লালকোমকর আবাবিল | Red rumped Swallow |Hirundo daurica
লালকোমকর আবাবিল | ছবি: ইন্টারনেট ফিঙ্গে আকৃতির চেহারার কারণে অনেক সময় রুক্ষ মনে হতে পারে এদরে, তবে দেখতে অতটা মন্দ নয়। খুব নিরীহ প্রজাতির লালকোমর আবাবিল। মানুষের হাতে আক্রান্ত কিংবা বন্দি হলে বড়জোর নখ দিয়ে আঁচড় কাটে। অথবা খাটো ঠোঁট দিয়ে খোঁচা মেরে বৃথা ভরকে দেয়ার চেষ্টা করে। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা অভিন্ন হলেও স্ত্রী পাখি তুলনামুলক খানিকটা খাটো। গড়ন ছিমছাম। স্ত্রীর তুরনায় পুরুষ খানকটা হালকা-পাতলা। গানের গলা ভালো, সুমধুর কণ্ঠে সুর তোলে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল পাহাড়-পর্বতশ্রেণি, নদ-নদী জলাশয়, ধানক্ষেত কিংবা ছোট দলে এদের দেখা মেলে। মাঝেমধ্যে ঝাঁকে ঝাঁকেও দেখা যায়। বিদুৎ অথবা টেলিফোনের তারে জোড়ায় জোড়ায় বসে খুনসুটি করে। অনকে সময় অন্য সব প্রজাতির আবাবিলের দলেও ভিরে যেতে দেখা যায়। বাসা বানানোর সময় দলের অনেকে মিলে জলাশয়ের পাড় থেকে কাদা মাটি সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে আসে। শীতে এরা বাংলাদেশে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে।তবে যত্রতত্র এদের দেখা যায় না। বৈশ্বিক কিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভার, হিমালয় অঞ্চল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, দক্ষিণ ইউরোপ, পর্তুগাল,স্পেন, জাপান, ক্রান্তীয় আফ্রিকা পর্যন্ত। এ ছারা উত্তর অস্ট্রেলিয়া ক্রিসমাস আইল্যান্ডে এদরে দেখা যায়।বিশ্বব্যাপি প্রজাতিটি এখনো বিলুপ্তির হুমকিতে নেই। মোটামুটি সন্তোসজনক এদের সংখ্যা। পখির বাংলা নাম: ‘লালকোমকর আবাবিল’, ইংরেজি নাম: ‘রেড-রামপেড সোয়ালে’ (Red-rumped Swallow) বৈজ্ঞানিক নাম: Hirundo daurica | এরা ‘লাল-নিতম্ব আবাবিল’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৬-১৭ সেন্টিমিটার। ওজন ১৯-২৯ গ্রাম। কপাল ও মাথা টুপি আকৃতির গাঢ় নীল। ঘাড় লালচে বাদামি; নিচের দিকে লালচে সাদা। চেরা লেজ, ধূসর কালো। গলা সাদাটে লাল, ডোরা দাগ। গলার নিচে থেকে লালচে বাদামি। ঠোঁট খাটো, শক্ত মজবুত, কালো। চোখ নীলাভ। পা কুচকুচে কালো। প্রধান খাবার: মাছি ও কীটপতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর। অঞ্চলভেদে মৌসুমের হেরফের হয়। বাসা অঞ্চল মাটি দিয়ে; পুরনো দর-দালানের কার্নিশে। অদ্ভুত ধরনের বাসা, টানেল আকৃতির। যাতায়তের জণ্য বাসায় দুটি প্রবেশদ্বার রাখে এরা। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৬-১৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
জলপাই হলুদ মৌটুসি | Olive backed Sunbird | Cinnyris jugularis
জলপাই হলুদ মৌটুসি | ছবি: ইন্টারনেট পুরুষ পাখির আকর্ষণীয় রুপ বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। সে তুলনায় স্ত্রী পাখি খানিকটা নিস্প্রভ। অনেক সময় ভিন্ন গোত্র্রের মনে হতে পারে। উভয়ের ঠোঁট দেহের তুলনায় লম্বা। কাস্তের মত বাঁকানো তীক্ষ্ম ঠোঁটজোরা ফুলের মধুপানে সহায়ক। উরন্ত অবস্থায় ফুলের পাপড়ির ভেতর ঠোঁট ঢুকিয়ে মধুপান করে। কণ্ঠস্বর সুমধুর। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। স্থিরতা নেই বললেই চলে। মধু এদের প্রিয় খাবার। সারাদিন মধুর সনাধানে ঘুরে বেড়ায়। বেশির ভাগ সময় একাকী বিচরণ করলেও প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। প্রাকৃতিক আবাসস্থল নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বন অথবা গ্রামীণ বনবাদাড়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ব্যতিত দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল।এ ছাড়াও ভিয়েতনাম, দক্ষিন চীন, উত্তর নিউগিনিতে দেখা মিলে। আমাদের দেশে প্রায় ৯ প্রজাতির মৌটুসির স্বাক্ষাত মিলে। এদের প্রতিটি প্রজাতির স্বভাব কিংবা আচার-আচারণ একই রকম। চেহারাও প্রায় একই ধাঁচের। পাখি বিশারদ ব্যতিত সাধারণ মানুষের পক্ষে জাতপাত নির্নয় করা বড়ই কঠিন। পাখির বাংলা নাম: ‘জলপাই-হলুদ মৌটুসি’ | ইংরেজী নাম: ‘অলিভ-ব্যাকেড সানবার্ড’ (Olive-backed Sunbird)| বৈজ্ঞানিক নাম: Cinnyris jugularis| এরা ‘জলপাইপিঠ মৌটুসি’ নামেও পরিচিত। গড় দৈর্ঘ ১২ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ পাখির কপাল, গলা ও বুকের উপরিভাগ ধাতব-নীল কালো। ঘাড় ও পিঠ জলপাই। ওড়ার পালক হলুদ-সাদা। বুকের মাঝামাঝি থেকে লেজতল পর্যন্ত উজ্জল হলুদ। চোখ বাদামি কালো; চোখের ওপর নিচে ভ্রু আকৃতির হলুদ টান। ঠোঁট শিং কালো; কাস্তের মতো বাঁকানো। পা ধূসর-কালো অপরদিকে স্ত্রী পাখির কপাল, ঘাড় ও পিঠ ময়লা জলপাই রঙের। গলা থেকে লেজতল পর্যন্ত ময়লা হলুদ। চোখের ওপর আবছা ময়লা সাদা টান। বাদবাকি পুরুষ পাখিদের মতো। যুবাদের রঙ ভিন্ন। প্রধান খাবার: ফুলের মধু। ছোট পোকামাকড়, মাকড়সা ইত্যাদি খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে আগষ্ট। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। ভূমি থেকে দুই-তিন মিটারের মধ্যে বাসা বাঁধে। নাশপাতি আকৃতির; দেখতে কিছুটা বাবুই পাখির বাসার মতো। বাসা বানাতে উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করে গাছের তন্তু, শ্যাওলা, মাকড়াসার জাল, তুলা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ১-২টি। ফুটতে সময় লাগে সপ্তাহ দুয়েক। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।
হলদেপেট ফুলঝুরি | Yellow bellied Flowerpecker | Dicaeum melanoxanthum
হলদেপেট ফুলঝুরি | ছবি: ইন্টারনেট স্থানীয় প্রজাতির পাখি। সুদর্শন চেহারা। পুরুষ পাখির নজরকাড়া রুপ। স্ত্রী পাখি দেখতে কিছুটা নিস্প্রভ। ভিন্ন প্রজাতির মনে হতে পারে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের বন। এছারাও পাইন বনে দেখা মিলে। নজরে পড়ে গেরস্তেরে সাজনো বাগানেও। অথবা বাড়ির আঙ্গিনার লাউ-কুমরা কিংবা ঝিঙেলতার ঝোপে নাচানাচি করতে দেখা যায়। অর্থাৎ যেখানে ফুল সেখানেই ফুলঝুরি পাখির সমাহার। ফুলের মধু এদের প্রধান খাবার। মধুপানের নেশায় সারাদিন ব্যতিব্যস্ত সময় পার করে। স্বভাবে ভারী চঞ্চল। অস্থরিমতি পাখি কোথাও একদন্ড বসে থাকার যো নেই। ছোট গাছ-গাছালি কিংবা লতাগুল্মের ওপর লাফিয়ে লাফিয়ে সুমধুর কণ্ঠে শিস কাটে। উত্তেজিত হলে কণ্ঠস্বর পাল্টে ‘জিট-জিট-জিট-জিট’ সুরে ডাকতে থাকে। গাছে গাছে ছুটে বেড়ায় ছোট ফল-ফলাদি সন্ধানেও। একাকি কিংবা জোড়ায় বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় বেশি দেখা যায়; হাক ডাকও বেড়ে যায় তখন। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভূটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত। ভূমি থেকে এদের বাসা কাছাকাছি বিধায় বিড়াল বা বনবিড়ালের আক্রমণের শিকারে পরিণত হয়। তথাপিও সমগ্র বিশ্বে প্রজাতিটি ভালো অবস্থানে রয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘হলদেপেট ফুলঝুরি’| ইংরেজি নাম: ইয়লো-ব্যালিড ফ্লাওয়ারপেকার’ (Yellow-bellied Flowerpecker)| বৈজ্ঞানিক নাম: Dicaeum melanoxanthum| দৈর্ঘ্য কমবেশি ১১-১৩ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৫-৬ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ নীলচে কালো। ডানার গোড়ায় সাদাটান। গলার দুপাশ কালো মধ্যখানে সাদা লম্বাটান; বুকের কাছে ঠেকেছে। বুক কালো। পেটে উজ্জল হলুদ। চোখের মনি বাদামি। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথা, ঘাড় ও পিঠ ধূসরাভাকালো। গলার কালো-সাদা তেমন উজ্জল নয় পা নীলচে কালো। প্রধান খাবার: ফুলের মধু, ছোট ফল। মাঝে মধ্যে পোকামাকড়ও খায়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। অঞ্চলভেদে মৌসুমের হেরফের রয়েছে।ভূমিথেকে দুই-আড়াই মিটার উঁচুতে পাছের ডালে অথবা গুল্মলতা আচ্ছাদিত ঝোপে ঝুলন্ত থলে আকৃতির বাসা বাঁধে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করে গাছের নরম তন্তু, তুলা, শ্যাওলা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৩ টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
কোকিল | Asian Cuckoo | Eudynamys scolopaceus
কোকিল | ছবি: ইন্টারনেট আদতেই এ পাখি এতটা ভদ্র নয়। বড়রা মোটামুটি ধাড়িবাজ। ধূর্ত কাকের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওদের বাসায় ডিম পেড়ে নিজের বংশ বৃদ্ধি ঘটায়। ‘সুসময়ের বন্ধু’ পাখি নামে পরিচিত, বলা হয় বসন্তের দূতও। বসন্তকালে লোকালয়ে চলে আসে ওরা। পুরুষ পাখি ‘কুহু-কুহু-কুহু’ ডেকে মানুষের মন মাতিয়ে তোলে। সুরে এক ধরনের মাদকতা রয়েছে। স্ত্রী পাখির কণ্ঠ তত সুরেলা নয়। কর্কশ। ডাকে ‘খিক্-খিক্-খিক্’ স্বরে। বৃক্ষচারী পাখি এরা। পারতপক্ষে ভূমি স্পর্শ করে না। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। গায়ে পড়ে কারো সঙ্গে বিবাদ বাধায় না। এ পাখির বাংলা নাম: ‘কোকিল বা কুলি’| ইংরেজি নাম: ‘এশিয়ান কুক্কু’ (Asian Cuckoo)| বৈজ্ঞানিক নাম: (Eudynamys scolopaceus), গোত্রের নাম: ‘কুকুলিদি’। এরা লম্বায় ৩৯-৪৬ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির বর্ণ কুচকুচে কালো হলেও উজ্জ্বল সবুজের আভা বের হয় শরীর থেকে। চোখের তারা টকটকে লাল (কাক-কোকিলের মধ্যে বড় তফাত এটি)। স্ত্রী পাখির বর্ণ কালোর ওপর বাদামি ফোঁটাযুক্ত। সমস্ত পিঠে অসংখ্য বাদামি ফোঁটা। এদের নিচের দিকটা সাদাটে বর্ণের ওপর বাদামি ফোঁটা। লেজের ওপর সাদা ফোঁটার সঙ্গে স্পষ্ট ডোরাদাগ। উভয় পাখির ঠোঁট নীলচে-সবুজ এবং পা পায়ের পাতা কালচে। কোকিলের প্রিয় খাবার ফল-ফলাদি। ফুলের মধু, খেজুরের রস এবং কীটপতঙ্গেও ভাগ বসায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না বিধায় পরের বাসায় ডিম পাড়ে। বিশেষ করে কাক, সাতভায়লা পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ১-২টি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।