ভূমা পেঁচা | Dusky eagle owl | Bubo coromandus
ভূমা পেঁচা | ছবি: ইন্টারনেট স্থানীয় প্রজাতির পাখি। ভয়ঙ্কর দর্শন। হলুদ রঙের গোলাকার চোখ। গোলাকার শারীরিক গঠনও। দিনে গাছের বড় পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। কিছুটা লাজুক স্বভাবের বলা যায়। জনবসতি আছে এমন সব আমবাগানে অথবা তেঁতুল গাছে বিচরণ করে। বিচরণ করে জোড়ায় জোড়ায়। একজোড়া অনেক বছর যাবৎ একই গাছে বাসা বাঁধে। গাছের ডালে চোখ প্রসারিত করে চুপচাপ বসে থাকে। ওই অবস্থায় যে কেউ দেখলে ভয় পেতে পারেন। তার ওপর গুরুগম্ভীর সুরে ডেকে ওঠে, ‘দুঃখ দুঃখ দুঃখ’। যার ফলে পিলে চমকে ওঠে অনেকেরই। আসলে ওরা একেবারেই নিরীহ প্রাণী। অন্যসব পেঁচাদের মতো এরাও মাথা ঘুরিয়ে ঘাড়ের ওপর নিয়ে ঠেকাতে পারে। শিকার সন্ধানে পদ্ধতিটি দারুণ কাজে দেয়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। বিশ্বে প্রজাতিটির অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন এদেরকে উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ভূমা পেঁচা’, ইংরেজি নাম: ‘ডাস্কি ঈগল আউল’ (Dusky eagle-owl), বৈজ্ঞানিক নাম: Bubo coromandus | এরা ‘মেটে হুতোম পেঁচা’ নামেও পরিচিত। এরা দৈর্ঘ্যে কমবেশি ৪৮-৫৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। মাথার দু’পাশে কান পশম রয়েছে, যা ঝুঁটি আকৃতির দেখায়। চোখের দু’পাশে কপালের ওপর সাদা-বাদামি টান। মুখমণ্ডল হলদে-বাদামি। দেহের উপরাংশ ফ্যাকাসে-ধূসর রঙের ছিট ছিট। দেহের নিচের দিকে হলদে-বাদামির ওপর টানা বাদামি-কালো রেখা। চোখের তারা হলুদ, মনি বাদামি। আসমানী ফ্যাকাসে ঠোঁট আকারে খাটো, নিচের দিকে বড়শির মতো বাঁকানো। পায়ের আঙুল ধূসর। প্রধান খাবার: ছোট পাখি, ইঁদুর, টিকটিকি ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে নভেম্বর। আবার অঞ্চলভেদে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে প্রজনন ঘটে। এরা অন্যান্য পেঁচাদের মতো গাছের কোটরে অথবা দর-দালানের ফাঁকে বাসা বাঁধে না। বাসা বাঁধে জলাশয়ের কাছাকাছি বড় গাছের কাণ্ডে সরু ডালপালা দিয়ে। বাসা অগোছালো, শ্রীছাদ নেই। অনেকটা ঈগল বা চিলের বাসার মতো। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৩-২৫ দিন। শাবক শাবলম্বী হতে মাসখানেক লেগে যায়। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 22/04/2016
বড় কাঠঠোকরা | Great Slaty Woodpecker | Mulleripicus pulverulentus
বড় কাঠঠোকরা | ছবি: ইন্টারনেট দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বিরল দর্শন। চেহারা মোটেও আকর্ষণীয় নয়। কেবল দেখা মেলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ ও আর্দ্র পাতাঝরা বনে। প্রশস্ত পাতার বন এদের বিচরণের ক্ষেত্রে অতি উত্তম স্থান। এ ছাড়াও পাহাড়ের পাদদেশের বন-বনানীতেও বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। পাখিতাত্ত্বিকদের মতে ম্যানগ্রোভ অরণ্যেও এদের বিস্তৃতি রয়েছে। তবে আমার নজরে পড়েনি কখনো। শিকারে বের হয় একাকী, জোড়ায় কিংবা পারিবারিক দলে। দলে সাধারণত ৩-৬টি পাখির বেশি দেখা যায় না। প্রজাতির অন্যদের মতো এরা তরঙ্গাকারে না উড়ে বরং সোজাসুজি ওড়ে। ডাকাডাকি করে উড়তে উড়তেই। এ সময় ভুতুড়ে কণ্ঠে ‘ওয়িক ওয়িক ওয়িক..’ সুরে আওয়াজ করে। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে হিমালয়াঞ্চল, ভারত, ভুটান ও ইন্দোনেশিয়ায়। বিশ্বে বিপন্মুক্ত হলেও বাংলাদেশে বিস্তৃতি সন্তোষজনক নয়। প্রজাতিটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। অবাধে চিরসবুজ অরণ্যের বড় বড় বৃক্ষ নিধনের ফলে এদের অস্তিত্ব হুমকির সন্মুখীন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মরা গাছের অভাবে এদের প্রজননে ভীষণভাবে বিঘ্ন ঘটছে। এমতাবস্থায় একমাত্র অভয়ারণ্যের মাধ্যমে বংশ বিস্তার ঘটিয়ে প্রজাতিটিকে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে ধারণা করছেন দেশের বন্যপ্রাণীবিশারদরা। পাখির বাংলা নাম: ‘বড় মেটেকুড়ালি বা কাঠঠোকরা’, ইংরেজি নাম: ‘গ্রেট শ্লেটি উডপেকার’ (Great Slaty Woodpecker), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘মুল্লারিপাইকাস পালভেরুলেনটাস’ (Mulleripicus pulverulentus), গোত্রের নাম: ‘পাইকিদি’। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে মোট ২০ প্রজাতির কাঠঠোকরা বা কাঠ কুড়ালির সাক্ষাৎ মেলে। লম্বায় ৪৮-৫৮ সেন্টিমিটার। ঘাড় ও ঠোঁট অস্বাভাবিক লম্বা। ঘাড়-গলা পালকহীন। প্রাপ্তবয়স্কদের দেহের সমস্ত পালক স্লেট-ধূসর। থুঁতনি ও গলা ফ্যাকাসে হলুদ। ঠোঁট ফ্যাকাসে। চোখ বাদামি থেকে লালচে, চোখের বলয়ের চামড়া স্লেট রঙের। পা ও পায়ের পাতা কালচে স্লেট রঙের সঙ্গে নীলাভ আভার মিশ্রণ। স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির চোখ ও ঘাড়ের মাঝামাঝি গাঢ় লাল পট্টি আছে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের পিঠ অনুজ্জ্বল। পিঠে অসংখ্য ফ্যাকাসে ফুটকি। বাদবাকি স্ত্রী পাখির মতো দেখতে। প্রধান খাবার: গাছের মরা কাণ্ডের ভেতর লুকিয়ে থাকা পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। মরা গাছের কাণ্ডে নিজেরা গর্ত খুড়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে কত দিন লাগে সে তথ্য জানা যায়নি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 25/04/2014
বামন লেজকাটা টুনি | Asian Stubtai | Urosphena squameiceps
বামন লেজকাটা টুনি | ছবি: ইন্টারনেট প্রাকৃতিক আবাসস্থল নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চল এবং চিরহরিৎ সুঁচালো বনের লতাগুল্ম। এ ছাড়াও স্যাঁতসেঁতে এলাকায় বেশি নজরে পড়ে। বেশির ভাগই একাকি বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। অস্থিরমতি পাখি। কোথাও একদণ্ড বসে থাকার সময় নেই। সারাদিন ওড়াউড়ি করে ব্যস্ত সময় কাটায়। লতাগুল্মের ফাঁকফোকরে লাফিয়ে বেড়ায়। নিয়ম করে গোসালাদি সারে। গানের গলা ভালো। প্রজনন মৌসুমে হাঁকডাক বেড়ে যায়। শীতে দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে।বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, মিয়ানমার, চীন, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বব্যাপী হুমকির সম্মুখীন না হলেও আইইউসিএন ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রিয় পাঠক, এবার অন্য প্রসঙ্গে যাচ্ছি। বগুড়া জেলার একজন পাখিপ্রেমী মানুষ “হাবিবুর রহমান” অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও আমার লেখা পাখি ফিচারগুলোকে সংগ্রহ করে একটি পেজে বন্দি করেছেন। ইচ্ছে করলে আপনারা সে লেখাগুলো একত্রে এই https://pakhi.tottho.com ঠিকানায় পেতে পারেন। প্রকৃতিপ্রেমী এ মানুষটির জন্য ধন্যবাদ জানানো ছাড়া আমাদের আর করার কিছু নেই। মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাচ্ছি আবার। ‘বামন লেজকাটা টুনি’ সম্পর্কে বলছিলাম। প্রজাতিটির বাংলা নাম: ‘বামন লেজকাটা টুনি’, ইংরেজি নাম: ‘এশিয়ান স্টুবটেইল’(Asian Stubtail), বৈজ্ঞানিক নাম: Urosphena squameiceps | এরা ‘এশীয় ভোঁতালেজ নামে’ নামেও পরিচিত। গড় দৈর্ঘ্য ৯.৫-১০.৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। শরীরের তুলনায় মাথা বড়। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও ডানা গাঢ় বাদামি। ডানার প্রান্ত পালক ধূসর কালচে। দেহতল হলদেটে সাদা। লেজ নেই বললেই চলে। ঠোঁট ছোট, শিং কালো। লম্বা পা ত্বক বর্ণ। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, শুককীট, মাকড়সা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। শৈবাল, শ্যাওলা, শিকড়, তন্তু দিয়ে মোচাকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫ দিন। লেখক: আলমশাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদওপরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 02/12/2016
সবুজ ঘুঘু | Asian Emerald Dove | Chalcophaps indica indica
সবুজ ঘুঘু | ছবি: ইন্টারনেট মুষলধারে বৃষ্টি, সঙ্গে শীলাপাত। বজ্র ‘কড়্..কড়্..কড়াৎ’ শব্দে চিৎকার জুড়ে দিয়েছে। কানে তুলো ঢুকিয়েও রেহাই পাইনি বিকট শব্দ থেকে। জীবজগতের প্রতিটি প্রাণীই আশ্রয় নিয়েছে নিজ নিজ আলয়ে। এমনিতে গোধূলিলগ্ন, তার ওপর ঝড়ের তাণ্ডব। পরিবেশটা কেমন জানি ভুতুড়ে ভুতুড়ে লাগছে। ঝড়ের গতি কিছুটা কমে আসতেই বেরিয়ে পড়লাম ছাতা নিয়ে। ঝড়ের ঝাপটায় ছাতাটা গুটিয়ে আসছে, তার পরও অভিযান থামিয়ে দেইনি। সোজা গিয়ে হাজির বাড়ির উত্তরের খালপাড়ে। তিন দিন আগে খালপাড়ের একটা আমগাছে ‘হলদে পাখি’র বাসা দেখেছি। ওটাতে ছোট দুটি শাবকও রয়েছে। বাসাটা ওরা জুতসই ডালে বাঁধেনি। বাতাসের ঝাপটায় বাচ্চাগুলো নিচে পড়লে আর রেহাই নেই। একেবারে গিয়ে পড়বে জলে। কাজেই দে ছুট। মিনিট চার-পাঁচেকের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছলাম। গাছের ওপর তাকিয়ে স্বস্তিও পেলাম যাক প্রকৃতি ওদের কৃপা করছে; কিন্তু কৃপা করেনি ‘সবুজ ঘুঘু’ পাখিটাকে। বেচারি নিচে পড়ে কাতরাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে ওকে তুলে নিলাম। রক্ত ঝরছে। ডানায় শীলের আঘাত লেগেছে। ডানাটা ভেঙে গেছে বোধহয়। পাখিটার করুণ দশা দেখে আমারও চোখের কোণায় জল জমেছে। আহ, কী সুন্দর পাখি! এমনিই তো এদের আজকাল খুব কম দেখা যায়। একটা সময় গ্রামেগঞ্জে প্রচুর সবুজ ঘুঘু দেখা যেত। ‘কু-উ’ বা ‘হুউন’ সুরে ডেকে মানুষকে আপ্লুত করে দিত। সেই চিরচেনা করুণ সুর আজকাল খুব কমই শোনা যায়। কারণ যেখানে সেখানে চোখে পড়ে না এখন আর। হয়তো ওদের বেঁঁঁঁচে থাকার পরিবেশ অনুকূলে নেই। তার ওপর যোগ হয়েছে পাখি নিধনকারীদের অত্যাচার। সব মিলিয়ে এরা অসহায় হয়ে পড়েছে। তাই ওকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠলাম। বাড়ি এনে ডানায় ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলাম। আমার দেয়া চিকিৎসায় পাখিটি সুস্থ হয়েছে এবং সুসংবাদটি হচ্ছে, সে মুক্ত আকাশে ডানাও মেলেছে। হ্যাঁ পাঠক, এ পাখিদের বাংলা নাম: ‘সবুজ ঘুঘু’। ইংরেজি নাম: ‘এশিয়ান এমারল্ড ডাভ’ (Asian Emerald Dove)। বৈজ্ঞানিক নাম: Chalcophaps indica indica | আমাদের দেশে বহু প্রজাতির ঘুঘু রয়েছে যেমন: তিলা ঘুঘু, সবুজ ঘুঘু, রাজ ঘুঘু, রাম ঘুঘু, খুদে ঘুঘু, লাল ঘুঘু ইত্যাদি। এরা লম্বায় ২৫-২৮ সেন্টিমিটার। এদের মাথা ও ঘাড় ধূসর। কাঁধ সাদা। পিঠ সবুজ। ডানার প্রান্ত এবং লেজ কালো। গলা থেকে তলপেট পর্যন্ত উজ্জ্বল গোলাপি। ঠোঁট ও পা লাল। স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য ছোট। রঙে সামান্য তারতম্য রয়েছে। স্ত্রী পাখির মাথা ঘাড় বাদামি। কাঁধের সাদা দাগটি অস্পষ্ট। এদের প্রধান খাদ্য ধান ও অন্যান্য শস্যদানা। মাটিতে বিচরণকালে খুঁটে খুঁটে মাটি এবং উইপোকা খায়। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর। ভূমি থেকে ৫ মিটার উঁচুতে গাছের ডালে বাসা বাঁধে। সরু, নরম ও শুকনো ঘাস-লতা দিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 23/11/2012
ছোট নাটাবটের | Kurrichane Buttonquail | Turnix sylvatica
ছোট নাটাবটের | ছবি: ইন্টারনেট দেখতে হুবহু গৃহপালিত কোয়েল পাখির মতো। এরা আমাদের দেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি। এক সময়ে ঢাকার আশপাশের গ্রামের তৃণভূমিতে বিচরণ ছিল। হালে বাংলাদেশে দেখা যাওয়ার রেকর্ড নেই। তবে এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, এবং মালয়েশিয়া পর্যন্ত। এ ছাড়াও আফ্রিকা মহাদেশের কিছু কিছু জায়গায় এদের বিস্তৃতি রয়েছে। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত হলেও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। এরা বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। মূলত ‘ছোট নাটাবটের’ খাদ্যের সন্ধানে তৃণভূমির আশপাশের ঝোপে ঘুরে বেড়ায়। ছোটাছুটি করে ঝোপের ফাঁকফোকরে। একাকী কিংবা জোড়ায় বিচরণ করে। ঝরাপাতা উল্টিয়ে পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। আবার তৃণভূমিতে ঘুরে শস্যদানা কিংবা ঘাসের বীজ খায়। এরা স্বভাবে কিছুটা হিংসুটে। নিজেদের এলাকায় স্বগোত্রীয়দের অনুপ্রবেশ সহজে মেনে নেয় না। ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। প্রয়োজনে যুদ্ধংদেহী রূপ ধারণ করলেও সহজে আক্রমণ করে না। অর্থাৎ যে করেই হোক অনুপ্রবেশকারীকে তাড়ানো চাই-ই চাই। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির মাঝে অস্থিরতা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় হাঁকডাকও। এ সময় ‘ডররর-র-র-র-র..’ সুরে ডাকতে থাকে। মজার বিষয়টি হচ্ছে, স্ত্রী পাখি ডিম পেড়ে কেটে পড়ে। পুরুষ পাখিকে তখন একাই ডিমে তা দিতে হয়। বাচ্চা ফুটিয়ে লালন-পালনও করতে হয় পুরুষ পাখিকে একাই। পাখির বাংলা নাম: ‘ছোট নাটাবটের’, ইংরেজি নাম: ‘ক্যারিচেন বাটন কোয়েল’ (Kurrichane Buttonquail),বৈজ্ঞানিক নাম: Turnix sylvatica | লম্বায় ১৩ সেন্টিমিটার। ওজন ৪০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। আকারে স্ত্রী পাখি খানিকটা বড়। উভয়ের মাথার চাঁদি বাদামি। ঘাড়, মরচে রঙা। পিঠ লালচে কালো। কাঁধ-ঢাকনিতে পীতাভ ডোরা। গলা সাদা। বুক কমলা-পীতাভ। লেজতল-ঢাকনি সাদাটে। ঠোঁট ফ্যাকাসে। চোখ হালকা হলুদ। পা ও পায়ের পাতা ধূসর নীল। অপ্রাপ্তবয়স্কদের পিঠ লালচে-বাদামি। দেহতল ফ্যাকাসে পীতাভ। ঘাড়ের পাশে ও বুকে কালো চিতি রয়েছে। প্রধান খাবার: শস্যদানা, ঘাস বীজ, কালো পিঁপড়া ও পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম বছরের যে কোনো সময়। নিজেরা পা দিয়ে মাটি খুঁড়ে ঘাস-লতা বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪টি। ডিম ফুটতে সময় ১২ দিন। শাবকের গায়ে ওড়ার পালক গজায় দুই সপ্তাহের মধ্যে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 13/02/2015
বাংলা ডাহর | Bengal Florican | Houbaropsis bengalensis
বাংলা ডাহর | ছবি: ইন্টারনেট বিলুপ্ত প্রজাতির পাখি। দেশে প্রায় ৬৫-৭৫ বছর আগে দেখা গেছে। এক সময় ঢাকা বিভাগ এবং উত্তরবঙ্গের তৃণভূমিতে দেখা যেত। হালে দেখা যাওয়ার রেকর্ড নেই। এরা আকারে বেশ বড়সড়। দেখতে অনেকটাই ময়ূরের মতো। এমনকি চলাফেরা কিংবা শিকার খোঁজার ভঙ্গিও। বিচরণ করে আর্দ্র খোলা লম্বা তৃণভূমিতে। অধিক ঝোপ জঙ্গল এড়িয়ে চলে। দ্রুত দৌড়াতে পারে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত (আসাম, উত্তর প্রদেশ, অরুণাচল), নেপালসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, কম্বোডিয়া ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘বাংলা ডাহর’, ইংরেজি নাম: ‘বেঙ্গল ফ্লোরিকান’ (Bengal Florican), বৈজ্ঞানিক নাম: Houbaropsis bengalensis | এরা ‘ডাহর’ নামেও পরিচিত। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্য রয়েছে আকার-আকৃতি এবং ওজনেও। প্রজাতির স্ত্রী পাখি দৈর্ঘ্যে ৬৮ সেন্টিমিটার। ওজন ১৭০০-২২৫০ গ্রাম। পুরুষ পাখি দৈর্ঘ্যে ৬৪ সেন্টিমিটার। ওজন ১২৫০-১৭০০ গ্রাম। পুরুষ পাখির মাথা কালো মখমলের কাপড়ের মতো। মাথার নিচ থেকে ঝুঁটি গড়িয়ে পড়েছে। গলার নিচেও ঝুঁটি লক্ষ্য করা যায়। পিঠ এবং লেজে বাদামির ওপর কালো ছোপ। লেজ খাটো। ডানার দু’পাশে ধবধবে সাদা। দেহতল কালচে। স্ত্রী পাখির ঝুঁটি অনুপস্থিত, গায়ের বর্ণ হলুদাভ বাদামি। উভয়ের পা ও পায়ের পাতা হলুদ। প্রধান খাবার: মূলত এরা সর্বভুক পাখি। তবে ঘাস বীজ, ঘাসের কচিডগা, ফুল-ফল, পোকামাকড়, পঙ্গপাল, ফড়িং, পিঁপড়া ইত্যাদির প্রতি আসক্তি বেশি।প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে আগস্ট। বাসা বাঁধে ভূমিতে ঘাসলতা বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৫-২৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 02/09/2016
চিতিপাক গোশালিক | Spot winged Starling | Saroglossa spiloptera
চিতিপাক গোশালিক | ছবি: ইন্টারনেট বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাস্থল পরিষ্কার বনপ্রান্ত, খোলা বন, কৃষিজমি। এ ছাড়াও পর্বতের ৭০০-১০০০ মিটার উঁচুতে দেখা যায়। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না। বেশির ভাগই জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। বিচরণ করে ছোট দলেও। স্বভাবে অন্যসব শালিকের মতোই ঝগড়াটে। সারাদিন খুনসুটি করে কাটায়। তবে ওদের ঝগড়া খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায় না, কিচির-মিচির পর্যন্তই ঝগড়া। পরক্ষণে আবার মিলেও যায়। আবার শুরু। এভাবেই দিন কাটে। পারতপক্ষে কেউ কাউকে আক্রমণ করে না। চলাফেরায় খুব হুঁশিয়ারি। বিশ্বে এদের অবস্থান তত ভালো নয়। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘চিতিপাক গোশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘স্পট-উইংড স্টার্লিং’ (Spot-winged Starling), বৈজ্ঞানিক নাম: Saroglossa spiloptera। এরা ‘লালচেগলা শালিক’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১০ প্রজাতির শালিক নজরে পড়ে। যথাক্রমে: গো-শালিক, ভাত শালিক, ঝুঁটি শালিক, গাঙ শালিক, পাতি কাঠশালিক, গোলাপি কাঠশালিক, চিতিপাখ গোশালিক, খয়রালেজ কাঠশালিক, বামুন কাঠশালিক ও ধলাতলা শালিক। এরা লম্বায় ১৯-২০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা বাদামি। ঘাড় ও পিঠ ধূসর এবং কালো-বাদামি। ডানার প্রান্ত নীলাভ কালো। লেজ লালচে বাদামি। গলা লালচে। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত সাদাটে। বুকের দু’পাশ শেয়ালে লাল। ঠোঁট নীলাভ কালো। চোখের বলয় সাদা। পা বেগুনি কালো। দেখতে একই রকম মনে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। আকারেও সামান্য ছোট। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, পিঁপড়া, ছোট ফল, ফুলের মধু। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বাঁধে ৬-১০ মিটার উচ্চতার গাছের প্রাকৃতিক কোটরে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, লতাপাতা, দড়ি, কাপড়ের টুকরো ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/08/2017