছাড় দেয় না। বন্দি হলে ঠোঁট ও নখের আঁচড়ে জখম করে দেয়। শরীরের তুলনায় ডানা লম্বা। এ কারণে উড়ন্ত অবস্থায় ডানা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। মূলত এরা বন-পাহাড়ি অঞ্চলে বিচরণ করে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৬৫ মিটার উচ্চতায়ও ওদের বিচরণ করতে দেখা যায়। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। একাকী অথবা দলবদ্ধভাবে সারা দিন ওড়াউড়ি করে কাটায়। উড়ন্ত অবস্থায়ই পতঙ্গ শিকার করে। বেশ দ্রুত উড়তে পারে। জলপান ব্যতিরেকে পারতপক্ষে ভূমি স্পর্শ করে না। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, দক্ষিণ চীন ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে বিরল দর্শন। ফলে আইইউসিএন এদের ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত পাখি হিসেবে শনাক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ঝুঁটিয়াল বাতাসি’, ইংরেজি নাম: ‘ক্রেস্টেড ট্রি সুইট’ (Crested Tree swift), বৈজ্ঞানিক নাম: Hemiprocne coronata | এরা ‘খোঁপাযুক্ত বাতাসি’ নামেও পরিচিত। পাখিটির গড় দৈর্ঘ্য ২৩ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য ভিন্নতা আছে। মাথা আসমানি-ধূসর। মাথায় ২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার উঁচু সবুজাভ নীল ঝুঁটি। পিঠ আসমানি ধূসর। ডানা লম্বা সুচালো কালচে, নিচের দিকে ধূসরাভ। লেজ লম্বা ও দ্বিখণ্ডিত। পুরুষ পাখির মুখাবয়ব লালচে-বাদামি। আর স্ত্রী পাখির মুখাবয়ব ধূসর। গলা ধূসরাভ। দেহতল ধূসরাভ-সাদা। চোখ বাদামি-কালো। ঠোঁট কালো এবং যথেষ্টই খাটো। পা কালচে। যুবাদের রং ভিন্ন। ঝুঁটিয়াল বাতাসির প্রধান খাদ্য কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড়। গোবরে পোকার প্রতি আসক্তি লক্ষ করা যায়। এদের প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। অঞ্চলভেদে ভিন্ন। গাছের ধ্বংসাবশেষে ওরা বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে তিন থেকে পাঁচটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫ থেকে ১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 25/05/2018