ঝুঁটি হাঁস | Tufted Duck | Aythya fuligula
ঝুঁটি হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন পরিযায়ী পাখি ‘ঝুঁটি হাঁস’। শীতে সাইবেরিয়া ও উত্তর ইউরোপ থেকে পরিযায়ী হয়ে আসে আমাদের দেশে। আশ্রয় নেয় হাওর-বাঁওড় কিংবা বড়সড়ো জলাশয়ে। তবে যে সব জলাশয়ের গভীরতা ৩-৫ মিটারের কম, কিন্তু ১৫ মিটারের বেশি, সে সব জলাশয়ে সাধারণত এরা বিচরণ করে না। ঝুঁটি হাঁস বিচরণ করে ঝাঁক বেঁধে। নিজ প্রজাতির বাইরের হাঁসদের সঙ্গেও দলবেঁধে শিকারে বের হয়। আবার পানকৌড়ি পাখিদের সঙ্গেও এদের সখ্য রয়েছে। এরা শিকার খুঁজে ডুবিয়ে ডুবিয়ে। একেবারে জলতলে গিয়ে জলজ লতাপাতা থেকে শিকার বের করে আনে। শিকাররত অবস্থায় ‘হু-ওওও..’ সুরে ডাকে। আবার ওড়ার সময় কণ্ঠস্বর পাল্টিয়ে ‘গেরর..গেরর’ সুরে ডাকতে শোনা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা এবং ইউরোপ-আফ্রিকার উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত। গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা স্থিতিশীল বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে আশঙ্কাহীন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও এরা শিকারি দ্বারা নির্যাতিত হয় ব্যাপক। পাখির বাংলা নাম: ‘ঝুঁটি হাঁস’, ইংরেজি নাম: ‘টাফটেড ডাক’ (Tufted Duck), বৈজ্ঞানিক নাম: Aythya fuligula পরিযায়ী। এরা ‘টিকি হাঁস’ অথবা ‘কালো হাঁস’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ৪৩-৪৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৭০০-১০০০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে খানিকটা পার্থক্য রয়েছে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রঙ বদলায়। এ সময় ওদের মাথায় কালো ঝুলন্ত ঝুঁটি দেখা যায়, তা ছাড়া মাথায় স্পষ্ট সাদা ফোঁটা এবং ঘাড় কালো দেখায়। এ ছাড়াও পিঠ, ডানার নিচ, লেজ ও বুকের পালক কুচকুচে কালো রঙ ধারণ করে। কালো রঙ ধারণ করে ঠোঁটের অগ্রভাগও। এমনকি পা ও পায়ের পাতা কালচে হয়ে ওঠে। প্রজননের বাইরে পুরুষ পাখির মাথা, বুক বাদামি-কালো। ডানার নিচের দিকটা ধূসরাভ, থুতনি ও গলা সাদা। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথা কালচে-বাদামি। পিঠ গাঢ় বাদামি। কপাল ও ঠোঁট সাদাটে। প্রধান খাবার: ছোট মাছ, ছোট ব্যাঙ, শামুক, কেঁচো ও জলজ পোকামাকড়। এ ছাড়াও জলজ উদ্ভিদের কচি ডগা ও বীজ খায়। প্রজনন মৌসুম মে মাস। এ সময় উত্তর ইউরোপ থেকে সাইবেরিয়ার নির্জন দ্বীপসমূহে অথবা নদ-নদীর তীরে শুকনো লতাপাতা জড়ো করে বাসা বাঁধে। এ ছাড়াও ভাসমান উদ্ভিদের ওপরেও বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৬-১০টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৩-২৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 08/08/2014
ধূসর সারস | Demoiselle Crane | Anthropoides virgo
ধূসর সারস | ছবি: ইবার্ড বিপন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। দেশে আগমন ঘটে শীতে। হিমালয় পাড়ি দিয়ে মাঝেমধ্যে সিলেটের হাওরাঞ্চলে উপস্থিত হয়। বিচরণ করে জলাশয়ের কাছাকাছি তৃণভূমি, কৃষি ক্ষেত, চারণভূমি, অগভীর আশ্রিত উপসাগরীয় অঞ্চল, নদী ও অগভীর হ্রদে। মাঝেমধ্যে হাঁটু পরিমাণ জলে নেমে খাবার খুঁজতে দেখা যায়। মরু অঞ্চলেও দেখা যাওয়ার নজির রয়েছে। খাদ্যের সন্ধানে বের হয় জোড়ায় অথবা বড়সড়ো ঝাঁকে। চলার পথে কারো ফসলের খেতে দলবেঁধে নামলে মুহূর্তেই ফসল তছনছ করে দেয়। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করতে নাচের কসরৎ দেখায়। এ সময় উভয়ে জোরে জোরে দ্বৈত সঙ্গীতের মতো গান গায়। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, উত্তর-পূর্ব চীন, মঙ্গোলিয়া, তুরস্ক, পশ্চিম ইউরেশিয়া ও আফ্রিকা পর্যন্ত। সমগ্র বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন লাল তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশে সঙ্কটাপন্ন বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে ধূসর সারস। পাখির বাংলা নাম: ‘ধূসর সারস’, ইংরেজি নাম: ‘ডেমোজিল ক্রেন’, (Demoiselle Crane), বৈজ্ঞানিক নাম: Anthropoides virgo | দেশে তিন প্রজাতির পরিযায়ী সারস দেখা যায়। যথাক্রমে: দেশি সারস, পাতি সারস ও ধূসর সারস। গড় দৈর্ঘ্য ৮৫-৯০ সেন্টিমিটার। প্রশস্ত ডানা ১৫০-১৭০ সেন্টিমিটার। ওজন ২-৩ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। মাথার তালু ধূসর। মাথার পেছন থেকে কালো রঙ শুরু করে ঘাড়, থুঁতনি ও গলা হয়ে বুকের ওপর গিয়ে নিচে ঝুলে পড়েছে। চোখের পেছন থেকে সাদা পালক ঘাড়ের ওপর ঝুলে পড়েছে। সারা দেহ গাঢ় ধূসর। ওড়ার পালক কালো। লেজে সাদা-কালো লম্বা পালক, যা ঝুলে পড়েছে নিচে। দেহতল গাঢ় ধূসর। ঠোঁট সবুজাভ, ডগা হলুদ। কমলা-লাল রঙের চোখ দুটি আকারে ছোট। পা ও পায়ের পাতা ময়লা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা ভিন্ন। প্রধান খাবার: শস্যবীজ, ঘাসবীজ, কন্দ, গাছের কচিডগা, ব্যাঙ, টিকটিকি, কাঁকড়া, কেঁচো, মাকড়সা, ছোট পাখি ও কীটপতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। বাসা বাঁধে জলাশয়ের কাছাকাছি মাটির ওপরে। শুকনো চিকন ডালপালা, লতাপাতা উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৭-২৯ দিন। শাবক উড়তে শিখে ৬ সপ্তাহের মধ্যে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 01/04/2016
ভাত শালিক | Common myna | Acridotheres tristis
ভাত শালিক | ছবি: ইন্টারনেট শুধু বাংলাদেশেরই নয়, প্রজাতিটি সমগ্র এশিয়া মহাদেশেরই আবাসিক পাখি। কম-বেশি এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নজরে পড়ে। নজরে পড়ে ইউরোপ, আফ্রিকা কিংবা আমেরিকা মহাদেশেও। এমনকি দ্বীপ দেশসমূহেও দেখা যায়। দেখা যায়, হিমালয় পর্বতের ৩০০০ মিটার উঁচুতেও। প্রজাতিটি দেশের সকলের কাছেই পরিচিত। নাম ‘ভাত শালিক’। দেখা যায় গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলেও। রাজধানীতেও দেখা যায় প্রচুর। গভীর অরণ্য এদের পছন্দ নয়। লোকালয়ের কাছেপিঠে থাকতে পছন্দ করে। বাড়ির আঙিনায় কিংবা অফিস-আদালতের বারান্দায়ও ভাত শালিকের আনাগোনা রয়েছে। বেশিরভাগই জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। একাকীও দেখা যায়, তবে আশপাশে থাকে জোড়ের পাখিটি। আবার ছোট দলেও এদের বিচরণ রয়েছে। জোড়া বাঁধে মৃত্যু অবধি। গাছ-গাছালির চেয়ে মাঠে-ঘাটে বেশি নজরে পড়ে। লাফিয়ে হাঁটে। কোলাহল এদের দারুণ পছন্দ। নিজেরাও কোলাহল করে সময় কাটায়। উচ্চকণ্ঠে ‘চিড়িক..চিড়িক..’ সুরে শিস দেয়। নিজেদের মধ্যে বচসা যেন লেগেই থাকে। ভয় পেলে একে অপরকে সতর্ক করে দেয় তাৎক্ষণিক। আবার সহজে পোষও মানে এরা। শেখালে কথাও বলতে পারে ভাত শালিক। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘ভাত শালিক’, ইংরেজি নাম: ‘কমন ময়না’, (Common myna), বৈজ্ঞানিক নাম: Acridotheres tristis| লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। কেবলমাত্র আকারে সামান্য ছোট স্ত্রী পাখি। প্রাপ্তবয়স্কদের মাথা ও ঘাড় কালচে। পিঠ বাদামি। ডানার বাঁকানো অংশ সাদা, পরের অংশ কালো। লেজ কালো। বুকের অংশ কালো। পেটের দিক বাদামি। বস্তিপ্রদেশ সাদাটে। ওড়ার পালকে সাদা পট্টি দেখা যায়। ঠোঁট হলুদ, নিচের ঠোঁটের গোড়া হালকা বাদামি-সবুজ। চোখ বাদামি। চোখের নিম্নাংশে পালকহীন হলুদ চামড়া। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মাথা হালকা বাদামি-কালো। গলা ও বুক ফিকে বাদামি। প্রধান খাবার বলতে এদের কিছু নেই। মূলত এরা সর্বভুক পাখি। একবারে পোকামাকড় থেকে শুরু করে পচাগলা, ভাত, রুটি, ফুলের মধু সবই খায়। খেজুরের রস এদের খুব প্রিয়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে কিংবা দরদালানের ফাঁক-ফোকরে বাসা বাঁধে। শেকড়-বাঁকড়, কাগজ, দড়ি, প্লাস্টিক এমনকি সাপের খোলস দিয়েও বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৮ দিন। শাবক উড়তে শেখে ২০-২৫ দিনের মধ্যে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 17/01/2015
দেশি পানকৌড়ি | Indian Cormorant | Phalacrocorax fuscicollis
দেশি পানকৌড়ি | ছবি: ইন্টারনেট প্রজাতির অন্য পানকৌড়ি সুলভ দর্শন হলেও ‘দেশি পানকৌড়ি’ বিরল দর্শন বলা যায়। যত্রতত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। কেবল প্রচণ্ড শীতে সিলেট অঞ্চলের বড় বড় হাওর-বাঁওড় বা জলাশয়ে দেখা যায় এবং নদ-নদীতে অল্প বিস্তর দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রজাতির দেখা মেলে ভারতসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। দেশি পানকৌড়ির সংখ্যা সমগ্র বিশ্বে স্থিতিশীল বিধায় আইইউসিএন ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এদের স্বভাব প্রজাতির অন্যদের মতোই। শীতকালে নদী বা জলাশয়ের তীরে কঞ্চি অথবা লাঠিসোটায় বসে পাখা মেলে রোদ পোহাতে দেখা যায়। কিছু সময় গায়ে রোদ লাগিয়ে ঝপাত করে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলে। তার পর ডুব সাঁতার দিয়ে পিছু নেয় মাছের। শিকার ধরতে পারলে ভুস করে ভেসে ওঠে জলের ওপরে। ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরা মাছটাকে গলাটানা দিয়ে গলাধঃকরণ করে। এরা একটানা দীর্ঘক্ষণ ডুবতে পারে বলে অনেকেই এদেরকে ডুবুরি পাখি নামেও ডাকে। প্রিয় পাঠক, ইতোপূর্বে পানকৌড়ি নিয়ে বারকয়েক লেখা হয়েছে। তবে ওগুলো প্রজাতিভেদে ভিন্ন। আশা করি বিভ্রান্তিতে পড়বেন না। পাখির বাংলা নাম: ‘দেশি পানকৌড়ি’, ইংরেজি নাম: ‘ইন্ডিয়ান করমোর্যান্ট’ (Indian Cormorant), বৈজ্ঞানিক নাম: Phalacrocorax fuscicollis | এরা ‘মাঝারি পানকৌড়ি’ নামেও পরিচিত। আবার অঞ্চলভেদে ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন: পানিকাবাডি, পানিকাউর, পানিকাউয়া, পানিকুক্কুট ইত্যাদি। বাংলাদেশে তিন ধরনের পানকৌড়ির সাক্ষাৎ মেলে। যথাক্রমে: বড় পানকৌড়ি, মাঝারি বা দেশি পানকৌড়ি ও ছোট পানকৌড়ি। প্রজাতির সবাইকে মানুষ এক নামেই ডাকে। লম্বায় ৬৩-৬৫ সেন্টিমিটার। এদের সমস্ত শরীর কালো পালকে আবৃত। সূর্যালোকে পিঠ থেকে নীলাভ-সবুজের আভা বের হয়। অন্য সময়ে ধূসর কালো দেখায়। গলা মলিন সাদা। প্রজনন পালক ভিন্ন। ওই সময় কানপট্টি এবং ঘাড়ের ওপর উপরের যৎসামান্য চুলসাদৃশ পালক দেখা যায়। ঠোঁট বড়শির মতো বাঁকানো, সরু লম্বা। পা হাঁসের পায়ের পাতার মতো জোড়া লাগানো। চোখ লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার মাছ। ছোট ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড়ও খায়। প্রজনন মৌসুম জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি (অঞ্চলভেদে হেরফের হয়)। বাসা কলোনিটাইপ। শুকনো ডালপালা দিয়ে অনেকেই এক গাছে বাসা বাঁধে। বাসার শ্রীছাদ নেই। ডিমের সংখ্যা ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৯ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/10/2014
লালপেট ঈগল | Rufous bellied Eagle | Hieraaetus kienerii
লালপেট ঈগল | ছবি: ইন্টারনেট পরিযায়ী পাখি। শীতে আগমন ঘটে। বিচরণ করে চিরহরিৎ, পর্ণমোচী বনপ্রান্তরে। এ ছাড়াও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০-১২০০ মিটার উঁচুতেও দেখা মেলে। উঁচু থেকে নামার সময় ডানা না ঝাঁপটিয়ে মেলে ধরে ধীরে ধীরে নিচে নামতে থাকে। প্রজাতির দেখা মেলে একাকি বা জোড়ায়। কোনো অবস্থায় লবণজল এলাকায় বিচরণ করে না। মিঠাজল এদের বিচরণের জন্য উত্তম এলাকা। নিজের শরীরের সমান ওজনের স্তন্যপায়ী প্রাণী বা সরীসৃপ শিকার করতে সক্ষম। শিকার খোঁজে মাঠ-প্রান্তরের ওপর চক্কর মেরে। ওপর থেকে নিশ্চিত হলে কেবল ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবে আর যাই করুক না কেন এরা কিন্তু শিকারের লেজের দিকে পারতপক্ষে থাবা বসায় না। এ ক্ষেত্রে টার্গেট থাকে ঘাড় বা পিঠ। বিশেষ করে এদের নখ গোলাকার এবং পায়ের পাতায় প্যাডের মতো থাকাতে পিচ্ছিল শিকারকে সহজে কাবু করে ফেলতে পারে, নড়াচড়ার তেমন একটা সুযোগ পায় না। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ চীন, ফিলিপাইন ও মালয় উপদ্বীপ পর্যন্ত। তবে এদের উপস্থিতি কোথাও সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘লালপেট ঈগল’, ইংরেজি নাম: ‘রুফাস বেলিড্ ঈগল’, (Rufous-bellied Eagle), বৈজ্ঞানিক নাম: (Hieraaetus kienerii)। লম্বায় ৪৬-৬১ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির ৭৩৩ গ্রাম, স্ত্রী পাখির ওজন ৮০০ গ্রাম। প্রসারিত পাখা ১০৫ থেকে ১৪০ সেন্টিমিটার। মাথা, গলা, ঘাড় ধূসর কালো। মাথায় কালো ঝুঁটি। পিঠ কালচে-বাদামি। বুক লালচে-বাদামি। পেট থেকে বস্তিপ্রদেশ পর্যন্ত লালচে। লেজের নিচে সাদার সঙ্গে কালো ডোরা। শিঙ রঙের ঠোঁটের গোড়া হলদেটে, অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। চোখ লালচে বাদামি। পা হলদেটে, নখ তীক্ষè, ধুসর-কালচে। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের রং ভিন্ন। প্রধান খাবার: ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, ইঁদুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে মার্চ। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুম ভিন্ন। উঁচু গাছে সরু ডালপালা দিয়ে মস্তবড় বাসা বাঁধে। বাসা অগোছালো। একই বাসায় ফি বছরেও ঘর বাঁধতে দেখা যায়। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৫দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 22/07/2016
বামন লেজকাটা টুনি | Asian Stubtai | Urosphena squameiceps
বামন লেজকাটা টুনি | ছবি: ইন্টারনেট প্রাকৃতিক আবাসস্থল নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চল এবং চিরহরিৎ সুঁচালো বনের লতাগুল্ম। এ ছাড়াও স্যাঁতসেঁতে এলাকায় বেশি নজরে পড়ে। বেশির ভাগই একাকি বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। অস্থিরমতি পাখি। কোথাও একদণ্ড বসে থাকার সময় নেই। সারাদিন ওড়াউড়ি করে ব্যস্ত সময় কাটায়। লতাগুল্মের ফাঁকফোকরে লাফিয়ে বেড়ায়। নিয়ম করে গোসালাদি সারে। গানের গলা ভালো। প্রজনন মৌসুমে হাঁকডাক বেড়ে যায়। শীতে দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে।বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, মিয়ানমার, চীন, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বব্যাপী হুমকির সম্মুখীন না হলেও আইইউসিএন ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রিয় পাঠক, এবার অন্য প্রসঙ্গে যাচ্ছি। বগুড়া জেলার একজন পাখিপ্রেমী মানুষ “হাবিবুর রহমান” অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও আমার লেখা পাখি ফিচারগুলোকে সংগ্রহ করে একটি পেজে বন্দি করেছেন। ইচ্ছে করলে আপনারা সে লেখাগুলো একত্রে এই https://pakhi.tottho.com ঠিকানায় পেতে পারেন। প্রকৃতিপ্রেমী এ মানুষটির জন্য ধন্যবাদ জানানো ছাড়া আমাদের আর করার কিছু নেই। মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাচ্ছি আবার। ‘বামন লেজকাটা টুনি’ সম্পর্কে বলছিলাম। প্রজাতিটির বাংলা নাম: ‘বামন লেজকাটা টুনি’, ইংরেজি নাম: ‘এশিয়ান স্টুবটেইল’(Asian Stubtail), বৈজ্ঞানিক নাম: Urosphena squameiceps | এরা ‘এশীয় ভোঁতালেজ নামে’ নামেও পরিচিত। গড় দৈর্ঘ্য ৯.৫-১০.৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। শরীরের তুলনায় মাথা বড়। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও ডানা গাঢ় বাদামি। ডানার প্রান্ত পালক ধূসর কালচে। দেহতল হলদেটে সাদা। লেজ নেই বললেই চলে। ঠোঁট ছোট, শিং কালো। লম্বা পা ত্বক বর্ণ। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, শুককীট, মাকড়সা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। শৈবাল, শ্যাওলা, শিকড়, তন্তু দিয়ে মোচাকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫ দিন। লেখক: আলমশাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদওপরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 02/12/2016
গাঙশালিক | Bank myna | Acridotheres ginginianus
গাঙশালিক | ছবি: ইন্টারনেট যত্রতত্র বিচরণ না করলেও দেশে কম-বেশি দেখা যায় এ পাখি। তবে বেশি দেখা যায় নদ-নদীর অববাহিকায়। দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। নামে বহুল পরিচিত হলেও অনেকেই দেখেনি এখনো এদের। এ পাখি দেশে তত সুলভও নয় আজকাল। খানিকটা অসুলভ হয়ে পড়েছে বলা যায়। এর জন্য অধিকাংশ দায়ী পাখি শিকারিরা। শিকারিরা অতি সহজে এদের জীবন্ত শিকার করতে পারে। আর এ কাজটি করে তারা ওদের প্রজনন মৌসুমে। এ সময়ে ওরা নদ-নদীর বা খালপাড়ের খাড়া কিনারে গর্ত করে বাসা বাঁধে। বাসা বাঁধে কলোনি আকারে। পাশাপাশি অনেক পাখি গর্ত করে ডিম পাড়ে। আবার এও দেখা যায়, একই বাসায় একাধিক দম্পতি ঘর বাঁধে। সামাজিকতার বন্ধন এদের মাঝে ব্যাপক। আর সে সুযোগটিই নেন শিকারিরা। তারা প্রজনন মৌসুমে রাতের আঁধারে গর্তে হাত ঢুকিয়ে এদের জীবন্ত ধরে রাজধানীর বিভিন্ন পাখির দোকানে সরবরাহ করে। এদের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। দোকানিরা এদের বুনো ময়না বলে চালিয়ে দেন। চেহারাটাও সে ধাঁচের। অনেকটাই ময়না পাখির মতোই। পাখি সম্পর্কে যাদের ধারণা কম তারাই এদের ক্রেতা। এ পাখির বাংলা নাম: ‘গাঙশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘ব্যাংক ময়না’ (Bank myna), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘অ্যাকরিডোথেরেস জিনজিনিয়ানাস’ (Acridotheres ginginianus), গোত্রের নাম:‘স্টুরনিদি’। গাঙশালিক লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। মাথা মসৃণ কালো। থুঁতনি গলা পর্যন্তও তদ্রপ। কপালে ছোট কারো ঝুঁটি। দেহের অধিকাংশ পালক নীলচে ধূসর। ডানার পালক কালো। ওড়ার পালক সাদাটে ছোপ। পেটের নিচের দিকে বাদামি-কমলা। লেজ কালো। কনীনিকা গাঢ় লাল। ঠোঁট লালচে হলুদ। চোখের দু’পাশ পালকহীন পাটকিলে হলদে-লাল। পা কমলা-লাল। গাঙশালিকের প্রধান খাবার পোকা-মাকড়। এছাড়া শস্যদানাও খেতে দেখা যায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। নদী বা খালের খাড়া পাড়ে গর্ত করে বাসা বাঁধে। এছাড়াও দালান-কোঠা, পুরনো পুলের ফোঁকরে বাসা বাঁধে। মাটিতে বাসা বাঁধলে সে ক্ষেত্রে গর্তটা লম্বা করে বেশ। অনেক শাখা-প্রশাখা থাকে। এর মধ্যে শুকনো ঘাস লতাপাতা ঢুকিয়ে ডিম পাড়ার উপযোগী করে নেয়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/05/2014