বালি ভরত | Sand lark | Calandrella raytal
বালি ভরত | ছবি: ইবার্ড কয়েক সপ্তাহ আগে ‘ভরত’ পাখি লিখেছি। সেটি ছিল ‘বাংলা ঝাড়ভরত’। প্রজাতি দুটি একই রকম। অনেকটা চড়–ই পাখির মতো দেখতে। নবীন পাখি দেখিয়েদের পক্ষে প্রজাতি শনাক্ত করা দুরূহ বটে। পাঠক বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন বিধায় শুরুতে সে তথ্য দিয়ে রাখলাম। প্রজাতি দুটি দেখতে একই রকম মনে হলেও আকারে এবং স্বভাবে এরা কিছুটা ভিন্ন। মূলত এরা শুষ্ক বেলে মাটিতে বিচরণ করে। বিশেষ করে নদ-নদীর তটে বা দ্বীপাঞ্চলের বেলাভূমিতে বেশি দেখা যায়। নিয়মিত গোসালাদি করে। ধুলোস্নান বেশি পছন্দ। ফসল কাটা হয়েছে এমন ক্ষেতেও ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করতে দেখা যায়। শরীর দুলিয়ে গান গাইতে গাইতে খাবারাদি খোঁজে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি বেশি বেশি গান গায়। প্রজাতিটি দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, মিয়ানমার ও ইরান পর্যন্ত। বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও অঞ্চল ভেদে উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘বালি ভরত’, ইংরেজি নাম: ‘স্যান্ড লার্ক’ (Sand Lark), বৈজ্ঞানিক নাম: Calandrella raytal | এরা ‘ডোরা-বুক ধুল চড়–ই’ নামেও পরিচিত। দেশে সাত প্রজাতির ভরত দেখা যায়। তম্নধ্যে দুই প্রজাতি পরিযায়ী। প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ১২-১৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে প্রায় একই রকম হলেও সামান্য পার্থক্য রয়েছে। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ হলুদাভ পাটকিলের ওপর কালচে চওড়া বুটিক। লেজ খাটো। বুক, পেট ও লেজতল হলুদাভ ধূসর। ঠোঁট হালকা হলুদের সঙ্গে পোড়ামাটির আভা। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের আঙ্গুল গোলাপি লাল। প্রধান খাবার: অমেরুদণ্ডী প্রাণী, ছোট পোকামাকড়, ঘাস বিচি, কচিঘাসের ডগা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ঘাসবনে অথবা নলবনে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস-লতা, শুকনো ধানপাতা, খড়কুটো ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১০-১৩ দিন। শাবক উড়তে শেখে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 21/10/2016
খয়রামাথা সুইচোরা | Chestnut headed Bee eater | Merops leschenaultia
খয়রামাথা সুইচোরা | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন, স্থানীয় প্রজাতির পাখি ‘খয়রামাথা স্ইুচোরা’। দেখতে ভীষণ সুন্দর। স্বভাবে চঞ্চল হলেও হিংস্র নয়। এক সময় দেশের শালবনে প্রচুর দেখা যেত। হালে সেভাবে দেখা যায় না। মূলত এদের বিচরণ মিশ্র পাতাঝরা ও চিরসবুজ বনে। বিচরণ করে প্যারাবনেও। দেশে তুলনামূলক বেশি দেখা যায় সুন্দর বনাঞ্চলে। ছোট-বড় দলে দেখা গেলেও বেশিরভাগই থাকে জোড়ায় জোড়ায়। গাছের চিকন পত্রপল্লবহীন ডালে কিংবা টেলিফোনের তারে বসে শিকারের প্রতিক্ষায় অস্থির সময় পার করে। তবে যেখানেই বসুক না কেন, আশপাশটা ঝোপ-জঙ্গল, লতাপাতা কিংবা ঘন ডালপালাবিহীন মুক্তাঞ্চল হওয়া চাই। যাতে করে কিছু সময় পর পর উড়তে সুবিধা হয়। সব ধরনের সুইচোরা উড়ন্ত অবস্থায়ই পতঙ্গ শিকার করে। আবার জলপানেও রয়েছে বৈচিত্রতা। জলের ওপর উড়ে উড়ে ছোঁ মেরে জলপান করে। স্থিরতা এদের মাঝে খুবই কম। কোথাও একদণ্ড বসে থাকার ফুরসত নেই যেন। এরা গায়ক পাখিদের তালিকায় না পড়লেও মাঝেমধ্যে নিচু স্বরে ডাকে ‘পের্রিপ-পের্রিপ’। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও চীন পর্যন্ত। বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘খয়রামাথা সুইচোরা’, ইংরেজি নাম: ‘চেস্টনাট-হেডেড বি-ইটার’ (Chestnut-headed Bee-eater), বৈজ্ঞানিক নাম: Merops leschenaultia | এরা ‘পাটকিলে মাথা বাঁশপাতি’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে চার প্রজাতির সুইচোরা দেখা যায়। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৮-২০ সেন্টিমিটার। ওজন ৩০ গ্রাম। থুতনি, গলা ও মুখ উজ্জ্বল হলুদ। গলায় লালচে-কালো বেষ্টনী। কপাল, মাথা, ঘাড় এবং পিঠাবরণ উজ্জ্বল তামাটে। পিঠ ঘাস-সবুজ। চেরা লেজের বর্ণ সবুজ। প্রজাতির অন্যদের মতো লেজে সরু লম্বা পালক থাকে না। দেহতল সবুজাভ। শিং-কালো রঙের, ঠোঁট নিচের দিকে বাঁকানো। চোখ লাল। পা ও পায়ের পাতা কালচে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মাথার তালু ঘন সবুজ। প্রধান খাবার: উড়ন্ত কীটপতঙ্গ, মৌমাছি, উইপোকা এবং ফড়িং প্রিয় খাবার। খেজুরের রসের প্রতি আসক্তি লক্ষ্য করা যায়। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে জুন। কলোনি টাইপ বাসা। নদী বা জলাশয়ের খাড়া পাড়ে নিজেরাই সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৫-৬টি। ফুটতে সময় লাগে ২০-২১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/08/2018
পাহাড়ি টুনটুনি | Mountain Tailorbird | Orthotomus cuculatus
পাহাড়ি টুনটুনি | ছবি: ইন্টারনেট পরিচিত প্রজাতির ‘টুনটুনি’ পাখির মতো যত্রতত্র এদের দেখা মেলে না। কেবলমাত্র দেখা মেলে ক্রান্তীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বনে এবং ক্রান্তীয় আর্দ্র পার্বত্য অরণ্যে। পাহাড়ি চিরসবুজ বনের বৃক্ষতলে লতাগুল্মের ঝোঁপে এবং বাঁশবনে বিচরণ করে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, মিয়ানমার, চীন, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড পর্যন্ত। এদের মায়াবী চেহারা। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। স্থিরতা নেই খুব একটা। যেন একদণ্ড বসার সুযোগ নেই কোথাও। এই আছে তো এই নেই। তবে যেখানেই থাকুক না কেন এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকতে পছন্দ করে। জোড়ের পাখিটি সামান্য দূরে থাকলেও ডাকাডাকি করে ভাবের আদান-প্রদান চালিয়ে নেয়। সারাদিন নেচে-গেয়ে সময় কাটায়। লেজ উঁচিয়ে নাচে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি নানা কসরত দেখায় স্ত্রী পাখির মন ভোলানোর জন্য। বাসা বাঁধে মাটির কাছাকাছি গাছের ডালে। বেশ পরিপাটি বাসা। দুটি পাতাকে একত্রিত করে ঠোঁট দিয়ে সেলাই করে বাসা বাঁধে। অনেকটা দর্জির কাপড় সেলাই করার মতো। পাখির বাংলা নাম: ‘পাহাড়ি টুনটুনি’, ইংরেজি নাম: মাউন্টেন টেইলরবার্ড (Mountain Tailorbird), বৈজ্ঞানিক নাম: Orthotomus cuculatus | এরা ‘সোনালি মাথা টুনি’ নামেও পরিচিত। এরা দৈর্ঘ্য ১০-১২ সেন্টিমিটার। ওজন ৬-৭ গ্রাম। কপাল লালচে। মাথা সোনালি রঙের। ঘাড় গাঢ় ধূসর। পিঠ জলপাই-সবুজ। লেজ ও ডানা লালচে। চোখের ওপরে সাদা-হলদে টান। গলা ও বুক ধূসর। পেট ও লেজতল উজ্জ্বল হলুদ। ঠোঁট দু’পাটি ভিন্ন রঙের। ওপরের অংশ কালো, নিচের ঠোঁট কমলা রঙের হলেও গোড়া শিঙকালো। চোখ বাদামি-কালো। পা ও পায়ের পাতা মেটে-বাদামি। স্ত্রী পাখির বর্ণে সামান্য তফাৎ রয়েছে। ওদের বুকে কালো রেখার উপস্থিতি নেই। প্রধান খাবার: পোকামাকড় বা কীট পতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম মে-জুলাই সেপ্টেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে মাটির কাছাকাছি গাছের ডালে পাতা সেলাই করে। সেলাই করা বাসার ভেতর নরম তন্তু বা তুলা দিয়ে পরিপাটি করে নেয়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 29/04/2016
বাদামি কোকিল | Anas strepera | Phaenivophaeus leschenaultia
বাদামি কোকিল | ছবি: ইন্টারনেট বিপন্ন প্রজাতির পাখি ‘বাদামি কোকিল’। দেশের স্থায়ী বাসিন্দা নয় এরা। প্রাক্তন পরিযায়ী পাখি। কয়েক দশক আগে চট্টগ্রাম বিভাগে দেখা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। হালে দেশের কোথাও দেখার নজির নেই। বছর খানেক আগে শ্রীমঙ্গলের একজন পাঠক দাবি করেছেন তিনি বাদামি কোকিলের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। ভদ্রলোক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে পাখিটির ছবি ই-মেল করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। প্রজাতিটি শনাক্ত করে দেখি যে, সেটি আসলে ‘সাতভায়লা’ পাখি। চেহারা কাছাকাছি বিধায় তিনি ওই ভুলটি করেছেন। বাদামি কোকিল ভারত উপমহাদেশের শুষ্ক অঞ্চলে যৎসামন্য নজরে পড়ে। এরা সাধারণত শুষ্ক পাতাঝরা বনের ঝোপজঙ্গলে কিংবা প্রস্তরময় এলাকার ঝোপে বিচরণ করে। বেশিরভাগই একা বিচরণ করলেও মাঝেমধ্যে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। বাদামি কোকিল ঝোপজঙ্গল থেকে খাবার সংগ্রহ করলেও মাটিতে নেমে পাতা উল্টিয়ে কীটপতঙ্গ শিকার করতে দেখা যায়। মাটিতে বিচরণকালীন ভয় পেলে দৌড়াতে থাকে, উড়ার চেষ্টা করে না মোটেও। কোকিলের জ্ঞাতি ভাই হলেও অন্যের বাসায় ডিম পাড়ে না, নিজেরাই হ-য-ব-র-ল টাইপ বাসা বাঁধে। আবার হাঁকডাকও করে না খুব একটা দেশি কোকিলের মতো। মাঝেমধ্যে ‘কেক-কেক-কেক-কেরেক-কেরেক-কেরেক’ সুরে ডাকে। সুর শ্রুতিমধুর নয়, কর্কশ। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত হলেও বাংলাদেশে বিপন্ন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তাই বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত হয়েছে বাদামি কোকিল। পাখির বাংলা নাম: ‘বাদামি কোকিল’, ইংরেজি নাম: Anas strepera, বৈজ্ঞানিক নাম: Phaenivophaeus leschenaultia, গোত্রের নাম: কুকুলিদি। এরা ‘মেটে মালকোআ’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ৪২ সেন্টিমিটার (তন্মধ্যে লেজ ২২ সেন্টিমিটার)। মাথার তালু গাঢ় ধূসর। গলা ও বুকের উপরাংশ পীতাভ, এছাড়াও কালো ডোরা দেখা যায়। পেটের দিকটা লালচে-পীতাভ। লেজের নিচটা পর্যায়ক্রমে সজ্জিত। লেজের অগ্রভাগ সাদা। এছাড়াও সব দেহ বালিময় ধূসর-বাদামি। ঠোঁট লালচে, অগ্রভাগ হলুদ। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা স্লেট-বাদামি। প্রধান খাবার: টিকটিকি, ছোট সাপ, ফড়িং, শুঁয়োপোকা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে আগস্ট। মাটি থেকে খানিকটা উপরে ঝোপজঙ্গল বা গুল্মলতাদির ভেতর শুকনো পাতা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিমের বর্ণ ধবধবে সাদা। ডিম ফুটতে কত দিন সময় লাগে তা জানা যায়নি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/06/2014
ছোট তুর্কী বাজ | Shikra | Accipiter badius
ছোট তুর্কী বাজ | ছবি: ইন্টারনেট বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, দক্ষিণ চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইরান, আজারবাইজান, দক্ষিণ রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইথিওপিয়া থেকে সাহারা পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাস্থল পর্ণমোচী বদ্ধ শামিয়ানা বনভূমি। এ ছাড়াও শহরাঞ্চলেও বিচরণ রয়েছে। অন্যসব শিকারি পাখিদের মতো এরাও স্বভাবে হিংস। সাধারণত শিকারে বের হয় একাকী। তবে জোড়ায় জোড়ায়ও দেখা যায়। বন-বনানী কৃষিজমি কিংবা জলাশয় এলাকায় শিকার খুঁজে বেড়ায়। উড়তে উড়তে তীক্ষস্বরে ডাকে। হিমালয় অঞ্চলে ১৪০০ মিটার উঁচুতেও এদের দেখা যায়। দেশে প্রজাতিসুলভ দর্শন হলেও বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ছোট তুর্কী বাজ’, ইংরেজি নাম: ‘শিকরা’ (Shikra), বৈজ্ঞানিক নাম: Accipiter badius। এরা ‘পাতি শিকরে’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ৩০-৩৬ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৫৮-৬০ সেন্টিমিটার। ওজন ৭৫-১৬০ গ্রাম। মাথা নীল ধূসর। ঘাড়ে আবছা লালচে দাগ। পিঠ গাঢ় ধূসর। গলা সাদাটে। বুক ও পেট লালচে ডোরাকাটা। ধূসর লেজ কিছুটা লম্বা। উরু সাদা। চোখ লাল। ঠোঁট কালচে, নিচের দিকে বাঁকানো। ঠোঁটের গোড়া হলুদ। পা হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য তফাৎ রয়েছে। স্ত্রী পাখি আকারে খানিকটা বড়। ওদের দেহতল বেশি লালচে-বাদামি। চোখ হলুদাভ কমলা। যুবাদের রঙে পার্থক্য রয়েছে। প্রধান খাবার: ছোট পাখি, মাছ, টিকটিকি, ইঁদুর, ব্যাঙ পোকামাকড় ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে মার্চ। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের লক্ষ করা যায়। অগোছালো বাসা, শ্রীছাদ নেই। বাসা বাঁধে গাছের উঁচু ডালে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো চিকন ডালপালা। নিরাপদ হলে একই বাসায় ফি বছর ডিম-বাচ্চা ফোটায়। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩০-৩৫ দিন। শাবক শাবলম্বী হতে প্রায় মাস খানেক সময় লাগে। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/02/2017
গোলাপি কাঠশালিক | Rosy starling | Strunus roseus
গোলাপি কাঠশালিক | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন পরিযায়ী পাখি। মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে। তবে যেখানে সেখানে দেখা যায় না। দেখা মেলে সিলেটের বনাঞ্চল এবং সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চলে। দেখা মেলে দীপাঞ্চলেও। আইইউসিএন এই প্রজাতির পাখিকে বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। এরা বিচরণ করে স্যাঁতসেঁতে তৃণভূমিতে। কাঁটা ঝোপ কিংবা ছোট ফল গাছেও বসতে দেখা যায়। বিচরণ করে একাকী কিংবা ছোট দলেও। দেখতে অনেকটাই ভাত শালিক কিংবা ঝুঁটি শালিকের মতো। সাধারণের ধারণা এরা বুনো ময়না। অনেকে তাই ‘লাল ময়না’ নামেও চেনে। এরা ডাকে ‘চিক-ইক-ইক-ইক’ ধ্বনিতে। পাখির বাংলা নাম: ‘গোলাপি কাঠশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘রোজি স্টার্লিং’, (Rosy starling), বৈজ্ঞানিক নাম: Strunus roseus | গোত্রের নাম: ‘স্টুরনিদি’। এরা ‘গোলাপি শালিক’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড়, গলা, ডানা ও লেজ কালো। পিঠ, বুক এবং লেজের নিচের গোড়া পর্যন্ত হালকা গোলাপি। ঠোঁট ও পা ফিকে গোলাপি। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম মনে হলেও প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রং বদলায়। এ সময় পুরুষ পাখির গায়ের রং চকচকে গোলাপি দেখায়। মাথার ঝুঁটিও খানিকটা বেড়ে ওঠে। যুবাদের তুলনায় প্রাপ্তবয়স্কদের রং তুলনামূলক উজ্জ্বল। প্রধান খাবার: পোকামাকড় হলেও ছোট ফল, ফুলের মধু ও শস্যবীজে ভাগ বসায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। বাসা বাঁধে খাড়া মাটির দেয়ালে। বিশেষ করে উঁচু পাহাড়ের গায়ে গর্ত করে বাসা বানায়। দলের অনেকে মিলে কলোনি টাইপ বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। প্রকৃতির এক বর্ণিল প্রজাতি এই পাখি, যাদের জীবন প্রক্রিয়াও বেশ বর্ণাঢ্য। এদের রক্ষায় কী কোনো উদ্যোগ নেবে পাখিপ্রেমীরা? লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 01/06/2018
লালতলা প্রিনা | Rufous vented Prinia | Prinia burnesii
লালতলা প্রিনা | ছবি: ইন্টারনেট ‘মেটেবুক প্রিনা’ নিয়ে গত সংখ্যায় লিখেছি। আজ ওদের জ্ঞাতি ভাই ‘লালতলা প্রিনা’ নিয়ে লিখছি। উভয়ই স্থানীয় প্রজাতির পাখি। স্লিম গড়ন। মায়াবী চেহারার। তবে লালতলা প্রিনা আকারে খানিকটা বড়। স্বভাবে চঞ্চল। কণ্ঠস্বর তত সুমধুর নয়। বাদবাকি আচরণ মেটেবুক প্রিনার মতো। তবে এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভিন্ন। বাংলাদেশ ব্যতীত ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। পাখির বাংলা নাম: ‘লালতলা প্রিনা’, ইংরেজি নাম: ‘রুফাস ভেন্টেড প্রিনিয়া’ (Rufous-vented Prinia), বৈজ্ঞানিক নাম: Prinia burnesii | এরা ‘জলাভূমির লেজ-তোলা টুনি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৭ সেন্টিমিটার। ওজন ১৯ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন হলেও পুরুষ পাখির রঙে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখি গাঢ় বাদামী রঙের। স্ত্রী পাখি হালকা বাদামি। উভয়ের লেজ লম্বা, কালচে বাদামি। লেজতল লালচে। দেহতল বাদামি-সাদা। ঠোঁট খাটো, জলপাই কালচে। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা হলুদাভ ত্বক বর্ণের। প্রজনন পালক ভিন্ন। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম আগস্ট-সেপ্টেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। ভূমি থেকে এক-দেড় মিটার উঁচুতে গাছেরপাতা পেঁচিয়ে কাপ আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১০-১১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 29/12/2017