সাদা খঞ্জন | white wagtail | Motacilla alba
সাদা খঞ্জন | ছবি: ইন্টারনেট ধলেশ্বরী নদীর বাঁকেই মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরের অবস্থান। সদরের অদূরেই মিরকাদিম পৌরসভা। সেটিরও অবস্থান ধলেশ্বরীর পাড়ে। এ মাঠে প্রতি বছর আমি কটি স্লিম গড়নের পাখিকে নির্ভয়ে বিচরণ করতে দেখি। বিশেষ করে ওরা শীত শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তেই এসে হাজির হয়। থাকে দীর্ঘদিন। একেবারে চৈত্রের শেষ পর্যন্ত থাকে। পাখিগুলো দেখতে ভারি চমৎকার। চেহারাটা বেশ মায়াবী। জোড়ায় জোড়ায় কিংবা একাকী বিচরণ করে। সামান্য দূর থেকে ওদের দেখে আনন্দ পাই তখন। অত্যন্ত চঞ্চল প্রকৃতির পাখি এরা। স্থিরতা এদের মাঝে খুবই কম। মাঠে বিচরণকালে সারাক্ষণ লেজ নাড়তে দেখা যায়। আসলে ওদের কোমরের গড়নটাই অমন। গড়ন একটু ভিন্ন ধাঁচের হওয়ায় সারাক্ষণ কাঁপতে থাকে। এ কারণে লেজটাও দুলতে থাকে। আর তা দেখে মনে হয় বুঝি ওরা নেচে বেড়ায় সারাদিন। এ পাখির বাংলা নাম: সাদা খঞ্জন, ইংরেজি নাম: হোয়াইট ওয়াগটেল (white wagtail), বৈজ্ঞানিক নাম: মোটাকিল্লা আলবা, (Motacilla alba), গোত্রের নাম: মোটাকিল্লিনি। সাদা খঞ্জন লম্বায় ৮ ইঞ্চি। চিকন শরীর। শরীরের তুলনায় লেজটা লম্বা। এদের কপাল, চোখের দু’পাশ, গলা ও গাল সাদা। মাথা, ঘাড়, ডানার কিছু পালক কালো। বুকে কালো ছাপ। পিঠ ছাই-ধূসর। কিছু পালক ধূসর-সাদার মিশ্রণ। লেজ কালো, দু’পাশের পালক সাদা। বুক ও পেটের সব পালক সাদা। ঠোঁট-পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে এক রকম মনে হলেও পার্থক্য সামান্য। স্ত্রী পাখি সামান্য দীপ্তিহীন। এরা পতঙ্গভুক পাখি। সারাদিন মাঠে কিংবা নদীর পাড়ে ঘুরে ঘুরে পোকামাকড় শিকার করে। প্রজনন সময় মে-জুলাই। মাঠ-প্রান্তর অথবা জঙ্গলের নীরব স্থানে পেয়ালা আকৃতির বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় নেয় ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 15/03/2013
কালো ঝুঁটি শালিক | Pale bellied Myna | Acridotheres cinereus
কালো ঝুঁটি শালিক | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। গ্রাম-গঞ্জে দেখা মেলে। হুবহু ঝুঁটি শালিকের মতো দেখতে। শুধু গায়ের রঙে পার্থক্য। আকার আকৃতি ঝুঁটি শালিকের মতো। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। চাষাবাদ চলছে এমন ক্ষেত-খামারে বিচরণ খানিকটা বেশি। এ ছাড়াও মুক্ত এলাকায় নজরে পড়ে। গবাদিপশুর পিঠে চড়ে পোকামাকড় খেতে দেখা যায়। বেশির ভাগই জোড়ায় দেখা যায়। দেখা যায় একাকী কিংবা ছোট দলেও। নজরে পড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায়ও। কণ্ঠস্বর কর্কশ। ঝগড়াটে স্বভাবের হলেও হিংস নয়। ভালো পোষ মানে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। এ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, পূর্ব তিমুর পর্যন্ত বিস্তৃতি রয়েছে। দেশে খুব বেশি নজরে না পড়লেও বিশ্বব্যাপী হুমকি নয় এরা। পাখির বাংলা নাম: ‘কালো ঝুঁটি শালিক’, ইংরেজি নাম: ‘পেল-বেলিড ময়না’ (Pale-bellied Myna), বৈজ্ঞানিক নাম: Acridotheres cinereus| এ ছাড়াও এরা ‘ধলাতলা শালিক’ ও ‘ধূসরপেট ঝুঁটি শালিক’ নামে পরিচিত। দেশে মোট ১১ প্রজাতির শালিক দেখা যায়। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। কপাল, মাথার তালু থেকে ঘাড়ের ওপরের অংশ মসৃণ কালো। কপাল খাড়া। ঠোঁটের গোড়া থেকে খাড়া ঝুঁটি। গলা-ঘাড় কালো মিশ্রিত ধূসর। পিঠ ও কোমর ধূসর-সাদা। ডানার পালক কালো। লেজের মধ্যখানে কালো মোটা দাগ। লেজের প্রান্তর সাদা। দেহতল ধুসর সাদা। ঠোঁট হলুদ। চোখের বলয় হলুদ। পা উজ্জ্বল হলুদ। প্রধান খাবার: পোকা-মাকড়। এ ছাড়া শস্যদানাও খেতে দেখা যায়। ভাত, পাউরুটি এসবও খায়। প্রজনন সময় গ্রীষ্মকাল। নদী বা খালের খাড়া পাড়ে গর্ত করে বাসা বাঁধে। এ ছাড়াও দালান-কোঠা, পুরনো পুলের ফোঁকরে বাসা বাঁধে। শুকনো ঘাস লতাপাতা ঢুকিয়ে ডিম পাড়ার উপযোগী করে নেয়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/03/2017
পাতি সারস | Common Crane | Grus grus
পাতি সারস | ছবি: ইন্টারনেট পরিযায়ী পাখি। হালে দেখা যাওয়ার নজির নেই। বিচরণ করে জলাশয়ের কাছাকাছি তৃণভূমি, কৃষি ক্ষেত, চারণভূমি, অগভীর আশ্রিত উপসাগরীয় অঞ্চল, নদী ও অগভীর হ্রদে। মাঝেমধ্যে হাঁটু পরিমাণ জলে নেমে খাবার খুঁজতে দেখা যায়। খাদ্যের সন্ধানে বের হয় জোড়ায় অথবা ছোট-বড় দলে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করতে নাচের কসরৎ দেখায়। নাচের কসরৎ দেখতে দেখতে স্ত্রী পাখি তখন আর নিজকে ধরে রাখতে পারে না। নিজেও নাচে অংশ নিয়ে প্রেমে মজে যায়। এ সময় জোরে জোরে দ্বৈত সংগীতের মতো গান গায়। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ-পূর্ব চীন, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত। সমগ্র বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন লাল তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশে সংকটাপন্ন বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে দেশি সারস। পাখির বাংলা নাম: ‘পাতি সারস’, ইংরেজি নাম: ‘কমন ক্রেন’ (Common Crane), বৈজ্ঞানিক নাম: Grus grus | দেশে তিন প্রজাতির সারস দেখা যায়। যথাক্রমে: দেশি সারস, পাতি সারস ও ধূসর সারস। এরা সবাই পরিযায়ী প্রজাতির। গড় দৈর্ঘ্য ১১৫ সেন্টিমিটার। প্রশস্ত ডানা ১৮০-২০০ সেন্টিমিটার। ওজন পুরুষ পাখি ৫.১-৬.১ কেজি। স্ত্রী পাখি ৪.৫-৫.৯ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। কপাল কালো। মাথার তালুর রক্ত লাল। মাথার পেছন থেকে শুরু করে ঘাড়, থুতনি ও গলা কালো। চোখের পেছন থেকে ঘাড় ও গলার কালো দ্বিখণ্ডিত হয়ে সাদায় রূপ নিয়েছে। পিঠ গাঢ় ধূসর। ডানার পালকের ওপর কালো ছোপ। ওড়ার পালক কালো। লেজ কালো। ডানার বাড়তি পালক লেজের ওপর ঝালরের মতো ঝুলে থাকে। দেহতল গাঢ় ধূসর। ঠোঁট সবুজাভ, ডগা হলুদ। চোখের তারা লাল। পা ও পায়ের পাতা কালো। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের চেহারা ভিন্ন। প্রধান খাবার: শস্যবীজ, ঘাসবীজ, কন্দ, গাছের কচিডগা, ব্যাঙ, কাঁকড়া কেঁচো, মাকড়সা, ছোট পাখি, কীটপতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম বর্ষাকাল। বাসা বাঁধে জলাশয়ের কাছাকাছি মাটির ওপরে। শুকনো চিকন ডালপালা, লতাপাতা উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩১ দিন। শাবক উড়তে শিখে ৬ সপ্তাহের মধ্যে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 30/10/2015
সাদাকালো ফিদ্দা | Jerdons Bush Chat | Saxicola jerdoni
সাদাকালো ফিদ্দা | ছবি: ইন্টারনেট প্রাকৃতিক আবাসস্থল নিম্নভূমি এবং সমভূমির বৃক্ষরাজি কিংবা পাহাড়ের কিনারের পাথর খণ্ড। বিচরণ করে একাকী। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। পুরুষ পাখি হুবহু দোয়েল বর্ণের হলেও দোয়েলের মতো অত নাদুস-নদুস নয় এরা। স্লিম। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি অনেকটাই নিষ্প্রভ। রঙ বাদামি। স্বভাবে চঞ্চল। কণ্ঠস্বর সুমধুর। দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, লাওস, ইন্দোচীন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। পাখির বাংলা নাম: ‘সাদাকালো ফিদ্দা’, ইংরেজি নাম: ‘জার্ডন’স বুশ চ্যাট’ (Jerdon’s Bush Chat), বৈজ্ঞানিক নাম: Saxicola jerdoni | এরা ‘জার্ডনের ঝাড়ফিদ্দা’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ১৪-১৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ নীলচে কালো। ডানার প্রান্ত পালক কুচকুচে কালো। গলা ও বুক কালো। দেহতল ধবধবে সাদা, লেজতল কালো। স্ত্রী পাখির মাথা, ঘাড় ও পিঠ বাদামি। দেহতল বাদামি সাদা। উভয়ের চোখের বলয় নীলাভ, মনি কালো। ঠোঁট কালো। পা ধূসর কালো। প্রধান খাদ্য: ভূমিজ কীটপতঙ্গ। প্রজনন সময় ফেব্রুয়ারি থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। ঘাস, লতা-পাতা দিয়ে বাসা বাঁধে। বাসা অনেকটাই পেয়ালা আকৃতির। ডিম পাড়ে ২-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৩ দিন। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/11/2017
কালাগলা মানিকজোড় | Black necked Stork | Ephippiorhychus asiaticus
কালাগলা মানিকজোড় | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন পরিযায়ী পাখি। হালে দেখা যাওয়ার নজির নেই। বাংলাদেশে সর্বশেষ দেখা গেছে প্রায় ৬৭ বছর আগে। এদের বিচরণ হাওর-বাঁওড় জলাশয় এলাকায়। হাঁটুজলে নেমে শিকার খোঁজে। এরা দলবদ্ধ হয়ে বিচরণ করে না। সাধারণত এক জোড়ার বেশি কোথাও দেখা যায় না। তবে শিকারে বের হলে শামুকখোল পাখির সঙ্গে দল বাঁধতে দেখা যায়। খাবারে তেমন কোনো বাছবিচার নেই। পচাগলা থেকে শুরু করে সব ধরনের খাবার এদের প্রিয়। রাত যাপন করে গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালে। দিনের বেলা জলাশয়ের পাড়ে হাঁটুগেড়ে বিশ্রাম নেয়। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওস পর্যন্ত। এ ছাড়াও পাপুয়া নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ায় সামান্য নজরে পড়ে। পাখিবিশারদদের মতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বড়জোর এক হাজার ‘কালাগলা মানিকজোড়’ রয়েছে। সারা বিশ্বে এদের অবস্থান তত ভালো নয় বিধায় আইইউসিএন এদের লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নামঃ ‘কালাগলা মানিকজোড়’, ইংরেজী নামঃ ‘ব্লাক নেকেড স্টর্ক’ (Black necked Stork) বৈজ্ঞানিক নামঃ Ephippiorhychus asiaticus। এরা ‘কালোগলা বক ও লোহারজঙ্গ’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৫০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামন্য পার্থক্য রয়েছে। পাখিবিশারদ ব্যতীত এ পার্থক্য নিরুপণ করা বড়ই কঠিন। সূক্ষ্ম সেই পার্থক্যটা হচ্ছে স্ত্রী পাখির চোখের তারা হলুদ, পুরুষ পাখির চোখের তারা বাদামি-কালো। এ ছাড়া বাদবাকি একই রকম। বলা যায়, এরা সাদা-কালো রঙের পাখি। মাথা ও গলা কালো। পিঠের মাঝখান থেকে লেজের উপরিভাগ পর্যন্ত কালো। দেহের বাকি অংশ সাদা। ঠোঁট কালো। পা ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল লাল। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের রং ভিন্ন। ওদের মাথা থেকে পিঠের দিক বাদামি। ওড়ার পালক কালচে। পা গাঢ় লাল। প্রধান খাবারঃ ছোট সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর, বাইম মাছ। শিঙ-মাগুর মাছের প্রতিও আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে জলাশয়ের কাছাকাছি গাছের উঁচু ডালের তেমাথায়। বাসা মাচা আকৃতির। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো সরু ডালপালা। ডিম পাড়ে তিন-চারটি। ফুটতে সময় লাগে ২৯-৩১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, 04/09/2021
শিয়ালে কীট কুড়ানি | Chestnut bellied Nuthatch | Sitta castanea
শিয়ালে কীট কুড়ানি | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না, বিরল দর্শন। পার্বত্য চট্টগ্রামে যৎসামান্য দেখা যেতে পারে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল ক্রান্তীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বন, ক্রান্তীয় পার্বত্য অরণ্য, খোলা পর্ণমোচী বন। শালবন বেশি পছন্দের। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। হিংস নয়। স্বভাবে অত্যন্ত চঞ্চল। কাঠঠোকরা পাখিদের মতো গাছের খাড়া কাণ্ডে খুব দ্রুত হেঁটে উঠতে পারে। নিমেষেই গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে কীট-পতঙ্গ খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে যায়। হয়তো এ জন্যই এদের নামকরণ হয় ‘কীট-কুড়ানি’। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, তিব্বত, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। এরা বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘শিয়ালে কীট-কুড়ানি’, ইংরেজি নাম: ‘চেস্টনাট বেলিড নাটহ্যাচ’ (Chestnut-bellied Nuthatch), বৈজ্ঞানিক নাম: Sitta castanea | এরা ‘খয়রাপেট বনমালী’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি গড় দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৯ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য আছে। কপাল ও ঘাড় রূপালী-ধূসর। পিঠ ধূসর। লেজ খাটো, কালো-ধূসর। মাথার দু’পাশ দিয়ে কালোটান ঘাড়ের কাছে পৌঁছে নিচে নেমেছে। ডানার প্রান্ত পালক কালচে-ধূসর। দেহতল শিয়ালে রঙের অথবা খয়েরি। ঠোঁট কালচে। পা ধূসর-কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথা, পিঠ ও লেজ বাদামি ধূসর। দেহতল হালকা খয়েরি। বাদবাকি একই রকম। প্রধান খাবার: কীট-পতঙ্গ, পোকামাকড়, মাকড়সা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে। শ্যাওলা, তন্তু, শুকনো ঘাস, পালক ইত্যাদি বাসা বানানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/03/2017
বাদামি পিঠ সুচলেজ বাতাসি | Brown backed Needletail | Hirundapus giganteus
বাদামি পিঠ সুচলেজ বাতাসি | ছবি: ইন্টারনেট চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। দেখতে হিংস মনে হলেও তত হিংস নয় এরা। কেবলমাত্র আক্রান্ত হলে আক্রমণ করে। মানুষের হাতে বন্দি হলে ঠোঁট এবং নখের আঁচড়ে যখম করতে সক্ষম হয়। উড়ন্ত অবস্থায় এদের ঠোঁট, মাথা ও লেজ সমান্তরাল থাকে। ফলে দূর থেকে মাথা এবং লেজ শনাক্ত করা কঠিন হয়। ওড়া অবস্থায় সামনে অগ্রসর হওয়ার কারণে মাথা-লেজ শনাক্ত করা যায়। শরীরের তুলনায় ডানা লম্বা থাকার কারণে উড়ন্ত অবস্থায় ডানা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। মূলত এরা বন পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও ফাঁকা জায়গায়ও দেখা মেলে। ভূমি থেকে ১৮০০ মিটার উচ্চতায়ও দেখা যায়। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। সারাদিন ওড়াওড়ি করে কাটায়। উড়ন্ত অবস্থায়ই পতঙ্গ শিকার করে। বেশ দ্রুত উড়তে পারে। ঘণ্টায় প্রায় ১৭০ কি.মি. বেগে ওড়ে। একাকী কিংবা দলবদ্ধ হয়ে ওড়াওড়ি করে। জলপান ব্যতিরেকে পারতপক্ষে ভূমি স্পর্শ করে না। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যএশিয়া, দক্ষিণ সাইবেরিয়া, নরওয়ে, সুইডেন, পূর্ব ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত। পশ্চিম ইউরোপেও দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে বিরল দর্শন বলা যায়। এরা বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়, তবে এদের উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে তালিকা করেছে আইইউসিএন। মূলত প্রজনন পরিবেশ সংকটের কারণে এরা উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘বাদামি-পিঠ সুচ-লেজ বাতাসি’, ইংরেজি নাম: ‘ব্রাউন-ব্যাকেড নিডলটেইল’ (Brown-backed Needletail) বৈজ্ঞানিক নাম: Hirundapus giganteus | এরা ‘খয়রাপিঠ সুইবাতাসি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ২৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১২৩-১৬৭ গ্রাম। মাথা কালচে, তালুতে সাদা ছোপ। পিঠ ও ডানা বাদামি। কোমরের দু’পাশ সাদা। লেজের অগ্রভাগ কাঁটার মতো সুচালো। দেহতল কালচে। লেজতল সাদা। ঠোঁট কালো, ছোট। ঠোঁটের অগ্রভাগ কিঞ্চিত বাঁকানো। পা ছোট। পায়ের তুলনায় নখ বড় এবং ধারালো। প্রধান খাদ্য: উড়ন্ত পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল। মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ সাইবেরিয়ার পাথুরে পাহাড়ে এবং ধ্বংসাবশেষ গাছে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 26/08/2016