কালি ময়ূর | Kalij pheasant | Lophura leucomelanos
কালি ময়ূর | ছবি: ইন্টারনেট প্রায় সাড়ে তিন যুগ আগেও আমাদের দেশের গহিন জঙ্গলগুলোতে এ পাখির প্রচুর বিস্তৃতি ছিল। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, শ্রীমঙ্গলের চা বাগানে স্থায়ী বাসিন্দা ছিল এরা। আমাদের দেশের পাখি বিশারদরা জানিয়েছেন, কয়েক যুগ আগেও মধুপুরের শালবনে পাওয়া যেত এই পাখি। এখন আর নজরেই পড়ে না। শিকারিদের দৌরাত্বে পাখিটি শালবন থেকে হারিয়ে গেছে। এখন শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং শ্রীমঙ্গলের চা বাগানে কালেভদ্রে নজরে পড়ে। আমি বছর দশেক আগে প্রথম এ পাখিটি দেখি পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরসবুজ অরণ্যে। তবে সংখ্যায় খুব বেশি ছিল না। মাত্র দুটি পাখি দেখেছি সেদিন। মোরগাকৃতির এ পাখি দুটিকে দেখে সেদিন ভীষণ মুগ্ধ হয়েছি। স্থানীয় লোকজনের কাছে পাখিটার নাম জানতে চেয়েছি। তারা জানিয়েছেন এগুলোর নাম ‘কালা মুরকা।’ এ-ও জানিয়েছেন তারা জঙ্গলের আশপাশে এ পাখি শিকার করতে ওঁৎ পেতে থাকেন। এগুলো খুব ভোরে ও সূর্যাস্তের সামান্য আগে জঙ্গল থেকে ফাঁকা স্থানে বেরিয়ে আসে। সে সুযোগে শিকারিরা এগুলোকে শিকার করে। এই পাখির মাংস পাহাড়িদের কাছে বেশ প্রিয়। বাংলায় এই পাখির কোনো নাম নেই। আমাদের দেশের পাখি গবেষকরা এর নাম দিয়েছেন ‘কালি ময়ূর।’ নামটি বেশ মানানসই বলা যায়। ইংরেজি নাম: ‘কালিজ ফেজেন্ট’, (Kalij pheasant) বৈজ্ঞানিক নাম: ‘লোফুরা লিউকোমেলানোস’, (Lophura leucomelanos) গোত্র: ‘ফাজিয়ানিদি’। কালি ময়ূর স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম মনে হলেও সামান্য পার্থক্য রয়েছে যা পাখি বিশারদের নজর এড়াতে পারবে না। তবে সাধারণের চোখে পার্থক্যটা সহজে ধরা পড়বে না। পার্থক্যটা হচ্ছে, পুরুষ পাখি লম্বায় ৬৫-৭৫ সেন্টিমিটার, স্ত্রী পাখি ৫০-৬০ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির শরীরের ওপরের দিকটার পালক চকচকে কালোর সঙ্গে ধাতব মিশ্রণ। নিুাংশ সাদাটে। চোখের চারপাশটা ও লতিকা টকটকে লাল। স্ত্রী কালি ময়ূর দেখতে হালকা বাদামি তবে কোনো কোনো অংশে গাঢ় বাদামি। ঝুঁটি বাদামি রংয়ের এবং লেজটা কাস্তের মতো বাঁকানো। দেখতে বেশ চমৎকার। কালি ময়ূরদের কণ্ঠস্বর বিশ্রী। উচ্চৈঃস্বরে ডাকলে ‘চিরপ..চিরপ’ শব্দ শোনা যায়। আর স্বাভাবিক স্বরে ডাকলে ‘কুরচি…কুরচি’ শব্দ করে। দেখতে হিংস্র মনে হলেও আসলে এরা খুবই ভীরু প্রকৃতির পাখি। কালি ময়ূরের খাদ্য তালিকায় রয়েছে শস্যদানা, শস্যের কচি ডগা, কীটপতঙ্গ, ছোট সরীসৃপ ইত্যাদি। এরা বন মোরগের মতো মাটি আঁচড়ে পোকামাকড় খোঁজে। এদের প্রজননের সময় মার্চ থেকে অক্টোবর। মাটির ওপরে ঘাস কিংবা শুকনো লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২০-২২ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 19/09/2012
ধলাগলা বাতাই | White cheeked Partridge | Arborophila atrogularis
ধলাগলা বাতাই | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন আবাসিক পাখি। দেখতে অনেকটাই কোয়েলের মতো। তবে প্রজাতিভেদে ভিন্ন। দেশের সর্বত্র দেখার নজির নেই। কেবল বৃহত্তর সিলেট জেলার চিরসবুজ অরণ্যে দেখা মেলে। একসময় চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরসবুজ অরণ্যে বিচরণ ছিল। দেখা যেত ওদের প্রিয় বিচরণ স্থান বাঁশবনে। সিলেট অঞ্চলের চিরসবুজ বনের ঝোপঝাড়ে ছোট দলে হেঁটে বেড়ায় এখনো। তবে সংখ্যায় খুবই কম। খাদ্যের সন্ধানে বেশিরভাগই খোলামাঠে বিচরণ করে। খাবার সংগ্রহ করে লতাপাতা উল্টিয়ে। চলাফেরায় খুব হুঁশিয়ারি ভাব লক্ষ্য করা যায়। সামান্য ভয় পেলে দৌড়ে ঝরা পাতার নিচে লুকিয়ে পড়ে। শুকনো পাতার সঙ্গে দেহের বর্ণ একাকার হয়ে যাওয়ায় দূর থেকে চেনার উপায় থাকে না। মন ভালো থাকলে গোধূলিলগ্নে ‘হুইও-হুইও’ সুরে গান গায়। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রজাতিটির যৎসামান্য সাক্ষাৎ মেলে ভারত, মিয়ানমার ও চীনে। এরা বিশ্বে বিপদগ্রস্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। আমাদের দেশে এ প্রজাতির পাখিগুলো সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয় বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ায় এমন মানুষের হাতে। বিশেষ করে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের লোকরা এদের বিভিন্ন কৌশলে শিকার করে। এ ছাড়াও প্রকৃতিতে এদের প্রধান শত্র“ হচ্ছে বেজি। আড়ালে আবডালে ঘাপটি মেরে থেকে হঠাৎ করে এদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কামড়িয়ে মাথাটা আলাদা করে ফেলে। এভাবে অপঘাতে প্রাণ হারিয়ে কোনো রকম অস্তিত্ব নিয়ে টিকে আছে প্রজাতিটি। প্রজাতিটির প্রতি সহানুভূতি না দেখাতে পারলে যে কোনো সময় এরা আমাদের দেশ থেকে বিলীন হয়ে যেতে পারে। সিলেট অঞ্চলের প্রিয় পাঠক ভাইদের প্রতি অনুরোধ রইল এদের বাঁচিয়ে রাখার। পাখির বাংলা নাম: ‘ধলাগলা বাতাই’, ইংরেজি নাম: হোয়াইট-চিকেড পারট্রিজ (White-cheeked Partridge), বৈজ্ঞানিক নাম: Arborophila atrogularis | লম্বায় ২৮ সেন্টিমিটার। ওজন ২২৫ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কপাল ধূসর। মাথার তালু বাদামি। ঘাড়ের পালকে রয়েছে কমলা-হলুদের মিশ্রণ। পিঠের কালো দাগে রয়েছে হালকা বাদামির মিশ্রণ। চোখের পাশে কালো ডোরা। মণি লালচে বাদামি। গলা সাদা। কাঁধ কালো-লালচে ডোরা। বুক ধূসর। তলপেট কালো। লেজের তলা সাদা। পুরুষ পাখির ঠোঁট কালো। পা ও পায়ের পাতা হালকা গোলাপি। প্রধান খাবার: পোকামাকাড়, রসালো ফল, ছোট শামুক ও শস্যবীজ। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। বাসা বাঁধে ঝোপ-জঙ্গলের ভেতর মাটির গর্তে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৬-১৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 07/03/2014
কোকিল | Asian Cuckoo | Eudynamys scolopaceus
কোকিল | ছবি: ইন্টারনেট আদতেই এ পাখি এতটা ভদ্র নয়। বড়রা মোটামুটি ধাড়িবাজ। ধূর্ত কাকের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওদের বাসায় ডিম পেড়ে নিজের বংশ বৃদ্ধি ঘটায়। ‘সুসময়ের বন্ধু’ পাখি নামে পরিচিত, বলা হয় বসন্তের দূতও। বসন্তকালে লোকালয়ে চলে আসে ওরা। পুরুষ পাখি ‘কুহু-কুহু-কুহু’ ডেকে মানুষের মন মাতিয়ে তোলে। সুরে এক ধরনের মাদকতা রয়েছে। স্ত্রী পাখির কণ্ঠ তত সুরেলা নয়। কর্কশ। ডাকে ‘খিক্-খিক্-খিক্’ স্বরে। বৃক্ষচারী পাখি এরা। পারতপক্ষে ভূমি স্পর্শ করে না। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। গায়ে পড়ে কারো সঙ্গে বিবাদ বাধায় না। এ পাখির বাংলা নাম: ‘কোকিল বা কুলি’| ইংরেজি নাম: ‘এশিয়ান কুক্কু’ (Asian Cuckoo)| বৈজ্ঞানিক নাম: (Eudynamys scolopaceus), গোত্রের নাম: ‘কুকুলিদি’। এরা লম্বায় ৩৯-৪৬ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির বর্ণ কুচকুচে কালো হলেও উজ্জ্বল সবুজের আভা বের হয় শরীর থেকে। চোখের তারা টকটকে লাল (কাক-কোকিলের মধ্যে বড় তফাত এটি)। স্ত্রী পাখির বর্ণ কালোর ওপর বাদামি ফোঁটাযুক্ত। সমস্ত পিঠে অসংখ্য বাদামি ফোঁটা। এদের নিচের দিকটা সাদাটে বর্ণের ওপর বাদামি ফোঁটা। লেজের ওপর সাদা ফোঁটার সঙ্গে স্পষ্ট ডোরাদাগ। উভয় পাখির ঠোঁট নীলচে-সবুজ এবং পা পায়ের পাতা কালচে। কোকিলের প্রিয় খাবার ফল-ফলাদি। ফুলের মধু, খেজুরের রস এবং কীটপতঙ্গেও ভাগ বসায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না বিধায় পরের বাসায় ডিম পাড়ে। বিশেষ করে কাক, সাতভায়লা পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ১-২টি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
শিয়ালে কীট কুড়ানি | Chestnut bellied Nuthatch | Sitta castanea
শিয়ালে কীট কুড়ানি | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না, বিরল দর্শন। পার্বত্য চট্টগ্রামে যৎসামান্য দেখা যেতে পারে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল ক্রান্তীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বন, ক্রান্তীয় পার্বত্য অরণ্য, খোলা পর্ণমোচী বন। শালবন বেশি পছন্দের। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। হিংস নয়। স্বভাবে অত্যন্ত চঞ্চল। কাঠঠোকরা পাখিদের মতো গাছের খাড়া কাণ্ডে খুব দ্রুত হেঁটে উঠতে পারে। নিমেষেই গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে কীট-পতঙ্গ খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে যায়। হয়তো এ জন্যই এদের নামকরণ হয় ‘কীট-কুড়ানি’। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, তিব্বত, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। এরা বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘শিয়ালে কীট-কুড়ানি’, ইংরেজি নাম: ‘চেস্টনাট বেলিড নাটহ্যাচ’ (Chestnut-bellied Nuthatch), বৈজ্ঞানিক নাম: Sitta castanea | এরা ‘খয়রাপেট বনমালী’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি গড় দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৯ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য আছে। কপাল ও ঘাড় রূপালী-ধূসর। পিঠ ধূসর। লেজ খাটো, কালো-ধূসর। মাথার দু’পাশ দিয়ে কালোটান ঘাড়ের কাছে পৌঁছে নিচে নেমেছে। ডানার প্রান্ত পালক কালচে-ধূসর। দেহতল শিয়ালে রঙের অথবা খয়েরি। ঠোঁট কালচে। পা ধূসর-কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথা, পিঠ ও লেজ বাদামি ধূসর। দেহতল হালকা খয়েরি। বাদবাকি একই রকম। প্রধান খাবার: কীট-পতঙ্গ, পোকামাকড়, মাকড়সা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে। শ্যাওলা, তন্তু, শুকনো ঘাস, পালক ইত্যাদি বাসা বানানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/03/2017
হলদে বক | Yellow Bittern | Ixobrychus sinensis
হলদে বক | ছবি: ইন্টারনেট জলচর পাখি। আকারে তেমন একটা বড় নয়। দেশের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও যত্রতত্র দেখা যায় না। সংখ্যায় অপ্রতুল, তার ওপর স্বভাবে লাজুক। লুকিয়ে-চুকিয়ে থাকে কচুরিপানা, ঢোলকলমি, নলবন, ধানক্ষেত কিংবা জলার ধারের ঝোপজঙ্গলে। দেখতে কিছুটা কানি বকের মতো মনে হলেও এদের গায়ের রঙ ভিন্ন। গায়ের রঙের সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশের মিল থাকার দরুন খুব সহজে এরা ঝোপজঙ্গলের ভেতর লুকাতে সক্ষম হয়। বিচরণ করে একাকী। স্থান পরিবর্তনের সময় ‘কেকের-কেকের বা কাকাক-কাকাক’ স্বরে ডেকে ওঠে। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রজাতির দেখা মেলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। সংখ্যায় স্থিতিশীল বিধায় বিশ্বে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেনি ‘হলদে বক’ এখনো। যার ফলে আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘হলদে বক’, ইংরেজি নাম: ‘ইয়েলো বিটার্ন’ (Yellow Bittern), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘ইক্সোব্রাইকাস সিনেনসিস’ (Ixobrychus sinensis)। হলদে বক লম্বায় ৩৬-৩৮ সেন্টিমিটার। গলা খয়েরি, আকারে খাটো। ঠোঁট লম্বা, শক্ত মজবুত ও ধারালো। চোখের বলয় হলুদ, মণি কালো। পুরুষ পাখির মাথায় কালো টুপি। দেহের উপরের দিক হলুদ বাদামি। নিচের দিকটা হালকা হলুদ। ডানার পালক হলুদাভ বাদামি হলেও ডানার প্রান্তের পালক কালো। পিঠ গাঢ় বাদামি। ওড়ার পালক কালো। লেজের পালক কালচে। স্ত্রী পাখির মাথায় লালচে বাদামি রেখাযুক্ত পালকে আবৃত। উভয়ের পা ও পায়ের পাতা হলদে-সবুজ। শাবক দেখতে মায়ের মতো হলেও দেহের নিচের দিকে বাদামি রেখা বেশি দেখা যায়। প্রধান খাবার: ছোট মাছ ও জলজ কীটপতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম জুন থেকে সেপ্টেম্বর। জলাশয় সংলগ্ন ঝোপজঙ্গল, কচুরিপানা কিংবা ধানগাছের আড়ালে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 29/08/2014
কালো ঝুঁটি শালিক | Pale bellied Myna | Acridotheres cinereus
কালো ঝুঁটি শালিক | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। গ্রাম-গঞ্জে দেখা মেলে। হুবহু ঝুঁটি শালিকের মতো দেখতে। শুধু গায়ের রঙে পার্থক্য। আকার আকৃতি ঝুঁটি শালিকের মতো। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। চাষাবাদ চলছে এমন ক্ষেত-খামারে বিচরণ খানিকটা বেশি। এ ছাড়াও মুক্ত এলাকায় নজরে পড়ে। গবাদিপশুর পিঠে চড়ে পোকামাকড় খেতে দেখা যায়। বেশির ভাগই জোড়ায় দেখা যায়। দেখা যায় একাকী কিংবা ছোট দলেও। নজরে পড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায়ও। কণ্ঠস্বর কর্কশ। ঝগড়াটে স্বভাবের হলেও হিংস নয়। ভালো পোষ মানে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। এ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, পূর্ব তিমুর পর্যন্ত বিস্তৃতি রয়েছে। দেশে খুব বেশি নজরে না পড়লেও বিশ্বব্যাপী হুমকি নয় এরা। পাখির বাংলা নাম: ‘কালো ঝুঁটি শালিক’, ইংরেজি নাম: ‘পেল-বেলিড ময়না’ (Pale-bellied Myna), বৈজ্ঞানিক নাম: Acridotheres cinereus| এ ছাড়াও এরা ‘ধলাতলা শালিক’ ও ‘ধূসরপেট ঝুঁটি শালিক’ নামে পরিচিত। দেশে মোট ১১ প্রজাতির শালিক দেখা যায়। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। কপাল, মাথার তালু থেকে ঘাড়ের ওপরের অংশ মসৃণ কালো। কপাল খাড়া। ঠোঁটের গোড়া থেকে খাড়া ঝুঁটি। গলা-ঘাড় কালো মিশ্রিত ধূসর। পিঠ ও কোমর ধূসর-সাদা। ডানার পালক কালো। লেজের মধ্যখানে কালো মোটা দাগ। লেজের প্রান্তর সাদা। দেহতল ধুসর সাদা। ঠোঁট হলুদ। চোখের বলয় হলুদ। পা উজ্জ্বল হলুদ। প্রধান খাবার: পোকা-মাকড়। এ ছাড়া শস্যদানাও খেতে দেখা যায়। ভাত, পাউরুটি এসবও খায়। প্রজনন সময় গ্রীষ্মকাল। নদী বা খালের খাড়া পাড়ে গর্ত করে বাসা বাঁধে। এ ছাড়াও দালান-কোঠা, পুরনো পুলের ফোঁকরে বাসা বাঁধে। শুকনো ঘাস লতাপাতা ঢুকিয়ে ডিম পাড়ার উপযোগী করে নেয়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/03/2017
ভাদি হাঁস | White winged Duck | Asarcornis scutulata
ভাদি হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি। কয়েক দশক আগেও পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরসবুজ বনের জলাশয়ে দেখা যেত। সম্প্রতি এ প্রজাতির পাখি কারো নজরেই পড়ে না। মূলত এরা ধীরগতির সে ললগ্নে জলাশয়ের ওপর নেমে আসে এবং সারারাত ধরে শিকারের লিপ্ত থাকে। ভোরের আলো প্রস্ফুটিত হলে পুনরায় গাছের ডালে আশ্রয় নেয়। বিশ্রামের ফাঁকে ফাঁকে পুরুষ পাখি ‘ক্রংক-ক্রংক’ স্বরে আওয়াজ করে। এ প্রজাতির সঙ্গে গৃহপালিত চীনা হাঁসের আকার-আকৃতি কিংবা বর্ণের মিল ব্যাপক। পাখিবিশারদ ব্যতিরেকে অন্য কারো পক্ষে প্রজাতি শনাক্তকরণ কঠিন বৈকি। বর্তমানে এদের বিস্তৃতি বিশ্বে সন্তোষজনক নয়, শুধু এশিয়ার কিছু অঞ্চল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। যতদূর জানা যায়, উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বভাগ পর্যন্ত বিস্তৃতি। বাংলাদেশে একেবারেই অনুপস্থিত এ প্রজাতির পাখি। প্রধান কারণ অবাধে বৃক্ষ নিধন। বিশেষ করে উঁচু গাছগাছালি বিলীন হওয়াতে এদের প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে। বিঘ্ন ঘটছে বিচরণেও। ফলে এরা আর এ দেশমুখী হচ্ছে না। বিশ্বে বিপন্ন ও বাংলাদেশে অতিবিপন্ন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে তাই। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত রয়েছে। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘ভাদি হাঁস’, ইংরেজি নাম: হোয়াইট-উয়িংড ডাক’ (White-winged Duck), বৈজ্ঞানিক নাম: Asarcornis scutulata | এরা লম্বায় ৮০-৮২ সেন্টিমিটার (ঠোঁট ৬ সে.মি লেজ ১৫ সে.মি)। ওজন প্রায় ৩ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ পাখির আকারে ও বর্ণে পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা ও ঘাড় সাদার ওপর ছোট ছোট কালো দাগ। কাঁধে সাদা পট্টি। পিঠ কালচের সঙ্গে তামাটের মিশ্রণ। ডানায় নীলাভ কালো বন্ধনী। ডানার কনুইয়ের প্রান্তে খাড়া নখর বিদ্যমান। স্ত্রী পাখি আকারে খানিকটা ছোট। দেহের পালক অনুজ্জ্বল। মাথায় ঘন কালো দাগ। ঠোঁট কমলা। পুরুষ পাখির ঠোঁটের গোড়ায় মাংসপিণ্ড স্ফীত রয়েছে। এটি প্রজনন মৌসুমে আরো স্ফীত হয়। পা ও পায়ের পাতা কমলা হলুদের মিশ্রণ। পায়ের পেছনের আঙুল সামান্য ছড়ানো। প্রধান খাবার: শামুক, ছোট মাছ, পোকামাকড় ও জলজ উদ্ভিদের কচিপাতা। প্রজনন সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। আম, উরি, সিভিট, ছুন্ডুল ইত্যাদি গাছের ৩০ মিটার উঁচুতে প্রাকৃতিক কোটরে ঘাস বা লতাপাতা দিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৭-১০টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 13/12/2013