ধলালেজ ঈগল | White-tailed Eagle | Haliaeetus albicilla
ধলালেজ ঈগল | ছবি: ইন্টারনেট ধলালেজ ঈগল পরিযায়ী সামুদ্রিক পাখি। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। দেশে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার জলাশয় নদ-নদীর মোহনায় এদের সাক্ষাৎ মেলে। দেশের বিচরণরত ঈগল প্রজাতির পাখিদের মধ্যে আকারে সর্ববহৎ। খানিকটা হিংস্রও। অন্যসব শিকারী পাখিদের খাবার চিনিয়ে নিতে ইতস্ততবোধ করে না। শিকারের লোভে জলের ২০-৩০ মিটার ওপরে ধীর গতিতে বৃত্তাকারে উড়ে বেড়ায়। শিকার নজরে পড়লে ঝাঁপিয়ে পড়ে পায়ের তীক্ষè নখে বিঁধিয়ে নিয়ে উড়ন্ত অবস্থায় খেয়ে ফেলে। এ ছাড়াও গাছের ডালে অথবা মাটিতে নেমে খাবার খেতে দেখা যায়। সুযোগ পেলে এরা গবাদি পশুর মৃতদেহও খায়। এরা অনায়াসে সমুদ্র-সমতল থেকে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি সাইবেরিয়া, আলাস্কা, নরওয়ে, স্কল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড পর্যন্ত। দেশে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন এ প্রজাতিটিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ধলালেজ ঈগল’, ইংরেজি নাম: ‘হোয়াইট টেইলড ঈগল’ (White-tailed Eagle), বৈজ্ঞানিক নাম: Haliaeetus albicilla | এরা ‘সাদালেজী ঈগল’ নামেও পরিচিত। এরা দৈর্ঘ্যে ৬৬-৯৪ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৪-৫ কেজি। মাথা ফ্যাকাসে বাদামি। পিঠ গাঢ় বাদামি। কোমর কালো। লেজ সাদা। বুক ও পেট ফ্যাকাসে বাদামি। ওড়ার পালক কালো। হলুদ রঙের ঠোঁট শক্ত মজবুত, অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। পা বাদামি পালকে আবৃত। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম হলেও স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য বড়। অপ্রাপ্ত বয়য়স্কদের রঙ ভিন্ন। প্রধান খাবার: মাছ, সাপ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, ইঁদুর, ভোঁদড় ও পানকৌড়ি। অন্যসব পাখির চেয়ে জলচর পাখি বেশি ওদের শিকারে পরিণত হয়। প্রজনন সময় মার্চ থেকে এপ্রিল। তবে স্থানভেদে প্রজনন ঋতুর হেরফের দেখা যায়। বাসা বাঁধে বড় গাছের উঁচু ডালে। ডালপালা দিয়ে বড়সড়ো অগোছালো বাসা বানায়। এক বসায় বহু বছর ধরে ডিম বাচ্চা তোলে। ডিম পাড়ে ১-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৮-৪০ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৬-১০ সপ্তাহ এবং প্রজননক্ষম হতে সময় লাগে ৪-৫ বছর। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/06/2016
তিলা ঘুঘু | spotted dove | Streptopelia chinensis
তিলা ঘুঘু | ছবি: ইন্টারনেট এ পাখির নাম শুনলেই শৈশব কৈশরের কথা মনে পড়ে যায় যে কারোই। বিশেষ করে যারা গ্রাম থেকে শহরে এসে বাস গেঁড়েছেন বোধকরি তাদের প্রত্যেকের ভেতরেই এ পাখির চিত্রটা ফুটে ওঠে। পাখিটার করুণ সুরের আর্তনাদ ‘ঘুঘু-ঘুঘু বা ক্রুরর-ক্রুরর-ক্রুরর’ আওয়াজ যখন কানে ভেসে আসে তখন শ্রোতা কান খাড়া করে ডাকটা শোনেন মনোযোগ সহকারে। শুনতে শুনতে এক পর্যায়ে হারিয়ে যান গ্রামের বাঁশঝাড় অথবা ঠা-ঠা রৌদ্দুরের কোনো এক নির্জন দুপুরে। কিংবা ছাড়া বাড়ির শুকনো খটখটে ভিটির কথা মনে পড়ে। যেখানে কোনো জনমানুষের সাড়া নেই কিন্তু বাজছে ‘ঘুঘু-ঘুঘু’ সুরের মূর্ছনা। হ্যাঁ পাঠক, তিলা ঘুঘুর কথাই বলছি। এ পাখি এখনো আমাদের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য বহন করে। সাহিত্য কিংবা গানে এরা সমান দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে যুগ যুগ ধরে। কিছু নিষ্ঠুর মানুষের কারণে আজ এরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। পাখিদের মধ্যে বকের পরেই এরা সবচেয়ে বেশি শিকারিদের ফাঁদে পড়ছে। কারণ এরা সুচতুর নয়। অত্যন্ত নীরিহ গোত্রের পাখি। ফলে শিকারিরা বিভিন্ন ধরনের কায়দা করে ওদেরকে ফাঁদে ফেলছে। এ ছাড়াও এয়ারগানের টার্গেটে এ পাখিই বেশি পড়ছে। আবার গ্রামগঞ্জের বিলাসি মানুষের খাঁচায় এ পাখিই বন্দি হচ্ছে বেশি। তার প্রধান কারণ ঘুঘুরা বাসা বাঁধে একেবারেই মানুষের নাগালের ভেতরে। মাঝে মধ্যে এত নিচু স্থানে বাসা বাঁধে যে, শিশু-কিশোরদের ফাঁদে শাবকসহ বড় পাখিও ধরা পড়ে যায়। তারপর সেখান থেকে শাবক চলে যায় বন্দি জীবনে। আর প্রাপ্তবয়স্ক পাখিরা চলে যায় দা-বঁটির নিচে। আমাদের সৌভাগ্য এতসব অত্যাচারের পরেও এরা সন্তোষজনক হারে এ দেশে বিচরণ করছে। আমাদের দেশে বহু প্রজাতির ঘুঘু নজরে পড়ে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তিলা ঘুঘু, লাল ঘুঘু, সবুজ ঘুঘু, রাম ঘুঘু, রাজ ঘুঘু, ধূমকল, ক্ষুদে ঘুঘু ইত্যাদি। এর মধ্যে তিলা ঘুঘুর দেখা মেলে যত্রতত্র। অনেকটাই আমাদের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। পাখিটার বাংলা নাম: ‘তিলা ঘুঘু’, ইংরেজি নাম: ‘স্পটেড ডাভ’, (spotted dove), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘স্ট্রেপটোপেলিয়া চাইনেনসিসি’, (Streptopelia chinensis), গোত্রের নাম: ‘কলম্বিদি’। লম্বায় এরা ২৮-৩০ সেন্টিমিটার। কপাল, মাথা, মুখ, গলা, বুক বেগুনি-গোলাপি। ডানার ওপর সাদা ছিট ছিট। ঘাড়ের দু’পাশে কালোর ওপর সাদা চিতি। লেজ কালচে-বাদামি। লেজের তলা সাদা। ঠোঁট কালচে। চোখের চারপাশের বলয় লালচে। পা-পায়ের পাতা সিঁদুরে লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। তবে আকারে স্ত্রী পাখি সামান্য ছোট। এদের প্রিয় খাবার শস্যদানা হলেও ধান, কাউন, সরিষার প্রতি আসক্তি বেশি। আবার খুটে খুটে মাটিও খেতে দেখা যায়। প্রজনন সময় সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত। এ ছাড়াও গ্রীষ্মেও ডিম পাড়তে দেখা যায়। যে কোনো গাছেই এরা বাসা বাঁধে। নারিকেল, সুপারি, আমগাছ থেকে শুরু করে একেবারে শিম, লাউগাছের ঝোপেও বাসা বাঁধে। বাসা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চিকন লতা বা শুকনো দূর্বাঘাস। ডিম পাড়ে ১-২টি। বেশিরভাগ সময় ২টি ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি উভয়ে মিলেই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: মানবকণ্ঠ, 18/01/2013
হলুদগলা কাঠঠোকরা | Yellow naped Woodpecker | Picus flavinucha
হলুদগলা কাঠঠোকরা | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন, আবাসিক পাখি। প্রথম দর্শনে যে কারও নজর কাড়তে সক্ষম। বাসস্থান দেশের গভীর বনাঞ্চলে হলেও বেশির ভাগই বিচরণ চিরসবুজ পাতাঝরা বনের বড় পাতাধারী সুউচ্চ বৃক্ষের কাণ্ডে। পাহাড়ের পাদদেশে কিংবা চা বাগানেও সাক্ষাৎ মেলে। সাক্ষাৎ মেলে কমবেশি প্যারাবনেও। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় বিস্তৃতি রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এরা সাধারণত জোড়ায় কিংবা পারিবারিক ছোট দলে বিচরণ করে। জোড়ের পাখির সঙ্গে সাক্ষাৎ না ঘটলে যোগাযোগ রক্ষার্থে ‘পি-উ… পি-উ…’ সুরে চেঁচিয়ে ওঠে। সুর বড়ই করুণ। পেঙ্গা ও ফিঙ্গে পাখিদের সঙ্গে এদের খানিকটা ভাব লক্ষ্য করা যায়। সুযোগ পেলে ওদের সঙ্গে শিকারেও বের হয়। এ ছাড়া নিজেরা সকাল এবং গোধূলিলগ্নে নিয়ম করে শিকারে বের হয়। গাছের উঁচু খাড়া ডালের বাকল ঠুকরে শিকার খোঁজে। ভেতরে পোকামাকড়ের সন্ধান মিললে লম্বা শক্ত, আঠালো জিহ্বার সাহায্যে তা বের করে আনে। পায়ের শক্ত নখর দিয়ে অাঁকড়ে ধরে গাছের খাড়া কাণ্ডে তরতরিয়ে লাফিয়ে উপরে ওঠে। প্রজনন মৌসুমে বনপ্রান্তরে ছোটাছুটি বেড়ে যায়। বেড়ে যায় হাঁকডাকও। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘হলুদ-গলা কাঠঠোকরা’। ইংরেজি নাম: ‘ইয়েলো-নেপড উডপেকার’,(Yellownaped Woodpecker) বৈজ্ঞানিক নাম: ‘পাইকাস ফ্লাভিনুচা’, (Picus flavinucha) গোত্রের নাম: ‘পাইকিদি’। দেশে প্রায় ২০ প্রজাতির কাঠঠোকরা নজরে পড়ে। এরা ‘বড় হলদেকুড়ালি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি লম্বায় ৩৩ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখির মাথা ও ঘাড়ে সিংহের কেশরের মতো খাড়া সোনালি-হলুদ ঝুটি রয়েছে। গলা সোনালি-হলুদ, গলার দুপাশ কালো। পিঠ হলদে সবুজ। ডানার প্রান্তের পালক লালচে বাদামির ওপর কালো পট্টি। লেজ কালো। শক্ত-পোক্ত ঠোঁটটি হলদে-ধূসর, গোড়া কালচে, অগ্রভাগ মোম সাদা। চোখ বাদামি গাঢ় লাল। পা ও পায়ের পাতা ধূসর সবুজ। স্ত্রী-পুরুষ পাখির বর্ণে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। ওদের থুঁতনি, গলা লালচে বাদামি। এ ছাড়া আকারে সামান্য বড় পুরুষ পাখি। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ঘাড় ফ্যাকাসে, গলায় কালোচিতি এবং পেট ধূসর। প্রধান খাবার: গাছ পিঁপড়া এবং গাছের বাকলে লুকিয়ে থাকা পোকামাকড়। ফুলের মধুর প্রতি আসক্তি লক্ষ্য করা যায়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। গাছের মরা কাণ্ডে গর্ত বানিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে তিন-চারটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮ থেকে ২০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 07/09/2018
কালো ঝুঁটি শালিক | Pale bellied Myna | Acridotheres cinereus
কালো ঝুঁটি শালিক | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। গ্রাম-গঞ্জে দেখা মেলে। হুবহু ঝুঁটি শালিকের মতো দেখতে। শুধু গায়ের রঙে পার্থক্য। আকার আকৃতি ঝুঁটি শালিকের মতো। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। চাষাবাদ চলছে এমন ক্ষেত-খামারে বিচরণ খানিকটা বেশি। এ ছাড়াও মুক্ত এলাকায় নজরে পড়ে। গবাদিপশুর পিঠে চড়ে পোকামাকড় খেতে দেখা যায়। বেশির ভাগই জোড়ায় দেখা যায়। দেখা যায় একাকী কিংবা ছোট দলেও। নজরে পড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায়ও। কণ্ঠস্বর কর্কশ। ঝগড়াটে স্বভাবের হলেও হিংস নয়। ভালো পোষ মানে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। এ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, পূর্ব তিমুর পর্যন্ত বিস্তৃতি রয়েছে। দেশে খুব বেশি নজরে না পড়লেও বিশ্বব্যাপী হুমকি নয় এরা। পাখির বাংলা নাম: ‘কালো ঝুঁটি শালিক’, ইংরেজি নাম: ‘পেল-বেলিড ময়না’ (Pale-bellied Myna), বৈজ্ঞানিক নাম: Acridotheres cinereus| এ ছাড়াও এরা ‘ধলাতলা শালিক’ ও ‘ধূসরপেট ঝুঁটি শালিক’ নামে পরিচিত। দেশে মোট ১১ প্রজাতির শালিক দেখা যায়। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। কপাল, মাথার তালু থেকে ঘাড়ের ওপরের অংশ মসৃণ কালো। কপাল খাড়া। ঠোঁটের গোড়া থেকে খাড়া ঝুঁটি। গলা-ঘাড় কালো মিশ্রিত ধূসর। পিঠ ও কোমর ধূসর-সাদা। ডানার পালক কালো। লেজের মধ্যখানে কালো মোটা দাগ। লেজের প্রান্তর সাদা। দেহতল ধুসর সাদা। ঠোঁট হলুদ। চোখের বলয় হলুদ। পা উজ্জ্বল হলুদ। প্রধান খাবার: পোকা-মাকড়। এ ছাড়া শস্যদানাও খেতে দেখা যায়। ভাত, পাউরুটি এসবও খায়। প্রজনন সময় গ্রীষ্মকাল। নদী বা খালের খাড়া পাড়ে গর্ত করে বাসা বাঁধে। এ ছাড়াও দালান-কোঠা, পুরনো পুলের ফোঁকরে বাসা বাঁধে। শুকনো ঘাস লতাপাতা ঢুকিয়ে ডিম পাড়ার উপযোগী করে নেয়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/03/2017
ছোট ফুলঝুরি | Pale-billed Flowerpecker | Dicaeum erythrorynchos
ছোট ফুলঝুরি | ছবি: ইন্টারনেট এরা অতি সুলভ দর্শন স্থানীয় প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পশ্চিম মিয়ানমার পর্যন্ত। বিচরণ করে পর্ণমোচী অরণ্য, ফুল এবং ফল বাগানে। অস্থিরমতি পাখি। সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটায় গাছের চিকন ডালে লাফিয়ে লাফিয়ে। আর ‘চিক্..চিক্..চিক্..’ সুরে গান গাইতে থাকে। পাখির বাংলা নাম: ‘ছোট ফুলঝুরি’, ইংরেজি নাম: ‘প্লেইন-বেলিড্ ফ্লাওয়ার পেকার’ (Pale-billed Flowerpecker), বৈজ্ঞানিক নাম: Dicaeum erythrorynchos। এরা ‘মেটেঠোঁট ফুলঝুরি’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ৮ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত ধূসরাভ-জলপাই। দেহতল ধূসরাভ। ঠোঁট ত্বক রঙের। ঠোঁটের গোড়া প্রশস্ত, ডগা সরু। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা কালো। প্রধান খাবার: ফুলের মধু, মাকড়সা, ছোট পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের দেখা যায়। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ৩-৭ মিটার উঁচুতে গাছের চিকন ডালে। বাসা নাশপতি আকৃতির। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে গাছের সরু তন্তু, শ্যাওলা, তুলা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৪ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, ১৯/০৬/২০১৫
পাতি পাপিয়া | Common Cuckoo | Cuculus canorus
পাতি পাপিয়া | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন পরিযায়ী পাখি। শুধুমাত্র গ্রীষ্মে পরিযায়ী হয়ে আসে বাংলাদেশে। মাঝে মধ্যে শরৎ এবং বসন্তকালে দেখা যাওয়ার নজির রয়েছে। সমগ্র দেশে দেখা না গেলেও ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট বিভাগের বনাঞ্চলে দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। সাধারণত এরা চিরসবুজ বন অথবা আর্দ্র পাতাঝরা বনে বিচরণ করে। এছাড়াও পর্বতের পাদদেশে তৃণভূমিতে পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। বনের গাছ-গাছালির উঁচু ডালে নিজেদের আড়াল করে রাখে। বেশিরভাগ সময় একাকী বিচরণ করে। ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে কর্মচঞ্চলতা বেড়ে যায়। স্বভাবে কিছুটা লাজুক। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির হাঁকডাক বেড়ে যায়। স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করতে ‘কুক-কু…কুক-কু..’ সুরে ডাকতে থাকে। স্ত্রী পাখি ডাকে সাড়া দেয় ‘হুয়িহুয়িহুয়ি..’ সুরে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত (সমস্ত ভারতে বিচরণ রয়েছে) এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ পর্যন্ত। বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশে এদের অবস্থান মোটেও সন্তোষজনক নয়। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘পাতি পাপিয়া’, ইংরেজি নাম: ‘কমন কুক্কু’ (Common Cuckoo), বৈজ্ঞানিক নাম: Cuculus canorus | এরা ‘গায়ক কোকিল’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির দৈর্ঘ্য কম বেশি ৩৩ সেন্টিমিটার। ওজন ৯০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির থুতনি, গলা ফ্যাকাশে ছাই রঙের। পিঠ ধূসর। বুক ফ্যাকাশে ছাই। পেট সাদা। লেজের নিচের কোর্ভাটের ওপর কালো সরু ডোরা। লেজ কালচে-বাদামি। লেজের প্রান্ত পালক সাদা। অপরদিকে স্ত্রী পাখির চেহারা দু’ধরনের। একটি কলিজা রঙের। পিঠ কালচে-বাদামি ডোরা এবং দেহতল কালচে ডোরা। অন্যটির চেহারায় ধূসর, বুকের নিচে লালচে। এছাড়া পুরুষ পাখির সঙ্গে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। উভয়ের ঠোঁটের গোড়া হলদে এবং ডগা শিং-বাদামি। চোখ হলুদ। পা ও পায়ের পাতা কমলা-হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ঘাড়ের পেছন দিকে সাদা চিতি এবং পালকে সাদা পাড়। প্রধান খাবার: লোমশ শুঁয়োপোকা ও অন্যান্য পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর। হিমালয় ও সাইবেরিয়াঞ্চলে ডিম পাড়ে। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না। ডিম পাড়ে তুলিকা, খঞ্জন, জাড়ফিদ্দা ও চটকের বাসায়। পালক মাতাদের অগোচরে মিনিট খানেকের মধ্যেই ডিম পেড়ে পালিয়ে যায়। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এরা খুব সহজে পালক মাতার ডিমের সঙ্গে নিজেদের ডিমের রঙ মিলিয়ে পাড়তে পারে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 15/05/2015
নদীচিল | River Tern | Sterna aurantia
নদীচিল | ছবি: ইন্টারনেট স্থানীয় জলচর পাখি। স্লিম গড়ন। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত। এতদাঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা এরা। বিশ্বের অন্যান্য স্থানে কমবেশি নজরে পড়ে। বিচরণ করে উপকূলীয় অঞ্চলের বড় নদী, মোহনা কিংবা বড় বিল-ঝিলে। বেশিরভাগই দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। দেখা যায় একাকী অথবা জোড়ায়-জোড়ায়ও। বছরের যে কোনো সময় এদের সাক্ষাৎ মেলে। জলের ওপর বিক্ষিপ্ত ওড়াউড়ি করে। স্থিরতা এদের মাঝে নেই বললে চলে। শুধুমাত্র মাছের সাক্ষাৎ পেলে ঝপাৎ করে জলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শিকার করা মাছ ঠোঁটের ফাঁকে রেখে উড়তে থাকে। স্বভাবে চঞ্চল হলেও হিংস্র নয়। পারতপক্ষে খুব একটা হাঁকডাক করে না। ওড়ার সময় সামান্য আওয়াজ করে। এছাড়া ভয় পেলে মধুর কণ্ঠে ‘ক্রিয়াক… ক্রিয়াক…’ সুরে ডেকে ওঠে। পাখির বাংলা নাম: ‘নদীচিল’, ইংরেজি নাম: ‘রিভার টার্ন’, (River tern) বৈজ্ঞানিক নাম: Sterna aurantia| এরা ‘নদীয়া পানচিল’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ৩৮-৪৩ সেন্টিমিটার। শীতে রং বদলায়। এ সময় মাথা থেকে ঘাড় পর্যন্ত কালচে ফুটকির সঙ্গে সরু টান থাকে। গ্রীষ্মে কপাল, ঘাড় কালো দেখায়। দেহের উপরি ভাগ মলিন ধূসর। ডানা সুচালো। লেজ লম্বা, কাস্তের মতো বাঁকানো। লেজের উপরি অংশ কালচে ধূসর। দেহতল সাদাটে। ঠোঁট লম্বাটে হলুদ। পা খাটো, লাল। পায়ের পাতা হাঁসের পায়ের মতো জোড়া লাগোনো। প্রধান খাবার: মাছ। পচাগলা খাবারের প্রতি আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। বাসা বাঁধে নদীর কিনারে অথবা দ্বীপাঞ্চলে। বিশেষ করে নির্জন বালুবেলার ওপর খোদল করে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 19/12/2014