ভাদি হাঁস | White winged Duck | Asarcornis scutulata
ভাদি হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি। কয়েক দশক আগেও পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরসবুজ বনের জলাশয়ে দেখা যেত। সম্প্রতি এ প্রজাতির পাখি কারো নজরেই পড়ে না। মূলত এরা ধীরগতির সে ললগ্নে জলাশয়ের ওপর নেমে আসে এবং সারারাত ধরে শিকারের লিপ্ত থাকে। ভোরের আলো প্রস্ফুটিত হলে পুনরায় গাছের ডালে আশ্রয় নেয়। বিশ্রামের ফাঁকে ফাঁকে পুরুষ পাখি ‘ক্রংক-ক্রংক’ স্বরে আওয়াজ করে। এ প্রজাতির সঙ্গে গৃহপালিত চীনা হাঁসের আকার-আকৃতি কিংবা বর্ণের মিল ব্যাপক। পাখিবিশারদ ব্যতিরেকে অন্য কারো পক্ষে প্রজাতি শনাক্তকরণ কঠিন বৈকি। বর্তমানে এদের বিস্তৃতি বিশ্বে সন্তোষজনক নয়, শুধু এশিয়ার কিছু অঞ্চল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। যতদূর জানা যায়, উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বভাগ পর্যন্ত বিস্তৃতি। বাংলাদেশে একেবারেই অনুপস্থিত এ প্রজাতির পাখি। প্রধান কারণ অবাধে বৃক্ষ নিধন। বিশেষ করে উঁচু গাছগাছালি বিলীন হওয়াতে এদের প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে। বিঘ্ন ঘটছে বিচরণেও। ফলে এরা আর এ দেশমুখী হচ্ছে না। বিশ্বে বিপন্ন ও বাংলাদেশে অতিবিপন্ন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে তাই। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত রয়েছে। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘ভাদি হাঁস’, ইংরেজি নাম: হোয়াইট-উয়িংড ডাক’ (White-winged Duck), বৈজ্ঞানিক নাম: Asarcornis scutulata | এরা লম্বায় ৮০-৮২ সেন্টিমিটার (ঠোঁট ৬ সে.মি লেজ ১৫ সে.মি)। ওজন প্রায় ৩ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ পাখির আকারে ও বর্ণে পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা ও ঘাড় সাদার ওপর ছোট ছোট কালো দাগ। কাঁধে সাদা পট্টি। পিঠ কালচের সঙ্গে তামাটের মিশ্রণ। ডানায় নীলাভ কালো বন্ধনী। ডানার কনুইয়ের প্রান্তে খাড়া নখর বিদ্যমান। স্ত্রী পাখি আকারে খানিকটা ছোট। দেহের পালক অনুজ্জ্বল। মাথায় ঘন কালো দাগ। ঠোঁট কমলা। পুরুষ পাখির ঠোঁটের গোড়ায় মাংসপিণ্ড স্ফীত রয়েছে। এটি প্রজনন মৌসুমে আরো স্ফীত হয়। পা ও পায়ের পাতা কমলা হলুদের মিশ্রণ। পায়ের পেছনের আঙুল সামান্য ছড়ানো। প্রধান খাবার: শামুক, ছোট মাছ, পোকামাকড় ও জলজ উদ্ভিদের কচিপাতা। প্রজনন সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। আম, উরি, সিভিট, ছুন্ডুল ইত্যাদি গাছের ৩০ মিটার উঁচুতে প্রাকৃতিক কোটরে ঘাস বা লতাপাতা দিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৭-১০টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 13/12/2013
হিমালয়ী গৃধিনী | Himalayan Vulture | Gyps himalayensis
হিমালয়ী গৃধিনী | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন, পরিযায়ী পাখি। দেশে খুব কম দেখা যায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, তিব্বত, চীন, আফগানিস্তান, কাজাখস্তান, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও সিঙ্গাপুর পর্যন্ত। ঈগলাকৃতির চেহারা। খোলামাঠ প্রান্তরে বিচরণ করে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ মিটার উচ্চতায়ও এদের দেখা মেলে। একাকী, জোড়ায় কিংবা দল বেঁধে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। সব ধরনের মৃতদেহ ও সরীসৃপ এদের খাবার। যার ফলে বিষাক্ত মৃতদেহ খেয়ে ওদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। প্রজাতির অন্যদের তুলনায় এরা দীর্ঘজীবী। গড় আয়ু ৫০-৫৫ বছর। পাখির বাংলা নাম: ‘হিমালয়ী গৃধিনী’, ইংরেজি নাম: ‘হিমালয়ান ভালচার’ (Himalayan Vulture), বৈজ্ঞানিক নাম: Gyps himalayensis | এরা ‘বৃহত্তম গিদরি,’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কম-বেশি ১০০-১১০ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানার দৈর্ঘ্য ২৬০-২৯০ সেন্টিমিটার। মাথা, গলা ও ঘাড় তুলতুলে ক্রিম সাদা। পিঠ ও লেজ ঢাকনি সাদাটে আভার সঙ্গে হলদে বাদামি। ডানার প্রান্ত পালক এবং লেজ কালো। ওড়ার পালকও কালচে। দেহতল বাদামির ওপর অস্পষ্ট রেখা যুক্ত। শিঙ কালো রঙের ঠোঁটের উপরের অংশ বড়শির মতো বাঁকানো। ঠোঁট থেকে হলুদাভ আভা বের হয়। পা ও পায়ের পাতা ফিকে, নখ কালো। যুবাদের রঙ ভিন্ন। প্রধান খাবার: মৃতদেহ। সর্বভুক পাখি। প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে মে। বাসা বাঁধে পুরনো উঁচু গাছের ডালে। বাসা বাঁধতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে ডালপালা পশুর চুল, গাছের বাকল, হাড় ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৫৪-৫৮ দিন। বাবা-মায়ের সঙ্গে মাস ছয়েক কাটায়। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 17/03/2017
দেশি পানকৌড়ি | Indian Cormorant | Phalacrocorax fuscicollis
দেশি পানকৌড়ি | ছবি: ইন্টারনেট প্রজাতির অন্য পানকৌড়ি সুলভ দর্শন হলেও ‘দেশি পানকৌড়ি’ বিরল দর্শন বলা যায়। যত্রতত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। কেবল প্রচণ্ড শীতে সিলেট অঞ্চলের বড় বড় হাওর-বাঁওড় বা জলাশয়ে দেখা যায় এবং নদ-নদীতে অল্প বিস্তর দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রজাতির দেখা মেলে ভারতসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। দেশি পানকৌড়ির সংখ্যা সমগ্র বিশ্বে স্থিতিশীল বিধায় আইইউসিএন ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এদের স্বভাব প্রজাতির অন্যদের মতোই। শীতকালে নদী বা জলাশয়ের তীরে কঞ্চি অথবা লাঠিসোটায় বসে পাখা মেলে রোদ পোহাতে দেখা যায়। কিছু সময় গায়ে রোদ লাগিয়ে ঝপাত করে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলে। তার পর ডুব সাঁতার দিয়ে পিছু নেয় মাছের। শিকার ধরতে পারলে ভুস করে ভেসে ওঠে জলের ওপরে। ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরা মাছটাকে গলাটানা দিয়ে গলাধঃকরণ করে। এরা একটানা দীর্ঘক্ষণ ডুবতে পারে বলে অনেকেই এদেরকে ডুবুরি পাখি নামেও ডাকে। প্রিয় পাঠক, ইতোপূর্বে পানকৌড়ি নিয়ে বারকয়েক লেখা হয়েছে। তবে ওগুলো প্রজাতিভেদে ভিন্ন। আশা করি বিভ্রান্তিতে পড়বেন না। পাখির বাংলা নাম: ‘দেশি পানকৌড়ি’, ইংরেজি নাম: ‘ইন্ডিয়ান করমোর্যান্ট’ (Indian Cormorant), বৈজ্ঞানিক নাম: Phalacrocorax fuscicollis | এরা ‘মাঝারি পানকৌড়ি’ নামেও পরিচিত। আবার অঞ্চলভেদে ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন: পানিকাবাডি, পানিকাউর, পানিকাউয়া, পানিকুক্কুট ইত্যাদি। বাংলাদেশে তিন ধরনের পানকৌড়ির সাক্ষাৎ মেলে। যথাক্রমে: বড় পানকৌড়ি, মাঝারি বা দেশি পানকৌড়ি ও ছোট পানকৌড়ি। প্রজাতির সবাইকে মানুষ এক নামেই ডাকে। লম্বায় ৬৩-৬৫ সেন্টিমিটার। এদের সমস্ত শরীর কালো পালকে আবৃত। সূর্যালোকে পিঠ থেকে নীলাভ-সবুজের আভা বের হয়। অন্য সময়ে ধূসর কালো দেখায়। গলা মলিন সাদা। প্রজনন পালক ভিন্ন। ওই সময় কানপট্টি এবং ঘাড়ের ওপর উপরের যৎসামান্য চুলসাদৃশ পালক দেখা যায়। ঠোঁট বড়শির মতো বাঁকানো, সরু লম্বা। পা হাঁসের পায়ের পাতার মতো জোড়া লাগানো। চোখ লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার মাছ। ছোট ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড়ও খায়। প্রজনন মৌসুম জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি (অঞ্চলভেদে হেরফের হয়)। বাসা কলোনিটাইপ। শুকনো ডালপালা দিয়ে অনেকেই এক গাছে বাসা বাঁধে। বাসার শ্রীছাদ নেই। ডিমের সংখ্যা ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৯ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/10/2014
এশীয় ফিঙেপাপিয়া | Asian Drongo Cuckoo | Surniculus lugubris
এশীয় ফিঙেপাপিয়া | ছবি: ইন্টারনেট পাপিয়া প্রজাতির পাখি। চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। হঠাৎ নজরে পড়লে ফিঙে পাখি মনে হতে পারে যে কারোই। দূর থেকে দেখতে অনেকটা সে রকমই মনে হয়। ফিঙেদের মতো লম্বা চেরালেজটিও তদ্রপ গায়ের বর্ণেরও মিল রয়েছে হুবহু। মিল নেই শুধু মুখের চারপাশটা। তা ছাড়া এরা একটু মোটাসোটা ও খাটো। সে তুলনায় ফিঙে পাখি স্লিম। চেহারায় মিল থাকায় এ প্রজাতির পাপিয়াদের নামের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে ‘ফিঙে’ শব্দটি। প্রিয় পাঠক, এরা দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বিচরণ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে। দেখা মেলে বনের কিনারেও। লোকালয়ে খুব বেশি দেখা যাওয়ার নজির নেই। একাকী কিংবা জোড়ায় বিচরণ করে। এদের খাবার কৌশল ভিন্ন। সামান্য উড়ে খাবার খেয়ে পুনরায় উড়তে থাকে। স্থির হয়ে একগাদা খাবার খাওয়া ওদের পছন্দ নয়। প্রজনন মৌসুমে হাঁকডাক বেড়ে যায়। এ সময় গাছের উঁচু ডালে বসে ‘পিপ-পিপ-পিপ-পিপ…’ সুরে ডাকতে থাকে। পূর্ণিমার রাতেও ডাকাডাকি করে এরা। আর মেঘাচ্ছন্ন দিন হলে তো কথাই নেই। দিনভরই ডাকতে থাকে। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও চীন অবধি। প্রজাতিটি সমগ্র বিশ্বে বিপন্মুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘এশীয় ফিঙেপাপিয়া’, ইংরেজি নাম: এশিয়ান ড্রঙ্গো কুক্কু (Asian Drongo-Cuckoo), বৈজ্ঞানিক নাম: Surniculus lugubris | এরা ‘ফিঙে কুলি’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির সমস্ত দেহ চকচকে কালো, কেবল মাথা ও ঘাড় ব্যতীত। ঘাড়ের পেছনে রয়েছে ক্ষুদ্র সাদা পট্টি, যা দূর থেকে নজরে পড়ে না। চেরালেজটি তুলনামূলক কম চকচকে। লেজের বাইরের পালকের গোড়ায় রয়েছে সাদা ডোরা। চোখ কালচে বাদামি। ঠোঁট বাদামি-কালো। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দেহ অনুজ্জ্বল কালো। লেজের নিচে সাদা ডোরা। এ ছাড়া মাথায় ও বুকে ফুটকি রয়েছে। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, ফল ও ফুলের রস। প্রজনন মৌসুম মে থেকে সেপ্টেম্বর। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না। পেঙ্গা ও চেরালেজ পাখির বাসায় চুপিসারে ডিম পেড়ে পালিয়ে যায়। যার ফলে ওদের ডিমের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা যায় না। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 12/12/2014
গেছো তুলিকা | Tree Pipit | Anthus trivialis
গেছো তুলিকা | ছবি: ইন্টারনেট শীতের পরিযায়ী। বৈশ্বিক বিস্তৃতি ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া এবং আফ্রিকা পর্যন্ত। চড়–ই আকৃতির পাখি, দেখতেও তদ্রুপ। প্রজাতির অন্যদের মতো এরা সারাক্ষণ ভূমিতে বিচরণ করে না, গাছ-গাছালিতে বেশি সময় কাটায়। খাবারের সন্ধানে মাটিতে নেমে পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। বাসা বাঁধে সরাসরি মাটিতেই। গানের গলা চমৎকার। গাছের উঁচুতে বসে গান গায়। খানিকটা চঞ্চল প্রকৃতির। বেশিরভাগ একাকী বিচরণ করে। পাখিটার বাংলা নাম: ‘গেছো তুলিকা’, ইংরেজি নাম: ‘ট্রি পিপিট’ (Tree Pipit), বৈজ্ঞানিক নাম: Anthus trivialis। প্রজাতির দৈর্ঘ্য ১৪-১৬ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ২৫-২৭ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা অভিন্ন। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ বাদামি। ডানার গোড়ায় হলদেটে সাদা দাগের সঙ্গে কালচে বাদামি দাগ লক্ষ করা যায়। গলা হলদেটে সাদা। বুকে সাদার ওপর কালো ডোরা। পেট সাদা। ঠোঁট কালচে। পা ফ্যাকাসে। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, ঘাসবীজ ইত্যাদি। প্রজনন সময় মে-আগস্ট। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে নিজ বাসভূমে। বাসা বানায় মাটিতে, সরু-নরম লতা বিছিয়ে। ডিমের সংখ্যা ৪-৮টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৩ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 07/07/2017
চিতিপাক গোশালিক | Spot winged Starling | Saroglossa spiloptera
চিতিপাক গোশালিক | ছবি: ইন্টারনেট বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাস্থল পরিষ্কার বনপ্রান্ত, খোলা বন, কৃষিজমি। এ ছাড়াও পর্বতের ৭০০-১০০০ মিটার উঁচুতে দেখা যায়। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না। বেশির ভাগই জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। বিচরণ করে ছোট দলেও। স্বভাবে অন্যসব শালিকের মতোই ঝগড়াটে। সারাদিন খুনসুটি করে কাটায়। তবে ওদের ঝগড়া খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায় না, কিচির-মিচির পর্যন্তই ঝগড়া। পরক্ষণে আবার মিলেও যায়। আবার শুরু। এভাবেই দিন কাটে। পারতপক্ষে কেউ কাউকে আক্রমণ করে না। চলাফেরায় খুব হুঁশিয়ারি। বিশ্বে এদের অবস্থান তত ভালো নয়। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘চিতিপাক গোশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘স্পট-উইংড স্টার্লিং’ (Spot-winged Starling), বৈজ্ঞানিক নাম: Saroglossa spiloptera। এরা ‘লালচেগলা শালিক’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১০ প্রজাতির শালিক নজরে পড়ে। যথাক্রমে: গো-শালিক, ভাত শালিক, ঝুঁটি শালিক, গাঙ শালিক, পাতি কাঠশালিক, গোলাপি কাঠশালিক, চিতিপাখ গোশালিক, খয়রালেজ কাঠশালিক, বামুন কাঠশালিক ও ধলাতলা শালিক। এরা লম্বায় ১৯-২০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা বাদামি। ঘাড় ও পিঠ ধূসর এবং কালো-বাদামি। ডানার প্রান্ত নীলাভ কালো। লেজ লালচে বাদামি। গলা লালচে। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত সাদাটে। বুকের দু’পাশ শেয়ালে লাল। ঠোঁট নীলাভ কালো। চোখের বলয় সাদা। পা বেগুনি কালো। দেখতে একই রকম মনে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। আকারেও সামান্য ছোট। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, পিঁপড়া, ছোট ফল, ফুলের মধু। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বাঁধে ৬-১০ মিটার উচ্চতার গাছের প্রাকৃতিক কোটরে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, লতাপাতা, দড়ি, কাপড়ের টুকরো ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/08/2017
সিঁদুরে মৌটুসি | Crimson sunbird | Aethopyga siparaja
সিঁদুরে মৌটুসি | ছবি: ইন্টারনেট বাবার রেখে যাওয়া লেবু বাগানটির অস্তিত্ব এখন আর নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাগানটির সমাধি ঘটেছে ১৯৯১ সালের ঊনত্রিশ এপ্রিলে। লেবু গাছগুলোর ভরা যৌবনে দেখেছি, (ফুল ফুটলে) মৌমাছি এবং মধুলোভী ছোট পাখিদের আনাগোনা বেড়ে যেত। হরেক প্রজাতির পাখির মধ্যে দেখতাম ‘সিঁদুরে মৌটুসি’র আনাগোনাও। পাখিগুলো দেখতে ভীষণ সুন্দর! হঠাৎ দর্শনে নজর কেড়ে নিত যে কারোই। প্রজাতির রূপের বর্ণনা দেওয়ার সাধ্য আমার নেই ঠিক, তবে এটুকু বলার আছে, প্রকৃতি নিজ হাতে ওদের শরীরে রং-তুলির আঁচড় কেটে দিয়েছেন বোধকরি। এরা অতি পরিচিত পাখি। দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। দেখা মেলে যত্রতত্র। গ্রামগঞ্জের ঝোপ-জঙ্গলে নিশ্চিত বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। স্বভাবে অত্যন্ত চঞ্চল ও ফুর্তিবাজ। দিনের বেশিরভাগ সময় গাছের শাখা-প্রশাখায় নেচে বেড়ায়। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও দেখা যায় ভারত, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। বিশ্বে এদের বিস্তৃতি প্রায় ৪৯ লাখ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে। বিশ্বে এ প্রজাতির সংখ্যা স্থিতিশীল। এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পায়নি, বৃদ্ধিও পায়নি। আইইউসিএন এ প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দেশে সুলভ দর্শনের কারণে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এদের সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়নি। পাখির বাংলা নাম: ‘সিঁদুরে মৌটুসি’, ইংরেজি নাম: ক্রিমসন সানবার্ড,(Crimson sunbird), বৈজ্ঞানিক নাম: Aethopyga siparaja | এরা ‘সিঁদুরে লাল মৌটুসি’ নামেও পরিচিত। পুরুষ পাখি লম্বা ১৫ সেন্টিমিটার, স্ত্রী পাখি ১০ সেন্টিমিটার। দেহের তুলনায় লেজ খানিকটা বড়। ঠোঁট লম্বা, বড়শির মতো বাঁকানো। পুরুষ পাখির কপাল উজ্জ্বল বেগুনি, তার ওপর হালকা ডোরা দাগ। মাথার পেছন থেকে পিঠ ও ডানার কিছু অংশ সিঁদুরে লাল। পিঠের শেষ থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত হলুদাভ-জলপাই। লেজ বেগুনি। থুতনি থেকে বুক পর্যন্ত সিঁদুরে লাল। পেটের দিকটা হলুদাভ-জলপাই। স্ত্রী পাখির শরীর জলপাই রঙের। লেজের প্রান্তর সাদা। প্রধান খাবার ফুলের মধু। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত। ভূমি থেকে দুই মিটার উঁচুতে গাছের ডালে অথবা গুল্মলতা আচ্ছাদিত গাছের ডালে থলে আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 14/09/2018