বালিহাঁস | Cotton Pygmy goose | Nettapus coromandelianus
বালিহাঁস | ছবি: ইন্টারনেট বিশেষ করে পুরুষ পাখিটির রূপ অতুলনীয়। চেহারাটাও বেশ মায়াবী। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়। এমনিতেই তো দেখতে ভীষণ সুন্দর তার ওপর আরো সুন্দর লাগে তখন। এরা উড়তে উড়তেই ডাকে। ‘ডিক ডিক, ডিরিক ডিরিক’ সুরে আওয়াজ করে জলাশয় বা গাছ-গাছালির ওপর চক্কর মারে। আমাদের দেশে এক সময়ে যত্রতত্র দেখা যেত। বর্তমানে হাওরাঞ্চল বা বড় ধরনের জলাশয় ছাড়া খুব একটা দেখা যায় না। পাখি নিধনকারীদের অধিক লোভের কারণে আজ ওরা হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ একটা সময়ে এ পাখিরা যত্রতত্র বিচরণ করত দেশে। বিচরণ করতে দেখেছি আমার বাল্য বেলায় নানাবাড়ির পুকুরে। মামার মাধ্যমে পরিচিত হয়েছি এ পাখির সঙ্গে তখন। এক মামা ধরার চেষ্টাও করেছেন। অধিক চাতুরিতার কারণে ফাঁদে ফেলতে পারেননি। এ পাখি সাধারণত মরা তাল, নারিকেল, খেজুর গাছের প্রাকৃতিক গর্তে বাসা বাঁধে। তবে ওদের প্রথম পছন্দ তালগাছ, দ্বিতীয় পছন্দ নারিকেল গাছের কোটর। এসব মরাগাছের মাথায় বৃষ্টির জল জমে প্রকৃতিগতভাবে গর্তের সৃষ্টি হলে এরা সেখানে বাসা বাঁধে। আমাদের দেশের বিশিষ্ট পাখি গবেষক শরীফ খান এ পাখি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি নিজের তত্ত্বাবধানে এদের ডিম মুরগির তা দিয়ে ফুটিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাচ্চাগুলো বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি, তিনদিন পর্যন্ত বেঁচে ছিল।’ এ পাখির বাংলা নাম: ‘বালিহাঁস,’ ইংরেজি নাম: ‘কটন পিগমি গুজ বা কটন টিল,’ (Cotton Pygmy-goose or Cotton Teal) বৈজ্ঞানিক নাম: ‘নেট্টাপাস কোরোমানডেলিয়ানাস,’ (Nettapus coromandelianus) গোত্রের নাম: ‘আনাটিদি’। এরা বেলেহাঁস নামেও পরিচিত। বালিহাঁস লম্বায় ৩০-৩২ সেন্টিমিটার। আমাদের দেশের হাঁস প্রজাতির মধ্যে এরা সবচেয়ে ছোট আকৃতির। ঠোঁটের গোড়া থেকে মাথার তালু পর্যন্ত কালো। পুরুষ পাখির গলার নিচে চওড়া কালো ফিতার মতো বন্ধনী রয়েছে। পিঠ, ডানা কালো। চোখের চারপাশ, বুক, পেট সাদা। লেজের আগা কালচে। সূর্যের আলো পড়লে উজ্জ্বল সবুজের আভা ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে স্ত্রী পাখি পুরুষের তুলনায় অনেকখানি নিষ্প্রভ। ওদের গলায় সুদৃশ্য বন্ধনী নেই। গায়ের বর্ণ হালকা বাদামি ও সাদার মিশেল। আকারে পুরুষের চেয়ে সামান্য ছোট। বালিহাঁসের প্রিয় খাবার জলজ পোকামাকড়, জলজ উদ্ভিদের কচিডগা, শস্যবীজ ও ছোট মাছ। প্রজনন সময় জুন থেকে সেপ্টেম্বর। মরা নারিকেল, তাল, খেজুরগাছের কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৮-১২টি। স্ত্রী পাখি একাই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭দিন। ডিম থেকে বেরুলেই শাবক গাছের কোটর থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ে। অনেক সময় গাছের গর্ত গভীর হলে মা-বাবা ঠোঁট দিয়ে ঠেলে ওদের গর্ত থেকে বের করে দেয়। বালিহাঁসের বাচ্চারা ভীষণ দুষ্টু। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 16/11/2013
বড় বনলাটোরা | Large Woodshrike | Tephrodornis gularis
বড় বনলাটোরা | ছবি: ইন্টারনেট মিশ্র পর্ণমোচী বন, বন প্রান্তর এবং চিরহরিৎ বনের বাসিন্দা। স্থানীয় প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশ ছাড়া বড় বনলাটোরার বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর পর্যন্ত। দূরদর্শনে ‘পাতি বনলাটোরা’ মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। চেহারায়ও খুব একটা ভিন্নতা নেই। শুধু আকারে একটু বড় এরা। প্রজাতির কারোই আহামরি রূপ নেই। তবে চেহারাটা মায়াবি ধাঁচের। বিশেষ করে ওদের কাজল কালো চোখ পাখি প্রেমীদের মায়া জাগিয়ে তোলে। প্রজাতির দেখা মেলে শুষ্ক বন-বনানী কিংবা ঘন পাতার গাছগাছালির ডালে। ভাওয়াল শালবনে বেশি দেখা মেলে। স্বভাবে শান্ত। কিছুটা লাজুকও। উঁচু গাছের ঘন পাতার আড়ালে বিচরণ করে। শিকারে বের হয় জোড়ায় কিংবা ছোট দলে। পতঙ্গভুক অন্যান্য পাখির সঙ্গেও শিকারে বের হয়। মাটিতে নেমেও শিকার খোঁজে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি সুর করে গান গায়। সুর শুনতে মন্দ নয়। উভয় প্রজাতিই কিছুটা বোকা কিছিমের। স্ত্রী পাখি যখন ডিমে তা দেয় ঠিক তখনই পুরুষ পাখি মনের আনন্দে সামান্য দূরের গাছের ডালে বসে গান গাইতে থাকে। ফলে চতুর শিকারি পাখিরা বুঝে যায় ওদের বাসার অবস্থান। এবার অন্য প্রসঙ্গে যাচ্ছি। একটি ভালো খবর দিতে চাই আপনাদের। পত্রিকায় প্রকাশিত পাখি নিয়ে আমার লেখাগুলো যারা এক সঙ্গে পেতে চান তারা https://pakhi.tottho.com ঠিকানায় ক্লিক করতে পারেন। এমন একটি সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন বগুড়া জেলার একজন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ হাবিবুর রহমান। ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাকে, পাখি সংক্রান্ত সব ক’টি লেখা একত্রিত করার জন্য। এ পাখির বাংলা নাম: ‘বড় বনলাটোরা’, ইংরেজি নাম: ‘লার্জ উডশ্রাইক’ (Large Woodshrike), বৈজ্ঞানিক নাম: Tephrodornis gularis| এরা ‘বড় সুধুকা’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ১৮-২৩ সেন্টিমিটার। ওজন ২৮-৪৬ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। উভয়েরই কাজল কালো চোখ। চোখের দু’প্রান্তে চওয়া কালো টান। মাথা নীল কালো। ঘাড় ও পিঠ কালচে-ছাই রঙের। ডানার প্রান্ত কালচে-বাদামি। লেজ গাঢ় খয়েরি। লেজের মধ্যখানের পালক দুটোতে ছাই রঙের ছোপ, বাইরের পালক ময়লা সাদা। গলার নিচে থেকে বুক পর্যন্ত ছাই রঙ। বুকের নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত সাদাটে। ঠোঁট সে্লট কালো। পা সিসে-কালো। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ। বিশেষ করে পঙ্গপাল, ফড়িং ও ঝিঁঝিঁ পোকার প্রতি আসক্তি বেশি। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন সময়ের হেরফের লক্ষ্য করা যায়। বাসা বাঁধে গাছের উঁচুতে তে-ডালের ফাঁকে। ঘাস, লতাপাতা, শিকড় ও মাকড়সার জাল দিয়ে পেয়ালা আকৃতির বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/11/2015
বামন লেজকাটা টুনি | Asian Stubtai | Urosphena squameiceps
বামন লেজকাটা টুনি | ছবি: ইন্টারনেট প্রাকৃতিক আবাসস্থল নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চল এবং চিরহরিৎ সুঁচালো বনের লতাগুল্ম। এ ছাড়াও স্যাঁতসেঁতে এলাকায় বেশি নজরে পড়ে। বেশির ভাগই একাকি বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। অস্থিরমতি পাখি। কোথাও একদণ্ড বসে থাকার সময় নেই। সারাদিন ওড়াউড়ি করে ব্যস্ত সময় কাটায়। লতাগুল্মের ফাঁকফোকরে লাফিয়ে বেড়ায়। নিয়ম করে গোসালাদি সারে। গানের গলা ভালো। প্রজনন মৌসুমে হাঁকডাক বেড়ে যায়। শীতে দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে।বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, মিয়ানমার, চীন, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বব্যাপী হুমকির সম্মুখীন না হলেও আইইউসিএন ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রিয় পাঠক, এবার অন্য প্রসঙ্গে যাচ্ছি। বগুড়া জেলার একজন পাখিপ্রেমী মানুষ “হাবিবুর রহমান” অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও আমার লেখা পাখি ফিচারগুলোকে সংগ্রহ করে একটি পেজে বন্দি করেছেন। ইচ্ছে করলে আপনারা সে লেখাগুলো একত্রে এই https://pakhi.tottho.com ঠিকানায় পেতে পারেন। প্রকৃতিপ্রেমী এ মানুষটির জন্য ধন্যবাদ জানানো ছাড়া আমাদের আর করার কিছু নেই। মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাচ্ছি আবার। ‘বামন লেজকাটা টুনি’ সম্পর্কে বলছিলাম। প্রজাতিটির বাংলা নাম: ‘বামন লেজকাটা টুনি’, ইংরেজি নাম: ‘এশিয়ান স্টুবটেইল’(Asian Stubtail), বৈজ্ঞানিক নাম: Urosphena squameiceps | এরা ‘এশীয় ভোঁতালেজ নামে’ নামেও পরিচিত। গড় দৈর্ঘ্য ৯.৫-১০.৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। শরীরের তুলনায় মাথা বড়। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও ডানা গাঢ় বাদামি। ডানার প্রান্ত পালক ধূসর কালচে। দেহতল হলদেটে সাদা। লেজ নেই বললেই চলে। ঠোঁট ছোট, শিং কালো। লম্বা পা ত্বক বর্ণ। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, শুককীট, মাকড়সা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। শৈবাল, শ্যাওলা, শিকড়, তন্তু দিয়ে মোচাকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫ দিন। লেখক: আলমশাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদওপরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 02/12/2016
বাজপাখি | Common Buzzard | Buteo buteo
বাজপাখি | ছবি: ইন্টারনেট শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। নজরে পড়ে খোলা মাঠ-বিল প্রান্তরে। খরগোশ, সাপ, গলিত মাংস, কীটপতঙ্গ এসব শিকার করে। পারতপক্ষে জলাশয় থেকে মাছ শিকার করে না। চাষাবাদ হয় এমন ক্ষেত-খামারের কাছাকাছি বেশি নজরে পড়ে। ফসলের ক্ষেত্রেও বিচরণ রয়েছে। বিচরণ করে জোড়ায় কিংবা ছোট দলে। অনেক ক্ষেত্রে ১০-১৫টির দলেও দেখা যায়। আকাশের অনেক উঁচুতে উঠে অনেকখানি পরিধি নিয়ে ঘুরতে থাকে। দীর্ঘক্ষণ শূন্যে ভেসে থাকতে পছন্দ করে। এরা শিকারি পাখি হলেও স্বভাবে তেমন হিংস নয়। প্রজাতির চারাভিযান বাংলাদেশ, ভারত, ইউরোপ, রাশিয়া, আফ্রিকা, তুরস্ক, জাপান, থাইল্যান্ড, হংকং এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। বিশ্বে এরা ভালো অবস্থানে নেই। >পাখির বাংলা নাম: ‘বাজপাখি’, ইংরেজি নাম: ‘কমন বাজার্ড’ (Common Buzzard), বৈজ্ঞানিক নাম: Buteo buteo | এরা ‘পাতি তিসাবাজ’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ৪০-৫৮ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৪২৭ গ্রাম। প্রসারিত পাখা ১০৯-১৩৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী পাখি সামান্য বড়। মাথা, ঘাড়, পিঠ, ডানা ও লেজ কালচে বাদামির সঙ্গে সাদা ছোপ। ঘাড়ে, গলায় সাদা ছোপ স্পষ্ট। বুক, পেট ও বস্তি প্রদেশ হলদে বাদামির ওপর হলদে সাদা ছিট। চোখের বলয় হলুদ। কালো মণির চারপাশ বাদামি। বড়শির মতো বাঁকানো ঠোঁট কালো, গোড়া হলুদ রঙের। মুখের কিনারটাও হলুদ। পা হলুদ ও নখ কালো। প্রধান খাবার: খরগোশ, ছোট সাপ, ইঁদুর, টিকটিকি, ব্যাঙ, কাঁকড়া, পোকামাকড় ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মধ্য এপ্রিল। গাছের উঁচু শিখরে সরু ডালপালা দিয়ে অগোছালো বাসা বাঁধে। মাটিতে বা পাথুরে এলাকায়ও বাসা বাঁধে। একই বাসা বারবার ব্যবহার করে। ডিমের সংখ্যা ২-৪টি। তিন দিন অন্তর ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৩-৩৫ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৬-৮ সপ্তাহ। তিন বছর বয়সে বয়োপ্রাপ্ত হয়। গড় আয়ু ২৫ বছর। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 05/05/2017
পাতি বনলাটোরা | Common Woodshrike | Tephrodornis Pondicerianus
পাতি বনলাটোরা | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। দূর থেকে কাঠ শালিকের মতো মনে হলেও আসলে এরা শালিক প্রজাতির কেউ নয়। আহামরি রূপ নেই চেহারায়। তবে কাজল কালো আঁখির ওপর নজর পড়লে পাখিপ্রেমীদের মায়া লেগে যাবে বোধ করি। প্রজাতির দেখা মিলে শুষ্ক বন-বনানী কিংবা ঘন পাতার গাছগাছালির ডালে। ভাওয়াল শালবনে একটু বেশি দেখা মেলে। দেখা মেলে রাজধানীতেও। স্বভাবে শান্ত। কিছুটা লাজুকও। উঁচু গাছের ঘন পাতার আড়ালে বিচরণ করে। শিকারে বের হয় জোড়ায় কিংবা ছোট দলে। পতঙ্গভূক অন্য পাখিদের সঙ্গেও শিকারে বের হয়। মাটিতে নেমেও শিকার খোঁজে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি ‘হুইট হুইট’ সুরে গান গায়। মাঝে মধ্যে সুর পাল্টিয়ে গেয়ে ওঠে ‘হুই-হুই-হুই…’। সুর শুনতে মন্দ নয়। এরা কিছুটা বোকা ধরনের। স্ত্রী পাখি যখন ডিমে তা দেয় ঠিক তখনই পুরুষ পাখি মনের আনন্দে সামান্য দূরত্বের গাছের ডালে বসে গান গাইতে থাকে। তাতে করে চতুর শিকারি পাখিরা বুঝে যায় ওদের বাসার অবস্থান আশপাশেই রয়েছে। আর তখনই দুষ্ট পাখিরা নেমে পড়ে ডিম-বাচ্চার খোঁজে। এক সময় পেয়েও যায় ওদের ডিম-বাচ্চার সন্ধান। পাখির বাংলা নাম: ‘পাতি বনলাটোরা’, ইংরেজি নাম: ‘কমন উডশ্রাইক’ (Common Woodshrike), বৈজ্ঞানিক নাম: Tephrodornis Pondicerianus| এরা সুধুকা, কাঠ কাজল ও দুক্কা নামেও পরিচিত। লম্বায় ১৫-১৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। উভয়েরই কাজল কালো আঁখি। ভ্রুর ওপর চওড়া সাদা টান। মাথা, ঘাড় ও পিঠ ছাই-বাদামি। ডানার প্রান্ত ফিকে রঙের। লেজ গাঢ় খয়েরি। লেজের মধ্যখানের পালক দুটোতে ছাই রঙের ছোপ, বাইরের পালক ময়লা সাদা। গলার নিচে থেকে বুক পর্যন্ত ছাই রং। বুকের নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত ফিকে ছাই। ঠোঁট সেøট কালো। পা সিসে-কালো। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন সময়ের হেরফের লক্ষ্য করা যায়। বাসা বাঁধে ২-৯ মিটার উঁচুতে গাছের দুই ডালের ফাঁকে। ঘাস, লতাপাতা, শিকড় ও মাকড়সার জাল দিয়ে পেয়ালা আকৃতির বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 31/10/2014
ধলাকোমর সুইবাতাসি | White rumped Needletail | Zoonavena sylvatica
ধলাকোমর সুইবাতাসি | ছবি: ইন্টারনেট দেখতে হিংস মনে হতে পারে আসলে তত হিংস নয়। তবে আক্রান্ত হলেই কেবল আক্রমণ করে। অনেক সময় মানুষকেও ছাড় দেয় না। বন্দি হলে ঠোঁট এবং নখের আঁচড়ে যখম করে দেয়। উড়ন্ত অবস্থায় এদের ঠোঁট, মাথা ও লেজ সমান্তরাল থাকে। ফলে দূর থেকে মাথা এবং লেজ শনাক্ত করা কঠিন হয়। শুধুমাত্র উড়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার কারণে মাথা-লেজ শনাক্ত করা যায়। শরীরের তুলনায় ডানা লম্বা থাকার কারণে উড়ন্ত অবস্থায় ডানা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। মূলত এরা বন পাহাড় এবং জলাশয়ের মধ্যবর্তী স্থানে বিচরণ করে। হিমালয়ের ১৭৭০ মিটার উচ্চতায়ও দেখা যায়। স্বভাবে ভারী চঞ্চল। সারাদিন ওড়াওড়ি করে কাটায়। উড়ন্ত অবস্থায়ই পতঙ্গ শিকার করে। বেশ দ্রুত উড়তে পারে। একাকী কিংবা দলবদ্ধ হয়ে ওড়াওড়ি করে। জলপান ব্যতিরেকে পারতপক্ষে ভূমি স্পর্শ করে না। বাতাসি প্রজাতির মধ্যে একমাত্র এরাই অন্য প্রজাতির পাখির মতো ডালপালা আঁকড়ে ধরতে পারে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কমবেশি দেখা যায়। ফলে নিরূপণ করা কঠিন এরা এতদাঞ্চলে আবাসিক নাকি পরিযায়ী? বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে বিরল দর্শন। ফলে আইইউসিএন এদের ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে শনাক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ধলাকোমর সুইবাতাসি’, ইংরেজি নাম: ‘হোয়াইট-রামপেড নিডলটেইল’ (White-rumped Needletail), বৈজ্ঞানিক নাম: Zoonavena sylvatica | এরা ‘ছোট পাহাড়ি বাতাসি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১১ সেন্টিমিটার। ওজন ১৩ গ্রাম। শরীরের তুলনায় মাথা বড়। মাথা কালচে বাদামির সঙ্গে হালকা সাদা মিশ্রণ। পিঠ কালো। ডানা বাদামি। কোমর সাদা। লেজের গোড়া কালো, বাদবাকি বাদামি। অগ্রভাগ কাঁটার মতো সুচালো। গলা সাদা। দেহতল সাদা। ঠোঁট কালো, ছোট। ঠোঁটের অগ্রভাগ কিঞ্চিত বাঁকানো। পা ছোট, পশম আবৃত। প্রধান খাদ্য: উড়ন্ত পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। অঞ্চলভেদে ভিন্ন। ধ্বংসাবশেষ গাছে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলমশাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/01/2017
বাদামিবুক চটক | Brown breasted Flycatcher | Muscicapa muttui
বাদামিবুক চটক | ছবি: ইন্টারনেট চড়–ই আকৃতির পরিযায়ী পাখি। দেখতে আহামরি না হলেও চেহারাটা মায়াবী ধাঁচের। স্বভাবে শান্ত। কিছুটা ভিরু প্রকৃতির। উড়ন্ত পোকামাকড় এদের প্রধান শিকার। উড়ন্ত পোকামাকড় নজরে পড়লে ব্যতিব্যস্ত হয়ে শিকারের পিছু নেয়। বেশির ভাগই একাকী বিচরণ করে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ব্যতিত উত্তর-পূর্ব ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, দক্ষিণ চীন ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাসস্থল সুঁচালো চিরহরিৎ বন। ভূপৃষ্ট থেকে ১৫০০ মিটারের উঁচুতেও এদের বিচরণ রয়েছে। তবে যেখানেই বিচরণ করুক না কেন জায়গাটা ঝোপঝাড় মুক্ত হওয়া চাই। বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়, আবার অঞ্চলভেদে কিছুটা দুর্লভও। পাখির বাংলা নাম: ‘বাদামিবুক চটক’, ইংরেজি নাম: ‘ব্রাউন ব্রেস্টেড ফ্লাইক্যাচার’ (Brown-breasted Flycatcher), বৈজ্ঞানিক নাম: Muscicapa muttui| এরা ‘মেটেবুক চুটকি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির দৈর্ঘ্য ১৩-১৪ সেন্টিমিটার। ওজন ১০-১৪ গ্রাম। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজের গোড়া পর্যন্ত জলপাই বাদামি (অনেক সময় মেটে বাদামি মনে হতে পারে)। ডানা এবং লেজের পালক উজ্জ্বল বাদামি। চিবুক ফ্যাকাসে বাদামি। গলা সাদা। বুক মেটে বাদামি। চোখের বলয় কালো, বলয়ের পাশে সাদাছোপ। ঠোঁট ত্বক বর্ণের সঙ্গে কালচে আভা। পা হলদে কমলা অথবা ফ্যাকাসে। প্রধান খাবার: পতঙ্গ, মাছি বা ছোট অমেরুদণ্ডী প্রাণী। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। গুল্মঝোপের ভেতর কাপ আকৃতির বাসা বাঁধে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শৈবাল, তন্তু ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫ দিন। শাবক উড়তে শিখে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 24/02/2017