জলপিপি | Bronze Winged Jacana | Metopidius indicus
জলপিপি | ছবি: ইন্টারনেট স্থানীয় প্রজাতির পাখি। সুলভ দর্শন। এক সময় গ্রামের দিঘি কিংবা বিল-ঝিলে এদের প্রচুর দেখা যেত। শিকারিদের অত্যাচারে গ্রামীণ জনপদ থেকে বিতাড়িত হয়ে এরা এখন হাওর-বাঁওড়ে আশ্রয় নিয়েছে। জানা যায়, সত্তর দশকেও ঢাকার চারপাশের জলাশয়ে এদের প্রচুর বিচরণ ছিল। বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার জলাশয়ে ছোট ছোট দলে দেখা যায়। ডাহুকের মতো গড়ন হলেও বেশ পার্থক্য রয়েছে চেহারায়। পা তুলনামূলক লম্বা, পায়ের আঙুল অস্বাভাবিক লম্বা। অনেকটা মাকড়সার পায়ের মতো দেখায়। যার ফলে এরা জলাশয়ের ভাসমান পাতার ওপর ভর দিয়ে দ্রুত বেগে দৌড়াতে পারে, যা অন্য প্রজাতির জলচর পাখির পক্ষে সম্ভব নয়। সে তুলনায় খুব বেশি উড়তে পারে না। ওড়ার সময় পা ঝুলিয়ে এবং গলা সামনে বাড়িয়ে ওড়ে। বেশিরভাগ জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। মিলন ঋতুতে ডাকাডাকি করে বেশি। প্রহরে প্রহরে ‘পি-পি-পি-পি-পি-’ সুরে ডেকে ওঠে। তাই এদের নামকরণের শেষ অক্ষরের সঙ্গে নিজস্ব সুরের ‘পি-পি’ শব্দটি যোগ হয়েছে। অনেক সময় ‘সিইক-সিইক’ সুরেও ডাকে। ডাহুকের মতো এদের সুরে তাল-লয় নেই। খানিকটা কর্কশ। পাখিটা দেশে অধিক পরিচিত নয়, যেমনটি ডাহুক। স্থানীয় লোকের কাছে ‘পিপি’ পাখি নামে পরিচিত এরা। পাখির বাংলা নাম: ‘জলপিপি’, ইংরেজি নাম: ‘ব্রোঞ্জ উইংড জাকানা’ (Bronze Winged Jacana), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘মেটোপিডিয়াস ইন্ডিকাস’ (Metopidius indicus), গোত্রের নাম: ‘জাকানিদি’। এরা ‘দলপিপি’ নামেও পরিচিত। লম্বায় পুরুষ পাখি ২৯ সেন্টিমিটার, স্ত্রী পাখি ৩২ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড়, গলা, বুক উজ্জ্বল নীলাভ-কালো। চোখের ওপরের দিক থেকে চওড়া টান ঘাড়ে গিয়ে ঠেকেছে। পিঠ এবং ডানা সবুজাভ-ব্রোঞ্জ। ওড়ার পালক কালচে-বাদামি। লেজ খাটো, পাটকিলে লাল। ঠোঁট সবুজাভ-হলুদ। ঠোঁটের গোড়ায় সামান্য লাল ছোপের সঙ্গে সিসে-লাল বর্মদ্বারা আচ্ছাদিত, যা কপাল পর্যন্ত ঠেকেছে। লম্বা পা, ময়লা-সবুজ বর্ণ। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার: জলজ পোকামাকড়। এ ছাড়াও ঘাসবীজ, জলজ উদ্ভিদের কচিপাতা খেতে দেখা যায়। প্রজনন সময় জুন থেকে আগস্ট। বাসা বাঁধে ভাসমান জলজ উদ্ভিদের ওপর পানা বা ঘাসপাতা দিয়ে। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/10/2013
বন খঞ্জন | Forest Wagtail | Dendronanthus indicus
বন খঞ্জন | ছবি: ইন্টারনেট বাংলা নাম: ‘বনখঞ্জন,’ ইংরেজি নাম: ‘ফরেস্ট ওয়াগটেল’ (Forest Wagtail), বৈজ্ঞানিক নাম: Dendronanthus indicus | এরা লম্বায় ১৬-১৮ সেন্টিমিটার। ঘাড়ের দুপাশ জলপাই রঙা। বুক ও পেট সাদা। তার ওপর চওড়া কালো দুটি দাগ। ডানার প্রান্তের পালক ময়লা হলুদ। লেজ পাটকিলে কালো। তবে লেজের দুপাশের পালক সাদা। শরীরের তুলনায় লেজটা বড়। চোখ দুটো বেশ মায়াবী। চোখের ওপরে সাদা বাঁকানো টান। পা হালকা গোলাপি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে প্রায় একই রকম। সব ধরনের খঞ্জনই দেখতে সুন্দর। সে তুলনায় বনখঞ্জন একটু নিষ্প্রভ। তবে চেহারাটা মায়াবী। বনখঞ্জন হিংসুটে কিংবা ঝগড়াটে নয়। বিচরণ করে একাকী। এরা পরিযায়ী পাখি। শীত শুরু হওয়ার আগেই উপমহাদেশে চলে আসে। থেকে যায় গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। অন্যসব খঞ্জন সাধারণত মাঠ-প্রান্তরে বিচরণ করলেও এরা বনে জঙ্গলে বেশি বিচরণ করে। তুলনামূলকভাবে ফাঁকা জঙ্গল এদের পছন্দ। সাধারণত আমাদের দেশে প্রায় আট প্রজাতির খঞ্জন দেখা যায়। বনখঞ্জন, সাদা খঞ্জন, বড় পাকড়া খঞ্জন, পাকড়া খঞ্জন, ধূসর খঞ্জন, হলুদ খঞ্জন, হলদে মাথা খঞ্জন, কালো মাথা খঞ্জন। বড় পাকড়া খঞ্জন ছাড়া অন্যরা পরিযায়ী হয়ে আসে। কয়েক প্রজাতি এ দেশে ডিম বাচ্চাও ফোটায়। সব ধরনের খঞ্জনই চঞ্চল প্রকৃতির। স্থিরতা এদের মাঝে নেই বললেই চলে। নাচের ভঙ্গিতে লেজ দোলাতে থাকে সর্বক্ষণ। অবশ্য কোমরের গড়ন ভিন্নতার কারণে কোমরটা সারাক্ষণ কাঁপতে থাকে। ফলে মনে হয় এরা বুঝি সারাদিন নেচে বেড়ায়। প্রকৃতপক্ষে তা নয়। সব ধরনের খঞ্জনের প্রিয় খাবার পোকামাকড়। বনখঞ্জনরাও তদ্রুপ বনপ্রান্তরে ঘুরে ঘুরে পোকামাকড় খেয়ে থাকে। প্রজনন সময় মে-জুলাই। বাসা বাঁধে ঘাসবনে অথবা গাছের গোড়ার খোঁদলে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, নরম লতাপতা। বাসার আকৃতি লম্বাটে। ডিমের সংখ্যা ২-৫টি। ডিম ফুটতে সময় নেয় ১৭-১৯ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 12/10/2012
কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা | Collared scops owl | Otus lettia
কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা | ছবি: ইন্টারনেট মূলত এরা একই প্রজাতির পাখি। দেখতেও অনেকটা একই রকম। স্বভাবেও মিল রয়েছে খানিকটা। ভয়ঙ্কর দর্শন। গোলাকার চোখ। গোলাকার শারীরিক গঠনও। নিশাচর পাখি। কেবল রাতের আঁধার নেমে এলে শিকারে বের হয়। দিনে গাছের বড় পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। কিছুটা লাজুক স্বভাবের বলা যায়। অন্যসব শিকারি পাখিদের মতো অত হিংস্র নয়। চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। মিশ্র চিরহরিৎ বনে দেখা যায়। এছাড়াও বাঁশ বনে কিংবা নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চলে দেখা মেলে। একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায় গাছের ডালে চোখ প্রসারিত করে চুপচাপ বসে থাকে। ওই অবস্থায় যে কেউ দেখলে ভয় পেতে পারেন। তার ওপর গুরুগম্ভীর সুরে ডেকে ওঠে, ‘গুগ গুক..গুগ গুক..’। যার ফলে পিলে চমকে ওঠে অনেকেরই। আসলে ওরা একেবারেই নিরীহ প্রাণী। অন্যসব প্যাঁচাদের মতো এরাও মাথা ঘুরিয়ে ঘাড়ের ওপর নিয়ে ঠেকাতে পারে। শিকার সন্ধানে পদ্ধতিটি দারুণ কাজে দেয়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া উত্তর-ভারত, পশ্চিম হিমালাঞ্চল, শ্রীলঙ্কা, উত্তর পাকিস্তান, চীন ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা’, ইংরেজি নাম: ‘কলারড স্কপস আউল’ (Collared scops owl), বৈজ্ঞানিক নাম: Otus lettia| এরা ‘বন্ধনীযুক্ত নিমপোখ’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৩-২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। ওজন ১০০-১৭০ গ্রাম। মাথার দু’পাশে কান পশম রয়েছে, যা ঝুঁটি আকৃতির দেখায়। চোখের দু’পাশে কপালের ওপর সাদা টান। মুখমণ্ডল হলদে-বাদামি। দেহের উপরাংশ ধূসর-বাদামি রঙের ছিট ছিট। দেহের নিচের দিকে হলদে-বাদামির ওপর টানা কালো রেখা। চোখের তারা গাঢ় বাদামি। শিং রঙা ঠোঁট আকারে খাটো, নিচের দিকে বড়শির মতো বাঁকানো। পায়ের আঙুল ফ্যাকাসে হলদে। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ, গোবরে পোকা, ইঁদুর, টিকটিকি, ফড়িংসহ অন্যান্য পোকামাকড়। সুযোগ পেলে ছোট পাখিও শিকার করে। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। মরা গাছের ৩-৫ মিটার উঁচুতে প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৩-২৫ দিন। শাবক শাবলম্বী হতে মাসখানেক লেগে যায়। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 28/08/2015
শিয়ালে কীট কুড়ানি | Chestnut bellied Nuthatch | Sitta castanea
শিয়ালে কীট কুড়ানি | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না, বিরল দর্শন। পার্বত্য চট্টগ্রামে যৎসামান্য দেখা যেতে পারে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল ক্রান্তীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বন, ক্রান্তীয় পার্বত্য অরণ্য, খোলা পর্ণমোচী বন। শালবন বেশি পছন্দের। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। হিংস নয়। স্বভাবে অত্যন্ত চঞ্চল। কাঠঠোকরা পাখিদের মতো গাছের খাড়া কাণ্ডে খুব দ্রুত হেঁটে উঠতে পারে। নিমেষেই গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে কীট-পতঙ্গ খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে যায়। হয়তো এ জন্যই এদের নামকরণ হয় ‘কীট-কুড়ানি’। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, তিব্বত, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। এরা বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘শিয়ালে কীট-কুড়ানি’, ইংরেজি নাম: ‘চেস্টনাট বেলিড নাটহ্যাচ’ (Chestnut-bellied Nuthatch), বৈজ্ঞানিক নাম: Sitta castanea | এরা ‘খয়রাপেট বনমালী’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি গড় দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৯ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য আছে। কপাল ও ঘাড় রূপালী-ধূসর। পিঠ ধূসর। লেজ খাটো, কালো-ধূসর। মাথার দু’পাশ দিয়ে কালোটান ঘাড়ের কাছে পৌঁছে নিচে নেমেছে। ডানার প্রান্ত পালক কালচে-ধূসর। দেহতল শিয়ালে রঙের অথবা খয়েরি। ঠোঁট কালচে। পা ধূসর-কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথা, পিঠ ও লেজ বাদামি ধূসর। দেহতল হালকা খয়েরি। বাদবাকি একই রকম। প্রধান খাবার: কীট-পতঙ্গ, পোকামাকড়, মাকড়সা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে। শ্যাওলা, তন্তু, শুকনো ঘাস, পালক ইত্যাদি বাসা বানানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/03/2017
চন্দনা টিয়া | Alexandrine parakeet | Psittacula eupatria
চন্দনা টিয়া | ছবি: ইন্টারনেট বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি ‘চন্দনা টিয়া’। দেখতে ভারি সুন্দর। স্লিম গড়ন। তোতা পরিবারের মধ্যে এ পাখিগুলোই বেশি আকর্ষণীয়। দেহের তুলনায় এদের লেজ অনেকটাই লম্বা। বিচরণ করে শুষ্ক ও আর্দ্র পাতাঝরা বনাঞ্চলে। ম্যানগ্রোভ অরণ্যেও দেখা যায়। বিশেষ করে ফল এবং বীজজাতীয় শস্য খেতের আশপাশে বেশি নজরে পড়ে। ঝাঁকবেঁধে শস্য খেতে বিচরণ করার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে এরা। যা খায় তারচেয়ে বেশি অপচয় করে। কৃষকদের সঙ্গে এদের বৈরিতার কারণ ফসল নষ্ট করা নিয়ে। মাঝে মধ্যে এদের একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায়ও বিচরণ করতে দেখা যায়। কণ্ঠস্বর কর্কশ। ‘ক্রি-অ্যার’ সুরে ডাকে। কয়েক দশক আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ প্রজাতিটির সাক্ষাৎ পাওয়া গেলেও ইদানীং যত্রতত্র নজরে পড়ে না। খাঁচায় বন্দি এবং উঁচু গাছ-গাছালির সংকটের কারণে এদের প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে প্রজাতিটি দেশে মহাবিপন্ন হয়ে পড়েছে। এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার পর্যন্ত। অত্রাঞ্চলে এই পাখিগুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে। পাখির বাংলা নামঃ চন্দনা টিয়া, ইংরেজি নামঃ অ্যালেক্সএনড্রিন প্যারাকিট (Alexandrine Parakeet), বৈজ্ঞানিক নামঃ Psittacula eupatria | অনেকে ভুল করে এদেরকে ‘সবুজ টিয়া’ নামেও ডাকে। প্রজাতির দৈর্ঘ্য ৫৬-৬২ সেন্টিমিটার। লেজ ২৯-৩২ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে বিস্তর তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখি আকারে কিছুটা লম্বা। তাছাড়া পুরুষ পাখির গলার পেছনে এবং ঘাড়ের পাশে রয়েছে গোলাপি বলয়। থুতনির কালো রেখা গলাবন্ধের সঙ্গে মিশেছে। সব দেহ ঘাস-সবুজ রঙের। কেবল ডানার মধ্য পালকে রয়েছে লালপট্টি। স্ত্রী পাখির ক্ষেত্রে গলার পেছনের গোলাপি বলয় নজরে পড়ে না। থুতনির কালো রেখার উপস্থিতি নেই। যুবক চন্দনার ক্ষেত্রেও এ রকমটি নজরে পড়ে। উভয়ের ঠোঁট গাঢ় লাল। ঠোঁটের ডগা কমলা-লাল। চোখের পাতা কমলা-হলুদ, বলয় নীল। প্রধান খাবারঃ ফল, ধান, গম, ভুট্টা, ফুলের রস, গাছের কচি পাতা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে এপ্রিল। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। তবে প্রথম পছন্দ নারিকেল গাছের কোটর। এ ছাড়াও কাঠঠোকরার পরিত্যক্ত বাসায়ও ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা দুই-চারটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২০-২৪ দিন। লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
ধূসর কোকিল | Grey-bellied Cuckoo | Cacomantis passerinus
ধূসর কোকিল | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন আবাসিক পাখি। দেখতে জ্ঞাতি ভাই কোকিলের মতো হলেও রং ভিন্ন এবং আকারেও খাটো। বিচরণ করে খোলা মাঠ প্রান্তরে, খোলা বনভূমির উঁচু গাছ-গাছালিতে এবং উঁচু ঝোপজঙ্গলে। একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায় শিকারে বের হয়। আসলে এরা ঘটা করে শিকারে বের হয় না। মিয়া-বিবি উড়ে উড়ে পোকামাকড় বা কীটপতঙ্গ ধরে খায়। সব সময় হাঁকডাক করা এদের পছন্দ নয়। কেবলমাত্র প্রজনন মৌসুমে হাঁকডাক বেড়ে যায়। এ সময় পুরুষ পাখি মেঘাচ্ছন্ন দিনে, ভোরের দিকে, গোধূলিলগ্নে এবং পূর্ণিমার রাতে শোকাতুর সুরে ‘টীর টীর টীর পীপিপি পিউয়ী’ কণ্ঠে ডাকতে থাকে। প্রজাতিটিকে দেশে তেমন একটা দেখা যাওয়ার নজির নেই। সিলেট, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে এক সময় অনিয়মিতভাবে দেখা গেছে। সর্বশেষ উনিশ শতকের দিকে ঢাকা বিভাগের বনাঞ্চলে দেখা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। সূত্রমতে জানা যায়, এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। বিশেষ করে ভারত, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ চীন এবং ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। বিশ্বে প্রজাতিটি বিপন্মুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘ধূসর কোকিল’, ইংরেজি নাম: ‘গ্রে-বেলিড কুক্কু’, (Grey-bellied Cuckoo), বৈজ্ঞানিক নাম: Cacomantis passerinus | এরা ‘মেটেপেট পাপিয়া’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে তফাত রয়েছে। সামান্য অংশ বাদে পুরুষ পাখির দেহের উপরের দিক কালচে ধূসর রঙের। ওড়ার পালকও কালচে ধূসর। লেজ কালচে ধূসর হলেও অগ্রভাগ সাদা। লেজের নিচের দিকে সাদা ডোরা। দেহের নিন্মাংশ পীতাভ-সাদা। পাপিয়াদের মতো স্ত্রী পাখির চেহারা সাধারণত দু’ধরনের হয়। যেমন পুরুষ পাখিদের মতো এবং কলজে রঙের চেহারারও হয়। এদের পিঠ কালো ডোরাসহ লালচে-বাদামি। গলা ও বুক কালোর ওপর ঢেউ ঢেউ। দেহতল লালচে। উভয় পাখির ঠোঁট শিং কালো। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা বাদামি-হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেখতে কলচে রঙের। প্রধান খাবার: নরম পোকামাকড়। লোমশ শুঁয়োপোকার প্রতি আসক্তি বেশি। প্রজনন মৌসুম জুন থেকে সেপ্টেম্বর। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না। বড় ফুটকি বা প্রিনা পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। ডিম কত দিনে ফোটে তার সঠিক হিসাব নেই। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/09/2015
বালি নাকুটি | Sand Martin | Riparia riparia
বালি নাকুটি | ছবি: ইন্টারনেট ভারতীয় উপমহাদেশে শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। দেখতে হুবহু ‘সাদামাটা নাকুটি’র মতো। তবে এদের চেহারায় সাদার উপস্থিতি কিছুটা কম। উভয় প্রজাতিরই চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। বিচরণ করে ঝাঁকে ঝাঁকে। বাসাও বাঁধে দলবদ্ধ হয়ে। টানেল আকৃতির বাসা বানায়। পাহাড়, নদ-নদীর পাড়ে মাটির খাড়া দেওয়ালে নিজেরা গর্ত খুঁড়ে ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার টানেল বানিয়ে বাসা বাঁধে। কণ্ঠস্বর কর্কশ। দলের সবাই একসঙ্গে ধাতব কণ্ঠে ডাকতে থাকে। ডাক শুনলে দূর থেকে মনে হয় বুঝি ওরা ঝগড়ায় লিপ্ত। অস্থিরমতির পাখি। উড়ন্ত পতঙ্গ শিকার করে। সারাদিন বিরতিহীন ওড়াউড়ি করে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, পূর্বচীন, উত্তর এশিয়া, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত। পাখির বাংলা নাম: ‘বালি নাকুটি’, ইংরেজি নাম: ‘স্যান্ড মার্টিন’ (Sand Martin), বৈজ্ঞানিক নাম: Riparia riparia | প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১২ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা অভিন্ন। কপাল সাদাটে বাদামি। মাথা, ঘাড় ও পিঠ ধূসর বাদামি। ডানা ও লেজ কালচে বাদামি। লম্বা ডানা, লেজের শেষ প্রান্তে মিশেছে। উড়ন্ত অবস্থায় লেজ মাছের লেজের মতো দেখায়। গলা সাদা। বুক বাদামি সাদার মিশ্রণ। বুকের নিচ থেকে বাদবাকি সাদা। চোখ বাদামি। ঠোঁট খাটো, কালো। পা কালো, নখ বড় বড়। প্রধান খাবার: উড়ন্ত পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। কলোনি টাইপ বাসা। গর্তে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ফোটে ১৩-১৪ দিনে। শাবক স্বাবলম্বী হতে সপ্তাহ তিনেক লেগে যায়। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 01/12/2017