সুন্দরী হাঁস | Mandarin Duck | Aix galericulata
সুন্দরী হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন পরিযায়ী পাখি। বোধ করি হাঁস প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরতম পাখি। প্রজাতির রূপের বর্ণনা বোঝানোর মতো নয়, বিধায় পাখি বিশারদরা সোজাসাপ্টা নামকরণ করেছেন ‘সুন্দরী হাঁস’। বলা যায় যথার্থ নামকরণ এটি। দেশে কেবলমাত্র আগমন ঘটে শীত মৌসুমে, তবে প্রতি মৌসুমেই পালা করে আগমন ঘটে না। কালেভদ্রে সিলেটের হাওরাঞ্চলে দেখা মেলে। দেখা যেত এক সময়ে সুন্দর বনাঞ্চলেও। বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মঙ্গোলিয়া ও ভিয়েতনামে অনিয়মিত দেখা যায়। খানিকটা বেশি দেখা যায় চীন, জাপান ও কোরিয়াতে। সুন্দরী হাঁস অন্য প্রজাতির সঙ্গে মিলেমিশে চলাফেরা করলেও নিজ প্রজাতির পুরুষদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে প্রায়ই। এদের বেশিরভাগ বিচরণক্ষেত্র জঙ্গলাবৃত জলাশয়ে। ঊষা এবং গোধূলিলগ্নে নিয়ম করে শিকারে বের হয়। সাঁতারে দক্ষ হলেও ডুব দিতে তেমন পারদর্শী নয়। উড়তে পারে ভালো। পুরুষ হাঁস উড়তে উড়তে ডাকে ‘হোয়েক..হোয়েক’ অপরদিকে স্ত্রী হাঁস ডাকে গ্যাগ-অ্যাগ-অ্যাগ-অ্যাগ..’ সুরে। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপন্মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত নয়। এদের মাংস তত সুস্বাদু নয় বিধায় শিকারির হাতে নির্যাতনের খবর পাওয়া যায় না খুব একটা। তথাপিও দেশে খুব বেশি আগমন ঘটছে না, তার প্রধান কারণই হচ্ছে অবাধে বৃক্ষ নিধন। বসবাসের জন্য পর্যাপ্ত জঙ্গলাবৃত জলাশয় সংকটের ফলে সুন্দরী হাঁস বিরলতম হয়ে উঠছে আমাদের দেশে। পাখির বাংলা নামঃ ‘সুন্দরী হাঁস’, ইংরেজি নামঃ ‘মান্ডারিন ডাক’, (Mandarin Duck), বৈজ্ঞানিক নামঃ Aix galericulata পরিযায়ী । এরা ‘মান্ডারিন হাঁস’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ৪৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৪২৮-৬৯৩ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির গোল মাথাটা বাদামি রঙের। চোখ বাদামি। চোখের ওপরে চওড়া সাদা টান, যা ঘাড় অবধি ঠেকেছে। চিবুক থেকে কমলা রঙের কেশর সাদৃশ্য পালক ঘাড়ে ঠেকেছে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির ডানায় কমলা রং ধারণ করে। তখন দু’পাশের ডানার পালক খাড়া থাকে নৌকার পালের মতো। প্রজনন ঋতুর বাইরে ডানা লালচে। দেহতল সাদা। ঠোঁট লাল, অগ্রভাগ সাদাটে। পা কমলা-পীতাভ। স্ত্রী পাখির রং নিষ্প্রভ। পিঠ জলপাই-বাদামি। দেহতল সাদা। বুকে সাদা ডোরা। প্রধান খাবারঃ জলজকীট, ছোট কাঁকড়া, চিড়িং, জলজ উদ্ভিদের কচিডগা। প্রজনন মৌসুম মে-আগস্ট। জলাশয়ের কাছাকাছি মাটির গুহায় অথবা গাছের প্রাকৃতিক কোটরে ঘাস লতা বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৯-১২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, 02/04/2022
ডোরা কালিপেঁচা | Asian Barred Owlet | Glaucidium cuculoides
ডোরা কালিপেঁচা | ছবি: ইন্টারনেট স্থানীয় প্রজাতির নিশাচর পাখি। সুলভ দর্শন। প্রাকৃতিক আবাস্থল নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চল কিংবা ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বন। বিশেষ করে নারিকেল, পাইন কিংবা ওক বন এদের বিচরণের ক্ষেত্র। লোকালয়ের কাছাকাছিও দেখা যায়। দেশের পূর্বাঞ্চলে কম-বেশি নজরে পড়ে। কেবল নজরে পড়ে না সুন্দরবন অঞ্চলে। চেহারায় হিংস তার ছাপ থাকলেও এরা একেবারেই নিরীহ। গলার আওয়াজ গম্ভীর বিধায় ডাকাডাকিকালীন শব্দটা ভৌতিক মনে হয়। এরা দিনে গাছের ঘন পাতার আড়ালে কিংবা গাছের কোটরে লুকিয়ে থাকে। গেছো ইঁদুর শিকার করে মানুষের উপকার করে। শিকারে বের হয় গোধূলিলগ্নে, চলে রাতভর। থাকে জোড়ায় জোড়ায়। একই স্থানে একজোড়া পাখি দীর্ঘদিন অবস্থান করে। বাসাও বাঁধে একই স্থানে বারবার। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ (পূর্বাঞ্চল), ভারত, নেপাল, ভুটান, উত্তর-পূর্ব পাকিস্তান, মিয়ানমার, দক্ষিণ-পূর্ব তিব্বত, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও লাওস পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বব্যাপী হুমকির সম্মুখীন না হলেও ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত। পাখির বাংলা নাম: ‘ডোরা কালিপেঁচা’, ইংরেজি নাম: ‘এশিয়ান ব্যারেড আউলেট’ (Asian Barred Owlet), বৈজ্ঞানিক নাম: Glaucidium cuculoides | এরা ‘এশীয় দাগিপেঁচা’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ২২-২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম হলেও আকারে স্ত্রী পাখি খানিকটা বড়। পুরুষ পাখির ওজন ১৫০-১৭৬ গ্রাম। স্ত্রী পাখির ওজন ২৩০-২৪০ গ্রাম। গোলাকৃতির মুখ। মাথায় ক্ষুদ্র অসংখ্য সাদা ছিট। সমস্ত দেহে লালচে বাদামির ওপর সাদা ক্ষুদ্র সাদা ছিট। ডানার ওপর সাদা পট্টি। গোলাকার লেজে কালচে বাদামির ওপর সাদা ছিট। দেহতলে বাদামির ওপর সাদা খাড়া ডোরা। চোখের তারা হলুদ। ঠোঁট হলুদাভ হলেও গোড়ার আবরণী সবুজাভ হলুদ। পা ও আঙ্গুল হলদে। প্রধান খাবার: ইঁদুর, টিকটিকি, পোকামাকড়, পাখির ডিম ও ছোট পাখি ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে পুরনো গাছে কিংবা পর্বতের প্রাকৃতিক কোটরে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৪-৩৫ দিন। লেখক: আলমশাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদওপরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 16/12/2016
লম্বাঠোঁটি দামা | Long billed Thrus | Zoothera monticola
লম্বাঠোঁটি দামা | ছবি: ইন্টারনেট ভূচর পাখি। স্বভাবে পরিযায়ী। দেশে শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। প্রজাতির অন্যদের মতো চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। বিচরণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। হিমালয়ের ২২০০-৩৮০০ মিটারেও উঁচুতে দেখা যাওয়ার নজির রয়েছে। গানের গলা ভালো। মিষ্টি সুরে গান গায়। গাছের উঁচু ডালে বসে খুব ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে গান গায়। স্বভাবে লাজুক। বেশিরভাগই একাকী বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। চিরহরিৎ ছায়াময় স্থানে বিচরণ। পাইন বন অথবা সুঁচালো চিরহরিৎ বনে বেশি দেখা যায়। দেখা যায় লতাগুল্মের নিচেও। আবার পাথুরে এলাকায়ও বিচরণ রয়েছে। এতদঞ্চলের পরিত্যক্ত বা স্যাঁতসেঁতে এলাকার লতাপাতা উল্টিয়ে এবং ঘন ঘন ঠোঁট চালিয়ে খাবার খোঁজে। গাছের উঁচুতে এরা বিচরণ করে না। দেশের সর্বত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত। প্রজাতিটি ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হলেও বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়। প্রজাতিটির বাংলা নাম: ‘লম্বাঠোঁটি দামা’, ইংরেজি নাম: ‘লং-বিলেড থ্রাস’(Long-billed Thrush), বৈজ্ঞানিক নাম: Zoothera monticola | এরা ‘লম্বাঠোঁট দামা’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১৫ প্রজাতির দামা নজরে পড়ে। ত্মধ্যে ‘কমলা দামা’ ব্যতীত অন্যরা পরিযায়ী প্রজাতির পাখি। এরা দৈর্ঘ্যে ২৬-২৮ সেন্টিমিটার লম্বা। ওজন ১১৫-১৩০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। রঙে সামান্য পার্থক্য আছে। পুরুষ পাখির মাথা ফ্যাকাসে বাদামি। ঘাড় থেকে লেজ পর্যন্ত অন্ধকার জলপাই-বাদামি রঙের। সাদাটে গলায় বাদামি বুটিক। দেহতল ক্রিম সাদার ওপর বাদামি বুটিক। ঠোঁট ও পা শিংকালো। তুলনামূলক ঠোঁট খানিকটা লম্বা। অপরদিকে স্ত্রী পাখি লালচে-বাদামি। প্রধান খাবার: কেঁচো, পোকামাকড়, লার্ভা, ছোট শামুক ইত্যাদি। মাঝে মধ্যে ছোট ফলফলাদি খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুলাই। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ২-৭ মিটার উঁচুতে। গভীর কাপ আকৃতির বাসা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শৈবাল, শুকনো ঘাস ও লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/05/2016
হলদে পা গাঙচিল | Yellow legged Gull | Larus cachinnans
হলদে পা গাঙচিল | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন পরিযায়ী পাখি। কেবলমাত্র শীতে প্রজাতির আগমন ঘটে। দেশে দেখা মেলে সুন্দরবন এলাকায়, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, হাতিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, নিঝুমদ্বীপ ও মনপুরাতে। এছাড়াও খাবারের সন্ধানে উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে বিচরণ করতে দেখা যায় এ সময়। মিঠা জলের চেয়ে লবণ জলে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সাগরের কাছাকাছি এলাকায় বেশি দেখা যাওয়ার মূল কারণই এটি। এরা বিচরণ করে ঝাঁক বেঁধে। চলাচলরত নৌযানকে অনুসরণ করতে দেখা যায় প্রায়ই। নৌযানের পেছন পেছন চক্কর মেরে উড়ে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে। এছাড়াও বালুতটে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় এদের। মরা মাছ খাওয়ার লোভে দ্বীপাঞ্চলের জেলে পল্লীতে ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়। স্বভাবে শান্ত। ঝগড়াঝাটি পছন্দ নয়। নিজেদের মধ্যে খুঁনসুটি বেঁধে গেলে বিরক্ত হয়ে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে ওঠে ‘ক্রাআ-ক্রা-আ’। প্রজাতির উপস্থিতি দেশে সন্তোষজনক। শিকারি পাখি ব্যতিরেকে এদের পারতপক্ষে কেউ তেমন একটা বিরক্ত করে না। ফলে এরা আমাদের দেশে ভালো অবস্থানে রয়েছে বলা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা, মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, ইসরাইল, সিরিয়া, তুরস্ক, সাইপ্রাস, সেনেগাল, গাম্বিয়া, নাইজেরিয়া ও ইংল্যান্ড পর্যন্ত। পাখির বাংলা নাম: ‘হলদে পা গাঙচিল’, ইংরেজি নাম: ‘ইয়লো-লেগড গাল’ (Yellow-legged Gull), বৈজ্ঞানিক নাম: Larus cachinnans| এরা ‘জল কবুতর’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ৫২-৬৮ সেন্টিমিটার। ডানা প্রসারিত অবস্থায় ১২০-১৫৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। মাথা, ঘাড় ও গলা ধবধবে সাদা। পিঠ ও ডানা ধূসর। তবে ডানায় সামান্য ফুটকি নজরে পড়ে। লেজে কালোর ওপর দু-একটি সাদা ফুটকি। দেহতল ধবধবে সাদা। ওড়ার পালক সাদা। চোখের বলয় লাল, তারা হলদেটে। ঠোঁট মোটা হলুদ। নিচের ঠোঁটের ডগা উজ্জ্বল লাল। পা ও আঙ্গুল হলুদ। প্রধান খাবার: মাছ। এছাড়াও বালুচরে ঘুরে পোকামাকড় খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মধ্য মার্চ থেকে মে পর্যন্ত। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে নিজ বাসভূমিতে। জলাশয়ের কাছাকাছি ভূমি অথবা পাথুরে এলাকায় ঘাস, লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৭-৩১ দিন। শাবক শাবলম্বী হতে সময় লাগে ৩৫-৪০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 27/11/2015
গৃহবাসী বাতাসি | Little Swift | Apus affinis
গৃহবাসী বাতাসি | ছবি: ইন্টারনেট চড়–ইদের মতো এরাও ঘরকুনো পাখি। দিনে উড়ে বেড়ায় খোলা প্রান্তরে। রাতে পুরনো দর-দালানে আশ্রয় নেয়। বছরের পর বছর একই স্থানে কাটিয়ে দেয়। অতি সুলভ দর্শন, স্থানীয় প্রজাতির পাখি। ছোট-বড় দলে বাস করে। চেহারা তত আকর্ষণীয় নয় বরং হিংস রাগী দেখায়। কেবল আক্রান্ত হলে আক্রমণ করে। সারাদিন উড়ে বেড়ায়। উড়ন্ত অবস্থায় এদের ঠোঁট, মাথা ও লেজ সমান্তরাল থাকে। ফলে দূর থেকে মাথা এবং লেজ শনাক্ত করা কঠিন হয়। শুধুমাত্র উড়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার কারণে মাথা-লেজ শনাক্ত করা যায়। শরীরের তুলনায় ডানা লম্বা থাকার কারণে উড়ন্ত অবস্থায় ডানা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। কণ্ঠস্বর কর্কশ, জোরে জোরে শিস দেয়। ছোট-বড় দলে বিচরণ করে। মাঝেমধ্যে জোড়ায়ও দেখা যায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, দক্ষিণ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত। সমগ্র বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক। বাংলাদেশে সুলভ দর্শন, কোথাও কোথাও অতি সুলভ দর্শন। পাখির বাংলা নাম: ‘গৃহবাসী বাতাসি’, ইংরেজি নাম: ‘লিটল সুইফট’ (Little Swift), বৈজ্ঞানিক নাম: Apus affinis | এরা ‘ঘর বাতাসি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ১২-১৩ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৩৩-৪২ সেন্টিমিটার। ওজন ২৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। কপাল বাদামি কালো পালিশ করা। মাথা, ঘাড় বাদামি কালো। পিঠ নীলাভ কালো। কোমর সাদা। লেজ কালো। গলা সাদা। দেহতল কালো। ঠোঁট কালো, ছোট। ঠোঁটের অগ্রভাগ কিঞ্চিত বাঁকানো। পা ছোট। পায়ের তুলনায় নখ বড় এবং ধারালো। প্রধান খাদ্য: উড়ন্ত পোকামাকড়, পিঁপড়া। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। অঞ্চলভেদে অক্টোবর থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে পুরনো দর-দালানে অথবা পুরনো পুলের বিমের ফাঁকে। ডিম পাড়ে ১-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 28/07/2017
বড় জলকবুতর | Great Black headed Gull | Larus ichthyaetus
বড় জলকবুতর | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন পরিযায়ী পাখি। কেবল শীতে এ প্রজাতির আগমন ঘটে এ দেশে। পরিযায়ী হয়ে আসে দক্ষিণ রাশিয়া ও উত্তর-পূর্ব মঙ্গোলিয়া থেকে। আশ্রয় নেয় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। বাংলাদেশ ছাড়াও শীতে এ প্রজাতির সাক্ষাৎ মেলে ভারত ও পাকিস্তানে। শীত মৌসুমে খাবারের সন্ধানে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে বিচরণ করতে দেখা যায় জলকবুতরকে। রাজধানীর পাশে বহমান বুড়িগঙ্গা নদীতেও দেখা মেলে এদের। তবে পরিযায়ী এ পাখি মিঠা পানির চেয়ে নোনা পানিতে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বেশি। সাগরের কাছাকাছি এলাকায় বেশি দেখা যাওয়ার মূল কারণ এটাই। জলকবুতর বিচরণ করে ঝাঁক বেঁধে। চলাচলরত নৌযানকে অনুসরণ করতে দেখা যায় প্রায়ই। নৌযানের পেছন পেছন চক্কর মেরে উড়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য একটাই, মাছ শিকার। শীতে নৌযাত্রীরা প্রায়ই দৃশ্যটি দেখার সুযোগ পেয়ে থাকে। আর সেই দৃশ্য উপভোগ করার মতোই। এ ছাড়া প্রজাতিটিকে বালুতটে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। বিশেষ করে দ্বীপাঞ্চলের জেলেপল্লীতে ওরা ঘুরঘুর করে। মূলত পল্লীর এখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মরা মাছ খাওয়ার লোভেই ওদের ঘোরাঘুরি। জলকবুতর স্বভাবে শান্ত। ঝগড়াঝাঁটি পছন্দ নয়। নিজেদের মধ্যে খুনসুটি বেধে গেলে বিরক্ত হয়ে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে ওঠে ‘ক্রাআ-ক্রা-আ’। শীত মৌসুমে এ প্রজাতির উপস্থিতি দেশে সন্তোষজনক। শিকারি পাখি ছাড়া এদের পারতপক্ষে কেউ তেমন একটা বিরক্ত করে না। ফলে এরা আমাদের দেশে ভালো অবস্থানেই রয়েছে বলা যায়। পাখিটির বাংলা নামঃ বড় জলকবুতর, ইংরেজি নামঃ গ্রেট ব্ল্যাক-হেডেড গাল (Great Black-headed Gull), বৈজ্ঞানিক নামঃ Larus ichthyaetus | এরা ‘কালোশির গঙ্গা কবুতর’ নামেও পরিচিত। বড় জলকবুতর লম্বায় ৭০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ডানার দৈর্ঘ্য প্রসারিত অবস্থায় ১৪২ থেকে ১৭০ সেন্টিমিটার। শীতে রং বদলায়। এ সময় মাথায় সাদার ওপর কালো ছোপ দেখা যায়। শীত কেটে গেলে মাথা ধীরে ধীরে কালো রং ধারণ করে। শুধু চোখের ওপরে ও নিচে অর্ধচন্দ্রাকারে সাদা ছোপ। দেহজুড়ে সাদা রঙের পালক, কেবল ডানার ওপরের দিক ও পিঠ ধূসর। ওড়ার পালকে সাদার ওপর কালো ফোঁটা। দেহতল ধূসর-ফিকে। ঠোঁট মোটা হলুদ। ঠোঁটের ডগা কালো-লালচে। পা ও আঙুল হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ উভয় পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবারঃ মাছ। তবে বালুচরে ঘুরে পোকামাকড় খেতেও দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মধ্য এপ্রিল। বাসা বাঁধে জন্মভূমিতেই। জলাশয়ের কাছাকাছি ভূমিতে ঘাস, লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে দুই থেকে ছয়টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১ থেকে ২৭ দিন। আর বাচ্চার স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৪২ দিন। লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
হলদে পা নাটাবটের | Yellow Legged Buttonquail | Turnix tanki
হলদে পা নাটাবটের | ছবি: ইন্টারনেট বিরল প্রজাতির আবাসিক পাখি। উনিশ শতকের দিকে চট্টগ্রাম বিভাগে দেখা গেছে। সম্প্রতি ঢাকা ও সিলেট বিভাগে দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড ও কোরিয়া পর্যন্ত। হলদে পা নাটাবটের বিশ্বে বিপন্মুক্ত বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। দেশের বন্যপ্রাণী আইনে এদের সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়নি। প্রজাতিটি স্বভাবে হিংসুটে নয়। স্বগোত্রীয়দের আগমনে বিরক্ত হয় না। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় তৃণভূমিতে বিচরণ করে। খুব সাবধানে হেঁটে বেড়ায়। প্রজননকালীন সময়ে হাঁকডাক বেড়ে যায়। এ সময় জোরে জোরে ডাকে ‘হু-ওন… হু-ওন…’ সুরে। প্রজাতিটি দেশের সর্বত্র যত্রতত্র দেখা না গেলেও খুলনা, বাগেরহাট, ফকিরহাট, যশোর, কুষ্টিয়ার আখমহালে দেখা মেলে। পাখির বাংলা নাম: ‘হলদে পা নাটাবটের’, ইংরেজি নাম: ‘ইয়োলো লেগড বাটন কোয়েল’ (Yellow-legged Buttonquail), বৈজ্ঞানিক নাম: Turnix tanki | বাংলাদেশে তিন প্রজাতির নাটাবটের সাক্ষাৎ মেলে। যেমন দাগি নাটাবটের, হলদে পা নাটাবটের, ছোট নাটাবটের। লম্বায় ১৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৪০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির রং ভিন্ন। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রং বদলায়। এ সময় মাথার তালু পীতাভ ডোরাসহ কালচে দেখায়। পিঠ বাদামি-ধূসর। ডানার কোভার্ট পীতাভ। পিঠ, বুকের পাশ ও বগলে কালো চিতি। থুঁতনি ও গলা সাদাটে। অপরদিকে স্ত্রী পাখির ঘাড় লালচে। গলা ও ঘাড়ের পাশ এবং বুক লাল-কমলা। অপ্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী পাখির মাথার তালুতে পীতাভ ডোরা থাকে। তা ছাড়া ঘাড় থাকে লাল-ধূসর। লেজের গোড়ার দিকের পালক ধূসরাভ। উভয়ের চোখ সাদা। ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা হলুদ। প্রধান খাবার: শস্যবীজ, পিঁপড়া ও পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে নভেম্বর। ঝোপ-জঙ্গলের ভেতর মাটির ওপর ঘাস-লতা দিয়ে গম্বুজ আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/02/2015