হলদে পা নাটাবটের | Yellow Legged Buttonquail | Turnix tanki
হলদে পা নাটাবটের | ছবি: ইন্টারনেট বিরল প্রজাতির আবাসিক পাখি। উনিশ শতকের দিকে চট্টগ্রাম বিভাগে দেখা গেছে। সম্প্রতি ঢাকা ও সিলেট বিভাগে দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড ও কোরিয়া পর্যন্ত। হলদে পা নাটাবটের বিশ্বে বিপন্মুক্ত বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। দেশের বন্যপ্রাণী আইনে এদের সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়নি। প্রজাতিটি স্বভাবে হিংসুটে নয়। স্বগোত্রীয়দের আগমনে বিরক্ত হয় না। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় তৃণভূমিতে বিচরণ করে। খুব সাবধানে হেঁটে বেড়ায়। প্রজননকালীন সময়ে হাঁকডাক বেড়ে যায়। এ সময় জোরে জোরে ডাকে ‘হু-ওন… হু-ওন…’ সুরে। প্রজাতিটি দেশের সর্বত্র যত্রতত্র দেখা না গেলেও খুলনা, বাগেরহাট, ফকিরহাট, যশোর, কুষ্টিয়ার আখমহালে দেখা মেলে। পাখির বাংলা নাম: ‘হলদে পা নাটাবটের’, ইংরেজি নাম: ‘ইয়োলো লেগড বাটন কোয়েল’ (Yellow-legged Buttonquail), বৈজ্ঞানিক নাম: Turnix tanki | বাংলাদেশে তিন প্রজাতির নাটাবটের সাক্ষাৎ মেলে। যেমন দাগি নাটাবটের, হলদে পা নাটাবটের, ছোট নাটাবটের। লম্বায় ১৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৪০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির রং ভিন্ন। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রং বদলায়। এ সময় মাথার তালু পীতাভ ডোরাসহ কালচে দেখায়। পিঠ বাদামি-ধূসর। ডানার কোভার্ট পীতাভ। পিঠ, বুকের পাশ ও বগলে কালো চিতি। থুঁতনি ও গলা সাদাটে। অপরদিকে স্ত্রী পাখির ঘাড় লালচে। গলা ও ঘাড়ের পাশ এবং বুক লাল-কমলা। অপ্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী পাখির মাথার তালুতে পীতাভ ডোরা থাকে। তা ছাড়া ঘাড় থাকে লাল-ধূসর। লেজের গোড়ার দিকের পালক ধূসরাভ। উভয়ের চোখ সাদা। ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা হলুদ। প্রধান খাবার: শস্যবীজ, পিঁপড়া ও পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে নভেম্বর। ঝোপ-জঙ্গলের ভেতর মাটির ওপর ঘাস-লতা দিয়ে গম্বুজ আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/02/2015
ধূসরাভ মেঠো চিল | Northern Harrier | Circus cyaneus
ধূসরাভ মেঠো চিল | ছবি: ইন্টারনেট শীতের পরিযায়ী। বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। এ ছাড়াও কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো পর্যন্ত বিস্তৃতি রয়েছে। প্রাকৃতিক আবাস্থল ধানক্ষেত, গমক্ষেত, উন্মুক্ত বনভূমি, ছোট নদ-নদী ও জলাশয়ের আশপাশ। ক্ষেত খামারের ওপর চক্কর দিয়ে শিকার খুঁজে বেড়ায়। একাকী কিংবা জোড়ায় বিচরণ করে। অনেক সময় ছোট দলেও দেখা যায়। চেহারায় হিংস তার ছাপ লক্ষ করা গেলেও স্বভাবে তত হিংস নয়। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। মূলত শস্যক্ষেতে ব্যাপক কীটনাশকের ব্যবহার এবং আবাসন সংকটের কারণে প্রজাতিটি হুমকির মুখে পড়েছে এবং প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে আইইউসিএন এদের ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ধূসরাভ মেঠো চিল’, ইংরেজি নাম: ‘নর্দান হ্যারিয়ার’ (Northern Harrier), বৈজ্ঞানিক নাম: Circus cyaneus। এরা ‘মুরগি কাপাসি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্যে ৪১-৬১ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির গায়ের রঙ ভিন্ন। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি আকারে বড়। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও ডানা গাঢ় ধূসর। লেজের ছয়-আটটি পালক ধূসর বাদামি। দেহতল ধূসরাভ হলদে। স্ত্রী পাখির মাথা ও পিঠ ধূসর বাদামি। উভয়ের শিং কালো রঙে ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। পা ও পায়ের পাতা হলুদ, নখ কালো। পুরুষ পাখির ঠোঁটের গোড়া হলদেটে। চোখ হলুদ। যুবাদের রঙ ভিন্ন। প্রধান খাবার: ব্যাঙ, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, ছোট পাখি, ইঁদুর, খরগোশ ও বড় পোকামাকড়। প্রজনন সময় মধ্য এপ্রিল থেকে মে। বাসা বাঁধে ঝোপের ভেতর, জলাভূমির কাছে মাটিতে চিকন ডালপালা, নলখাগড়া, ঘাস দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩০-৩২ দিন। সপ্তাহ চারেকের মধ্যে শাবক স্বাবলম্বী হয়। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 08/09/2017
শিয়ালে কীট কুড়ানি | Chestnut bellied Nuthatch | Sitta castanea
শিয়ালে কীট কুড়ানি | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না, বিরল দর্শন। পার্বত্য চট্টগ্রামে যৎসামান্য দেখা যেতে পারে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল ক্রান্তীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বন, ক্রান্তীয় পার্বত্য অরণ্য, খোলা পর্ণমোচী বন। শালবন বেশি পছন্দের। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। হিংস নয়। স্বভাবে অত্যন্ত চঞ্চল। কাঠঠোকরা পাখিদের মতো গাছের খাড়া কাণ্ডে খুব দ্রুত হেঁটে উঠতে পারে। নিমেষেই গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে কীট-পতঙ্গ খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে যায়। হয়তো এ জন্যই এদের নামকরণ হয় ‘কীট-কুড়ানি’। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, তিব্বত, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। এরা বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘শিয়ালে কীট-কুড়ানি’, ইংরেজি নাম: ‘চেস্টনাট বেলিড নাটহ্যাচ’ (Chestnut-bellied Nuthatch), বৈজ্ঞানিক নাম: Sitta castanea | এরা ‘খয়রাপেট বনমালী’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি গড় দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৯ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য আছে। কপাল ও ঘাড় রূপালী-ধূসর। পিঠ ধূসর। লেজ খাটো, কালো-ধূসর। মাথার দু’পাশ দিয়ে কালোটান ঘাড়ের কাছে পৌঁছে নিচে নেমেছে। ডানার প্রান্ত পালক কালচে-ধূসর। দেহতল শিয়ালে রঙের অথবা খয়েরি। ঠোঁট কালচে। পা ধূসর-কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথা, পিঠ ও লেজ বাদামি ধূসর। দেহতল হালকা খয়েরি। বাদবাকি একই রকম। প্রধান খাবার: কীট-পতঙ্গ, পোকামাকড়, মাকড়সা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে। শ্যাওলা, তন্তু, শুকনো ঘাস, পালক ইত্যাদি বাসা বানানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/03/2017
সাদা কালো লাটোরা | Bar winged flycatcher shrike | Hemipus picatus
সাদা কালো লাটোরা | ছবি: ইন্টারনেট গায়ের রং জাতীয় পাখি দোয়েলের মতো সাদা-কালো। তবে দোয়েলের মতো অত গাট্টাগোট্টা নয়, সিøম গড়নের। অনেকটাই সহেলী পাখির মতো দেখতে। আকার-আকৃতিও তদ্রুপ। সুদর্শন। মুখায়বটা রাগিরাগি মনে হলেও আসলে তত হিংস নয় এরা। দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। নজরে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে, তবে কম। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত (সিমলা ও পূর্ব মনিপুর) নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, লাওস ও পূর্ব ইন্দোনেশিয়ায় পর্যন্ত। এ ছাড়া হিমালয় অঞ্চলে নজরে পড়ে। বিচরণ করে ঘাসবনে একাকি কিংবা দলবেঁধে। উড়ন্ত কীটপতঙ্গ শিকার করে। উড়ন্ত অবস্থায় দ্রুত বাঁক নিতে পারে। ডাকে ‘হুইর হুইরি বা টিসিট টিট্ টিট্’ সুরে। প্রজনন মৌসুমে হাঁকডাক বেড়ে যায়। প্রজাতিটি বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়, স্থিতিশীল। পাখির বাংলা নাম: ‘সাদা-কালো লাটোরা’, ইংরেজি নাম: ‘বার-উংগেড ফ্লাইক্যাচার শ্রাইক’ (Bar-Winged Flycatcher Shrike), বৈজ্ঞানিক নাম: Hemipus Picatus | এরা ‘ফিনফিনে’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ১৪-১৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৮-৯ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির গলা-বুক-পেট সাদা। মাথা-পিঠ পালিশ কালো। ডানার প্রান্ত এবং লেজ কালো। চিবুক-গলা সাদা। বুকে সাদা-গোলাপি আভা। লেজতল সাদা। অপরদিকে স্ত্রী পাখির ক্ষেত্রে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির কালো রঙের জায়গাগুলোতে স্ত্রী পাখির কালচে-বাদামি রং। বাদবাকি একই রকম। উভয়ের ঠোঁট-চোখ-পা কালো। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মার্চ-মে। শ্রীলঙ্কায় ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট। এ ছাড়া অঞ্চলভেদে প্রজনন সময়ের হেরফের লক্ষ্য করা যায়। বাসা বাঁধে ১০-১২ মিটার উচ্চতায় গাছে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে মাকড়সার জাল, চিকন লতা-শিকড় ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 23/09/2016
বাজপাখি | Common Buzzard | Buteo buteo
বাজপাখি | ছবি: ইন্টারনেট শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। নজরে পড়ে খোলা মাঠ-বিল প্রান্তরে। খরগোশ, সাপ, গলিত মাংস, কীটপতঙ্গ এসব শিকার করে। পারতপক্ষে জলাশয় থেকে মাছ শিকার করে না। চাষাবাদ হয় এমন ক্ষেত-খামারের কাছাকাছি বেশি নজরে পড়ে। ফসলের ক্ষেত্রেও বিচরণ রয়েছে। বিচরণ করে জোড়ায় কিংবা ছোট দলে। অনেক ক্ষেত্রে ১০-১৫টির দলেও দেখা যায়। আকাশের অনেক উঁচুতে উঠে অনেকখানি পরিধি নিয়ে ঘুরতে থাকে। দীর্ঘক্ষণ শূন্যে ভেসে থাকতে পছন্দ করে। এরা শিকারি পাখি হলেও স্বভাবে তেমন হিংস নয়। প্রজাতির চারাভিযান বাংলাদেশ, ভারত, ইউরোপ, রাশিয়া, আফ্রিকা, তুরস্ক, জাপান, থাইল্যান্ড, হংকং এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। বিশ্বে এরা ভালো অবস্থানে নেই। >পাখির বাংলা নাম: ‘বাজপাখি’, ইংরেজি নাম: ‘কমন বাজার্ড’ (Common Buzzard), বৈজ্ঞানিক নাম: Buteo buteo | এরা ‘পাতি তিসাবাজ’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ৪০-৫৮ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৪২৭ গ্রাম। প্রসারিত পাখা ১০৯-১৩৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী পাখি সামান্য বড়। মাথা, ঘাড়, পিঠ, ডানা ও লেজ কালচে বাদামির সঙ্গে সাদা ছোপ। ঘাড়ে, গলায় সাদা ছোপ স্পষ্ট। বুক, পেট ও বস্তি প্রদেশ হলদে বাদামির ওপর হলদে সাদা ছিট। চোখের বলয় হলুদ। কালো মণির চারপাশ বাদামি। বড়শির মতো বাঁকানো ঠোঁট কালো, গোড়া হলুদ রঙের। মুখের কিনারটাও হলুদ। পা হলুদ ও নখ কালো। প্রধান খাবার: খরগোশ, ছোট সাপ, ইঁদুর, টিকটিকি, ব্যাঙ, কাঁকড়া, পোকামাকড় ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মধ্য এপ্রিল। গাছের উঁচু শিখরে সরু ডালপালা দিয়ে অগোছালো বাসা বাঁধে। মাটিতে বা পাথুরে এলাকায়ও বাসা বাঁধে। একই বাসা বারবার ব্যবহার করে। ডিমের সংখ্যা ২-৪টি। তিন দিন অন্তর ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৩-৩৫ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৬-৮ সপ্তাহ। তিন বছর বয়সে বয়োপ্রাপ্ত হয়। গড় আয়ু ২৫ বছর। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 05/05/2017
কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা | Collared scops owl | Otus lettia
কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা | ছবি: ইন্টারনেট মূলত এরা একই প্রজাতির পাখি। দেখতেও অনেকটা একই রকম। স্বভাবেও মিল রয়েছে খানিকটা। ভয়ঙ্কর দর্শন। গোলাকার চোখ। গোলাকার শারীরিক গঠনও। নিশাচর পাখি। কেবল রাতের আঁধার নেমে এলে শিকারে বের হয়। দিনে গাছের বড় পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। কিছুটা লাজুক স্বভাবের বলা যায়। অন্যসব শিকারি পাখিদের মতো অত হিংস্র নয়। চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। মিশ্র চিরহরিৎ বনে দেখা যায়। এছাড়াও বাঁশ বনে কিংবা নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চলে দেখা মেলে। একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায় গাছের ডালে চোখ প্রসারিত করে চুপচাপ বসে থাকে। ওই অবস্থায় যে কেউ দেখলে ভয় পেতে পারেন। তার ওপর গুরুগম্ভীর সুরে ডেকে ওঠে, ‘গুগ গুক..গুগ গুক..’। যার ফলে পিলে চমকে ওঠে অনেকেরই। আসলে ওরা একেবারেই নিরীহ প্রাণী। অন্যসব প্যাঁচাদের মতো এরাও মাথা ঘুরিয়ে ঘাড়ের ওপর নিয়ে ঠেকাতে পারে। শিকার সন্ধানে পদ্ধতিটি দারুণ কাজে দেয়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া উত্তর-ভারত, পশ্চিম হিমালাঞ্চল, শ্রীলঙ্কা, উত্তর পাকিস্তান, চীন ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা’, ইংরেজি নাম: ‘কলারড স্কপস আউল’ (Collared scops owl), বৈজ্ঞানিক নাম: Otus lettia| এরা ‘বন্ধনীযুক্ত নিমপোখ’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৩-২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। ওজন ১০০-১৭০ গ্রাম। মাথার দু’পাশে কান পশম রয়েছে, যা ঝুঁটি আকৃতির দেখায়। চোখের দু’পাশে কপালের ওপর সাদা টান। মুখমণ্ডল হলদে-বাদামি। দেহের উপরাংশ ধূসর-বাদামি রঙের ছিট ছিট। দেহের নিচের দিকে হলদে-বাদামির ওপর টানা কালো রেখা। চোখের তারা গাঢ় বাদামি। শিং রঙা ঠোঁট আকারে খাটো, নিচের দিকে বড়শির মতো বাঁকানো। পায়ের আঙুল ফ্যাকাসে হলদে। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ, গোবরে পোকা, ইঁদুর, টিকটিকি, ফড়িংসহ অন্যান্য পোকামাকড়। সুযোগ পেলে ছোট পাখিও শিকার করে। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। মরা গাছের ৩-৫ মিটার উঁচুতে প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৩-২৫ দিন। শাবক শাবলম্বী হতে মাসখানেক লেগে যায়। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 28/08/2015
প্যারা শুমচা | Mangrove Pitta | Pitta megarhyncha
প্যারা শুমচা | ছবি: ইন্টারনেট স্থানীয় প্রজাতির বনচর পাখি। গড়ন ত্রিভুজাকৃতির। আকর্ষণীয় চেহারা। শরীরের তুলনায় লেজের দৈর্ঘ্য বেমানানই বটে। হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে কেউ লেজটা কেটে দিয়েছে। চিরসবুজ অরণ্যের বাসিন্দা। দেশে বলতে গেলে একমাত্র সুন্দরবনেই দেখা মেলে। সাধারণত একাকী বিচরণ করে। তবে মাঝেমধ্যে জোড়ায়ও দেখা যায়। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। ওড়ার চেয়ে লাফায় বেশি। খুব ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। রাতেও খাবার খোঁজে। অথচ রাতে খুব বেশি চোখে দেখে না। এ অবস্থায় শত্রুর মুখোমুখি হলে আন্দাজে ডানা ঝাপটে কেটে পড়ে। বিষণ্ন কণ্ঠে ঠোঁট উঁচিয়ে ডাকাডাকি করে। সুর সুমধুর। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত। পাখির বাংলা নাম: ‘প্যারা শুমচা’, ইংরেজি নাম: ‘ম্যানগ্রোভ পিট্টা’ (Mangrove Pitta), বৈজ্ঞানিক নাম: Pitta megarhyncha। কারো কারো কাছে ‘সুন্দরবনের শুমচা’ নামেও পরিচিত। দেশে মোট পাঁচ প্রজাতির শুমচা পাখির দেখা মেলে। যথাক্রমে: প্যারা শুমচা, দেশি শুমচা, নীলঘাড় শুমচা, নীল শুমচা (পরিযায়ী) ও খয়রামাথা শুমচা (পরিযায়ী)। দৈর্ঘ্যে পাখিটি কমবেশি ১৮ থেকে ২১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ওজন ৯২ থেকে ১২০ গ্রাম। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। মাথা ধূসর বাদামি। ঠোঁটের গোড়ার দুই পাশ থেকে কালো প্রশস্ত রেখা ঘাড়ের ওপর গিয়ে ঠেকেছে। গলার নিচ থেকে প্রশস্ত ক্রিম-সাদা রেখা ঘাড়ের কালো রেখার নিচে সরু হয়ে মিলেছে। পিঠ থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত জলপাই-সবুজাভ। ডানায় নীল ছোপ। খাটো লেজ, রং কালো। দু-একটি পালকের ডগা আসমানি। দেহতল শিয়াল রঙের। তলপেট থেকে লেজের নিচ পর্যন্ত টকটকে লাল। চোখ কালো। ঠোঁট মোটা, ত্রিভুজাকৃতির। রং শিঙ কালো। পা দুটি লিকলিকে লম্বা। প্রধান খাদ্য ভূমিজ কীটপতঙ্গ, কেঁচো। লতাগুল্মাদির ভেতর নরম মাটিতে ঠোঁট ঠুকরে খাবার খোঁজে এবং ঝরাপাতা উল্টিয়ে পোকামাকড় খায়। প্যারা শুমচার প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত। বাসা বাঁধে মাটিতে অথবা ফার্নে আবৃত গাছের কাণ্ডে। বাসা গোলাকার। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চিকন লাঠি, শুকনো শেকড়, শুকনো ঘাস বা লতাপাতা। দুই থেকে তিনটি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪ থেকে ১৬ দিন। শাবক উড়তে শেখে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 27/04/2018