বড় চিত্রা ঈগল | Greater Spotted Eagle | Aquila clanga
বড় চিত্রা ঈগল | ছবি: ইন্টারনেট শিকারি পাখি। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, উত্তর-পূর্ব চীন, দক্ষিণ চীন, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, উত্তর-পূর্ব ও মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত। স্বভাবে হিংস । অন্য সব ঈগলদের মতোই শিকার খোঁজে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে উঠতে সক্ষম এরা। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘বড় চিত্রা ঈগল’| ইংরেজি নাম: ‘গ্রেটার স্পটেড ঈগল’ (Greater Spotted Eagle)| বৈজ্ঞানিক নাম: Aquila clanga| এরা ‘বড় গুটি ঈগল’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ৫৯-৭১ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ১৫৭-১৭৯ সেন্টিমিটার। ওজন পুরুষ পাখি ১.৬-২.৫ কেজি। মাথা বাদামি। ঘাড় ও পিঠ গাঢ় বাদামি। পিঠ এবং ডানায় বাদামি সাদা গুটি বা চিত্রা। লেজ কালচে বাদামি। বুক ও পেট গাঢ় বাদামি। চোখ বাদামি। ঠোঁট শিং কালো শক্ত মজবুত, অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। ঠোঁটের গোড়া এবং মুখের কিনার হলদে। পা সাদা-বাদামি পালকে আবৃত। পা ও পায়ের পাতা হলুদ, নখ কালো। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম হলেও স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য বড়। প্রধান খাবার: মাছ, সাপ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, ইঁদুর, সরীসৃপ, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ছোট পাখি। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট। বাসা বাঁধে বড় গাছের উঁচু ডালে। ডালপালা দিয়ে বড়সড়ো অগোছালো বাসা বানায়। এক বাসায় বহু বছর যাবত ডিম বাচ্চা তোলে। ডিম পাড়ে ১-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৪০-৪৫ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৫৫-৬৫ দিন। প্রজননক্ষম হতে সময় লাগে ৪-৫ বছর। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 02/03/2018
পাতি চখাচখি | Common Shelduck | Tadorna tadorna
পাতি চখাচখি | ছবি: ইন্টারনেট উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপের বহু দেশেই বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। এছাড়াও ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, চীন, তিব্বত, জাপান, মালয়েশিয়া, ইরান ও ইরাকে দেখা যায়। বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও সুলভ দর্শন। দর্শনীয় চেহারাও বটে। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। দেশের প্রায় বিভাগেরই নদ-নদীতে কম-বেশি বিচরণ করে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার সদ্য জেগে ওঠা চরাঞ্চলে কিংবা মোহনাতে বেশি পরিলক্ষিত হয়। খাদ্যের সন্ধানে বড় বড় দলে বিচরণ করে অগভীর জলাশয়ে। শিকার কৌশল দেশীয় গোত্রের পাতি হাঁসের মতো। সাধারণত এরা নিরীহ গোত্রের পাখি। নিজেদের মধ্যেও কোনো ধরনের কলহ-বিবাদ ঘটায় না। বলা যায় সারাদিন চুপচাপ কাটিয়ে দেয়। পুরুষ পাখি পারতপক্ষে তেমন ডাকাডাকিও করে না। স্ত্রী পাখির মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে কালেভদ্রে নিচু গলায় শিস কাটে। সঙ্গী জবাব দেয় তখন ‘গ্যাগ-গ্যা-গ্যা’ সুরে। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। শিকারি দ্বারা নির্যাতিত হওয়া সত্ত্বেও প্রজাতিটি দেশে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমরা আরেকটু সদয় হলে বোধ করি এদের আগমন আরো বেশি বেশি ঘটবে দেশে। পাখির বাংলা নাম: ‘পাতি চখাচখি’, ইংরেজি নাম: ‘কমন শেল ডাক’ (Common Shelduck), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘টাডোর্না টাডোর্না’, (Tadorna tadorna) গোত্রের নাম: ‘আনাটিদি’। অনেকে ‘শাহ চখা বা সাচ্কা’ নামেও ডাকে। দেশে দুই প্রজাতির চখাচখি নজরে পড়ে। যথা: খয়রা চখাচখি ও পাতি চখাচখি। এরা লম্বায় ৫৮-৬৭ সেন্টিমিটার। ওজন ১ কেজি। কপাল, মাথা ও গলা ধাতব সবুজ। ঠোঁট রক্ত লাল, গোড়া স্ফীত লাল পুঁটলি। বুক ও ঘাড়ে সাদার ওপর পাটকিলে চওড়া বন্ধনী। পিঠ ধবধবে সাদা। ডানা কুচকুচে কালো। লেজ ও কোমর সাদা। দেহতল ধবধবে সাদা। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা মেটে-লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি চেহারা ও আকার ভিন্ন। পুরুষের চেয়ে স্ত্রী পাখি খানিকটা ছোট। এ ছাড়াও স্ত্রী পাখির বুকে পাটকিলে বর্ণের প্রান্তটা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে মাথার তালু, গলার পেছন ও পিট কালচে-বাদামি। প্রধান খাবার: জলজ কীট, ছোট শামুক, চিংড়ি, ধান, শৈবাল, কেঁচো, সরীসৃপ ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মে-জুন। মধ্য এশিয়ার পাহাড়ের খাড়া দেয়ালে প্রাকৃতিক ফাটলে কিংবা মাটির প্রাকৃতিক গর্তে পালক দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৬-১০টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 18/04/2014
বালি নাকুটি | Sand Martin | Riparia riparia
বালি নাকুটি | ছবি: ইন্টারনেট ভারতীয় উপমহাদেশে শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। দেখতে হুবহু ‘সাদামাটা নাকুটি’র মতো। তবে এদের চেহারায় সাদার উপস্থিতি কিছুটা কম। উভয় প্রজাতিরই চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। বিচরণ করে ঝাঁকে ঝাঁকে। বাসাও বাঁধে দলবদ্ধ হয়ে। টানেল আকৃতির বাসা বানায়। পাহাড়, নদ-নদীর পাড়ে মাটির খাড়া দেওয়ালে নিজেরা গর্ত খুঁড়ে ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার টানেল বানিয়ে বাসা বাঁধে। কণ্ঠস্বর কর্কশ। দলের সবাই একসঙ্গে ধাতব কণ্ঠে ডাকতে থাকে। ডাক শুনলে দূর থেকে মনে হয় বুঝি ওরা ঝগড়ায় লিপ্ত। অস্থিরমতির পাখি। উড়ন্ত পতঙ্গ শিকার করে। সারাদিন বিরতিহীন ওড়াউড়ি করে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, পূর্বচীন, উত্তর এশিয়া, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত। পাখির বাংলা নাম: ‘বালি নাকুটি’, ইংরেজি নাম: ‘স্যান্ড মার্টিন’ (Sand Martin), বৈজ্ঞানিক নাম: Riparia riparia | প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১২ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা অভিন্ন। কপাল সাদাটে বাদামি। মাথা, ঘাড় ও পিঠ ধূসর বাদামি। ডানা ও লেজ কালচে বাদামি। লম্বা ডানা, লেজের শেষ প্রান্তে মিশেছে। উড়ন্ত অবস্থায় লেজ মাছের লেজের মতো দেখায়। গলা সাদা। বুক বাদামি সাদার মিশ্রণ। বুকের নিচ থেকে বাদবাকি সাদা। চোখ বাদামি। ঠোঁট খাটো, কালো। পা কালো, নখ বড় বড়। প্রধান খাবার: উড়ন্ত পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। কলোনি টাইপ বাসা। গর্তে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ফোটে ১৩-১৪ দিনে। শাবক স্বাবলম্বী হতে সপ্তাহ তিনেক লেগে যায়। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 01/12/2017
গোলাপি কাঠশালিক | Rosy starling | Strunus roseus
গোলাপি কাঠশালিক | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন পরিযায়ী পাখি। মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে। তবে যেখানে সেখানে দেখা যায় না। দেখা মেলে সিলেটের বনাঞ্চল এবং সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চলে। দেখা মেলে দীপাঞ্চলেও। আইইউসিএন এই প্রজাতির পাখিকে বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। এরা বিচরণ করে স্যাঁতসেঁতে তৃণভূমিতে। কাঁটা ঝোপ কিংবা ছোট ফল গাছেও বসতে দেখা যায়। বিচরণ করে একাকী কিংবা ছোট দলেও। দেখতে অনেকটাই ভাত শালিক কিংবা ঝুঁটি শালিকের মতো। সাধারণের ধারণা এরা বুনো ময়না। অনেকে তাই ‘লাল ময়না’ নামেও চেনে। এরা ডাকে ‘চিক-ইক-ইক-ইক’ ধ্বনিতে। পাখির বাংলা নাম: ‘গোলাপি কাঠশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘রোজি স্টার্লিং’, (Rosy starling), বৈজ্ঞানিক নাম: Strunus roseus | গোত্রের নাম: ‘স্টুরনিদি’। এরা ‘গোলাপি শালিক’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড়, গলা, ডানা ও লেজ কালো। পিঠ, বুক এবং লেজের নিচের গোড়া পর্যন্ত হালকা গোলাপি। ঠোঁট ও পা ফিকে গোলাপি। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম মনে হলেও প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রং বদলায়। এ সময় পুরুষ পাখির গায়ের রং চকচকে গোলাপি দেখায়। মাথার ঝুঁটিও খানিকটা বেড়ে ওঠে। যুবাদের তুলনায় প্রাপ্তবয়স্কদের রং তুলনামূলক উজ্জ্বল। প্রধান খাবার: পোকামাকড় হলেও ছোট ফল, ফুলের মধু ও শস্যবীজে ভাগ বসায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। বাসা বাঁধে খাড়া মাটির দেয়ালে। বিশেষ করে উঁচু পাহাড়ের গায়ে গর্ত করে বাসা বানায়। দলের অনেকে মিলে কলোনি টাইপ বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। প্রকৃতির এক বর্ণিল প্রজাতি এই পাখি, যাদের জীবন প্রক্রিয়াও বেশ বর্ণাঢ্য। এদের রক্ষায় কী কোনো উদ্যোগ নেবে পাখিপ্রেমীরা? লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 01/06/2018
নলঘোঙ্গা | Cinnamon bittern | Ixobrychus cinnamomeus
নলঘোঙ্গা | ছবি: ইন্টারনেট এ পাখির দেখা আজকাল খুব কমই মেলে আমাদের দেশে। খাদ্যের নিশ্চয়তা থাকলেও প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ সংকটের কারণে বংশ বিস্তার ব্যাহত হচ্ছে। ফলে অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে এ প্রজাতির পাখি। নির্জনতা প্রিয় এ পাখি সব সময় লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে পছন্দ করে। নলবন কিংবা জলাশয়ের পাশের ঝোপ-জঙ্গলে একাকী বসে শরীরটাকে প্রকৃতির সঙ্গে মিশিয়ে রাখে এরা। তবে সুযোগ পেলে বা পরিবেশ অনুকূলে থাকলে শিকারের নেশায় ধান ক্ষেতের আইলে বসে মাছ কিংবা ব্যাঙাচি শিকার করতে দ্বিধাবোধ করে না। সুন্দর এ পাখির বাংলা নাম:‘নলঘোঙ্গা’, ইংরেজি নাম:‘সিন্নামন বিটার্ন বা চেষ্টনাট বিটার্ন’(Cinnamon bittern or Chestnut bittern), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘ইক্সোব্রাইকাস সিন্নামোমেয়াস’ (Ixobrychus cinnamomeus), গোত্রের নাম: ‘আরডিদি’। লাল বক নামেও পরিচিত। বক প্রজাতির পাখিদের মধ্যে আকারে খানিকটা ছোট এ পাখি। নলঘোঙ্গা লম্বায় ৩৮-৪০ সেন্টিমিটার। গায়ের রঙ বাদামি-লালচে। গলা ও পেট হালকা লাল। গলার মাঝ বরাবর গাঢ় ডোরাদাগ গিয়ে ঠেকেছে ঘাড় পর্যন্ত। বুকের সামনের ভাগ লালচে কালো মেশানো। তলা ফিকে এবং ডোরাকাটা। শক্ত, মজবুত ঠোঁটের গোড়াটা হলুদ, অগ্রভাগ কালো। পা ও আঙ্গুল হলদে সবুজ। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম মনে হলেও সামান্য পার্থক্য রয়েছে। সূক্ষ্ম পার্থক্যটুকু হচ্ছে, স্ত্রী পাখির পিঠের বর্ণ পুরুষের তুলনায় হালকা ফিকে। নলঘোঙ্গা পাখির প্রধান খাদ্য মাছ, ছোট ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড়। প্রজনন সময় বর্ষা থেকে শরৎকাল। নলবন কিংবা জলাশয়ের কাছে ঘাসবনে অথবা কচুরিপানার ঘনপাতার আড়ালে বাসা বাঁধে। বাসা বানাতে ব্যবহার করে যৎসামান্য লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১-২৩ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 19/04/2013
পাহাড়ি টুনটুনি | Mountain Tailorbird | Orthotomus cuculatus
পাহাড়ি টুনটুনি | ছবি: ইন্টারনেট পরিচিত প্রজাতির ‘টুনটুনি’ পাখির মতো যত্রতত্র এদের দেখা মেলে না। কেবলমাত্র দেখা মেলে ক্রান্তীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বনে এবং ক্রান্তীয় আর্দ্র পার্বত্য অরণ্যে। পাহাড়ি চিরসবুজ বনের বৃক্ষতলে লতাগুল্মের ঝোঁপে এবং বাঁশবনে বিচরণ করে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, মিয়ানমার, চীন, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড পর্যন্ত। এদের মায়াবী চেহারা। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। স্থিরতা নেই খুব একটা। যেন একদণ্ড বসার সুযোগ নেই কোথাও। এই আছে তো এই নেই। তবে যেখানেই থাকুক না কেন এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকতে পছন্দ করে। জোড়ের পাখিটি সামান্য দূরে থাকলেও ডাকাডাকি করে ভাবের আদান-প্রদান চালিয়ে নেয়। সারাদিন নেচে-গেয়ে সময় কাটায়। লেজ উঁচিয়ে নাচে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি নানা কসরত দেখায় স্ত্রী পাখির মন ভোলানোর জন্য। বাসা বাঁধে মাটির কাছাকাছি গাছের ডালে। বেশ পরিপাটি বাসা। দুটি পাতাকে একত্রিত করে ঠোঁট দিয়ে সেলাই করে বাসা বাঁধে। অনেকটা দর্জির কাপড় সেলাই করার মতো। পাখির বাংলা নাম: ‘পাহাড়ি টুনটুনি’, ইংরেজি নাম: মাউন্টেন টেইলরবার্ড (Mountain Tailorbird), বৈজ্ঞানিক নাম: Orthotomus cuculatus | এরা ‘সোনালি মাথা টুনি’ নামেও পরিচিত। এরা দৈর্ঘ্য ১০-১২ সেন্টিমিটার। ওজন ৬-৭ গ্রাম। কপাল লালচে। মাথা সোনালি রঙের। ঘাড় গাঢ় ধূসর। পিঠ জলপাই-সবুজ। লেজ ও ডানা লালচে। চোখের ওপরে সাদা-হলদে টান। গলা ও বুক ধূসর। পেট ও লেজতল উজ্জ্বল হলুদ। ঠোঁট দু’পাটি ভিন্ন রঙের। ওপরের অংশ কালো, নিচের ঠোঁট কমলা রঙের হলেও গোড়া শিঙকালো। চোখ বাদামি-কালো। পা ও পায়ের পাতা মেটে-বাদামি। স্ত্রী পাখির বর্ণে সামান্য তফাৎ রয়েছে। ওদের বুকে কালো রেখার উপস্থিতি নেই। প্রধান খাবার: পোকামাকড় বা কীট পতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম মে-জুলাই সেপ্টেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে মাটির কাছাকাছি গাছের ডালে পাতা সেলাই করে। সেলাই করা বাসার ভেতর নরম তন্তু বা তুলা দিয়ে পরিপাটি করে নেয়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 29/04/2016
বেঘবৌ | Lineated barbet | Megalaima lineata
বেঘবৌ | ছবি: ইন্টারনেট আমাদের দেশীয় পাখি এরা। দেশের গ্রামে-গঞ্জে এমনকি শহরেও এদের দেখা যায়। ঢাকা শহরেও এ পাখির বিচরণ রয়েছে। তবে এরা বেশিরভাগই জোড়ায় জোড়ায় থাকে। এলাকাভেদে সাধারণত এক বা দু’জোড়ার বেশি থাকে না। পশ্চিমবঙ্গেও এদের দেখা যায়। এরা ‘বসন্ত বাউরি’ পাখির জ্ঞাতি ভাই। চেহারা-সুরতও অনেকটা তেমনই। আচার-আচরণেও মিল রয়েছে বেশ খানিকটা। ডাকে ‘ক্রুয়ো-ক্রুয়ো-ক্রুয়ো’ সুরে। অনেক দূর থেকে আওয়াজটা শোনা যায়। সুরটা শুনতে মন্দ লাগে না; আর্তনাদের মতো কানে বাজে। আমি প্রথম দেখেছি মুন্সীগঞ্জ জেলার নগর কসবা এলাকায় বছর দশেক আগে। পাখিটাকে প্রথম দেখায় বসন্ত বাউরি ভেবে ভুল করেছি। দেখেছি একটা মরা গাছের খোড়লের ভেতর। মাথাটা সামান্য বের করে রেখেছে। অনেকটাই সাপের মাথার মতো লেগেছে দেখতে। ভয়ও পেয়েছি সামান্য। ভয়ের কারণ ছিল ওর বড় বড় চোখ দুটি। খোড়লের ভেতর থেকে মাথাটা ঘুরিয়ে আগে চারপাশটা দেখে নিয়েছে সে। আশপাশ নিরাপদ মনে হতেই লাফিয়ে সামনের ডালে বসেছে। ওই পাখিটা বের হতেই পেছন দিয়ে অন্য পাখিটি খোড়লে ঢুকে পড়েছে। বুঝতে পেরেছি, ডিমে তা দিতেই পালা করে ওরা খোড়লে ঢুকেছে। তখনো যে ডিম ফোটেনি, তা নিশ্চিত হয়েছি দু’ঠোঁটের ফাঁকে খাবার জাতীয় কিছু না দেখে। শাবক থাকলে অবশ্য খাবার নিয়েই কোটরে প্রবেশ করতে হতো। ওদের সেদিন দীর্ঘক্ষণ লাগিয়েই পর্যবেক্ষণ করেছি। যতদূর দেখেছি ওরা উড়তে তেমন পারদর্শী নয়। ডানা ঝাপটে এক গাছ থেকে অন্য গাছে গেলেও মনে হচ্ছে বুঝি নিচে পড়ে যাচ্ছে। অথবা পড়তে পড়তে গিয়ে অন্য গাছের ডালে বসছে। আমি আড়ালে দাঁড়িয়ে দুর্লভ কিছু দৃশ্য ভিডিও করেছিÑযা পরে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে কাজে দিতে পারে। পাখিটার বাংলা নাম: বেঘবৌ, ইংরেজি নাম: লাইনিয়েটেড বারবেট (Lineated barbet), বৈজ্ঞানিক নাম: মেগালাইমা লিনিয়েটা (Megalaima lineata)। এদের আরেক নাম ‘গোরখুদ’। এ পাখি লম্বায় ২৭-২৮ সেন্টিমিটার। এদের পিঠ, ডানা থেকে লেজ পর্যন্ত ঘাড় সবুজ বর্ণ। মাথা, ঘাড়, বুকের শেষাংশ পর্যন্ত খাড়া বাদামি ডোরা, যা থেকে হলুদের আভা বের হয়। চোখ বড়। চোখের বলয় হলুদ। চঞ্চু মোটা মজবুত, ধারালো। চঞ্চুর গোড়ায় ক’টি খাড়া লোম রয়েছে। পা হলুদ। বেঘবৌদের প্রিয় খাবার যে কোনো ধরনের ছোট রসালো ফল। তবে আতা, কামরাঙ্গা, নুন ফলের প্রতি অসক্তি বেশি। খাদ্য সংকটে এদের টমেটো খেতেও দেখা যায়। সুযোগ পেলে বেঘবৌ খেজুরের রসেও ভাগ বসায়। প্রজনন সময় গ্রীষ্মকাল। এরা নিজেরাই মরা গাছের গায়ে খোড়ল বানিয়ে বাসা বাঁধে। অনেক সময় যৎসামান্য খড়কুটা খোড়লের ঢুকিয়ে বাসাটাকে আরামদায়ক করে নেয়। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 28/12/2012