আমুর শাহিন | Amur Falcon | Falco amurensis
আমুর শাহিন | ছবি: ইন্টারনেট পাখির নাম ‘আমুর শাহিন’। আমুরল্যান্ডে বিচরণ আধিক্য বিধায় হয়তো এই নাম ওদের। এরা উপমহাদেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। সুদর্শন, স্লিম গড়নের পাখি। দেখতে কিছুটা ককাটিল পাখিদের মতো। পুরুষদের চেহারা চকচকে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ; ভিন্ন বর্ণের। প্রাকৃতিক আবাসস্থল খোলা মাঠপ্রান্তর, খোলা বনাঞ্চল। শিকারি পাখি হলেও স্বভাবে হিংস নয়। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আমুরল্যান্ড, ট্রান্সবিকালিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব সাইবেরিয়া, উত্তর-পূর্ব মঙ্গোলিয়া উত্তর-পূর্ব চীন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়, উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে আইসিইউএন এদের শনাক্ত করেছে তাই। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘আমুর শাহিন ’, ইংরেজি নাম: ‘আমুর ফ্যালকন’, (Amur Falcon), বৈজ্ঞানিক নাম: Falco amurensis | এরা ‘লালপা তুরমুতি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ৩০-৩৬ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৬৫-৭৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৯৭-১৫৫ গ্রাম। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি খানিকটা বড়। চেহারায় বিস্তর তফাৎ। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ গাঢ় ধূসর। ডানা খানিকটা লম্বা। দেহতল ধূসর। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত লাল। চোখের বলয় কমলা হলুদ। ঠোঁটের অগ্রভাগ কালচে বাঁকানো, গোড়া কমলা হলুদ। পা লালচে কমলা। অপরদিকে স্ত্রী পাখির চেহারা ভিন্ন। শরীরে ধূসর, হলুদ, সাদা, বাদামির মিশ্রণ ছিট। বাদবাকি পুরুষের মতো। প্রধান খাবার: ঘাসফড়িং, পতঙ্গ, ছোট পাখি ও ছোট সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। গাছের উঁচু ডালে চিকন ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। মাস খানেকের মধ্যেই শাবক স্বাবলম্বী হয় এবং বাবা-মাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/10/2017
কালোমাথা কাবাসি | Black headed Cuckooshrike | Coracina melanoptera
কালোমাথা কাবাসি | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। গড়ন ‘বেনেবউ’ প্রজাতির পাখিদের মতো। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাসস্থল আর্দ্র নিম্নভূমির বন, বাঁশ বন, ক্রান্তীয় আর্দ্র পার্বত্য বন, জলাশয়ের আশপাশের জঙ্গল। মূলত এরা বননির্ভর পাখি। গ্রামীণ বন থেকে শুরু করে নগর উদ্যানেও দেখা মেলে। তবে অবশ্য যত্রতত্র দেখা মেলে না। দেখা মেলে ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ মিটার উঁচুতেও। একাকী কিংবা ছোট দলেও দেখা মেলে। শান্ত স্বভাবের পাখি। সুমধুর কণ্ঠস্বর। ঠোঁট প্রসারিত ধীরলয়ে করে ডাকাডাকি করে। প্রজাতিটি দেশে ভালো অবস্থানে রয়েছে, বিশ্বেও অবস্থান সন্তোষজনক। পাখির বাংলা নাম: ‘কালোমাথা কাবাসি’, ইংরেজি নাম: ‘ব্ল্যাক হেডেড কুক্কুশ্রাইক’ (Black-headed Cuckooshrike), বৈজ্ঞানিক নাম: Coracina melanoptera. প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৯-২০ সেন্টিমিটার। ওজন ১৪-৩৬ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, গলা সেøট ধূসর। পিঠ ও লেজ গাঢ় ধূসর। লেজের নিচের দিকের পালক কালো-সাদা। ডানার প্রান্তপালক কালো। বুকের নিচ থেকে সাদাটে ধূসর। চোখ, ঠোঁট ও পা গাঢ় স্লেট কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ ধূসর। ডানার প্রান্ত পালকে সাদা-কালো দাগ। দেহতল কালো-সাদা ডোরা। ঠোঁট শিং কালো। বাদবাকি একই রকম। প্রধান খাবার: পোকামাকড় ও ছোটফল। বিশেষ করে ডুমুর ফলের প্রতি আসক্তি লক্ষ্য করা যায়। প্রজনন মৌসুম জুন থেকে সেপ্টেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩-৪ মিটার উঁচু বৃক্ষের ডালে বাসা বাঁধে। কাপ আকৃতির বাসা। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ফুটতে সময় লাগে ২০-২১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/02/2018
সোনালি পিঠ কাঠঠোকরা | Greater Flameback | Chrysocolaptes lucidus
সোনালি পিঠ কাঠঠোকরা | ছবি: ইন্টারনেট দেশের সুলভ দর্শন আবাসিক পাখি। দেহটা বাহারি রঙের পালকে আবৃত হলেও চোখের দিকে তাকালে ভয়ঙ্কর দর্শন মনে হয়। অনেকটা চোর বদমায়েশের মতো। প্রজাতিটির দেখা মেলে সর্বত্রই। এর মধ্যে চিরসবুজ বন, পাতাঝরা বন, প্যারাবন এবং লোকালয়ের আশপাশের বনবাদাড়ে বেশি দেখা মেলে। বিচরণ করে একা কিংবা জোড়ায় জোড়ায়। কখনো কখনো পারিবারিক দলেও দেখা যায়। মাটিতে নামে না খুব একটা। গাছের কাণ্ড বেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ওপরে ওঠে। পোকা আক্রান্ত অথবা মরা গাছের কাণ্ডে শক্ত ঠোঁটের দ্বারা আঘাত করে শিকার খোঁজে। এরা কষ্টসহিষ্ণু পাখি। রুক্ষ পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি গাছের ফাঁপা ডালে আঘাত করে আর ধাতব কণ্ঠে ডেকে ওঠে, ‘কি-কি-কি-কি-কি…’ সুরে। হঠাৎ আওয়াজটা কানে গেলে পিলে চমকে ওঠে যে কারোই। গভীর বনাঞ্চলে এদের আওয়াজ প্রতিধ্বনি হয়ে ভৌতিক সুরে রূপ নেয়। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের দেখা মেলে ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, চীন, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। দেশে এদের শত্রুর সংখ্যা নগণ্য। পাখির বাংলা নাম: ‘সোনালি পিঠ কাঠঠোকরা’, ইংরেজি নাম: ‘গ্রেটার ফ্লেমব্যাক’ (Greater Flameback), বৈজ্ঞানিক নাম: Chrysocolaptes lucidus| বাংলাদেশে মোট ২০ প্রজাতির কাঠঠোকরার সাক্ষাৎ মেলে। লম্বায় ৩৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে যথেষ্ট তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথায় লাল পালকের খাড়া ঝুঁটি। যা দূর থেকে লাল রুমি টুপির মতো দেখায়। সাদা গালে সরু কালোরেখা। চওড়া কালোটান ঠোঁটের গোড়া থেকে শুরু করে ঘাড় অবধি ঠেকেছে। পিঠ ও ডানার রং সোনালি-জলপাই হলুদ। লেজ কালো, লেজের নিন্মাংশ লাল। দেহতল নিষ্প্রভ সাদার ওপর সরু কালো টান। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথার ঝুঁটি কালো-সাদা বুটিদার। উভয়ের চোখের বলয় হলুদ, ঠোঁট নীলচে বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে অনেকটাই স্ত্রী পাখিদের মতো। প্রধান খাবার: গাছের বাকলের নিচের অথবা মরা কাণ্ডের ভেতরের পোকামাকড় এবং গাছ পিঁপড়া। ফুলের মধুর প্রতি আসক্তি লক্ষ্য করা যায়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুলাই। গাছের মরা কাণ্ডে নিজেরা গর্ত খুঁড়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। শাবক সাবলম্বী হতে সময় লাগে দিন পঁচিশেকের মতো। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/10/2014
লাল লতিকা হট্টিটি | Red wattled Lapwing | Vanellus indicus
লাল লতিকা হট্টিটি | ছবি: ইবার্ড যেখানে বড়সড়ো জলাশয় রয়েছে, সেখানে কম-বেশি ওদের বিচরণও রয়েছে। পানিতে সম্পূর্ণ শরীরটা ডুবিয়ে শিকার খোঁজে না। বড় জোর হাঁটুসমান পানিতে নেমে শিকার খোঁজে। ফাঁকা মাঠেও দেখা যায়। সকাল-সন্ধ্যা কিংবা জ্যোসনা রাতেও খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। একা কিংবা দলবদ্ধভাবেও বিচরণ করে। দেশের সর্বত্রই এ পাখিটাকে কমবেশি দেখা যায়। আমি প্রথম দেখেছি হাসাইলে। এটি মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলায় পড়েছে। গিয়েছি বছর চারেক আগে। নদীভাঙন দেখতে। পদ্মার পেটে ততক্ষণে হাসাইল বাজারটা হজম পক্রিয়ার পথে রয়েছে। হাসাইলবাসীর দুঃসময়ে পদ্মার পাড়ে পাখিটিকে দেখেছি সেদিন। একটি নয় ওরা সংখ্যায় একাধিক ছিল। দেখতে সুবিধাও হয়েছে তাই। কারণ পাখিরা একাকী থাকার চেয়ে দলবদ্ধ থাকা অবস্থায় বেশি সাহসী হয়। এতে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগও পাওয়া যায় বেশি। পাখিটা দেখতে ভারি চমৎকার। কিন্তু কণ্ঠস্বর কর্কশ। দলের অন্যদের সঙ্গে বনিবনা না হলে কর্কশ সুরে চেঁচিয়ে ওঠে, ‘হট্টিটি..টি..টি..হট্টিট-টিট্’। স্ত্রী-পুরুষের কণ্ঠে পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ কণ্ঠ একটু ভারী। কণ্ঠস্বর শুনেও স্ত্রী-পুরুষের পার্থক্য বোঝা যায়। পাখিটার বাংলা নাম: ‘লাল লতিকা হট্টিটি,’ ইংরেজি নাম: ‘রেড ওয়াটলড ল্যাপউইং’, (Red-wattled Lapwing) বৈজ্ঞানিক নাম: ‘ভ্যানেল্লাস ইন্ডিকাস’ (Vanellus indicus) গোত্রের নাম: ‘চারাড্রিআইদি’। আমাদের দেশে মোট দু’ধরনের হট্টিটি দেখা যায়। যথাক্রমে: ১. লাল লতিকা হট্টিটি, ২. হলুদ লতিকা হট্টিটি। লাল লতিকা হট্টিটি লম্বায় ৩৪-৩৭ সেন্টিমিটার। এদের চোখের সামনে টকটকে লাল চামড়া। সেটিই লতিকা। লতিকা চোখের দু’পাশ দিয়ে অতিক্রম করে গোল বৃত্তের রূপ নিয়েছে। সেটি দেখলে মনে হয় বুঝি ওরা চশমা পরে আছে। হট্টিটির গলা, বুক, মাথার তালু ও ঠোঁটের অগ্রভাগ কালো। ঠোঁটের গোড়া থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত লাল। চোখের পাশ থেকে ধবধবে সাদা টান ঘাড় হয়ে বুকের কিছু অংশসহ পেট ও লেজের তলা পর্যন্ত ঠেকেছে। ডানা বোজানো অবস্থায় পিঠ ও লেজের উপরি ভাগটা চকচকে বাদামির ওপর জলপাই রঙের আভা। পা বেশ লম্বা, বর্ণ হলুদ। হট্টিটি খুবই চতুর পাখি। চলাফেরায় থাকে অত্যন্ত হুঁশিয়ারি ভাব। এরা পাঁচ ধরনের সুরে ডাকতে পারে বিপদ সংকেত, খুশির সংকেত, ডিমপাড়া ও বাচ্চা ফোটার সংকেত, বাচ্চা হারানোর সংকেত, বিপদ মুক্তির সংকেত। এ সুরগুলো আলাদা আলাদা ভাবে কণ্ঠে তুলতে পারে। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ পোকামাকড়, কেঁচো, কচি শাকসবজি ইত্যাদি । প্রজনন সময় মার্চ থেকে আগস্ট। মিলন শেষে মাটির অগভীর গর্তে অথবা মাঠ-প্রান্তরের নিরিবিলি স্থানে বাসা বাঁধে। বাসা দেখতে হাস্যকর। মাটির ঢেলা দিয়ে তৈরি করে। চারপাশে ছোট ছোট মাটির ঢেলা সাজিয়ে থালাকৃতির বাসা বানিয়ে মাঝখানে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৩-৪টি। স্ত্রী-পুরুষ পালা করে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১-২৩ দিন। হট্টিটির বাচ্চাদের জলপান বেশ মজাদার। মা পাখিটা জলে ভেজে বাচ্চাদের কাছে এলে ওরা মায়ের ভেজা লোম চুষে জলপান করে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 30/09/2012
ফুলুরি হাঁস | Falcated Duck | Anas falcata
ফুলুরি হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট প্রিয় পাঠক, এরা বিরল পরিযায়ী পাখি। শীতে কালেভদ্রে দেখা মেলে মিঠাজলের জলাশয়ে কিংবা বাদাবন অথবা লতাগুল্মে আচ্ছাদিত জলাভূমিতে। বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায়। হাঁস গোত্রের পাখিদের সঙ্গে বেশ সখ্য রয়েছে। খাবার খোঁজে অগভীর জলে। প্রজনন মৌসুমে সাঁতার কাটতে কাটতে মুরগির মতো আওয়াজ করে। তবে ওড়ার সময় ভিন্নভাবে আওয়াজ করে। এ সময় উচ্চৈঃস্বরে শিস কাটতে শোনা যায়। তৎসঙ্গে শোনা যায়, ডানা ঝাপটানো ভন্ভন্ আওয়াজ। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, চীন, মঙ্গোলিয়া, সাইবেরিয়া, ভিয়েতনাম ও জাপান পর্যন্ত। এরা বিশ্বে প্রায় বিপদগ্রস্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘ফুলুরি হাঁস’, ইংরেজি নাম: ‘ফালক্যাটেড ডাক’, (Falcated Duck), বৈজ্ঞানিক নাম: Anas falcata | এরা ‘শিখাযুক্ত হাঁস’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ৫১ সেন্টিমিটার। ওজন ৬৫০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তফাৎ রয়েছে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রং বদলায়। এ সময় পুরুষ পাখির বর্গাকার মাথা গাঢ় সবুজ দেখায়। প্রজননের বাইরে বাদামি মিশ্রণ। প্রজনন মৌসুমে ডানার পালক লেজের ওপর গিয়ে কাস্তের মতো ঝুলে পড়ে। পিঠ ধূসর। সাদা গলায় সবুজ বেল্ট। বুকে সাদা-কালো অসংখ্য কারুকাজ। বস্তিপ্রদেশ হলুদ-কালো। ঠোঁট কালো। চোখ ঘন বাদামি। পা কালো। স্ত্রী পাখির মাথা ধূসর। শরীরে বাদামি ডোরা। ওড়ার পালক ধূসরাভ ও সাদা। প্রজনন বাইরে পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় কালো। বাদবাকি স্ত্রী পাখির মতোই দেখতে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা স্ত্রী পাখির মতো। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ ও জলজ উদ্ভিদের কচি ডগা। প্রজনন মৌসুম মে থেকে অক্টোবর। সাইবেরিয়ার পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্ব চীনের জলাশয়ের কাছাকাছি ভূমিতে শুকনো লতা ও পালক বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৬-১০টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৩-২৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/02/2015
উদয়ী পাপিয়া | Oriental cuckoo | Cuculus saturatus
উদয়ী পাপিয়া | ছবি: ইন্টারনেট অনিয়মিত পান্থ পরিযায়ী পাখি (চলার পথের পরিযায়ী)। অতি বিরল দর্শন। কোকিল গোত্রের পাখি। কালেভদ্রে বসন্তকালে সিলেটের চা বাগানে দেখা মেলে। এ সময় চা বাগান হয়ে হিমালয় কিংবা মিয়ানমার যাতায়াত করে ওরা। বলা হচ্চে উদয়ী পাপিয়ার কথা। মূলত ওরা মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। এ ছাড়াও খোলা বনভূমি অথবা ফলের বাগানে বিচরণ রয়েছে। পারতপক্ষে ভূমি স্পর্শ করে না। বিচরণ করে একাকী। স্বভাবে লাজুক। গাছের পাতা কিংবা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। সহসা কারও নজরে পড়ে না, তবে ডাক শোনা যায়। সুরে মাদকতা আছে। প্রজনন মুহূর্তে পুরুষ পাখি ডাকে ‘উউপ…উউপ’ সুরে। স্ত্রী ডাকে ‘কুঁইকুঁই কুঁইকুঁই’ সুরে। প্রজনন ক্ষণ ঊষা কিংবা গোধূলিলগ্ন। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, মিয়ানমার ও চীন পর্যন্ত। তবে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে শীতে দেখা যায়। বিশ্বে ভালো অবস্থানে রয়েছে, ফলে আই ইউ সি এন প্রজাতিটিকে বিপদমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘উদয়ী পাপিয়া’, ইংরেজি নাম: ‘ওরিয়েন্টাল কুক্কু’, (Oriental cuckoo), বৈজ্ঞানিক নাম: Cuculus saturatus | এরা ‘হিমালয়ের কোকিল’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ৩০-৩১ সেন্টিমিটার। ওজন ৯০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা ও পিঠ ধূসর-বাদামি ডোরা। লেজ কালচে ধূসর, অগ্রভাগ সাদা। গলা থেকে বুকের উপরিভাগ ধূসর ডোরা। নিচের দিকে পীতাভ-সাদার ওপর কালো ডোরা। স্ত্রী পাখির মাথা ও পিঠ লালচে-বাদামি, ওপর কালচে ডোরা। দেহতলে পীতাভ-সাদার ওপর কালচে বাদামি ডোরা। লেজে লালচে বাদামির ওপর কালচে ডোরা, লেজের নিচে সাদা খাঁজকাটা। উভয়ের চোখের বলয় হলুদ। চোখের মণি কমলা-লাল। ঠোঁট শিংঙ সবুজ। পা হলুদ। প্রধান খাবার: লোমশ শুঁয়োপোকা ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না, বিধায় ডিম পাড়ে হরবোলা ও চুটকি পাখির বাসায়। প্রাকৃতিকভাবে ডিমের রং পালক মাতার ডিমের সঙ্গে মিলিয়ে যায়। ডিমের সংখ্যা ১-২টি। ডিম ফোটার দিনক্ষণ নির্ভর করে পালক মাতার ডিমের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। ধাত্রী মাতার আশ্রয়েই শাবক লালিত হয়। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 30/11/2018
মরিচা কপাল ডোরাডানা | Rusty fronted Barwing | Actinodura egertoni
মরিচা কপাল ডোরাডানা | ছবি: ইন্টারনেট মাথায় চমৎকার ঝুঁটি। দেহের তুলনায় লেজ খানিকটা লম্বা। দেখতে বুলবুলি পাখির মতো মনে হতে পারে। আসলে এরা বুলবুলি প্রজাতির কেউ নয়। প্রজাতিটি দেশের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও যত্রতত্র দেখা যায় না। প্রাকৃতিক আবাসস্থল নাতিশীতোষ্ণ এলাকার ক্রান্তীয় আর্দ্র পার্বত্য অরণ্য। এ ছাড়া লতাগুল্মের ঝোপ কিংবা সুঁচালো চিরহরিৎ বনে বিচরণ রয়েছে। এরা একাকি বিচরণ করে না বললেই চলে। ছোট দলে বিচরণ করে। দলে কমপক্ষে ৬ থেকে ১২টি পাখি দেখা যায়। শুধু প্রজনন মৌসুমে দলত্যাগ করে জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। এদের চেহারা রাগীরাগী হলেও স্বভাবে হিংস নয়। দলের সবাই একত্রে বা মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল (হিমালয়ের পাদদেশ), ভুটান, পশ্চিম মিয়ানমার, চীন (ইউনান) পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান খুব বেশি সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘মরিচা কপাল ডোরাডানা’, ইংরেজি নাম: ‘রাস্টি ফ্রন্টেড বারউইং’ (Rusty-fronted Barwing), বৈজ্ঞানিক নাম: Actinodura egertoni | এরা ‘লালমুখ দাগিডানা’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ২২-২৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৩৩-৩৮ গ্রাম। কপাল মরিচা লাল। মাথা ও ঝুঁটি ডার্ক-বাদামি। পিঠ পাটকিলে। ডানা পাটকিলের সঙ্গে সাদা-কালো মিশ্র ডোরাদাগ। লেজ পাটকিলে হলেও অগ্রভাগ কালচে, নিচের পালকের অগ্রভাগ সাদা। থুতনি মরিচা-লাল। দেহতল বাদামি-ধূসর। ঠোঁট খাটো হলদেটে ত্বক বর্ণ। পা ত্বক বর্ণের। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তেমন কোনো পার্থক্য নেই। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, ফড়িং, বীজ, কচিপাতা। ছোট ফলের প্রতিও আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুলাই। ভূমি থেকে ৬ মিটার উচ্চতার মধ্যে কাপ আকৃতির বাসা বাঁধে। বাসা বাঁধতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস-লতা, শৈবাল, ফার্ন, শিকড় ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে কত দিন সময় লাগে সে তথ্য জানা যায়নি। লেখক: আলমশাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদওপরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/12/2016