শঙ্খচিল | Brahminy Kite | Haliastur indus
শঙ্খচিল | ছবি: ইন্টারনেট অনেক পরিচিত পাখি এরা। এদের নিয়ে অনেক কবিতা, উপন্যাস রচিত হয়েছে। গাঁও-গ্রামের সবাই এ পাখিকে চেনেন। দেশের সর্বত্রই কম-বেশি এদের বিচরণ রয়েছে। এমনকি শহরের বাসিন্দারাও এদের সঙ্গে পরিচিত। এরা জোড়ায় জোড়ায় জলাশয়ের পাশে, গাছের ডালে শিকারের উদ্দেশ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। হাঁস-মুরগির ছানার প্রতি এদের লোভ কম। যার কারণে গৃহস্থবাড়ির আশপাশে ওড়াওড়ি করে সময় নষ্ট করে না। আবার সুযোগ পেলে তা হাতছাড়াও করে না। তবে অন্যান্য প্রজাতির চিলের মতো এরা অত হিংস্র নয়। এদের কণ্ঠস্বর কর্কশ। ‘আঁ-হা-আঁ-হা’ সুরে ডাকে। কণ্ঠস্বরে এক ধরনের আর্তনাদ ফুটে ওঠে। ওদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটেছে সেই ছোট বেলায়। রায়পুরের (লক্ষ্মীপুর) ডাকাতিয়া নদীর তীরে। রায়পুর বাজারসংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীর ওপর তখন কাঠেরপুল ছিল। ভাঙা সেই কাঠেরপুলের ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের স্কুলে যাতায়াত করতে হতো। সেই সুবাদে ওদের প্রায়ই দেখতাম শিকারের নেশায় নদীর ওপর চক্কর দিতে। আবার নদীর পাড়ে নানা ধরনের গাছ-গাছালির ডালে বসে থাকতেও দেখা যেত। এখন আর ওখানে এ পাখি দেখা যায় না। মাস তিনেক আগেও গিয়েছি সেখানে। কিন্তু এদের দেখা পাইনি। পাখিটার বাংলা নাম: ‘শঙ্খচিল,’ ইংরেজি নাম: ‘ব্রাহ্মণী কাইট’ (Brahminy Kite), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘হালিয়াস্টুর ইন্ডাস’ (Haliastur indus)। এদের বহুবিদ নাম রয়েছে। যেমন: চণ্ডীচিল, সোনালি ডানাচিল, মদনচিল, ফতাচিল ইত্যাদি। অনেকে শঙ্করচিল নামেও ডাকে। এ চিল লম্বায় ৪৬-৪৮ সেন্টিমিটার। এদের ঠোঁট গোড়া থেকে বাঁকানো চ্যাপ্টা গড়নের। বর্ণ ধূসর-নীলচে। মাথা, ঘাড়, গলা, বুক, পেটের মাঝামাঝি পর্যন্ত সাদা। তার ওপর সরু মরিচা ধরা খাড়া টান। ডানা লালচে। লেজ, ডানার প্রান্ত কালো। তলপেট থেকে বস্তিপ্রদেশ পর্যন্ত লালচে। পা, আঙ্গুল ময়লা হলুদ, নখ কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার: মাছ, সাপ, গিরগিটি, ব্যাঙ। এরা মৃত পচা মাছও খায়। তাছাড়া যে কোনো ধরনের পচাগলার প্রতি এদের আকর্ষণ রয়েছে। বলা যায় সর্বভূক পাখিদের কাতারে রয়েছে ওরা। প্রজনন সময় ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল। বড়সড়ো গাছের উঁচু ডালে সরু ডাল-পালা দিয়ে বাসা বাঁধে। স্ত্রী পাখি ডিম পাড়ে ২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৫-২৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/11/2012
ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরা | Grey capped Pygmy Woodpecker | Dendrocopos canicapillus
ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরা | ছবি: ইন্টারনেট দুর্লভ আবাসিক পাখি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট বিভাগের পাতাঝরা-চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। বিচরণ করে কমবেশি প্যারাবনেও। এক সময় গাজীপুর এবং মধুপুরের শালবনে ব্যাপক বিচরণ ছিল বলে জানা যায়। হালে দুর্লভ দর্শন হয়ে পড়েছে। অন্যসব কাঠঠোকরার মতোই এরা বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায়। অনেক সময় ছোট দলেও দেখা যায়। স্বভাবে চঞ্চল হলেও হিংস নয়। এরা হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। বেশিরভাগই গাছের বাকল জড়িয়ে ধরে ওঠানামা করে। খাবার খোঁজে গাছের বাকল ঠুকরিয়ে। এদের খাবার খোঁজার কৌশল দারুণ। ঠোঁট দিয়ে গাছের কাণ্ডে আঘাত করতে করতে নিচের দিকে নামতে থাকে। পোকামাকড় আছে এমনটা সন্দেহ হলে কেবল ঠোঁট দিয়ে উপুর্যপরি আঘাত করে। আবার শিকার শেষে গাছের মগডালের ফাঁপাস্থানে আঘাত করে ড্রাম বাজাতে দেখা যায়। রাতে বিশ্রাম নেয় গাছের উপরমুখী ডালের মিলনস্থলে। সকালে গাছের ডাল জড়িয়ে ধরে রোদ পোহায়। জলপান ব্যতিরেকে পারতপক্ষে ভূমি স্পর্শ করে না। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, তাইওয়ান, লাওস, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও কোরিয়া পর্যন্ত। বিশ্বে এরা বিপদমুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরা’, ইংরেজি নাম: গ্রে-ক্যাপড পিগমী উডপেকার’ (Grey-capped Pygmy Woodpecker), বৈজ্ঞানিক নাম: Dendrocopos canicapillus | এরা ‘মেটেটুপি বাটকুড়ালি’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৪-১৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তফাৎ সামান্য। পুরুষ পাখির মাথার দু’পাশে রয়েছে লাল দাগ, স্ত্রী পাখির সেটি কালো দেখায়। ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরার কপাল-মাথা মলিন ধূসর। ভ্রুরেখা প্রশস্ত সাদাটে। পিঠে সাদা-কালো ডোরা। ডানা প্রশস্ত কালোর ওপর সাদা ডোরা। কোমর কালো। লেজের উপরিভাগ কালচে। থুতনি ও গলা সাদাটে। দেহতল বাদামি ডোরাসহ হালকা খয়েরি। ঠোঁটের কিছু অংশ শিঙরঙা বাদামি, কিছু অংশ ফ্যাকাসে। চোখ লালচে-বাদামি। পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে। প্রধান খাবার গাছ পিঁপড়া, পোকামাকড়, ফলের খোসা ও ফুলের মধু। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের লক্ষ্য করা যায়। গাছের খাড়া ডালে নিজেরা গর্ত করে খোড়ল বানিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৩ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 24/07/2015
কানঠুঁটি | Greater flamingo | Phoenicopterus ruber
কানঠুঁটি | ছবি: ইন্টারনেট কানঠুঁটি সারস আকৃতির পাখি। কয়েক দশক ধরে এ দেশে এদের নজরে পড়ছে না কারও। জানা যায়, ১৯৭০ সালের দিকে সর্বশেষ ভোলা জেলার মনপুরা দ্বীপে দেখা গেছে। তারও আগে সুন্দরবন অঞ্চলে এদের দেখা যাওয়ার নজির রয়েছে। ১৯৬০ সালের দিকে এ অঞ্চলে সন্তোষজনক বিচরণ ছিল। হালে পাখি দেখিয়েদের নজরে যদিও পড়ে সেটি হবে পান্থ পরিযায়ী প্রজাতির। বর্তমানে এদের ব্যাপক বিচরণ ক্ষেত্র আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অঞ্চল, স্পেন, আলবেনিয়া, তুরস্ক, গ্রিস, সাইপ্রাস, পর্তুগাল, ইতালি ও ফ্রান্সের কিছু এলাকায়। বিশ্বে এদের বিচরণ সন্তোষজনক হলেও আমাদের দেশে পদচারণ নেই বলে ধারণা করেছেন পাখি বিশেষজ্ঞরা। এ পাখিরা বেশির ভাগই লোনা জলাঞ্চলে বিচরণ করে। সংখ্যায় পঞ্চাশ থেকে হাজারখানেক পাখি একত্রে দেখা যায়। জলে দাঁড়িয়ে শিকার খোঁজে ভিন্ন কৌশলে। স্বাভাবিকভাবে ঠোঁট না চালিয়ে উল্টো করে জলে ডুবিয়ে কুচা চিংড়ি বা জলজ কীট শিকার করে। আবার অনেক সময় স্বল্পজলে গর্ত খুঁড়ে ফাঁদ পেতে শিকার ধরে। এরা স্থূল দেহের হলেও উড়তে পারে দ্রুতই। আকাশে দলবদ্ধভাবে ‘ভি’ আকারে ওড়ে। সামনে লম্বা গলা বাড়িয়ে পা দুটো টান টান করে আকাশে সাঁতার কাটে। উড়তে উড়তে কর্কশ কণ্ঠে ডাকে ‘ক্রেক… ক্রেক… ক্রেক…’। অদ্ভুত গড়নের এ প্রজাতির পাখিদের সঙ্গে আমার আজও মুক্তাঞ্চলে সাক্ষাৎ ঘটেনি, সাক্ষাৎ ঘটেছে ঢাকা চিড়িয়াখানায়। যত দূর জানি পাখিগুলো আজ পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় সংরক্ষিত আছে। পাখি দেখিয়েদের জন্য এটি একটি সুসংবাদ বলা যায়। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘কানঠুঁটি, ইংরেজি নাম: ‘গ্রেটার ফ্লেমিঙ্গো'(Greater flamingo), বৈজ্ঞানিক নাম: Phoenicopterus ruber | এরা কানমুঁথি নামেও পরিচিত। এরা লম্বায় ১৪৫ সেন্টিমিটার। ওজন চার-সাড়ে চার কেজি। পুরো দেহ সাদা-গোলাপি আভার মিশ্রণ। ওড়ার পালক সিঁদুরে লাল, ডানার বাকি অংশ কালো। গলা ও পা অস্বাভাবিক লম্বা। পা গোলাপি লাল। পায়ের পাতা হাঁসের পায়ের মতো জোড়া লাগানো। বাঁকানো ঠোঁটের ডগা কুচকুচে কালো, বাকি অংশ গোলাপি। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার: কুচা চিংড়ি-জাতীয় সামুদ্রিক প্রাণী, ছোট শামুক, গুগলি, জলজ পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। কাদামাটি দিয়ে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার উঁচু ঢিবির মতো বাসা বানায়। সূর্যের আলোতে কাদা শুকিয়ে শক্ত হলে বাসার ভেতর ঢুকে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ১-২টি। ডিম ফুটতে লাগে ২৭-৩১ দিন। শাবক প্রাপ্তবয়সী হতে লাগে ২-৩ বছর। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 29/06/2018
ছোট তুর্কী বাজ | Shikra | Accipiter badius
ছোট তুর্কী বাজ | ছবি: ইন্টারনেট বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, দক্ষিণ চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইরান, আজারবাইজান, দক্ষিণ রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইথিওপিয়া থেকে সাহারা পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাস্থল পর্ণমোচী বদ্ধ শামিয়ানা বনভূমি। এ ছাড়াও শহরাঞ্চলেও বিচরণ রয়েছে। অন্যসব শিকারি পাখিদের মতো এরাও স্বভাবে হিংস। সাধারণত শিকারে বের হয় একাকী। তবে জোড়ায় জোড়ায়ও দেখা যায়। বন-বনানী কৃষিজমি কিংবা জলাশয় এলাকায় শিকার খুঁজে বেড়ায়। উড়তে উড়তে তীক্ষস্বরে ডাকে। হিমালয় অঞ্চলে ১৪০০ মিটার উঁচুতেও এদের দেখা যায়। দেশে প্রজাতিসুলভ দর্শন হলেও বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ছোট তুর্কী বাজ’, ইংরেজি নাম: ‘শিকরা’ (Shikra), বৈজ্ঞানিক নাম: Accipiter badius। এরা ‘পাতি শিকরে’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ৩০-৩৬ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৫৮-৬০ সেন্টিমিটার। ওজন ৭৫-১৬০ গ্রাম। মাথা নীল ধূসর। ঘাড়ে আবছা লালচে দাগ। পিঠ গাঢ় ধূসর। গলা সাদাটে। বুক ও পেট লালচে ডোরাকাটা। ধূসর লেজ কিছুটা লম্বা। উরু সাদা। চোখ লাল। ঠোঁট কালচে, নিচের দিকে বাঁকানো। ঠোঁটের গোড়া হলুদ। পা হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য তফাৎ রয়েছে। স্ত্রী পাখি আকারে খানিকটা বড়। ওদের দেহতল বেশি লালচে-বাদামি। চোখ হলুদাভ কমলা। যুবাদের রঙে পার্থক্য রয়েছে। প্রধান খাবার: ছোট পাখি, মাছ, টিকটিকি, ইঁদুর, ব্যাঙ পোকামাকড় ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে মার্চ। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের লক্ষ করা যায়। অগোছালো বাসা, শ্রীছাদ নেই। বাসা বাঁধে গাছের উঁচু ডালে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো চিকন ডালপালা। নিরাপদ হলে একই বাসায় ফি বছর ডিম-বাচ্চা ফোটায়। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩০-৩৫ দিন। শাবক শাবলম্বী হতে প্রায় মাস খানেক সময় লাগে। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/02/2017
লালপেট ঈগল | Rufous bellied Eagle | Hieraaetus kienerii
লালপেট ঈগল | ছবি: ইন্টারনেট পরিযায়ী পাখি। শীতে আগমন ঘটে। বিচরণ করে চিরহরিৎ, পর্ণমোচী বনপ্রান্তরে। এ ছাড়াও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০-১২০০ মিটার উঁচুতেও দেখা মেলে। উঁচু থেকে নামার সময় ডানা না ঝাঁপটিয়ে মেলে ধরে ধীরে ধীরে নিচে নামতে থাকে। প্রজাতির দেখা মেলে একাকি বা জোড়ায়। কোনো অবস্থায় লবণজল এলাকায় বিচরণ করে না। মিঠাজল এদের বিচরণের জন্য উত্তম এলাকা। নিজের শরীরের সমান ওজনের স্তন্যপায়ী প্রাণী বা সরীসৃপ শিকার করতে সক্ষম। শিকার খোঁজে মাঠ-প্রান্তরের ওপর চক্কর মেরে। ওপর থেকে নিশ্চিত হলে কেবল ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবে আর যাই করুক না কেন এরা কিন্তু শিকারের লেজের দিকে পারতপক্ষে থাবা বসায় না। এ ক্ষেত্রে টার্গেট থাকে ঘাড় বা পিঠ। বিশেষ করে এদের নখ গোলাকার এবং পায়ের পাতায় প্যাডের মতো থাকাতে পিচ্ছিল শিকারকে সহজে কাবু করে ফেলতে পারে, নড়াচড়ার তেমন একটা সুযোগ পায় না। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ চীন, ফিলিপাইন ও মালয় উপদ্বীপ পর্যন্ত। তবে এদের উপস্থিতি কোথাও সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘লালপেট ঈগল’, ইংরেজি নাম: ‘রুফাস বেলিড্ ঈগল’, (Rufous-bellied Eagle), বৈজ্ঞানিক নাম: (Hieraaetus kienerii)। লম্বায় ৪৬-৬১ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির ৭৩৩ গ্রাম, স্ত্রী পাখির ওজন ৮০০ গ্রাম। প্রসারিত পাখা ১০৫ থেকে ১৪০ সেন্টিমিটার। মাথা, গলা, ঘাড় ধূসর কালো। মাথায় কালো ঝুঁটি। পিঠ কালচে-বাদামি। বুক লালচে-বাদামি। পেট থেকে বস্তিপ্রদেশ পর্যন্ত লালচে। লেজের নিচে সাদার সঙ্গে কালো ডোরা। শিঙ রঙের ঠোঁটের গোড়া হলদেটে, অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। চোখ লালচে বাদামি। পা হলদেটে, নখ তীক্ষè, ধুসর-কালচে। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের রং ভিন্ন। প্রধান খাবার: ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, ইঁদুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে মার্চ। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুম ভিন্ন। উঁচু গাছে সরু ডালপালা দিয়ে মস্তবড় বাসা বাঁধে। বাসা অগোছালো। একই বাসায় ফি বছরেও ঘর বাঁধতে দেখা যায়। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৫দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 22/07/2016
লম্বাঠোঁটি শকুন | Cinereous Vulture | Aegypius monachus
লম্বাঠোঁটি শকুন | ছবি: ইন্টারনেট হিংস্র চেহারার মনে হলেও তত হিংস্র নয়। আকারে বড়সড়ো। অধিক ওজনের কারণে হাঁটাচলা করতে খানিকটা বেগ পেতে হয়। ভারিক্কিচালে হেলেদুলে কিংবা লাফিয়ে হাঁটাচলা করে। পাহাড়ি অঞ্চলে বেশি নজরে পড়ে। দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, হিমালয় অঞ্চল, আফগানিস্তান, পর্তুগাল, দক্ষিণ ফ্রান্স, গ্রিস, স্পেন, তুরস্ক, মঙ্গোলিয়া, চীন পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘লম্বাঠোঁটি শকুন’, ইংরেজি নাম: ‘সিনেরিয়াস ভালচার’, (Cinereous Vulture) বৈজ্ঞানিক নাম: Aegypius monachus। দৈর্ঘ্য কমবেশি ৯৮-১১০ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ২৫০-২৯৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৭-১২ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। মাথা, পিঠ গাঢ় বাদামি সঙ্গে নীলচে ধূসরের মিশ্রণ রয়েছে। ঘাড় নীলচে ধূসর। ডানার পালক প্রান্ত কালচে বাদামি। ওড়ার পালক সাদা-কালো। লেজ খাটো কালচে বাদামি। গলা ময়লা সাদা চামড়ায় আবৃত। দেহতল কালচে বাদামি। ঠোঁটের গোড়া নীলচে ধূসর, অগ্রভাগ কালো। ওপরের ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। পা ধূসর হলেও গোলাপি আভা বের হয়। প্রধান খাবার: সব ধরনের মৃতদেহ বা উচ্ছিষ্ট খাবার শামুক, পাখির ডিম, ছোট পাখি, খরগোশ, সরীসৃপ ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে উঁচু গাছের ডালে সরু লাঠি দিয়ে। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৫০-৫৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/01/2018
চিতিপাক গোশালিক | Spot winged Starling | Saroglossa spiloptera
চিতিপাক গোশালিক | ছবি: ইন্টারনেট বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাস্থল পরিষ্কার বনপ্রান্ত, খোলা বন, কৃষিজমি। এ ছাড়াও পর্বতের ৭০০-১০০০ মিটার উঁচুতে দেখা যায়। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না। বেশির ভাগই জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। বিচরণ করে ছোট দলেও। স্বভাবে অন্যসব শালিকের মতোই ঝগড়াটে। সারাদিন খুনসুটি করে কাটায়। তবে ওদের ঝগড়া খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায় না, কিচির-মিচির পর্যন্তই ঝগড়া। পরক্ষণে আবার মিলেও যায়। আবার শুরু। এভাবেই দিন কাটে। পারতপক্ষে কেউ কাউকে আক্রমণ করে না। চলাফেরায় খুব হুঁশিয়ারি। বিশ্বে এদের অবস্থান তত ভালো নয়। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘চিতিপাক গোশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘স্পট-উইংড স্টার্লিং’ (Spot-winged Starling), বৈজ্ঞানিক নাম: Saroglossa spiloptera। এরা ‘লালচেগলা শালিক’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১০ প্রজাতির শালিক নজরে পড়ে। যথাক্রমে: গো-শালিক, ভাত শালিক, ঝুঁটি শালিক, গাঙ শালিক, পাতি কাঠশালিক, গোলাপি কাঠশালিক, চিতিপাখ গোশালিক, খয়রালেজ কাঠশালিক, বামুন কাঠশালিক ও ধলাতলা শালিক। এরা লম্বায় ১৯-২০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা বাদামি। ঘাড় ও পিঠ ধূসর এবং কালো-বাদামি। ডানার প্রান্ত নীলাভ কালো। লেজ লালচে বাদামি। গলা লালচে। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত সাদাটে। বুকের দু’পাশ শেয়ালে লাল। ঠোঁট নীলাভ কালো। চোখের বলয় সাদা। পা বেগুনি কালো। দেখতে একই রকম মনে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। আকারেও সামান্য ছোট। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, পিঁপড়া, ছোট ফল, ফুলের মধু। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বাঁধে ৬-১০ মিটার উচ্চতার গাছের প্রাকৃতিক কোটরে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, লতাপাতা, দড়ি, কাপড়ের টুকরো ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/08/2017