সাদাভ্রু দামা | Eyebrowed Thrush | Turdus obscurus
সাদাভ্রু দামা | ছবি: ইন্টারনেট মূলত পরিযায়ী পাখি। তৈগা ও সাইবেরিয়া অঞ্চলের সরলবর্গীয় বনে বিচরণ করে। শীতে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, তাইওয়ান, উত্তর চীন, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়াতে পরিযায়ী হয়ে আসে। এ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি বেরিং সাগরের দ্বীপ, উত্তর আমেরিকার আলাস্কা, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ইউরোপের কিছু অংশ পর্যন্ত। এরা ভূচর পাখি। গানের গলা ভালো। মিষ্টি সুরে গান গায়। গাছের উঁচু ডালে বসে খুব ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে গান গায়। স্বভাবে লাজুক। বেশিরভাগই একাকি বিচরণ করলেও শীতে ছোট ঝাঁকে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুমে দেখা যায় জোড়ায় জোড়ায়। এরা পরিত্যক্ত বা স্যাঁতস্যাঁতে এলাকার লতাপাতা উল্টিয়ে এবং ঘন ঘন ঠোঁট চালিয়ে খাবার খোঁজে। মন ভালো থাকলে মাঝে মাঝে পেটের পালক ফুলিয়ে উল্লাস করে। গাছের উঁচুতে খুব একটা দেখা যায় না। দেশের সর্বত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রজাতিটির বাংলা নাম: ‘সাদা-ভ্রু দামা’, ইংরেজি নাম: ‘আইব্রোড থ্রাস’(Eyebrowed Thrush), বৈজ্ঞানিক নাম: Turdus obscurus | এরা ‘ভ্রুলেখা দামা’ নামেও পরিচিত। এরা দৈর্ঘ্যে ২১-২৩ সেন্টিমিটার লম্বা। ওজন ৬১-১১১ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন হলেও সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় ও পিঠ বাদামি-ধূসর। চিবুক কালচে বাদামি। চোখের ওপর চওড়া সাদা ভ্রু। চোখের নিচের দিকে এবং গালেও সাদা দাগ রয়েছে। গলা সাদা। বুক এবং বুকের দু’পাশ কমলা। পেট থেকে লেজতল সাদা। চোখের বলয় সাদাটে। উপরের ঠোঁট শিং কালো, নিচের ঠোঁটের গোড়ার দিকে হলুদ এবং অগ্রভাগ শিং কালো। পা ময়লা-হলুদ। অপরদিকে স্ত্রী পাখির চেহারা পুরুষের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ। প্রধান খাবার: কেঁচো, পোকামাকড়, ছোট শামুক। এ ছাড়াও ছোট ফল-ফলাদির প্রতি আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুলাই। মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে আগস্টের দিকে প্রজনন ঘটে। এ ছাড়াও অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ৪-২০ ফুট উঁচুতে। কাপ আকৃতির বাসা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শৈবাল, শুকনো ঘাস ও লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে সপ্তাহ দুয়েক। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 27/05/2016
বালি নাকুটি | Sand Martin | Riparia riparia
বালি নাকুটি | ছবি: ইন্টারনেট ভারতীয় উপমহাদেশে শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। দেখতে হুবহু ‘সাদামাটা নাকুটি’র মতো। তবে এদের চেহারায় সাদার উপস্থিতি কিছুটা কম। উভয় প্রজাতিরই চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। বিচরণ করে ঝাঁকে ঝাঁকে। বাসাও বাঁধে দলবদ্ধ হয়ে। টানেল আকৃতির বাসা বানায়। পাহাড়, নদ-নদীর পাড়ে মাটির খাড়া দেওয়ালে নিজেরা গর্ত খুঁড়ে ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার টানেল বানিয়ে বাসা বাঁধে। কণ্ঠস্বর কর্কশ। দলের সবাই একসঙ্গে ধাতব কণ্ঠে ডাকতে থাকে। ডাক শুনলে দূর থেকে মনে হয় বুঝি ওরা ঝগড়ায় লিপ্ত। অস্থিরমতির পাখি। উড়ন্ত পতঙ্গ শিকার করে। সারাদিন বিরতিহীন ওড়াউড়ি করে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, পূর্বচীন, উত্তর এশিয়া, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত। পাখির বাংলা নাম: ‘বালি নাকুটি’, ইংরেজি নাম: ‘স্যান্ড মার্টিন’ (Sand Martin), বৈজ্ঞানিক নাম: Riparia riparia | প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১২ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা অভিন্ন। কপাল সাদাটে বাদামি। মাথা, ঘাড় ও পিঠ ধূসর বাদামি। ডানা ও লেজ কালচে বাদামি। লম্বা ডানা, লেজের শেষ প্রান্তে মিশেছে। উড়ন্ত অবস্থায় লেজ মাছের লেজের মতো দেখায়। গলা সাদা। বুক বাদামি সাদার মিশ্রণ। বুকের নিচ থেকে বাদবাকি সাদা। চোখ বাদামি। ঠোঁট খাটো, কালো। পা কালো, নখ বড় বড়। প্রধান খাবার: উড়ন্ত পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। কলোনি টাইপ বাসা। গর্তে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ফোটে ১৩-১৪ দিনে। শাবক স্বাবলম্বী হতে সপ্তাহ তিনেক লেগে যায়। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 01/12/2017
লাল বুক টিয়া | Red Breasted Parakeet | Psittacula alexandri
লাল বুক টিয়া | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা হলেও শালবনে বেশি দেখা যায়। লোকালয়েও দেখা মেলে, তবে কম। স্থানীয় প্রজাতির হলেও সুলভ দর্শন অঞ্চলভেদে। যেমন: সিলেটের চা বাগান, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপক নজরে পড়ে। বিচরণ করে ছোট-বড় দলে। কৃষকের ধান, গম, ভুট্টাক্ষেতে দল বেঁধে নেমে ব্যাপক ক্ষতি করে, যা খায় তারচেয়ে বেশি নষ্ট করে। দেখতে ভীষণ সুন্দর হলেও কণ্ঠস্বর কর্কশ। সামাজিক পাখি, দলবদ্ধভাবে বাস করে। দলের যে কেউ বিপদের গন্ধ পেলে ‘ক্যাঁক..ক্যাঁক’ স্বরে ডেকে সবাইকে সতর্ক করে। বিপৎসংকেত পেয়ে সঙ্গীরা ঝটপট ডানা মেলে নিরাপদে পৌঁছায়। এত সতর্ক থাকার পরেও এরা শিকারিদের কবলে পড়ছে দেদার- যার ফলে আজ প্রজাতিটি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘লাল বুক টিয়া’, ইংরেজি নাম: ‘রেড ব্রেসটেড প্যারাকিট’ (Red-Breasted Parakeet), বৈজ্ঞানিক: Psittacula alexandri | নাম: ‘সিট্টিসিদি’। এরা ‘তোতা ও মদনা’ নামে পরিচিত। প্রজাতি লম্বায় লেজসহ ৩৪-৩৮ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষের মাথা বেগুনি-ধূসর, কপালের ওপর কালো পট্টি, যা চোখের কাছে গিয়ে মিশেছে। ডানায় সোনালি আভা। গলা থেকে বুক পর্যন্ত গোলাপি। পেট নীলচে-সবুজ, তলপেট থেকে লেজের নিচ হলদেটে-সবুজ। লেজের ওপরের দিক নীলচে-সবুজ। লেজের ডগার কিনারটা হলদেটে। শক্ত মজবুত ঠোঁট বড়শির মতো বাঁকানো। ঠোঁটের বর্ণ ওপরের দিকে রক্ত লাল, নিচের অংশ কালো। স্ত্রী পাখির মাথা নীলচে-সবুজ। বুকের দিক গাঢ় গোলাপি। ঠোঁটের ওপরাংশ কালো, নিচের অংশ পাটকিলে-কালো। এ ছাড়াও পুরুষ পাখির কনীনিকা ফিকে-হলুদ, স্ত্রী পাখির সাদাটে-হলুদ। উভয়ের পা ও আঙ্গুল ধূসরাভ-সবুজের সঙ্গে হলটে মিশ্রণ । প্রধান খাবার: শস্যবীজ, ফুল, ফল, মধু, গাছের কচিপাতা ইত্যাদি। পোষা তোতাদের দুধ-ভাত, কলা, বাদামের প্রতি আসক্তি রয়েছে। প্রজনন সময় জানুয়ারি থেকে এপ্রিল। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২২-২৪ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।প্রকাশ: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/06/2017 এবং দৈনিক যুগান্তর, 31/08/2013
গৃহবাসী বাতাসি | Little Swift | Apus affinis
গৃহবাসী বাতাসি | ছবি: ইন্টারনেট চড়–ইদের মতো এরাও ঘরকুনো পাখি। দিনে উড়ে বেড়ায় খোলা প্রান্তরে। রাতে পুরনো দর-দালানে আশ্রয় নেয়। বছরের পর বছর একই স্থানে কাটিয়ে দেয়। অতি সুলভ দর্শন, স্থানীয় প্রজাতির পাখি। ছোট-বড় দলে বাস করে। চেহারা তত আকর্ষণীয় নয় বরং হিংস রাগী দেখায়। কেবল আক্রান্ত হলে আক্রমণ করে। সারাদিন উড়ে বেড়ায়। উড়ন্ত অবস্থায় এদের ঠোঁট, মাথা ও লেজ সমান্তরাল থাকে। ফলে দূর থেকে মাথা এবং লেজ শনাক্ত করা কঠিন হয়। শুধুমাত্র উড়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার কারণে মাথা-লেজ শনাক্ত করা যায়। শরীরের তুলনায় ডানা লম্বা থাকার কারণে উড়ন্ত অবস্থায় ডানা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। কণ্ঠস্বর কর্কশ, জোরে জোরে শিস দেয়। ছোট-বড় দলে বিচরণ করে। মাঝেমধ্যে জোড়ায়ও দেখা যায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, দক্ষিণ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত। সমগ্র বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক। বাংলাদেশে সুলভ দর্শন, কোথাও কোথাও অতি সুলভ দর্শন। পাখির বাংলা নাম: ‘গৃহবাসী বাতাসি’, ইংরেজি নাম: ‘লিটল সুইফট’ (Little Swift), বৈজ্ঞানিক নাম: Apus affinis | এরা ‘ঘর বাতাসি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ১২-১৩ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৩৩-৪২ সেন্টিমিটার। ওজন ২৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। কপাল বাদামি কালো পালিশ করা। মাথা, ঘাড় বাদামি কালো। পিঠ নীলাভ কালো। কোমর সাদা। লেজ কালো। গলা সাদা। দেহতল কালো। ঠোঁট কালো, ছোট। ঠোঁটের অগ্রভাগ কিঞ্চিত বাঁকানো। পা ছোট। পায়ের তুলনায় নখ বড় এবং ধারালো। প্রধান খাদ্য: উড়ন্ত পোকামাকড়, পিঁপড়া। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। অঞ্চলভেদে অক্টোবর থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে পুরনো দর-দালানে অথবা পুরনো পুলের বিমের ফাঁকে। ডিম পাড়ে ১-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 28/07/2017
কলজেবুটি কাঠকুড়ালি | Heart spotted woodpecker | Hemicircus canente
কলজেবুটি কাঠকুড়ালি | ছবি: ইন্টারনেট অনিয়মিত ও বিরলতম পরিযায়ী পাখি। কচ্ছপ আকৃতির গোলাকার গড়ন। দেখতে মন্দ নয়। শরীরে সাদা-কালো আঁকিবুকি। পরখ করে দেখলে বোঝা যায় ডানার প্রান্তে কালো রঙের হৃৎপিণ্ড আকৃতির দাগ। যা থেকেই এদের নামকরণের সূত্রপাত। স্বভাবে চঞ্চল। অন্যসব প্রজাতির কাঠঠোকরাদের মতো যত্রতত্র দেখা যায় না। দেখা মেলে চিরসবুজ ও আর্দ্র পাতাঝরা বনে। দেখা মেলে বাঁশবনেও। বিচরণ করে একা কিংবা জোড়ায় জোড়ায়। গাছের কাণ্ডের চারপাশে লাফিয়ে ঘুরে ঘুরে শিকার খোঁজে। এ সময় শক্ত-মজবুত ঠোঁট চালিয়ে গাছের বাকলের ভিতর থেকে কীটপতঙ্গ বের করে আনে। শিকার পেলে তীক্ষ কণ্ঠে ‘ক্লিক-ক্লিক’ সুরে ডেকে ওঠে। এ ছাড়াও মাঝে মাঝে গাছের ডালের চারপাশে ঘুরে ঘুরে ‘টুই-টুই-টিটিটিটিটি…’ সুরে ডাকতে থাকে। বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের গহিন বনাঞ্চলে দেখা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ইন্দোচীন পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। এরা বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। অন্যসব কাঠঠোকরার মতোই এদের শক্রসংখ্যা নগণ্য। তথাপিও এদের সংখ্যা অপ্রতুল। প্রধান কারণটি হচ্ছে অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে। পাখির বাংলা নাম: ‘কলজেবুটি কাঠকুড়ালি’, ইংরেজি নাম: ‘হার্ট-স্পটেড উডপেকার’(Heart-spotted woodpecker) বৈজ্ঞানিক নাম: Hemicircus canente | এরা ‘হৃৎপিণ্ড- ফোঁটাযুক্ত কাঠঠোকরা’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ১৫-১৬ সেন্টিমিটার। ওজন ৩৬ গ্রাম। পুরুষ পাখির কপাল কালো, স্ত্রী পাখির কপাল সাদা। এ ছাড়া উভয়েরই ঝুঁটি পেছনের দিকে খাড়া। ঘাড় কালো, দুই পাশ পীতাভ সাদা। শরীরের ওপরের অংশ কালোর ওপর সাদা। ডানার সাদা বাজু অংশে কালো রঙের ছোট হৃৎপিণ্ড আকারের ফোঁটা। খাটো লেজটি কালো বর্ণের। দেহতল কালচে-জলপাই। ঠোঁট শিঙ-বাদামি। চোখ জলপাই বাদামি। পা ও পায়ের পাতা স্লেট কালো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা অনেকটাই স্ত্রী পাখির মতো দেখতে। প্রধান খাবার: গাছ পিঁপড়া, উইপোকা ও পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত। বাসা বাঁধে গাছের মরা কাণ্ডে গর্ত বানিয়ে। নিজেরাই গর্ত খুঁড়ে নেয়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে কত দিন সময় লাগে সে তথ্য জানা যায়নি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকন্ঠ 09/11/2018
ধূসর দামা | Tickell’s Thrush | Turdus unicolor
ধূসর দামা | ছবি: ইন্টারনেট পরিযায়ী, ভূচর পাখি। উপমহাদেশীয় অঞ্চলে শীতে দেখা যায়। তবে এতদাঞ্চলে প্রজনন ঘটায় না। চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। প্রাকৃতিক আবাসস্থল মিশ্র পর্ণমোচী ও সুঁচালো পার্বত্য বন। পাইন বনে বেশি পরিলক্ষিত হয়। বিচরণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। গানের গলা ভালো। গাছের উঁচু ডালে বসে খুব ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে গান গায়। স্বভাবে লাজুক। বেশির ভাগই একাকী বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। দেখা যায় লতাগুল্মের নিচেও। আবার পাথুরে এলাকায়ও বিচরণ রয়েছে। পরিত্যক্ত বা স্যাঁতস্যাঁতে এলাকার লতাপাতা উল্টিয়ে এবং ঘন ঘন ঠোঁট চালিয়ে খাবার খোঁজে। গাছের উঁচুতে বিচরণ করে না। দেশের সর্বত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। শীতে দেখা যায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভূটান, পাকিস্তান ও মিয়ানমার পর্যন্ত। বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও প্রজাতিটি ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘ধূসর দামা’, ইংরেজি নাম:‘ টিকেল’স থ্রাস’ (Tickell’s Thrush), বৈজ্ঞানিক নাম: Turdus unicolor | এরা ‘টিকেলের দামা’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১৫ প্রজাতির দামা নজরে পড়ে। গড় দৈর্ঘ্য ২০-২৫ সেন্টিমিটার লম্বা। ওজন ৫৮-৭৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। দেহের ওপরের অংশ ধূসর। অনেকটাই গাঢ় ছাই বর্ণের। কেবল গলায় সামান্য সাদাটে দাগ। গলার নিচ থেকে পেট পর্যন্ত ফ্যাকাসে ধূসর। লেজতল সাদাটে। চোখের বলয় হলুদ, মনি কালো। ঠোঁট হলুদ। পা ও পায়ের আঙুল হলুদ। যুবাদের রঙ ভিন্ন। শীত-গ্রীষ্মে রঙ বদলায়। প্রধান খাবার: কেঁচো, পোকামাকড়। মাঝেমধ্যে ছোট ফলফলাদি খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ২-৭ মিটার উঁচুতে। গভীর কাপ আকৃতির বাসা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শৈবাল, শুকনো ঘাস ও লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 26/05/2017
কাঠ শালিক | Chestnut tailed Starling | Sturnus malabaricus
কাঠ শালিক | ছবি: ইন্টারনেট এ প্রজাতির অন্যান্য পাখি আমাদের প্রতিবেশী হলেও এদের ভেতর মানুষকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা দেখা যায় বেশি। যার ফলে পরিচিত এ পাখি সর্বসাধারণের কাছে অপরিচিত রয়ে গেছে অদ্যাবধি। এদের বিচরণ অপেক্ষাকৃত হালকা বন-বনানীতে। আবার শহরের দর-দালানেও বসত করে। তবে ভূমিতে খুব একটা বিচরণ করে না। আমি গ্রামের বাড়ি গেলে প্রায়ই দেখি এ পাখিদের। আমার কাছে এদের বেশ সুদর্শন পাখি মনে হয়। গায়ের বর্ণ অতি উজ্জ্বল না হলেও দেখতে ভালোই লাগে। চলাফেরা করে এরা দল বেঁধে আবার জোড়ায়-জোড়ায় কিংবা একাকীও বিচরণ করে। মানুষকে এড়িয়ে চললেও মাঝেমধ্যে বিচরণ করে কোলাহল সম্পূর্ণ এলাকায়। এদের নিয়ে কথা বলতেই প্রসঙ্গক্রমে দেশের বিশিষ্ট পাখি বিশারদ শরীফ খান জানিয়েছেন, এরা দেশে সন্তোষজনকহারে বিচরণ করছে। বিচরণ করছে ঢাকা-শহরেও। তিনি আরো জানিয়েছেন, খিলগাঁও রেল গেটের কাছে একজোড়া পাখিকে বাসা বানিয়ে ডিম-বাচ্চা ফোটাতে দেখছেন দীর্ঘদিন যাবৎ। এদের বাংলা নাম: ‘কাঠ শালিক’ ইংরেজি নাম: ‘চেস্টনাটটেইলড স্টার্লিং’(Chestnut-tailed Starling), বৈজ্ঞানিক নাম:‘স্টুরনাস মালাবারিকাস’ (Sturnus malabaricus), গোত্রের নাম: ‘স্টুরনিদি’। আমাদের দেশে প্রায় ৬-৭ প্রজাতির শালিক নজরে পড়ে। যথাক্রমে : ভাত শালিক, গোবরে শালিক, কাঠ শালিক, বামন শালিক, ঝুঁটি শালিক ও গাং শালিক। ‘চিত্রা শালিক’ নামে এক প্রজাতির শালিক সম্পর্কে জেনেছি ড. রেজা খানের ‘বাংলাদেশের পাখি’ নামক গ্রন্থে’। পাখিটা সচরাচর দেখা যায় না। দেখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমি। সৌভাগ্যটা অর্জন হলে সঙ্গে সঙ্গে তা পাঠকদের জানানোর চেষ্টা করব। কাঠ শালিক লম্বায় ২০-২৩ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড় ধূসরাভ-রুপালি। থুতনি-গলা সাদা। ঠোঁটের গোড়া নীল, মাঝখানটা সবুজ এবং ডগাটা হলুদ। পিঠ রুপালি ধূসরের ওপর হালকা খয়েরি। ডানার প্রান্তটা কালো। গলা ফিকে লালচের ওপর সাদাটে ধূসরের টান। বুক, পেট পাটকিলে। পা হলদেটে। লেজের উপরিভাগ ধূসর, তলদেশ পাটকিলে। কাঠ শালিকের খাদ্য তালিকায় রয়েছে কীটপতঙ্গ, ছোট ফল, ফুলের মধু ইত্যাদি। প্রজনন সময় বসন্ত থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে। নরম লতাপাতা বাসা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিমে তা দেয় শুধু স্ত্রী পাখি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 31/10/2012