ধলালেজ ঈগল | White-tailed Eagle | Haliaeetus albicilla
ধলালেজ ঈগল | ছবি: ইন্টারনেট ধলালেজ ঈগল পরিযায়ী সামুদ্রিক পাখি। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। দেশে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার জলাশয় নদ-নদীর মোহনায় এদের সাক্ষাৎ মেলে। দেশের বিচরণরত ঈগল প্রজাতির পাখিদের মধ্যে আকারে সর্ববহৎ। খানিকটা হিংস্রও। অন্যসব শিকারী পাখিদের খাবার চিনিয়ে নিতে ইতস্ততবোধ করে না। শিকারের লোভে জলের ২০-৩০ মিটার ওপরে ধীর গতিতে বৃত্তাকারে উড়ে বেড়ায়। শিকার নজরে পড়লে ঝাঁপিয়ে পড়ে পায়ের তীক্ষè নখে বিঁধিয়ে নিয়ে উড়ন্ত অবস্থায় খেয়ে ফেলে। এ ছাড়াও গাছের ডালে অথবা মাটিতে নেমে খাবার খেতে দেখা যায়। সুযোগ পেলে এরা গবাদি পশুর মৃতদেহও খায়। এরা অনায়াসে সমুদ্র-সমতল থেকে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি সাইবেরিয়া, আলাস্কা, নরওয়ে, স্কল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড পর্যন্ত। দেশে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন এ প্রজাতিটিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ধলালেজ ঈগল’, ইংরেজি নাম: ‘হোয়াইট টেইলড ঈগল’ (White-tailed Eagle), বৈজ্ঞানিক নাম: Haliaeetus albicilla | এরা ‘সাদালেজী ঈগল’ নামেও পরিচিত। এরা দৈর্ঘ্যে ৬৬-৯৪ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৪-৫ কেজি। মাথা ফ্যাকাসে বাদামি। পিঠ গাঢ় বাদামি। কোমর কালো। লেজ সাদা। বুক ও পেট ফ্যাকাসে বাদামি। ওড়ার পালক কালো। হলুদ রঙের ঠোঁট শক্ত মজবুত, অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। পা বাদামি পালকে আবৃত। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম হলেও স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য বড়। অপ্রাপ্ত বয়য়স্কদের রঙ ভিন্ন। প্রধান খাবার: মাছ, সাপ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, ইঁদুর, ভোঁদড় ও পানকৌড়ি। অন্যসব পাখির চেয়ে জলচর পাখি বেশি ওদের শিকারে পরিণত হয়। প্রজনন সময় মার্চ থেকে এপ্রিল। তবে স্থানভেদে প্রজনন ঋতুর হেরফের দেখা যায়। বাসা বাঁধে বড় গাছের উঁচু ডালে। ডালপালা দিয়ে বড়সড়ো অগোছালো বাসা বানায়। এক বসায় বহু বছর ধরে ডিম বাচ্চা তোলে। ডিম পাড়ে ১-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৮-৪০ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৬-১০ সপ্তাহ এবং প্রজননক্ষম হতে সময় লাগে ৪-৫ বছর। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/06/2016
গাঙচিল | Whiskered Tern | Chlidonias hybridus
গাঙচিল | ছবি: ইন্টারনেট আমাদের দেশের স্থায়ী বাসিন্দা এ জলচর পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও এরা কাশ্মীরসহ উত্তর ভারতের গাঙ্গেয় উপত্যকা ধরে আসাম শীলঙ্কা ও নেপালের নিুভূমিতে বিচরণ করে। প্রচণ্ড শীতে এরা ভারতবর্ষের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তখন পরিযায়ী হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বেলুচিস্তান, পেশোয়ার ও সিন্ধু প্রদেশ অবধি। তবে বাংলাদেশের নদনদী, হাওর-বাঁওড় কিংবা সমুদ্র উপকূলে এদের বছরের যে কোনো সময় দেখা যায়। কারণ এরা স্থানীয় জলচর পাখি। একটা সময়ে এ পাখিদের বিচরণ ছিল অবাধ। সে তুলনায় বর্তমানে এদের দেখা মিলে অনেকটাই কম। তবে নদীপথের যাত্রীদের সঙ্গে এদের সাক্ষাৎ একটু বেশিই ঘটে। বিশেষ করে এ পাখি লঞ্চের পেছনে ‘ক্রিয়াক ক্রিয়াক’ সুরে ডেকে ওড়াউড়ি করে। কারণটি হচ্ছে লঞ্চ বা স্টিমারের প্রপেলারের প্রচণ্ড ঘূর্ণিতে অঘাত পেয়ে ছোট মাছ আহত অথবা নিহত হলে এরা ভুরিভোজন করার সুযোগ পায়। স্থিতা এদের মাঝে খুবই কম। দিনের অধিকাংশ সময় এরা নদনদীর ওপরই উড়ে বেড়ায়। এরা একাকী কিংবা দলবদ্ধভাবেও বিচরণ করে। বিশ্রাম নেয় জলে পুঁতে রাখা কঞ্চি বা বাঁশের ওপর। ঠিক সে মুহূর্তে ওদের খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব যদি সঙ্গে থাকে বাইনোকুলার। অন্যথায় উড়ন্ত অবস্থায় রঙরূপ পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক অনেকবার দেখেছি এদের আমি। নদীপথে যাতায়াতের সুবাদে দেখা মেলে প্রায়ই। ফলে এ পাখি নিয়ে আমার আগ্রহ তুলনামূলক কমই ছিল। পাখিটার বাংলা নাম: ‘গাঙচিল’, ইংরেজি নাম: ‘হুইস্কার্ড টার্ন’, (Whiskered Tern), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘ক্লিডোনিয়াস হাইব্রিডাস্’ (Chlidonias hybridus) ‘লারিদি’। আমাদের দেশে কয়েক প্রকার গাঙচিল দেখা যায়। গাঙচিল লম্বায় ২৫-২৭ সেন্টিমিটার। স্লিম গড়ন। গলা ধবধবে সাদা। ঘাড়ে বন্ধনী রয়েছে। প্রজননের সময় মাথা ও ঘাড় কালো। পিঠ গাঢ় ধূসর। কপাল, গলা সাদা। নিচের দিকে কালো। এ সময় ঠোঁট লাল দেখায়। পা-পায়ের আঙুল গাঢ় লাল হয়। প্রজননের বাইরে পিঠের দিক ধূসরাভ। নিচের দিক সাদাটে। মাথায় কালো ছিট দেখা যায়। শুধু মাথার চান্দিই নয় ঠোঁটের বর্ণ পাল্টিয়ে কালচে রূপ ধারণ করে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। গাঙচিলের প্রধান খাবার মাছ। এ ছাড়া ছোট ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড় খায়। প্রজনন সময় জুন থেকে আগস্ট। দেশভেদে প্রজনন সময়ের তারতম্য ঘটে। নদী বা জলাশয়ের জলজ গুল্মের ওপর বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 02/03/2013
আমুর শাহিন | Amur Falcon | Falco amurensis
আমুর শাহিন | ছবি: ইন্টারনেট পাখির নাম ‘আমুর শাহিন’। আমুরল্যান্ডে বিচরণ আধিক্য বিধায় হয়তো এই নাম ওদের। এরা উপমহাদেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। সুদর্শন, স্লিম গড়নের পাখি। দেখতে কিছুটা ককাটিল পাখিদের মতো। পুরুষদের চেহারা চকচকে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ; ভিন্ন বর্ণের। প্রাকৃতিক আবাসস্থল খোলা মাঠপ্রান্তর, খোলা বনাঞ্চল। শিকারি পাখি হলেও স্বভাবে হিংস নয়। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আমুরল্যান্ড, ট্রান্সবিকালিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব সাইবেরিয়া, উত্তর-পূর্ব মঙ্গোলিয়া উত্তর-পূর্ব চীন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়, উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে আইসিইউএন এদের শনাক্ত করেছে তাই। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘আমুর শাহিন ’, ইংরেজি নাম: ‘আমুর ফ্যালকন’, (Amur Falcon), বৈজ্ঞানিক নাম: Falco amurensis | এরা ‘লালপা তুরমুতি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ৩০-৩৬ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৬৫-৭৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৯৭-১৫৫ গ্রাম। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি খানিকটা বড়। চেহারায় বিস্তর তফাৎ। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ গাঢ় ধূসর। ডানা খানিকটা লম্বা। দেহতল ধূসর। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত লাল। চোখের বলয় কমলা হলুদ। ঠোঁটের অগ্রভাগ কালচে বাঁকানো, গোড়া কমলা হলুদ। পা লালচে কমলা। অপরদিকে স্ত্রী পাখির চেহারা ভিন্ন। শরীরে ধূসর, হলুদ, সাদা, বাদামির মিশ্রণ ছিট। বাদবাকি পুরুষের মতো। প্রধান খাবার: ঘাসফড়িং, পতঙ্গ, ছোট পাখি ও ছোট সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। গাছের উঁচু ডালে চিকন ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। মাস খানেকের মধ্যেই শাবক স্বাবলম্বী হয় এবং বাবা-মাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/10/2017
ডোরাগলা আবাবিল | Streak-throated Swallow | Hirundo fluvicola
ডোরাগলা আবাবিল | ছবি: ইন্টারনেট শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। মানব বসতির কাছিকাছি খোলা মাঠ-প্রান্তরে উড়ে বেড়ায়। উড়ন্ত অবস্থায় শিকার ধরে। ছোট-বড় দলে বিচরণ করে। দেখা যায় জোড়ায় কিংবা একাকীও। দেখতে হিংস মনে হতে পারে। আসলে নিরীহ প্রজাতির পাখি এরা। শুধু আক্রান্ত হলে আক্রমণ করে। স্বভাবে চঞ্চল। সারাদিন উড়ে বেড়াতে পছন্দ করে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, উত্তর-পূর্ব হিমালয়, পাকিস্তান, আফগানিস্তান পর্যন্ত। বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত। পাখির বাংলা নাম: ‘ডোরাগলা আবাবিল’, ইংরেজি নাম: ‘স্টিক থ্রোটেড সোয়ালো’ (Streak-throated Swallow), বৈজ্ঞানিক নাম: Hirundo fluvicola । এরা ‘দাগিগলা আবাবিল’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ১১-১২ সেন্টিমিটার। কপাল ও মাথা গাঢ় বাদামি। ঘাড়ে সাসা-কালো ডোরা দাগ। পিঠ গাঢ় নীল, মাঝে সাদা ডোরা। ডানা ও লেজ কালচে বাদামি। লেজের চেয়ে ডানা খানিকটা লম্বা। দেহতল ক্রিম সাদা। গলা ও বুকে কালো-সাদার মিশ্রণের সঙ্গে ডোরা দাগ। ঠোঁট খাটো কালো। পা কালো। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ। মাছির প্রতি আসক্তি লক্ষ করা যায়। প্রজনন মৌসুম জুলাই থেকে অক্টোবর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে পুরনো ঘর-দালানের ফাঁকফোকরে। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৬-১৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 28/04/2017
বড় পানকৌড়ি | Great cormorant | Phalacrocorax carbo
বড় পানকৌড়ি | ছবি: ইন্টারনেট আমার অত্যন্ত প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব তিনি। তিনি প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। শত ব্যস্ততার মাঝেও বন্যপ্রাণীদের খোঁজখবর রাখেন প্রতিনিয়ত। প্রিয় পাঠক, তার আন্তরিকতার কারণেই মানবকণ্ঠ পত্রিকায় পাখ-পাখালিদের নিয়ে সিরিজটি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। সেই তিনি নিজেই জানিয়েছেন, পানকৌড়ি এবং ডাহুক পাখিদের নিপীড়ন-নির্যাতনের কথা। কেন শিকারিদের কবলে এরা বেশি পড়ছে তা জানান দিতে এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। ইতিপূর্বে পত্রিকায় ডাহুক এবং ছোট পানকৌড়ি সম্পর্কে লেখা হওয়ার কারণে আজ ‘বড় পানকৌড়ি’ সম্পর্কে আপনাদেরকে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছি। বিশ্বে মোট ৩৬ প্রজাতির পানকৌড়ি পাখির দেখা মেলে। এশিয়া অঞ্চলে দেখা মেলে ১১ প্রজাতির। তন্মধ্যে বাংলাদেশে কমবেশি চার প্রজাতির পানকৌড়ি নজরে পড়ে। মাঝেমধ্যে দুর্লভ দর্শন বড় পানকৌড়ি হাওর-বাঁওড় বা বিলাঞ্চলে অল্প সংখ্যক দেখা যায়। স্থানীয় প্রজাতির হলেও যত্রতত্র এদের দেখা যায় না। শীতকালে কাপ্তাই হ্রদে কিছু সংখ্যক নজরে পড়ে। এ ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এদের বিস্তৃতি লক্ষণীয়। এরা জলচর, ডুবুরি পাখি। দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। একাকীও দেখা যায়। অনেক সময় বক বা অন্য জলচর পাখিদের সঙ্গেও এরা শিকারে বের হয়। প্রজনন মৌসুমে বকের সঙ্গে একই গাছে বাসা বাঁধে। দেখতে কালো শ্রীহীন হলেও এরা নিরীহ প্রকৃতির। ঝগড়াঝাটির ধার ধারে না। এরা ডুবসাঁতারে ওস্তাদ। সারাদিন শিকারের খোঁজে ব্যস্ত সময় পার করে। ক্লান্ত হয়ে পড়লে জলাশয়ের ওপরে কঞ্চি অথবা গাছের ডালপালাতে বিশ্রাম নেয়। এ সময় ডানা মেলে রোদে শুকিয়ে নিতে দেখা যায়। রাতের আঁধার নেমে এলে এরা দলবদ্ধ হয়ে আশ্রয় নেয় গাছগাছালিতে। জলচর পাখিদের মধ্যে এ প্রজাতির পাখি শিকারিদের হাতে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়। খোদ রাজধানী শহরেও শিকারিদের এদেরকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এদের মাংস বেশ সুস্বাদু। তার ওপর ওজন প্রায় দেড় কেজির মতো। ফলে ভোজনরসিকরা চড়া দামে কিনতে কৃপণতাবোধ করেন না। এ ছাড়াও ভালো পোষ মানে বিধায় খাঁচায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে এদেরকে। পাখির বাংলা নাম: ‘বড় পানকৌড়ি’, ইংরেজি নাম: ‘গ্রেট করমোরেন্ট’ (Great cormorant), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘ফালাক্রোকোরাসিদি কার্বো’ (Phalacrocorax carbo), গোত্রের নাম: ‘ফালাক্রোকোরাসিদি। সর্বসাকল্যে লম্বায় ৮০- ১০০ সেন্টিমিটার। অন্যসব পানকৌড়ির তুলনায় এদের মাথা বড় এবং ঘাড় মোটা। থুতনি, ঠোঁটের পেছন এবং চোখের নিচে সাদা পট্টি। প্রজনন সময়ে ঘাড় ও গলার পাশের পালক সাদাটে দেখায়। পিঠের পালক পালিশ কালোর ওপর মর্মরিত দেখায়। ঊরুতে ডিম্বাকৃতির সাদা ছোপ। পায়ের পাতা হাঁসের পায়ের মতো জোড়া লাগানো। ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। প্রধান খাবার: মাছ। এ ছাড়াও ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড় শিকার করে। প্রজনন সময় জুনের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি। জলাশয় সংলগ্ন গাছের ডালে বাসা বাঁধে। শুকনো ডালপালা বাসা বানানোর প্রধান উপকরণ। বাসা অগোছালো, শ্রীছাদ নেই। কলোনি টাইপের বাসা। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফোটে ১৭-১৯ দিনে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/09/2013
সাদাডানা গাংচিল | White winged Tern | Chlidonias leucopterus
সাদাডানা গাংচিল | ছবি: ইন্টারনেট দেখতে রাগী রাগী চেহারার মনে হলেও স্বভাবে এরা শান্ত। ঝগড়াঝাটি তেমন পছন্দ নয়। তবে নিজেদের মধ্যে কম-বেশি ঝগড়া বাধলেও তা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত গড়ায় না এবং খুব বেশি হিংস্রতাও দেখায় না। এ সময় বিরক্ত হয়ে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে ওঠে ‘ক্রাআ-ক্রা-আ’ সুরে। প্রজাতির উপস্থিতি দেশে তত সন্তোষজনক নয়। শিকারি পাখি ব্যতিরেকে এদের পারতপক্ষে কেউ তেমন একটা ঘাটায় না। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ-মধ্য এশিয়ার উপকূল, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, নিউজল্যান্ড, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত। এ ছাড়াও উত্তর আমেরিকার আটলান্টিক উপকূলীয় এলাকায়ও বিচরণ রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ মিটার উচ্চতায়ও এদের দেখা মেলে। ‘সাদাডানা গাংচিল’ পরিযায়ী প্রজাতির পাখি। সিøম গড়ন। উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে দেখা মেলে। বিচরণ করতে দেখা যায় বালুবেলাতেও। এ ছাড়া কৃষি জমিতে বিচরণ রয়েছে। মিঠা জলের চেয়ে লবণ জলে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সাগরের কাছাকাছি এলাকায় বেশি দেখা যাওয়ার মূল কারণই এটি। বিচরণ করে ছোট-বড় দলে। কলোনি টাইপ বাসা বাঁধে। চলাচলরত নৌযানকে অনুসরণ করতে দেখা যায় প্রায়ই। নৌযানের পেছন পেছন চক্কর মেরে উড়ে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছ শিকারের উদ্দেশে। পাখির বাংলা নাম: ‘সাদাডানা গাংচিল’, ইংরেজি নাম: ‘হোয়াইট-উইংগেড টার্ন’, (White-winged Tern), বৈজ্ঞানিক নাম: Chlidonias leucopterus | এরা ‘ধলাপাখ পানচিল’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ২২-২৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৬৩ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। মাথা, ঘাড়, গলা, বুক ও পেট কুচকুচে কালো। ডানার গোড়া ধবধবে সাদা। মধ্যখান থেকে লেজ পর্যন্ত ধূসর সাদা। লেজতল সাদা। ওড়ার পালক কালো-ধূসর সাদা। চোখের বলয় কালো। ঠোঁট বাদামি। পা ও আঙ্গুল কমলা-লাল। প্রধান খাবার: ছোট মাছ, সামুদ্রিক কৃমি। এ ছাড়াও বালুচরে ঘুরে পোকামাকড় সরীসৃপ, শুককীট খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। জলাশয়ের কাছাকাছি বেলাভূমি এলাকায় ঘাস, লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। অথবা মাঠের পাশে ভাসমান গুল্মঝোপেও বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২২ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ২৮-৩৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/05/2016
দোয়েল | Oriental magpie robin | Copsychus saularis
দোয়েল | ছবি: উকিপিডিয়া স্থানীয় প্রজাতির অতি সুলভ দর্শন গায়ক পাখি। পাখিটার সঙ্গে দেখা মেলে যত্রতত্রই। বাড়ির আঙিনায় হরহামেশায় নেচে বেড়ায় দোয়েল। ঝিঙে লতা, আতা কিংবা পেয়ারা গাছের ডালে লেজ উঁচিয়ে শারীরিক কসরত দেখায়। গান গায় দারুণ মিষ্টিসুরে। গ্রীষ্মকালে খুব ভোরে ‘সুই..সুইস..’ সুরে শিস দিয়ে গান গায়। এ ছাড়াও দিনের যে কোনো সময়ে গান শোনা যায়। সেটি কিন্তু ভোরের গানের মতো সুরেলা নয়। যাদের খুব ভোরে শয্যাত্যাগের অভ্যাস রয়েছে কানখাড়া করে রাখলেই তারা এদের মিষ্টি সুর শুনতে পাবেন। অবশ্য যদি আপনি শহরবাসী না হন। তাই বলে ভাববেন না শহরে এদের বিচরণ নেই। আলবত আছে। দেশের কোথায় নেই দোয়েল! নেই শুধু সদ্য জেগে ওঠা চরাঞ্চলে এবং সুন্দরবনে। এতদস্থানে দোয়েল বিচরণ না করার প্রধান কারণই হচ্ছে জনবসতির অভাব। অর্থাৎ যেখানে মানুষ নেই, সেখানে দোয়েল নেই। সুন্দর এ পাখির বাংলা নাম: ‘দোয়েল’, ইংরেজি নাম: ‘ওরিয়েন্টাল ম্যাগপাই রবিন’ (Oriental magpie-robin), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘কপসাইচাস সলারিস’ (Copsychus saularis)| অঞ্চলভেদে এদের ডাকা হয় দৈয়াল, দহিয়াল, দইনাচানি ও দইকুলি ইত্যাদি। প্রজাতিটি লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি রং ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত নীলাভ-কালো। ডানার দু’পাশে সাদাটান। থুতনি, গলা ও বুক নীলাভ-কালো। পেট থেকে লেজের তলা পর্যন্ত ধবধবে সাদা। স্ত্রী পাখি রং নিষ্প্রভ। পুরুষ পাখির ক্ষেত্রে যে সব স্থানে কালো রং, স্ত্রী পাখির ক্ষেত্রে তা ধূসর। উভয়ের চোখের মণি, ঠোঁট, পা ও আঙ্গুল কালো। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ। এ ছাড়াও ফুলের মধু, ছোট নরম ফল ও খেজুরের রস খায়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে কিংবা দর-দালানের ফাঁকফোকরে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাসের চিকন ডগা, সরু শিকড় ও নরম খড়কুটো। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 15/08/2014