কালো ঝুঁটি শালিক | Pale bellied Myna | Acridotheres cinereus
কালো ঝুঁটি শালিক | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। গ্রাম-গঞ্জে দেখা মেলে। হুবহু ঝুঁটি শালিকের মতো দেখতে। শুধু গায়ের রঙে পার্থক্য। আকার আকৃতি ঝুঁটি শালিকের মতো। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। চাষাবাদ চলছে এমন ক্ষেত-খামারে বিচরণ খানিকটা বেশি। এ ছাড়াও মুক্ত এলাকায় নজরে পড়ে। গবাদিপশুর পিঠে চড়ে পোকামাকড় খেতে দেখা যায়। বেশির ভাগই জোড়ায় দেখা যায়। দেখা যায় একাকী কিংবা ছোট দলেও। নজরে পড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায়ও। কণ্ঠস্বর কর্কশ। ঝগড়াটে স্বভাবের হলেও হিংস নয়। ভালো পোষ মানে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। এ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, পূর্ব তিমুর পর্যন্ত বিস্তৃতি রয়েছে। দেশে খুব বেশি নজরে না পড়লেও বিশ্বব্যাপী হুমকি নয় এরা। পাখির বাংলা নাম: ‘কালো ঝুঁটি শালিক’, ইংরেজি নাম: ‘পেল-বেলিড ময়না’ (Pale-bellied Myna), বৈজ্ঞানিক নাম: Acridotheres cinereus| এ ছাড়াও এরা ‘ধলাতলা শালিক’ ও ‘ধূসরপেট ঝুঁটি শালিক’ নামে পরিচিত। দেশে মোট ১১ প্রজাতির শালিক দেখা যায়। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। কপাল, মাথার তালু থেকে ঘাড়ের ওপরের অংশ মসৃণ কালো। কপাল খাড়া। ঠোঁটের গোড়া থেকে খাড়া ঝুঁটি। গলা-ঘাড় কালো মিশ্রিত ধূসর। পিঠ ও কোমর ধূসর-সাদা। ডানার পালক কালো। লেজের মধ্যখানে কালো মোটা দাগ। লেজের প্রান্তর সাদা। দেহতল ধুসর সাদা। ঠোঁট হলুদ। চোখের বলয় হলুদ। পা উজ্জ্বল হলুদ। প্রধান খাবার: পোকা-মাকড়। এ ছাড়া শস্যদানাও খেতে দেখা যায়। ভাত, পাউরুটি এসবও খায়। প্রজনন সময় গ্রীষ্মকাল। নদী বা খালের খাড়া পাড়ে গর্ত করে বাসা বাঁধে। এ ছাড়াও দালান-কোঠা, পুরনো পুলের ফোঁকরে বাসা বাঁধে। শুকনো ঘাস লতাপাতা ঢুকিয়ে ডিম পাড়ার উপযোগী করে নেয়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/03/2017
রাঙ্গামুড়ি | Red-crested pochard | Rhodonessa rufina
রাঙ্গামুড়ি | ছবি: ইন্টারনেট স্বভাবে লাজুক। ভীরু। বাস মধ্য এশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে। পরিযায়ী হয়ে আসে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। আমাদের দেশে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে হাওর অঞ্চলে সুলভ দর্শন ঘটে। এ সময় হাওরের ওপর দিয়ে এরা নিঃশব্দে ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ায়। উড়তে উড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়লে হাওরের আগাছাযুক্ত স্থানে লুকিয়ে শরীরটাকে চাঙ্গা করে নেয়। তার পর দল বেঁধে শিকারে বের হয়। জলে ডুব দিয়ে শিকার খোঁজে। জলের কীটপতঙ্গ, ঘাসবীজ এসব খায়। মাছের প্রতি আসক্তি নেই বললেই চলে। সামুদ্রিক অঞ্চল বা লবণ জল এড়িয়ে চলে। সুপেয় জলেই এদের বিচরণ। দেশে পরিযায়ী হয়ে আসা হাঁস প্রজাতির মধ্যে এরা সবচেয়ে বেশি সুন্দর পাখি। শীতে হাওর অঞ্চল মাতিয়ে রাখে। পাখি দেখিয়েদের প্রধান আকর্ষণ থাকে এদের দর্শন লাভ করা। আমাদের দেশে মোটামুটি সুলভ দর্শন ঘটে এদের। এক দশক আগের তুলনায় বর্তমান সময়ে এদের উপস্থিতি অনেকটাই কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরা এতই ভীরু যে, একবার কোনো ধরনের আক্রমণের শিকার হলে বা ভয় পেলে আর ওই এলাকায় সহসাই ভিড়ে না। আর সেই কাজটিই করছেন এতদাঞ্চলের শিকারিরা। শিকারিদের অত্যাচারে এরা খুবই অতিষ্ঠ। নিপীড়ন বন্ধ না হলে হয়তো একদিন এ দেশে আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে রাঙ্গামুড়ি পাখিদের। এ পাখির বাংলা নাম: ‘রাঙ্গামুড়ি’, ইংরেজি নাম: ‘রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড’ (Red-crested pochard), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘রোডোনেসা রুফিনা’ (Rhodonessa rufina), গোত্রের নাম : ‘আনাটিদি’। এরা রাঙাঝুঁটি হাঁস নামেও পরিচিত। লম্বায় ৫৩-৫৭ সেন্টিমিটার। ঠোঁট প্রবাল লাল। গোলগাল মাথায় কদমফুলের মতো খোঁচা পালক। ঘাড়ের ওপরের অংশ ও গলার ওপরের দিক শেয়াল-কমলা মিশ্রিত। ফলে দূর থেকে লালচে দেখায়। গলার নিচের দিক থেকে কালো। ডানার ওপরের দিক হাল্কা বাদামি। ডানা প্রসারিত করলে সাদা পট্টি নজরে পড়ে। দেহের দু’পাশ সাদা। পা-আঙুল কমলা হলুদ। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির মাথার পালক বাদামি-সোনালী-কমলা রঙ হয়। ওই সময় চোখ উজ্জ্বল লাল বর্ণ ধারণ করে। স্ত্রী পাখির ঠোঁট কালো। ওপরের দিক বাদামি। ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখের পাশ দিয়ে গাঢ় বাদামি রঙ মাথা ও ঘাড়ে গিয়ে ঠেকেছে। কপাল এবং গলা সাদা। ডানার ওপরটা সাদা, যা ওড়ার সময় নজরে পড়ে। খাদ্য হিসাবে এরা গ্রহণ করে জলজ পোকামাকড়, ঘাসবীজ ইত্যাদি। প্রজনন সময় বসন্তের শেষদিকে। জলাশয়ের পাশে ঘাসের ওপরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৮-১২টি। ডিম ফোটে ১৮-২০ দিনে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 14/08/2013
উদয়ী নিমপেঁচা | Oriental Scops Owl | Otus sunia
উদয়ী নিমপেঁচা | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন আবাসিক পাখি। দেখা যায় পর্ণমোচী এবং মিশ্র বনাঞ্চলে। চিরহরিৎ বন ওদের পছন্দের না হলেও কমবেশি নজরে পড়ে। কাছাকাছি জনবসতি আছে এমন বনভূমি বা ফলের বাগানে দেখা যায়। দেখতে ভয়ঙ্কর দর্শন। গোলাকার চোখ। মাথার দু’পাশে ঝুঁটি আকৃতির কান পশম রয়েছে। ওদের শারীরিক গঠনে যে কেউ ভয় পেতে পারেন। অবশ্য যে কোনো ধরনের পেঁচা দেখলে মানুষের ভেতর ভয় জাগতে পারে। ভয় পেতে পারেন ওদের গম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনেও। এদের বেলায়ও তদ্রুপ। আসলে এরা একেবারেই নিরীহ পাখি। অন্যসব শিকারি পাখিদের মতো মোটেও হিংস্র নয়। চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। চোখজোড়া প্রসারিত করে তাকায়। ভয় পাওয়ার অবশ্য এটিও একটি কারণ হতে পারে। আদতে এরা ভীতু প্রকৃতির নিশাচর পাখি। রাতের আঁধার ঘনিয়ে এলে ওরা শিকারে বের হয়। বনজ এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায় গাছের ডালে বসে থাকে। মাথা ঘুরিয়ে চারদিকে উড়ন্ত পোকামাকড়ের খোঁজখবর নেয়। খোঁজখবর নেয় ইঁদুর বা সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীরও। নাগালে ভেতর এলে কেবল ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারের ওপর। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘উদয়ী নিমপেঁচা’, ইংরেজি নাম: ‘ওরিয়েন্টাল স্কোপ আউল’ (Oriental Scops Owl), বৈজ্ঞানিক নাম: Otus sunia | এরা ‘কালোদাগবিশিষ্ট নিমপোখ’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৮-২১ সেন্টিমিটার। ওজন ৭৫-৯৫ গ্রাম। মাথা বড়সড়ো। মাথার দু’পাশে কান পশম রয়েছে, যা ঝুঁটির মতো দেখায়। পিঠ ধূসর বাদামি। তার ওপর রয়েছে সাদা ছোপ। দেহের নিচের দিকে রয়েছে সাদাটের ওপর ডোরা-রেখা। চোখের তারা উজ্জ্বল হলুদ। ঠোঁট খাটো, বাদামি রঙের। পায়ের আঙুল ফ্যাকাসে সাদাটে। পা পালকে আবৃত হলেও আঙুল পালকমুক্ত। স্ত্রী-পুরুষের চেহারায় তফাত নেই। প্রধান খাবার: পাহাড়ি কীটপতঙ্গ, গোবরে পোকা, ইঁদুর, টিকটিকিসহ অন্যান্য সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের লক্ষ্য করা যায়। মরা গাছের প্রাকৃতিক কোটরে ৩-৬টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৩-২৪ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে মাসখানেক লেগে যায়। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/11/2015
চিতিপেট হুতুমপেঁচা | Spot bellied eagle owl | Bubo nipalensis
চিতিপেট হুতুমপেঁচা | ছবি: ইন্টারনেট রাতচরা পাখি। আকারে বড়সড়ো। স্বভাবে হিংস ন বারবার। দিনের বেলায় গাছের পাতার আড়ালে বা বাঁশঝাড়ে লুকিয়ে থাকে। রাতে ‘হুহু… হুহু’ আওয়াজ করে মানুষের পিলে চমকে দেয়। প্রাকৃতিক আবাসস্থল ঘন চিরহরিৎ এবং আর্দ্র পর্ণমোচী বন, নদীর তীরবর্তী ঘন বন, পাহাড়ি অঞ্চল, হিমালয় অঞ্চলসহ ট্রপিকাল রেনফরেস্ট। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। বলা যায়, অঞ্চলভেদে বিরল দর্শন। পাখির বাংলা নাম: ‘চিতিপেট হুতুমপেঁচা’, ইংরেজি নাম: ‘স্পট-বেলিড ঈগল আউল’ (Spot-bellied Eagle Owl), বৈজ্ঞানিক নাম: Bubo nipalensis | এদের অন্য নাম ‘বুনো হুতুমপেঁচা’ (ফরেস্ট ঈগল আউল)। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ৫৮-৬৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৩.৭ পাউন্ড। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। মুখমণ্ডল গোলাকার। কান পশম আছে। মাথা ধূসর সাদার ওপর কালচে ফোঁটা। পিঠ হরিদ্রাভ বাদামি ওপর কালচে-বাদামি চিতি। ডানার পান্ত পালকে কালচে-বাদামি চিতি। দেহতলে ক্রিম সাদা চিতি। লেজ খাটো, কালচে বাদামি। লেজতলে সাদা-কালো ডোরা। খাটো ঠোঁট ক্রিম সাদা বড়শির মতো বাঁকানো। মার্বেলের মতো গোলাকার চোখ গাঢ় বাদামি রঙের। পা হলদে সাদা। পায়ের আঙ্গুল হরিদ্রাভ-ধূসর। পায়ে পশম আছে। প্রধান খাবার: সাপ, ইঁদুর, টিকটিকি, বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ, ছোট পাখি, মাছ ও গলিত মাংস। প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে গাছের প্রাকৃতিক কোটরে। ডিম পাড়ে ১টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 01/10/2016
সাদাটে মেঠো চিল | Pallid Harrier | Circus macrourus
সাদাটে মেঠো চিল | ছবি: ইন্টারনেট বিরল প্রজাতির ভবঘুরে পাখি। লম্বা পা, হলুদ গোলাকার চোখ ওদেরকে রাগী চেহারায় রূপ দিয়েছে। মূলত এরা হিংস্র নয়। বরং প্রজাতির অন্যদের তুলনায় দেখতে খানিকটা সুদর্শন। দেশে শীত মৌসুমে দেখা মেলে। উপমহাদেশীয় অঞ্চলে এরা মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত বিচরণ করে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। এছাড়াও মধ্য এশিয়া, পশ্চিম ইউরোপে এবং পূর্ব আফ্রিকায়ও দেখা মেলে। দেখা মেলে ফিনল্যান্ডেও। এদের বিচরণ ক্ষেত্র ধানক্ষেত, গমক্ষেত, উচুঁ বনভূমি, ছোট নদ-নদী, জলাশয়ের আশপাশ এবং মালভূমির ওপর পর্যন্ত। এরা ক্ষেত খামারের ওপর চক্কর দিয়ে শিকার খোঁজে। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। মূলত শস্যক্ষেতে ব্যাপক কীটনাশক ব্যবহারের কারণে প্রজাতিটি হুমকির মুখে পড়েছে এবং প্রজননে বিঘœ ঘটছে। ফলে আইইউসিএন এদের ইতিমধ্যে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘সাদাটে মেঠো চিল’, ইংরেজি নাম: ‘প্যালিড হ্যারিয়ার’ (Pallid Harrier), বৈজ্ঞানিক নাম: Circus macrourus| এরা ‘ধলা কাপাসি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ৪০-৪৮ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৯৫-১২০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে খানিকটা তফাত রয়েছে। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি আকারে বড় এবং গায়ের রংও ভিন্ন। পুরুষ পাখির গড় ওজন ৩১৫ গ্রাম, স্ত্রী পাখির গড় ওজন ৪৪৫ গ্রাম। পুরুষ পাখির মাথা সাদাটে ধূসর। পিঠ ধূসর। লেজের গোড়া ও অগ্রভাগ বাদামি-কালো। গাঢ় কালো রঙের ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। ঠোঁটের গোড়া হলুদ। চোখ উজ্জ্বল হলুদ, মণি কালো। পা ও পায়ের পাতা হলুদ, নখ কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির গায়ের পালক মরিচা-বাদামি। দেহতল হালকা বাদামি সাদা। প্রধান খাবার: ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, ইঁদুর, বড় পোকামাকড়, ফড়িং ও পঙ্গপাল। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। প্রজনন পরিসীমা দক্ষিণ রাশিয়া, ইউক্রেন, উত্তর-পশ্চিম চীন ও পশ্চিম মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত। বাসা বাঁধে ঝোপের ভেতর, জলাভূমির কাছে মাটিতে অথবা ঘেসো ভূমিতে লম্বা ঘাস বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। শাবক ৩৫-৪৫ দিনের মধ্যে উড়তে শিখে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 01/07/2016
ভাদি হাঁস | White winged Duck | Asarcornis scutulata
ভাদি হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি। কয়েক দশক আগেও পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরসবুজ বনের জলাশয়ে দেখা যেত। সম্প্রতি এ প্রজাতির পাখি কারো নজরেই পড়ে না। মূলত এরা ধীরগতির সে ললগ্নে জলাশয়ের ওপর নেমে আসে এবং সারারাত ধরে শিকারের লিপ্ত থাকে। ভোরের আলো প্রস্ফুটিত হলে পুনরায় গাছের ডালে আশ্রয় নেয়। বিশ্রামের ফাঁকে ফাঁকে পুরুষ পাখি ‘ক্রংক-ক্রংক’ স্বরে আওয়াজ করে। এ প্রজাতির সঙ্গে গৃহপালিত চীনা হাঁসের আকার-আকৃতি কিংবা বর্ণের মিল ব্যাপক। পাখিবিশারদ ব্যতিরেকে অন্য কারো পক্ষে প্রজাতি শনাক্তকরণ কঠিন বৈকি। বর্তমানে এদের বিস্তৃতি বিশ্বে সন্তোষজনক নয়, শুধু এশিয়ার কিছু অঞ্চল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। যতদূর জানা যায়, উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বভাগ পর্যন্ত বিস্তৃতি। বাংলাদেশে একেবারেই অনুপস্থিত এ প্রজাতির পাখি। প্রধান কারণ অবাধে বৃক্ষ নিধন। বিশেষ করে উঁচু গাছগাছালি বিলীন হওয়াতে এদের প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে। বিঘ্ন ঘটছে বিচরণেও। ফলে এরা আর এ দেশমুখী হচ্ছে না। বিশ্বে বিপন্ন ও বাংলাদেশে অতিবিপন্ন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে তাই। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত রয়েছে। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘ভাদি হাঁস’, ইংরেজি নাম: হোয়াইট-উয়িংড ডাক’ (White-winged Duck), বৈজ্ঞানিক নাম: Asarcornis scutulata | এরা লম্বায় ৮০-৮২ সেন্টিমিটার (ঠোঁট ৬ সে.মি লেজ ১৫ সে.মি)। ওজন প্রায় ৩ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ পাখির আকারে ও বর্ণে পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা ও ঘাড় সাদার ওপর ছোট ছোট কালো দাগ। কাঁধে সাদা পট্টি। পিঠ কালচের সঙ্গে তামাটের মিশ্রণ। ডানায় নীলাভ কালো বন্ধনী। ডানার কনুইয়ের প্রান্তে খাড়া নখর বিদ্যমান। স্ত্রী পাখি আকারে খানিকটা ছোট। দেহের পালক অনুজ্জ্বল। মাথায় ঘন কালো দাগ। ঠোঁট কমলা। পুরুষ পাখির ঠোঁটের গোড়ায় মাংসপিণ্ড স্ফীত রয়েছে। এটি প্রজনন মৌসুমে আরো স্ফীত হয়। পা ও পায়ের পাতা কমলা হলুদের মিশ্রণ। পায়ের পেছনের আঙুল সামান্য ছড়ানো। প্রধান খাবার: শামুক, ছোট মাছ, পোকামাকড় ও জলজ উদ্ভিদের কচিপাতা। প্রজনন সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। আম, উরি, সিভিট, ছুন্ডুল ইত্যাদি গাছের ৩০ মিটার উঁচুতে প্রাকৃতিক কোটরে ঘাস বা লতাপাতা দিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৭-১০টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 13/12/2013
কালোমাথা কাবাসি | Black headed Cuckooshrike | Coracina melanoptera
কালোমাথা কাবাসি | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। গড়ন ‘বেনেবউ’ প্রজাতির পাখিদের মতো। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাসস্থল আর্দ্র নিম্নভূমির বন, বাঁশ বন, ক্রান্তীয় আর্দ্র পার্বত্য বন, জলাশয়ের আশপাশের জঙ্গল। মূলত এরা বননির্ভর পাখি। গ্রামীণ বন থেকে শুরু করে নগর উদ্যানেও দেখা মেলে। তবে অবশ্য যত্রতত্র দেখা মেলে না। দেখা মেলে ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ মিটার উঁচুতেও। একাকী কিংবা ছোট দলেও দেখা মেলে। শান্ত স্বভাবের পাখি। সুমধুর কণ্ঠস্বর। ঠোঁট প্রসারিত ধীরলয়ে করে ডাকাডাকি করে। প্রজাতিটি দেশে ভালো অবস্থানে রয়েছে, বিশ্বেও অবস্থান সন্তোষজনক। পাখির বাংলা নাম: ‘কালোমাথা কাবাসি’, ইংরেজি নাম: ‘ব্ল্যাক হেডেড কুক্কুশ্রাইক’ (Black-headed Cuckooshrike), বৈজ্ঞানিক নাম: Coracina melanoptera. প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৯-২০ সেন্টিমিটার। ওজন ১৪-৩৬ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, গলা সেøট ধূসর। পিঠ ও লেজ গাঢ় ধূসর। লেজের নিচের দিকের পালক কালো-সাদা। ডানার প্রান্তপালক কালো। বুকের নিচ থেকে সাদাটে ধূসর। চোখ, ঠোঁট ও পা গাঢ় স্লেট কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ ধূসর। ডানার প্রান্ত পালকে সাদা-কালো দাগ। দেহতল কালো-সাদা ডোরা। ঠোঁট শিং কালো। বাদবাকি একই রকম। প্রধান খাবার: পোকামাকড় ও ছোটফল। বিশেষ করে ডুমুর ফলের প্রতি আসক্তি লক্ষ্য করা যায়। প্রজনন মৌসুম জুন থেকে সেপ্টেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩-৪ মিটার উঁচু বৃক্ষের ডালে বাসা বাঁধে। কাপ আকৃতির বাসা। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ফুটতে সময় লাগে ২০-২১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/02/2018