গাঙশালিক | Bank myna | Acridotheres ginginianus
গাঙশালিক | ছবি: ইন্টারনেট যত্রতত্র বিচরণ না করলেও দেশে কম-বেশি দেখা যায় এ পাখি। তবে বেশি দেখা যায় নদ-নদীর অববাহিকায়। দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। নামে বহুল পরিচিত হলেও অনেকেই দেখেনি এখনো এদের। এ পাখি দেশে তত সুলভও নয় আজকাল। খানিকটা অসুলভ হয়ে পড়েছে বলা যায়। এর জন্য অধিকাংশ দায়ী পাখি শিকারিরা। শিকারিরা অতি সহজে এদের জীবন্ত শিকার করতে পারে। আর এ কাজটি করে তারা ওদের প্রজনন মৌসুমে। এ সময়ে ওরা নদ-নদীর বা খালপাড়ের খাড়া কিনারে গর্ত করে বাসা বাঁধে। বাসা বাঁধে কলোনি আকারে। পাশাপাশি অনেক পাখি গর্ত করে ডিম পাড়ে। আবার এও দেখা যায়, একই বাসায় একাধিক দম্পতি ঘর বাঁধে। সামাজিকতার বন্ধন এদের মাঝে ব্যাপক। আর সে সুযোগটিই নেন শিকারিরা। তারা প্রজনন মৌসুমে রাতের আঁধারে গর্তে হাত ঢুকিয়ে এদের জীবন্ত ধরে রাজধানীর বিভিন্ন পাখির দোকানে সরবরাহ করে। এদের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। দোকানিরা এদের বুনো ময়না বলে চালিয়ে দেন। চেহারাটাও সে ধাঁচের। অনেকটাই ময়না পাখির মতোই। পাখি সম্পর্কে যাদের ধারণা কম তারাই এদের ক্রেতা। এ পাখির বাংলা নাম: ‘গাঙশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘ব্যাংক ময়না’ (Bank myna), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘অ্যাকরিডোথেরেস জিনজিনিয়ানাস’ (Acridotheres ginginianus), গোত্রের নাম:‘স্টুরনিদি’। গাঙশালিক লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। মাথা মসৃণ কালো। থুঁতনি গলা পর্যন্তও তদ্রপ। কপালে ছোট কারো ঝুঁটি। দেহের অধিকাংশ পালক নীলচে ধূসর। ডানার পালক কালো। ওড়ার পালক সাদাটে ছোপ। পেটের নিচের দিকে বাদামি-কমলা। লেজ কালো। কনীনিকা গাঢ় লাল। ঠোঁট লালচে হলুদ। চোখের দু’পাশ পালকহীন পাটকিলে হলদে-লাল। পা কমলা-লাল। গাঙশালিকের প্রধান খাবার পোকা-মাকড়। এছাড়া শস্যদানাও খেতে দেখা যায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। নদী বা খালের খাড়া পাড়ে গর্ত করে বাসা বাঁধে। এছাড়াও দালান-কোঠা, পুরনো পুলের ফোঁকরে বাসা বাঁধে। মাটিতে বাসা বাঁধলে সে ক্ষেত্রে গর্তটা লম্বা করে বেশ। অনেক শাখা-প্রশাখা থাকে। এর মধ্যে শুকনো ঘাস লতাপাতা ঢুকিয়ে ডিম পাড়ার উপযোগী করে নেয়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/05/2014
চিতিপাক গোশালিক | Spot winged Starling | Saroglossa spiloptera
চিতিপাক গোশালিক | ছবি: ইন্টারনেট বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাস্থল পরিষ্কার বনপ্রান্ত, খোলা বন, কৃষিজমি। এ ছাড়াও পর্বতের ৭০০-১০০০ মিটার উঁচুতে দেখা যায়। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না। বেশির ভাগই জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। বিচরণ করে ছোট দলেও। স্বভাবে অন্যসব শালিকের মতোই ঝগড়াটে। সারাদিন খুনসুটি করে কাটায়। তবে ওদের ঝগড়া খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায় না, কিচির-মিচির পর্যন্তই ঝগড়া। পরক্ষণে আবার মিলেও যায়। আবার শুরু। এভাবেই দিন কাটে। পারতপক্ষে কেউ কাউকে আক্রমণ করে না। চলাফেরায় খুব হুঁশিয়ারি। বিশ্বে এদের অবস্থান তত ভালো নয়। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘চিতিপাক গোশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘স্পট-উইংড স্টার্লিং’ (Spot-winged Starling), বৈজ্ঞানিক নাম: Saroglossa spiloptera। এরা ‘লালচেগলা শালিক’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১০ প্রজাতির শালিক নজরে পড়ে। যথাক্রমে: গো-শালিক, ভাত শালিক, ঝুঁটি শালিক, গাঙ শালিক, পাতি কাঠশালিক, গোলাপি কাঠশালিক, চিতিপাখ গোশালিক, খয়রালেজ কাঠশালিক, বামুন কাঠশালিক ও ধলাতলা শালিক। এরা লম্বায় ১৯-২০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা বাদামি। ঘাড় ও পিঠ ধূসর এবং কালো-বাদামি। ডানার প্রান্ত নীলাভ কালো। লেজ লালচে বাদামি। গলা লালচে। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত সাদাটে। বুকের দু’পাশ শেয়ালে লাল। ঠোঁট নীলাভ কালো। চোখের বলয় সাদা। পা বেগুনি কালো। দেখতে একই রকম মনে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। আকারেও সামান্য ছোট। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, পিঁপড়া, ছোট ফল, ফুলের মধু। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বাঁধে ৬-১০ মিটার উচ্চতার গাছের প্রাকৃতিক কোটরে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, লতাপাতা, দড়ি, কাপড়ের টুকরো ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/08/2017
কলজেবুটি কাঠকুড়ালি | Heart spotted woodpecker | Hemicircus canente
কলজেবুটি কাঠকুড়ালি | ছবি: ইন্টারনেট অনিয়মিত ও বিরলতম পরিযায়ী পাখি। কচ্ছপ আকৃতির গোলাকার গড়ন। দেখতে মন্দ নয়। শরীরে সাদা-কালো আঁকিবুকি। পরখ করে দেখলে বোঝা যায় ডানার প্রান্তে কালো রঙের হৃৎপিণ্ড আকৃতির দাগ। যা থেকেই এদের নামকরণের সূত্রপাত। স্বভাবে চঞ্চল। অন্যসব প্রজাতির কাঠঠোকরাদের মতো যত্রতত্র দেখা যায় না। দেখা মেলে চিরসবুজ ও আর্দ্র পাতাঝরা বনে। দেখা মেলে বাঁশবনেও। বিচরণ করে একা কিংবা জোড়ায় জোড়ায়। গাছের কাণ্ডের চারপাশে লাফিয়ে ঘুরে ঘুরে শিকার খোঁজে। এ সময় শক্ত-মজবুত ঠোঁট চালিয়ে গাছের বাকলের ভিতর থেকে কীটপতঙ্গ বের করে আনে। শিকার পেলে তীক্ষ কণ্ঠে ‘ক্লিক-ক্লিক’ সুরে ডেকে ওঠে। এ ছাড়াও মাঝে মাঝে গাছের ডালের চারপাশে ঘুরে ঘুরে ‘টুই-টুই-টিটিটিটিটি…’ সুরে ডাকতে থাকে। বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের গহিন বনাঞ্চলে দেখা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ইন্দোচীন পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। এরা বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। অন্যসব কাঠঠোকরার মতোই এদের শক্রসংখ্যা নগণ্য। তথাপিও এদের সংখ্যা অপ্রতুল। প্রধান কারণটি হচ্ছে অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে। পাখির বাংলা নাম: ‘কলজেবুটি কাঠকুড়ালি’, ইংরেজি নাম: ‘হার্ট-স্পটেড উডপেকার’(Heart-spotted woodpecker) বৈজ্ঞানিক নাম: Hemicircus canente | এরা ‘হৃৎপিণ্ড- ফোঁটাযুক্ত কাঠঠোকরা’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ১৫-১৬ সেন্টিমিটার। ওজন ৩৬ গ্রাম। পুরুষ পাখির কপাল কালো, স্ত্রী পাখির কপাল সাদা। এ ছাড়া উভয়েরই ঝুঁটি পেছনের দিকে খাড়া। ঘাড় কালো, দুই পাশ পীতাভ সাদা। শরীরের ওপরের অংশ কালোর ওপর সাদা। ডানার সাদা বাজু অংশে কালো রঙের ছোট হৃৎপিণ্ড আকারের ফোঁটা। খাটো লেজটি কালো বর্ণের। দেহতল কালচে-জলপাই। ঠোঁট শিঙ-বাদামি। চোখ জলপাই বাদামি। পা ও পায়ের পাতা স্লেট কালো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা অনেকটাই স্ত্রী পাখির মতো দেখতে। প্রধান খাবার: গাছ পিঁপড়া, উইপোকা ও পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত। বাসা বাঁধে গাছের মরা কাণ্ডে গর্ত বানিয়ে। নিজেরাই গর্ত খুঁড়ে নেয়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে কত দিন সময় লাগে সে তথ্য জানা যায়নি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকন্ঠ 09/11/2018
বাংলা ডাহর | Bengal Florican | Houbaropsis bengalensis
বাংলা ডাহর | ছবি: ইন্টারনেট বিলুপ্ত প্রজাতির পাখি। দেশে প্রায় ৬৫-৭৫ বছর আগে দেখা গেছে। এক সময় ঢাকা বিভাগ এবং উত্তরবঙ্গের তৃণভূমিতে দেখা যেত। হালে দেখা যাওয়ার রেকর্ড নেই। এরা আকারে বেশ বড়সড়। দেখতে অনেকটাই ময়ূরের মতো। এমনকি চলাফেরা কিংবা শিকার খোঁজার ভঙ্গিও। বিচরণ করে আর্দ্র খোলা লম্বা তৃণভূমিতে। অধিক ঝোপ জঙ্গল এড়িয়ে চলে। দ্রুত দৌড়াতে পারে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত (আসাম, উত্তর প্রদেশ, অরুণাচল), নেপালসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, কম্বোডিয়া ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘বাংলা ডাহর’, ইংরেজি নাম: ‘বেঙ্গল ফ্লোরিকান’ (Bengal Florican), বৈজ্ঞানিক নাম: Houbaropsis bengalensis | এরা ‘ডাহর’ নামেও পরিচিত। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্য রয়েছে আকার-আকৃতি এবং ওজনেও। প্রজাতির স্ত্রী পাখি দৈর্ঘ্যে ৬৮ সেন্টিমিটার। ওজন ১৭০০-২২৫০ গ্রাম। পুরুষ পাখি দৈর্ঘ্যে ৬৪ সেন্টিমিটার। ওজন ১২৫০-১৭০০ গ্রাম। পুরুষ পাখির মাথা কালো মখমলের কাপড়ের মতো। মাথার নিচ থেকে ঝুঁটি গড়িয়ে পড়েছে। গলার নিচেও ঝুঁটি লক্ষ্য করা যায়। পিঠ এবং লেজে বাদামির ওপর কালো ছোপ। লেজ খাটো। ডানার দু’পাশে ধবধবে সাদা। দেহতল কালচে। স্ত্রী পাখির ঝুঁটি অনুপস্থিত, গায়ের বর্ণ হলুদাভ বাদামি। উভয়ের পা ও পায়ের পাতা হলুদ। প্রধান খাবার: মূলত এরা সর্বভুক পাখি। তবে ঘাস বীজ, ঘাসের কচিডগা, ফুল-ফল, পোকামাকড়, পঙ্গপাল, ফড়িং, পিঁপড়া ইত্যাদির প্রতি আসক্তি বেশি।প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে আগস্ট। বাসা বাঁধে ভূমিতে ঘাসলতা বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৫-২৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 02/09/2016
বড় জলকবুতর | Great Black headed Gull | Larus ichthyaetus
বড় জলকবুতর | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন পরিযায়ী পাখি। কেবল শীতে এ প্রজাতির আগমন ঘটে এ দেশে। পরিযায়ী হয়ে আসে দক্ষিণ রাশিয়া ও উত্তর-পূর্ব মঙ্গোলিয়া থেকে। আশ্রয় নেয় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। বাংলাদেশ ছাড়াও শীতে এ প্রজাতির সাক্ষাৎ মেলে ভারত ও পাকিস্তানে। শীত মৌসুমে খাবারের সন্ধানে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে বিচরণ করতে দেখা যায় জলকবুতরকে। রাজধানীর পাশে বহমান বুড়িগঙ্গা নদীতেও দেখা মেলে এদের। তবে পরিযায়ী এ পাখি মিঠা পানির চেয়ে নোনা পানিতে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বেশি। সাগরের কাছাকাছি এলাকায় বেশি দেখা যাওয়ার মূল কারণ এটাই। জলকবুতর বিচরণ করে ঝাঁক বেঁধে। চলাচলরত নৌযানকে অনুসরণ করতে দেখা যায় প্রায়ই। নৌযানের পেছন পেছন চক্কর মেরে উড়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য একটাই, মাছ শিকার। শীতে নৌযাত্রীরা প্রায়ই দৃশ্যটি দেখার সুযোগ পেয়ে থাকে। আর সেই দৃশ্য উপভোগ করার মতোই। এ ছাড়া প্রজাতিটিকে বালুতটে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। বিশেষ করে দ্বীপাঞ্চলের জেলেপল্লীতে ওরা ঘুরঘুর করে। মূলত পল্লীর এখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মরা মাছ খাওয়ার লোভেই ওদের ঘোরাঘুরি। জলকবুতর স্বভাবে শান্ত। ঝগড়াঝাঁটি পছন্দ নয়। নিজেদের মধ্যে খুনসুটি বেধে গেলে বিরক্ত হয়ে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে ওঠে ‘ক্রাআ-ক্রা-আ’। শীত মৌসুমে এ প্রজাতির উপস্থিতি দেশে সন্তোষজনক। শিকারি পাখি ছাড়া এদের পারতপক্ষে কেউ তেমন একটা বিরক্ত করে না। ফলে এরা আমাদের দেশে ভালো অবস্থানেই রয়েছে বলা যায়। পাখিটির বাংলা নাম: ‘বড় জলকবুতর’ | ইংরেজি নাম: ‘গ্রেট ব্ল্যাক-হেডেড গাল’ (Great Black-headed Gull) | বৈজ্ঞানিক নাম: Larus ichthyaetus | এরা ‘কালোশির গঙ্গা কবুতর’ নামেও পরিচিত। বড় জলকবুতর লম্বায় ৭০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ডানার দৈর্ঘ্য প্রসারিত অবস্থায় ১৪২ থেকে ১৭০ সেন্টিমিটার। শীতে রং বদলায়। এ সময় মাথায় সাদার ওপর কালো ছোপ দেখা যায়। শীত কেটে গেলে মাথা ধীরে ধীরে কালো রং ধারণ করে। শুধু চোখের ওপরে ও নিচে অর্ধচন্দ্রাকারে সাদা ছোপ। দেহজুড়ে সাদা রঙের পালক, কেবল ডানার ওপরের দিক ও পিঠ ধূসর। ওড়ার পালকে সাদার ওপর কালো ফোঁটা। দেহতল ধূসর-ফিকে। ঠোঁট মোটা হলুদ। ঠোঁটের ডগা কালো-লালচে। পা ও আঙুল হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ উভয় পাখি দেখতে একই রকম। এদের প্রধান খাবার মাছ। তবে বালুচরে ঘুরে পোকামাকড় খেতেও দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মধ্য এপ্রিল। বাসা বাঁধে জন্মভূমিতেই। জলাশয়ের কাছাকাছি ভূমিতে ঘাস, লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে দুই থেকে ছয়টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১ থেকে ২৭ দিন। আর বাচ্চার স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৪২ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/04/2018
কালো লালগির্দি | Black Redstart | Phoenicurus ochruros
কালো লালগির্দি | ছবি: ইন্টারনেট বাংলাদেশে হেমন্তে দেখা মেলে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব-মধ্য চীন, গ্রেট ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা। প্রাকৃতিক আবাসস্থল পাথুরে পর্বতমালা। দেখা মেলে নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চলেও। পুরুষ পাখি দেখতে মন্দ নয়। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায়। স্বভাবে কিছুটা চঞ্চল হলেও হিংস নয়। সব সময় পয়ঃপরিষ্কার থাকতে পছন্দ করে। নিয়ম করে গোসল করে। সমগ্র বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘কালো-লালগির্দি’, ইংরেজি নাম: ‘ব্ল্যাক রেডস্টার্ট’ (Black Redstart), বৈজ্ঞানিক নাম: Phoenicurus ochruros | এরা ‘কালাগির্দি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ১৩-১৪.৫ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ২৩-২৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১২-২০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় ও পিঠ অন্ধকার স্লেট ধূসর। ডানা কালচে ধূসর। গলা ও বুক কালো। কোমর ও লেজ কমলা-লাল। দেহতল কমলা-লাল। চোখ কালো। ঠোঁট ও পা কালো। স্ত্রী পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও দেহতল ধূসর-বাদামি। লেজ অপেক্ষাকৃত কম কমলা-লাল। বাদবাকি পুরুষের মতো। যুবাদের রং ভিন্ন। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, ছোট ফল, বীজ ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মে থেকে আগস্ট। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা কাপ আকৃতির। বাসা বাঁধার উপকরণ শুকনো ঘাস, সরু লতাপাতা, শৈবাল, চুল, পশম ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৩ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/11/2016
দেশি রাতচরা | Indian Nightjar | Caprimulgus asiaticus
দেশি রাতচরা | ছবি: ইন্টারনেট দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। গ্রামগঞ্জে বাস। বিশেষ করে হালকা ঝোপজঙ্গল কিংবা বাঁশবনে এদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। প্রজনন মৌসুম ছাড়া বেশিরভাগই একাকী বিচরণ করে। দিনে ঘুমিয়ে কাটায়। সূর্যাস্তের খানিকটা পরেই ঝোপজঙ্গলের ভেতর থেকে ‘চউঙ্ক-চউঙ্ক-চউঙ্ক’ সুরে ডাকতে থাকে। কণ্ঠস্বর সুমধুর না হলেও সুরে তাল-লয় রয়েছে। রাত বাড়লে ডাকাডাকি বন্ধ। দেখতে মোটেও আকর্ষণীয় নয়। শারীরিক গড়নটাও একটু ব্যতিক্রম। গায়ের বর্ণ অনেকটাই গাছের মরা ডাল বা শুকনো পাতার মতো। গাছের ডালে বসলে খুব সহজে পাখি হিসেবে শনাক্ত করা যায় না। অপরদিকে মাটিতে বসে থাকলে শুকনো পাতার মতোই মনে হতে পারে। মাড়িয়ে গেলেও টের পাওয়া যায় না যে, এরা পাতা নাকি পাখি! বর্ণচোরা বিধায় নিরাপদে থাকার খানিকটা সুযোগ পায় ওরা। প্রজাতিটি এক সময় সুলভ দর্শন ছিল। হালে অসুলভ হয়ে উঠছে। প্রধান কারণই হচ্ছে আবাস সংকট। গ্রামে আগের মতো ঝোপজঙ্গলও নেই, নেই বাঁশঝাড়ও। যাতে করে প্রজাতিটি বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সমগ্র বিশ্বেও এরা ভালো নেই। ফলে আইইউসিএন প্রজাতিটিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া উত্তর-পশ্চিম ভারত, উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তান, হিমালয়ের দক্ষিণাংশ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত। পাখির নাম: ‘দেশি রাতচরা’, ইংরেজি নাম: ‘ইন্ডিয়ান নাইটজার’ (Indian Nightjar), বৈজ্ঞানিক নাম: Caprimulgus asiaticus | দেশে মোট পাঁচ প্রজাতির ‘রাতচরা’ পাখির দেখা মেলে। রাতচরা লম্বায় ২১-২৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৪০-৪৬ গ্রাম। গায়ের উপরের রঙ কালচে-বাদামি মিশ্রিত ছিট। চোখের পাশ থেকে চিবুক পর্যন্ত অল্পস্বল্প খাড়া লোম। লেজ ও ডানা সামান্য লম্বা। বুক থেকে পেট পর্যন্ত রয়েছে আড়াআড়ি ডোরা দাগ। গলায় হালকা ক্রিমসাদা বন্ধনী। লেজের তলার পালক ফিকে রঙের। পা কালচে। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম মনে হলেও সামান্য পার্থক্য রয়েছে। প্রধান খাবার: ঝিঁঝি পোকা, ফড়িং, গুবরে পোকা ও উড়ন্ত কীটপতঙ্গ। বিশেষ করে নিশাচর কীটপতঙ্গ শিকার করে বেশি। প্রজনন সময় জুন থেকে জুলাই। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে সরাসরি মাটির ওপরে। শুকনো পাতা জড়ো করে তার ওপরে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৬-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 16/10/2015