ছোট বাবুইবাটান | Small pratincole | Glareola lactea
ছোট বাবুইবাটান | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন, স্থানীয় প্রজাতির পাখি ‘ছোট বাবুইবাটান’। বাংলাদেশ ছাড়াও দেখা মেলে ভারত, পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে বালুচরে। পদ্মা ও যমুনার চরে ব্যাপক দর্শন মেলে। এ ছাড়াও নদ-নদী কিংবা মোহনার দ্বীপাঞ্চলে অথবা সৈকতের বেলাভূমিতে শিকার খুঁজে বেড়াতে দেখা যায়। হাঁটাহাঁটি করে খুব দ্রুততার সঙ্গে। আবার অনেকে মিলে জলের কিনারে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়। একটা সময় এসে একেবারেই চুপচাপ থাকে, দূর থেকে দেখলে মনে হয় তখন বুঝি ওরা প্রার্থনারত রয়েছে। ওড়ে খুব ক্ষিপ্রতার সঙ্গে। তবে সোজাসুজি না উড়ে এঁকেবেঁকে ছান্দসিক তালে ওড়ে। তেমনিভাবে উড়ে উড়ে এরা শিকারের পিছু নেয়। মানুষ অথবা অন্য যে কোনো বন্যপ্রাণী ওদের বাসার কাছাকাছি গেলে মাথার ওপর দিয়ে চেঁচিয়ে চক্কর দিতে থাকে। এতে করে ওরা আরো বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং ওদের বাসার অবস্থান শনাক্ত হয়ে যায়। আর শত্রুপক্ষ সে সুবাদে ওদের ডিম-বাচ্চার ক্ষতি করার করার যথেষ্ট সুযোগ পেয়ে যায়। যার ফলে ওদের প্রজননে বিঘ্ন ঘটে ব্যাপক। ছোট বাবুইবাটানদের কণ্ঠস্বর সুমধুর নয়। ‘টিক টিক টিক… টাক টাক টাক’ আওয়াজ করে। উত্তেজিত হলে কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসে। স্বর তখন আরো কর্কশ হয়ে ওঠে। পাখির বাংলা নাম: ‘ছোট বাবুইবাটান’, ইংরেজি নাম: ‘স্মল প্রাটিনকোল’, (Small pratincole), বৈজ্ঞানিক নাম: Glareola lactea| লম্বায় ১৬-১৭ সেন্টিমিটার। কপাল হালকা বাদামি। চোখের কোণ থেকে ঠোঁটের গোড়া পর্যন্ত কাজলটান। ঠোঁট নীলাভ কালো, গোড়ার দু’পাশ লাল। চোখের বলয় সাদা, তারা নীলাভ। পিঠ বালুধূসর। ডানার দিকে হালকা বাদামির ওপর লালচে আভা। ডানার প্রান্ত কালো। ওড়ার পালক কালো। লেজের কিনারটা কালো। দেহতল সাদা। পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার কীটপতঙ্গ। বিশেষ করে উড়ন্ত কীটপতঙ্গের প্রতি আসক্তি বেশি। প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে মার্চ। কোনো কোনো অঞ্চলে মার্চ থেকে এপ্রিলে বাসা বাঁধে (অঞ্চলভেদে সময়ের হেরফের লক্ষ্য করা যায়)। বাসা বাঁধে বেলাভূমি কিংবা পাথুরে এলাকায়। একাকী কিংবা কলোনি টাইপের বাসা বানাতেও দেখা যায়। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 19/09/2014
ঝুঁটিয়াল মাছরাঙা | Crested kingfisher | Megaceryle lugubris
ঝুঁটিয়াল মাছরাঙা | ছবি: ইন্টারনেট প্রজাতির অন্যসব মাছরাঙাদের মতো চেহারায় তত আকর্ষণীয় ভাব নেই। বরং উল্টোটা। দেখা যায় হিংস্র কিংবা রাগী রাগী চেহারার। ‘ঝুঁটিয়াল মাছরাঙা’ বাংলাদেশে স্থায়ী হলেও খুব একটা দেখার নজির নেই যত্রতত্র। বলা যায় বিরল দর্শন। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরসবুজ বনের প্রবাহমান নদ-নদী কিংবা ঝরনার কিনারে দেখার রেকর্ড রয়েছে। তবে সেটি দু-একবারের বেশি নয়। যতদূর জানা যায়, ওরা নিভৃতচারী পাখি। একাকী থাকতেই বেশি পছন্দ করে, শিকারেও বের হয় একাকীই। জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায় মাঝে মধ্যে। শিকার কৌশল প্রজাতির অন্যদের মতোই। তবে এরা সাধারণত গহিন অরণ্যের ভিতর প্রবাহমান নদীর ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে উড়তে উড়তে শিকার খোঁজে। আর মাঝে মধ্যে তীক্ষèকণ্ঠে ডেকে ওঠে, ‘ক্লিক…ক্লিক…ক্লিক…’। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রজাতিটির বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, জাপান, লাওস, ভিয়েতনামে ও থাইল্যন্ডে। প্রজাতিটি বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। দেশের পাখি বিশারদরা এদেরকে বিপদাপন্নের দিকে ধাবিত হওয়ার দাবি জানিয়েছেন। পাখির বাংলা নাম: ‘ঝুঁটিয়াল মাছরাঙা’, ইংরেজি নাম: ‘ক্রেস্টেড কিংফিশার’,(crested kingfisher) বৈজ্ঞানিক নাম: Megaceryle lugubris | এরা ‘ফোঁটকা মাছরাঙা’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ৪০-৪২ সেন্টিমিটার। ঠোঁটের গোড়া ধূসর, অগ্রভাগ কালো। মাথায় চমৎকার সাদা-কালো লম্বা ঝুঁটি। চোখের সামনে-পেছনের সাদা দাগ ঘাড়ে মিশেছে। গলাবন্ধ সাদা। ঘাড়ের গোড়া থেকে পিঠ হয়ে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত নীলাভ ধূসরের ওপর সাদা ফুটকি। ডানার নিচে রয়েছে লালচে পালক, যা কেবলমাত্র ওড়ার সময় দেখা যায়। বুকের ওপর কালো ও বাদামি ছোপযুক্ত অস্পষ্ট বলয় রয়েছে। বুকের নিচ থেকে সাদা। চোখ কালো। পা ও পায়ের পাতা ধূসরাভ-জলপাই। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য নেই, কেবলমাত্র ডানার নিচের ফ্যাকাসে লালরঙের মাধ্যম ব্যতীত। যা স্ত্রী এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির রয়েছে, পুরুষ পাখির গায়ে দেখা যায় না। প্রধান খাবার: মাছ। ছোট ব্যাঙ কিংবা পোকামাকড়ের প্রতিও আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। নদ-নদীর খাড়া পাড়ে সুড়ঙ্গ বানিয়ে বাসা বাঁধে। বাসা বানাতে বাড়তি উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে কাঁটা বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় নেয় ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।প্রকাশ: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 05/10/2018
গেছো চড়ই | Eurasian Tree Sparrow | Passer motanus
গেছো চড়ই | ছবি: ইন্টারনেট চেহারা হুবহু ‘পাতি চড়–ই’ অর্থাৎ আমাদের ঘরের আশপাশে যে চড়–ই দেখা যায় ওদের মতোই দেখতে। মাথার দিকে না তাকালে প্রজাতি শনাক্ত করা কঠিন। আবাসিক পাখি। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, ফিলিপাইন, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, মাইক্রোনেশিয়া, তিউনিসিয়া, জিব্রাল্টার, মিশর, আলজেরিয়া, ইসরাইল ও দুবাই পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাসস্থল কাঁটাওয়ালা চিরহরিৎ গুল্ম, খেজুর গাছ। এছাড়াও ফল বাগান এবং গৃহকোণে কমবেশি নজরে পড়ে। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। ভয়ডর না থাকলেও পাতি চড়–ইদের মতো মানুষের অত কাছাকাছি আসে না। বিচরণ করে ঝাঁকে ঝাঁকে। ঝাঁক বেঁধে চলার কারণে বাজ পাখির শিকারে বেশি পরিণত এরা। তার ওপর ফসলের জমিতে কীটনাশক প্রয়োগের ফলেও জীবনহানি ঘটে ব্যাপক। তথাপিও ওরা বিশ্বে ভালো অবস্থানে রয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘গেছো চড়ই’, ইংরেজি নাম:‘ইউরেশিয়ান ট্রি স্প্যারো ’(Eurasian Tree Sparrow), বৈজ্ঞানিক নাম: Passer motanus | এরা ‘লালচেমাথা চড়–ই’ বা ‘ইউরেশীয় গাছচড়–ই’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ১৪-১৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১৭-৩০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা বাদামি-লালচে। ঘাড় সাদা। ঘাড়ের দু’পাশ সাদা। পিঠ বাদামি। ডানায় বাদামি-কালো রেখার সংমিশ্রণ। ডানার গোড়ার দিকে সাদা পট্টি দেহতলের ময়লা সাদার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। লেজ হালকা বাদামি। গলা ও থুতনি কালো। ঠোঁট কালো। স্ত্রী পাখির পিঠ ঝাপসা বাদামির ওপর খাড়া ডোরা। ডানায় সাদা পট্টি। দেহতল ফ্যাকাসে। ঠোঁট ত্বক বর্ণ। উভয়ের চোখ বাদামি। প্রধান খাবার: শস্যদানা। এ ছাড়াও পোকামাকড়, ঘাসের কচিডগা, ফুলের মধু ইত্যাদি খায়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। বাসা বাঁধে দরদালান কিংবা গাছের ফাঁকফোকরে। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৪ দিন। লেখক: আলমশাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 17/02/2017
ধূসরাভ মেঠো চিল | Northern Harrier | Circus cyaneus
ধূসরাভ মেঠো চিল | ছবি: ইন্টারনেট শীতের পরিযায়ী। বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। এ ছাড়াও কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো পর্যন্ত বিস্তৃতি রয়েছে। প্রাকৃতিক আবাস্থল ধানক্ষেত, গমক্ষেত, উন্মুক্ত বনভূমি, ছোট নদ-নদী ও জলাশয়ের আশপাশ। ক্ষেত খামারের ওপর চক্কর দিয়ে শিকার খুঁজে বেড়ায়। একাকী কিংবা জোড়ায় বিচরণ করে। অনেক সময় ছোট দলেও দেখা যায়। চেহারায় হিংস তার ছাপ লক্ষ করা গেলেও স্বভাবে তত হিংস নয়। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। মূলত শস্যক্ষেতে ব্যাপক কীটনাশকের ব্যবহার এবং আবাসন সংকটের কারণে প্রজাতিটি হুমকির মুখে পড়েছে এবং প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে আইইউসিএন এদের ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ধূসরাভ মেঠো চিল’, ইংরেজি নাম: ‘নর্দান হ্যারিয়ার’ (Northern Harrier), বৈজ্ঞানিক নাম: Circus cyaneus। এরা ‘মুরগি কাপাসি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্যে ৪১-৬১ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির গায়ের রঙ ভিন্ন। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি আকারে বড়। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও ডানা গাঢ় ধূসর। লেজের ছয়-আটটি পালক ধূসর বাদামি। দেহতল ধূসরাভ হলদে। স্ত্রী পাখির মাথা ও পিঠ ধূসর বাদামি। উভয়ের শিং কালো রঙে ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। পা ও পায়ের পাতা হলুদ, নখ কালো। পুরুষ পাখির ঠোঁটের গোড়া হলদেটে। চোখ হলুদ। যুবাদের রঙ ভিন্ন। প্রধান খাবার: ব্যাঙ, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, ছোট পাখি, ইঁদুর, খরগোশ ও বড় পোকামাকড়। প্রজনন সময় মধ্য এপ্রিল থেকে মে। বাসা বাঁধে ঝোপের ভেতর, জলাভূমির কাছে মাটিতে চিকন ডালপালা, নলখাগড়া, ঘাস দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩০-৩২ দিন। সপ্তাহ চারেকের মধ্যে শাবক স্বাবলম্বী হয়। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 08/09/2017
পাতি সারস | Common Crane | Grus grus
পাতি সারস | ছবি: ইন্টারনেট পরিযায়ী পাখি। হালে দেখা যাওয়ার নজির নেই। বিচরণ করে জলাশয়ের কাছাকাছি তৃণভূমি, কৃষি ক্ষেত, চারণভূমি, অগভীর আশ্রিত উপসাগরীয় অঞ্চল, নদী ও অগভীর হ্রদে। মাঝেমধ্যে হাঁটু পরিমাণ জলে নেমে খাবার খুঁজতে দেখা যায়। খাদ্যের সন্ধানে বের হয় জোড়ায় অথবা ছোট-বড় দলে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করতে নাচের কসরৎ দেখায়। নাচের কসরৎ দেখতে দেখতে স্ত্রী পাখি তখন আর নিজকে ধরে রাখতে পারে না। নিজেও নাচে অংশ নিয়ে প্রেমে মজে যায়। এ সময় জোরে জোরে দ্বৈত সংগীতের মতো গান গায়। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ-পূর্ব চীন, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত। সমগ্র বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন লাল তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশে সংকটাপন্ন বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে দেশি সারস। পাখির বাংলা নাম: ‘পাতি সারস’, ইংরেজি নাম: ‘কমন ক্রেন’ (Common Crane), বৈজ্ঞানিক নাম: Grus grus | দেশে তিন প্রজাতির সারস দেখা যায়। যথাক্রমে: দেশি সারস, পাতি সারস ও ধূসর সারস। এরা সবাই পরিযায়ী প্রজাতির। গড় দৈর্ঘ্য ১১৫ সেন্টিমিটার। প্রশস্ত ডানা ১৮০-২০০ সেন্টিমিটার। ওজন পুরুষ পাখি ৫.১-৬.১ কেজি। স্ত্রী পাখি ৪.৫-৫.৯ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। কপাল কালো। মাথার তালুর রক্ত লাল। মাথার পেছন থেকে শুরু করে ঘাড়, থুতনি ও গলা কালো। চোখের পেছন থেকে ঘাড় ও গলার কালো দ্বিখণ্ডিত হয়ে সাদায় রূপ নিয়েছে। পিঠ গাঢ় ধূসর। ডানার পালকের ওপর কালো ছোপ। ওড়ার পালক কালো। লেজ কালো। ডানার বাড়তি পালক লেজের ওপর ঝালরের মতো ঝুলে থাকে। দেহতল গাঢ় ধূসর। ঠোঁট সবুজাভ, ডগা হলুদ। চোখের তারা লাল। পা ও পায়ের পাতা কালো। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের চেহারা ভিন্ন। প্রধান খাবার: শস্যবীজ, ঘাসবীজ, কন্দ, গাছের কচিডগা, ব্যাঙ, কাঁকড়া কেঁচো, মাকড়সা, ছোট পাখি, কীটপতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম বর্ষাকাল। বাসা বাঁধে জলাশয়ের কাছাকাছি মাটির ওপরে। শুকনো চিকন ডালপালা, লতাপাতা উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩১ দিন। শাবক উড়তে শিখে ৬ সপ্তাহের মধ্যে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 30/10/2015
বাদা তিতির | Swamp Francolin | Francolinus gularis
বাদা তিতির | ছবি: ইন্টারনেট দেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি। পূর্বে ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের তৃণভূমিতে দেখা যেত। হালে দেখা যাওয়ার নজির নেই। এরা সাধারণত নলবনে বা নদীর কাছাকাছি ঝোপে অথবা তৃণভূমিতে বিচরণ করে। একাকী খুব একটা দেখা যায় না। জোড়ায় অথবা ৫-১০টি দলে দেখা যায়। খুব ভোরে ও গোধূলিলগ্নে জলজ তৃণভূমি ও জোয়ারেসিক্ত ভূমিতে খাবার খোঁজে। এ সময় মাঝে মধ্যে কর্কশ কণ্ঠে ‘চুক্রির..চুক্রির’ সুরে ডেকে ওঠে। ভয় পেলে স্বর পাল্টে যায়। মাঝে মাঝে তীক্ষèস্বরে গান গায়। খুব বেশি উড়তে পারে না। কিছুক্ষণ জোরে-সোরে ডানা ঝাঁপটিয়ে বাতাসে ভেসে থাকার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত ও নেপালের তৃণভূমি অঞ্চলে। এ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার আরো কিছু অঞ্চলে দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। প্রজাতিটি বিশ্বে সংকটাপন্ন এবং বাংলাদেশে মহাবিপন্নের তালিকায় রয়েছে। এরা বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। প্রিয় পাঠক, ইতিপূর্বে তিতির নিয়ে লেখা হয়েছে কয়েকবারই। দেখতে একই রকম মনে হলেও প্রজাতিভেদে ওরা ভিন্ন। আশা করি বিষয়টি নিয়ে আপনাদের বিভ্রান্তি কেটে যাবে। পাখির বাংলা নাম: ‘বাদা তিতির’, ইংরেজি নাম: সায়াম্প ফ্রানকলিন (Swamp Francolin), বৈজ্ঞানিক নাম: Francolinus gularis | এরা ‘জলার তিতির’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ৩৭ সেন্টিমিটার। ওজন ৫০০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষের চেহারায় পার্থক্য নেই। উভয়ের মাথার চাঁদি ও ঘাড় বাদামির সঙ্গে পীত বর্ণের মিশ্রণ। গলা ও ঘাড়ের উপরের অংশ কমলা। ভ্রু রেখা পীত বর্ণের। পিঠে বাদামি ডোরা ও লালচে বাদামি পট্টি। লেজ তামাটে। লেজের প্রান্ত পালক ফিকে। দেহতল বাদামির সঙ্গে সাদা ডোরা। ঠোঁট পাটকিলে। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা কমলা-হলুদ। পুরুষ পাখির পায়ে শক্ত খাড়া নখ যা স্ত্রী পাখির নেই। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, শস্যদানা, ঘাসের কচিডগা ও আগাছার বীজ। উইপোকা প্রিয় খাবার। রসালো ফলের প্রতি আসক্তি রয়েছে। সুযোগ পেলে ছোট সাপও শিকার করে। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। জলাশয়ের পাশের জঙ্গলে কিংবা গাছের নিচে মাটিতে লতাগুল্ম বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। স্ত্রী পাখি একাই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 22/05/2015
তিলা বাজ | Crested Serpent Eagle | Spilornis cheela
তিলা বাজ | ছবি: ইন্টারনেট স্থানীয় প্রজাতির পাখি। সুলভ থেকে অসুলভ দর্শন হয়ে পড়েছে। কয়েক দশক আগেও দেশে যত্রতত্র দেখা যেত। দেখা যেত রাস্তার পাশে টেলিফোনের তারে বা খুঁটিতে বসে থাকতে। হাওর-বাঁওড় কিংবা চা বাগান এলাকায়ও দেখা যেত। হালে নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া খুব কম নজরে পড়ে। তবে বড় দলটি এখনো সুন্দরবন অঞ্চলে দেখা যায়। এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, শ্রীলঙ্কা, হিমালয়, দক্ষিণ-পূর্ব তিব্বত, দক্ষিণ-পূর্ব চীন, বালি ও ফিলিপাইন পর্যন্ত। মূলত এরা শিকারি পাখি। বিচরণ করে একাকি কিংবা জোড়ায়। স্বভাবে হিংস্র। ঠোঁট এবং পায়ের নখ তীক্ষè-ধারালো। অনেক উঁচু থেকেও নিশানা ঠিক করতে পারে। মাছ কিংবা সাপ নাগালের মধ্যে পেলেই হলো, ঝপাৎ করে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারের পিঠে বড়শির মতো নখ বিঁধিয়ে শিকার কব্জা করে। অনেক সময় উড়তে উড়তেও শিকারে ঠোঁকর লাগায়। বেগতিক দেখলে গাছের ডালে বসে শিকারের মাথা ঠুঁকরিয়ে কাবু করে। এ থেকে রেহাই পায় না সাপও। অবশ্য সাপই এদের প্রধান খাবারের মধ্যে অন্যতম। এদের মাঝে মধ্যে উড়তে দেখা যায় দলবল নিয়ে। বেশিরভাগই শীতকালে দেখা যায় আকাশে ভেসে বেড়াতে। অনেক উঁচুতে উঠতে পারে। আকাশে ভাসতে ভাসতে ‘টি-ই, টি-ই, ঠি-ই’ সুরে ডাকতে থাকে। পাখির বাংলা নাম: ‘তিলা বাজ’, ইংরেজি নাম: ‘ক্রেস্টেড সারপেন্ট ঈগল’ (Crested Serpent Eagle) বৈজ্ঞানিক নাম: Spilornis cheela | এরা ‘তিলা নাগঈগল’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কম-বেশি ৬৫-৭৫ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড় ও গলা কালো। ঘাড়ে ঝুঁটি আকৃতির পালক। যা শুধু ফোলালে বড় দেখায়। পিঠে গাঢ় বাদামির ওপর সাদা চিতি। ডানার বলয় কালো। দেহতলে হালকা বাদামির ওপর অসংখ্য ছোট চিতি। কালো লেজের নিচে সাদাডোরা। শিং কালো রঙের ঠোঁট, বড়শির মতো বাঁকানো। ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখের বলয় পর্যন্ত উজ্জ্বল হলুদ। চোখের তারা হলুদ, মাঝখানে কালো। পা ও পায়ের পাতা হলদেটে। প্রধান খাবার: সাপ, মাছ ও ব্যাঙ ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে মার্চ। অঞ্চলভেদে ভিন্ন। জলাশয়ের কাছাকাছি গাছের উঁচু ডালে বাসা বাঁধে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চিকন ডালপালা। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৫ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে মাস দু’য়েক। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 21/08/2015