লালমাথা টিয়া | Plum-headed Parakeet | Psittacula cyanocephala
লালমাথা টিয়া | ছবি: ইন্টারনেট স্থানীয় প্রজাতির হলেও বিরল দর্শন। কালেভদ্রে দেখা মেলে মিশ্র চিরসবুজ বনে অথবা শাল বনে। দেখা যেতে পারে গ্রামীণ বনাঞ্চলেও। সামাজিক পাখি। ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করে। তবে আমাদের দেশে বড় ঝাঁকে নজরে পড়ে না। গড়ন স্লিম। মনোহরণকারী রূপ। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি কিছুটা নিষ্প্রভ। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও পূর্ব ভুটান পর্যন্ত। স্বভাবে হিংস । প্রজনন মুহূর্তে স্ত্রী পাখির হিংস তা বেড়ে যায় বহুগুণ। এরা ভালো পোষ মানে। শেখালে কথাও বলতে পারে। ক্রীড়ামোদী পাখি। খাঁচায় বন্দি অবস্থায় নানা কসরত দেখায়। খেলা করে এটাসেটা নিয়ে। বল আকৃতির গোলাকার কিছু পেলে ঠোঁট দিয়ে ঠেলতে থাকে। বলা যায় সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করে তা নিয়ে। পাখির বাংলা নাম: ‘লালমাথা টিয়া’, ইংরেজি নাম: প্লাম হেডেড প্যারাকিট (Plum-headed Parakeet), বৈজ্ঞানিক নাম: Psittacula cyanocephala| এরা ‘তাল কেশ টিয়া’ নামেও পরিচিত। অনেকে এদেরকে ‘আলুবোখারা-মাথা পাখি’ নামে ডাকে। আবার হিমালয়াঞ্চলে কেউ কেউ এদেরকে ‘পুষ্প কেশ টিয়া’ নামেও ডাকে। দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা গোলাপি রক্ত বর্ণ। ঘাড়ে মালাসদৃশ কালো রেখা। পিঠ হলুদাভ সবুজ। ডানা সবুজ। ডানার গোড়ায় রয়েছে খয়েরি-লাল পট্টি যা স্ত্রী পাখির নেই। নীলাভ-সবুজ লম্বা লেজ। তন্মধ্যে সবচেয়ে লম্বা পালকের প্রান্ত সাদাটে। দেহতল হলুদাভ-সবুজ। উপরের ঠোঁট কমলা-হলুদ, নিচের ঠোঁট কালো। পা সবুজেটে। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথা ধূসর। ঘাড়ে হলুদাভ বন্ধনী। উপরের ঠোঁট ভুট্টা হলুদ। নিচের ঠোঁট কালচে। প্রধান খাবার: শস্যবীজ, ছোট ফল, ফুলের পাপড়ি। পোষা পাখি বাদাম, দুধভাত, সবজি খায়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৯-২৩ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, , ২৯/০৫/২০১৫
বাদা ছাতারে | Marsh Babbler | Pellorneum palustre
বাদা ছাতারে | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। প্রাকৃতিক বিস্তৃতি জলাশয় এবং নদীর কাছাকাছি নলবন, ঘাসবনে। দেখতে আহামরি না হলেও মায়াবি ধাঁচের চেহারা। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে অল্পবিস্তর নজরে পড়ে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। সামাজিক পাখি। স্বভাবে চঞ্চল। প্রজননকালীন সময়ে জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করলেও ছোট দল দেখা যায়। রাত্রিযাপনও করে দলবদ্ধভাবে। দলের একটি পাখি যেদিকে উড়ে যায় অন্যরাও সেদিকে উড়তে থাকে। আবার কেউ যদি পথ হারিয়ে ফেলে অন্যরা ডাকাডাকি করে তাকে পথ চিনিয়ে নিয়ে আসে। সবচেয়ে মজাদার বিষয়টি হচ্ছে এদের দলের কেউ ডিম-বাচ্চা ফুটালে শাবকদের যতœআত্তি দলের সবাই মিলেই করে। অনেক সময় দলের সবাই মিলে অন্যের ডিমে তা দিতে দেখা যায়। মূলত জলাশয় এলাকায়ই বিচরণ আধিক্য। বিশেষ করে শনবন, নলখাগড়ার বনের ভেতর আড্ডা জমায় ভালো। এদের গানের গলা সুমধুর নয়। কর্কশ। পাখির বাংলা নাম: ‘বাদা ছাতারে’, ইংরেজি নাম: ‘মার্স ব্যাবলার’, (Marsh Babbler), বৈজ্ঞানিক নাম: Pellorneum palustre | এরা ‘জলার ধারের ছাতারে’ নামেও পরিচিত। গড় দৈর্ঘ্য ১৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১৫-২০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। কপালে সাদা টান। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ গাঢ় বাদামি। গলা সাদা। পেট থেকে বস্তিপ্রদেশ পর্যন্ত হালকা সাদার সঙ্গে বাদামি ডোরা। চোখের মণি বাদামি। ঠোঁট শিং বাদামি। পা কালচে। প্রধান খাবার: শুঁয়োপোকা, গোবরেপোকা ও অন্যান্য কীট-পতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। জলাশয়ের কাছাকাছি ঘাসবন কিংবা লতাগুল্মের ভেতর ডিম্বাকৃতির বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৬ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 13/05/2017
চিতিপাক গোশালিক | Spot winged Starling | Saroglossa spiloptera
চিতিপাক গোশালিক | ছবি: ইন্টারনেট বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাস্থল পরিষ্কার বনপ্রান্ত, খোলা বন, কৃষিজমি। এ ছাড়াও পর্বতের ৭০০-১০০০ মিটার উঁচুতে দেখা যায়। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না। বেশির ভাগই জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। বিচরণ করে ছোট দলেও। স্বভাবে অন্যসব শালিকের মতোই ঝগড়াটে। সারাদিন খুনসুটি করে কাটায়। তবে ওদের ঝগড়া খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায় না, কিচির-মিচির পর্যন্তই ঝগড়া। পরক্ষণে আবার মিলেও যায়। আবার শুরু। এভাবেই দিন কাটে। পারতপক্ষে কেউ কাউকে আক্রমণ করে না। চলাফেরায় খুব হুঁশিয়ারি। বিশ্বে এদের অবস্থান তত ভালো নয়। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘চিতিপাক গোশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘স্পট-উইংড স্টার্লিং’ (Spot-winged Starling), বৈজ্ঞানিক নাম: Saroglossa spiloptera। এরা ‘লালচেগলা শালিক’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১০ প্রজাতির শালিক নজরে পড়ে। যথাক্রমে: গো-শালিক, ভাত শালিক, ঝুঁটি শালিক, গাঙ শালিক, পাতি কাঠশালিক, গোলাপি কাঠশালিক, চিতিপাখ গোশালিক, খয়রালেজ কাঠশালিক, বামুন কাঠশালিক ও ধলাতলা শালিক। এরা লম্বায় ১৯-২০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা বাদামি। ঘাড় ও পিঠ ধূসর এবং কালো-বাদামি। ডানার প্রান্ত নীলাভ কালো। লেজ লালচে বাদামি। গলা লালচে। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত সাদাটে। বুকের দু’পাশ শেয়ালে লাল। ঠোঁট নীলাভ কালো। চোখের বলয় সাদা। পা বেগুনি কালো। দেখতে একই রকম মনে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। আকারেও সামান্য ছোট। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, পিঁপড়া, ছোট ফল, ফুলের মধু। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বাঁধে ৬-১০ মিটার উচ্চতার গাছের প্রাকৃতিক কোটরে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, লতাপাতা, দড়ি, কাপড়ের টুকরো ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/08/2017
সবুজ ময়ূর | Green Peafowl | Pavo muticus
সবুজ ময়ূর | ছবি: ইন্টারনেট প্রাক্তন আবাসিক পাখি ‘সবুজ ময়ূর’। হালে দেখা যাওয়ার নজির নেই। ১৯৪০ সালের দিকে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। চির সবুজ বনের বাসিন্দা। বনতলে ঘুরে বেড়ায়। উড়তেও পারে। তবে তেমন একটা গতি নিয়ে উড়তে পারে না। উড়তে গিয়ে বারবার নিচের দিকে নেমে পড়ে। মূলত লেজের লম্বা পালক ওড়ার গতি দাবিয়ে রাখে। তা ছাড়া শরীরের ওজনও ওড়ার গতি আটকে দেয়। অন্যসব ময়ূরের মতো এরাও ঝরা পাতা উল্টিয়ে এবং মাটি আঁচড়ে খাবার খায়। ছোট দলে বিচরণ করে। একটি ময়ূরের অধীনে ৩-৫টি ময়ূরী থাকে। কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে ভোরে এবং গোধূলীলগ্নে। মন ভালো থাকলে পুরুষ পাখি নাচানাচি করে এবং পেখম মেলে কসরত দেখায়। পুরুষ পাখির তুলনায় স্ত্রী পাখি অনেকটাই নিষ্প্রভ। কণ্ঠস্বরও কর্কশ। পুরুষ পাখি ডাকে ‘ইয়েই-অও…’ সুরে। স্ত্রী পাখি ডাকে ‘অ্যাও-অ্যা…’ সুরে। ভয় পেলে কণ্ঠস্বর পাল্টে যায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত। বর্তমানে বিশ্বে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এরা বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘সবুজ ময়ূর’, ইংরেজি নাম: গ্রীন পিফাউল’(Green Peafowl), বৈজ্ঞানিক নাম: Pavo muticus | এরা ‘বর্মী ময়ূর’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ১০০-১১০ সেন্টিমিটার। পেখম ১৫০-১৯০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ও আকার ভিন্ন। পুরুষ পাখির ঘাড়, গলা এবং বুকের পালক আঁশের মতো উঁচু। মাথায় সুঁচালো ঝুঁটি। চোখের পাশে কমলা-ক্রিম রঙের চামড়া। পিঠের পালক গাঢ় সবুজ এবং কালচে-নীল। ডানা ঢাকনি সবুজ। ডানার মধ্যভাগের পালক কিছুটা বাদামি। সবুজ লেজের পেখমের প্রান্তে কালো চক্রের বেগুনি ফোঁটা। দেহতল পিতল সবুজের ওপর কালো টান এবং সবুজ-বেগুনি দাগ। স্ত্রী পাখির পিঠ গাঢ় বাদামি। পিঠের শেষ ভাগ এবং কোমর কালচে-বাদামি। লেজ পীতাভ, বাদামি ও কালো রঙের ডোরা। স্ত্রী পাখির পেখম নেই। অপ্রাপ্তবয়স্কদের সবুজাভ-তামাটে কোমর ছাড়া বাদবাকি দেখতে স্ত্রী পাখির মতো। প্রধান খাবার: পোকামকড় কেঁচো, ছোট সাপ, টিকটিকি, রসালো ফল, শস্যবীজ ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে মে। ঝোঁপের ভেতর মাটিতে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৬-২৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 26/06/2015
নীলকণ্ঠ বসন্তবউরি | Blue throated Barbet | Megalaima asiatica
নীলকণ্ঠ বসন্তবউরি | ছবি: ইন্টারনেট গত বসন্তে পাখিটাকে প্রথম দেখি রিকাবী বাজারের পূর্বপাড়ায়। মুন্সীগঞ্জ জেলার মিরকাদিম পৌরসভায় অবস্থিত বাজারটি। খানিকটা ঘনবসতি এলাকা। দালান-কোঠার ফাঁক-ফোকরে যৎসামান্য গাছ-গাছালি রয়েছে ওখানে। সে সুবাদে কিছু পাখ-পাখালির আড্ডাজমে এতদাঞ্চলে। এ পর্যন্ত বেশ ক’প্রজাতির পাখির সাক্ষাৎ পেয়েছি রিকাবী বাজারের আশপাশে। তম্নধ্যে এ পাখিটাই বেশি আমার দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। আতাগাছের পাতার আড়ালে বসে আতাফল ঠুঁকরিয়ে খাওয়া অবস্থায় ওকে আমি আবিষ্কার করি। আমাকে দেখে ও গাছের শীর্ষ শাখায় অবস্থান নেয়। মুখের খাবার ফেলে দিয়ে নিজেকে আড়াল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিষয়টা টের পেয়ে আমিও সটকে পড়ি। পাখিটা দেখতে যেমনি সুন্দর তেমনি গানের গলাও। তারপরও ওরা গায়ক পাখি হিসাবে স্বীকৃতি আদায় করতে পারেনি। গায় করুণ সুরে। তাল-লয়-ছন্দ মেনে গান গায়। ‘পুক্র্ক… পুক্র্ক… পুক্র্ক’ শব্দে ডাকে। পরপর তিনবার ডেকে দম নিয়ে পুনরায় অস্পষ্টভাবে ‘কুক্’ শব্দ করে। এরা একটানা বেশি সময় ধরে ডাকে না। থেমে থেমে ডাকে। ওদের গান শুনে মনে হয় বুঝি ওরা চিরদুঃখী। প্রকৃতপক্ষে তা নয়। সুখ-দুঃখে একই ধরনের সুরে ডাকে। তবে মজাদার বিষয় হচ্ছে ওদের সুর শুনা যায় কিন্তু সহজে দেখা যায় না। পাতার আড়ালে নিজেদেরকে লুকিয়ে রেখে গান গায়। গানের আওয়াজ প্রায় ৬০০-৬৫০ মিটার থেকেও শুনা যায়। এরা আমাদের দেশীয় প্রজাতির পাখি হলেও সহজে দেখা মেলে না, শুধুমাত্র বসন্তকালে এদের দেখা মেলে। এ সময়ে শুধু গ্রামেগঞ্জেই নয়, ঢাকা শহরের বিভিন্ন উদ্যানে প্রবেশ করলেও গাছের শীর্ষশাখা থেকে ওদের ডাক শুনা যায়। এদের গাছে বসার ভঙ্গিটা একটু ব্যতিক্রম। খাড়া হয়ে বসে। একটানা অনেকখানি পথ এরা উড়তে পারে না। উড়ন্ত অবস্থায় ভালো মতো পরখ করলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যায়। মনে হয় উড়তে উড়তে বুঝি মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। সুন্দর এ পাখির বাংলা নাম: ‘নীলকণ্ঠ বসন্তবউরি’ ইংরেজি নাম: ‘ব্লু-থ্রোটেড বারবেট,’ (Blue-throated Barbet), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘মেগালাইমা এশিয়াটিকা’ (Megalaima asiatica), গোত্রের নাম: ‘মেগালাইমিদি’। আমাদের দেশে মোট তিন ধরনের বসন্তবউরি দেখা যায়। যথা: বড় বসন্তবউরি, নীলকণ্ঠ বসন্তবউরি, ছোট বসন্তবউরি। এ পাখি লম্বায় ২১-২৩ সেন্টিমিটার। এদের কপাল ও ঘাড় সিঁদুর লাল। মাথার তালু কালচে। ঘাড়ের দু’পাশে দু’টো লালফোটা। মাথার নিচ থেকে গলা পর্যন্ত নীল। বুক থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত হলদেটে সবুজ। লেজের তলার প্রান্তটা নীলচে। পিঠ ঘাস-সবুজ। ডানা বুজানো অবস্থায় সবুজ। নিচে সাদা। ঠোঁট মোটা ত্রিকোনাকৃতির। ঠোঁটের গোড়ায় অল্পক’টি খাঁড়া লোম। চোখের মনি কমলা রঙের বৃত্তদ্বারা আবৃত। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। সব ধরনের বসন্তবউরিদের প্রিয় খাবারই হচ্ছে ছোট ছোট ফল-ফলাদি। প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুলাই। গাছের কোটরে বাসা বাঁধে। পছন্দসই গাছ খুঁজতে ৩-৪দিন সময় লেগে যায়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিমের বর্ণ সাদা। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে পালা করে ডিমে তা দেয়। ফুটতে সময় লাগে ১৭-২২ দিন। শাবক উড়তে শেখে ২৫-২৮দিনে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 05/10/2012
লম্বাঠোঁটি দামা | Long billed Thrus | Zoothera monticola
লম্বাঠোঁটি দামা | ছবি: ইন্টারনেট ভূচর পাখি। স্বভাবে পরিযায়ী। দেশে শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। প্রজাতির অন্যদের মতো চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। বিচরণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। হিমালয়ের ২২০০-৩৮০০ মিটারেও উঁচুতে দেখা যাওয়ার নজির রয়েছে। গানের গলা ভালো। মিষ্টি সুরে গান গায়। গাছের উঁচু ডালে বসে খুব ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে গান গায়। স্বভাবে লাজুক। বেশিরভাগই একাকী বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। চিরহরিৎ ছায়াময় স্থানে বিচরণ। পাইন বন অথবা সুঁচালো চিরহরিৎ বনে বেশি দেখা যায়। দেখা যায় লতাগুল্মের নিচেও। আবার পাথুরে এলাকায়ও বিচরণ রয়েছে। এতদঞ্চলের পরিত্যক্ত বা স্যাঁতসেঁতে এলাকার লতাপাতা উল্টিয়ে এবং ঘন ঘন ঠোঁট চালিয়ে খাবার খোঁজে। গাছের উঁচুতে এরা বিচরণ করে না। দেশের সর্বত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত। প্রজাতিটি ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হলেও বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়। প্রজাতিটির বাংলা নাম: ‘লম্বাঠোঁটি দামা’, ইংরেজি নাম: ‘লং-বিলেড থ্রাস’(Long-billed Thrush), বৈজ্ঞানিক নাম: Zoothera monticola | এরা ‘লম্বাঠোঁট দামা’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১৫ প্রজাতির দামা নজরে পড়ে। ত্মধ্যে ‘কমলা দামা’ ব্যতীত অন্যরা পরিযায়ী প্রজাতির পাখি। এরা দৈর্ঘ্যে ২৬-২৮ সেন্টিমিটার লম্বা। ওজন ১১৫-১৩০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। রঙে সামান্য পার্থক্য আছে। পুরুষ পাখির মাথা ফ্যাকাসে বাদামি। ঘাড় থেকে লেজ পর্যন্ত অন্ধকার জলপাই-বাদামি রঙের। সাদাটে গলায় বাদামি বুটিক। দেহতল ক্রিম সাদার ওপর বাদামি বুটিক। ঠোঁট ও পা শিংকালো। তুলনামূলক ঠোঁট খানিকটা লম্বা। অপরদিকে স্ত্রী পাখি লালচে-বাদামি। প্রধান খাবার: কেঁচো, পোকামাকড়, লার্ভা, ছোট শামুক ইত্যাদি। মাঝে মধ্যে ছোট ফলফলাদি খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুলাই। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ২-৭ মিটার উঁচুতে। গভীর কাপ আকৃতির বাসা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শৈবাল, শুকনো ঘাস ও লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/05/2016
বড় মদনটাক | Greater Adjutant | Leptoptilos dubius
বড় মদনটাক | ছবি: ইন্টারনেট বিরল প্রজাতির পাখি ‘বড় মদনটাক’। দেখতে বিশাল দর্শন ভয়ঙ্কর মনে হলেও আসলেই নিরীহ প্রজাতির পাখি। স্বভাবে অহঙ্কারী। হাঁটে এক পা দু’ পা ফেলে, বসে হাঁটু ভাঁজ করে। জলাশয়ের আশপাশে বিচরণ করে। বাংলাদেশে কালেভদ্রে দেখা মেলে। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে স্থানীয় প্রজাতি হিসেবে পরিচিত ছিল। দেশের উত্তরাঞ্চলে নাকি এক সময় দেখাও যেত। হালে সে রকম নজির নেই। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। বিশ্বে এদের অবস্থান মোটেই সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘বড় মদনটাক’, ইংরেজি নাম: ‘গ্রেটার অ্যাডজুট্যান্ট’ (Greater Adjutant), বৈজ্ঞানিক নাম: Leptoptilos dubius | এরা ‘হাড়গিলা’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৫০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। উভয়ের মাথায় টাক। মাথায় গোলাপি রঙের চামড়ায় আবৃত। তার ওপর অল্প ক’টি পশম আকৃতির পালক। ঘাড়-গলা পালকশূন্য। গলা লালচে-হলুদ রঙের, ঘাড় কমলা-লালচে। ঘাড়ে রয়েছে এক ধরনের হলুদাভ-কমলা রঙের থলে। যা ঝুলে পড়ে বুকের ওপর পর্যন্ত। প্রজনন পালক ভিন্ন। প্রজননের বাইরে পিঠের পালক কালচে-ধূসর। বুক, পেট এবং ডানার নিচের দিক সাদাটে। লেজ কালচে। চোখের তারা হলুদাভ। ঠোঁট ত্রিকোণাকৃতির। ঠোঁটের গোড়া কালচে, বাদবাকি ফিকে হলুদ। প্রধান খাবার: মাছ, ব্যাঙ, ছোট পাখি, ইঁদুর, সাপসহ সব ধরনের ছোট সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি। জলাশয়ের কাছাকাছি গাছের উঁচুতে শুকনো সরু ডালপালা দিয়ে মাচা আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় ৩৫ দিনের মতো। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূসূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 31/07/2015