রাঙ্গামুড়ি | Red-crested pochard | Rhodonessa rufina
রাঙ্গামুড়ি | ছবি: ইন্টারনেট স্বভাবে লাজুক। ভীরু। বাস মধ্য এশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে। পরিযায়ী হয়ে আসে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। আমাদের দেশে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে হাওর অঞ্চলে সুলভ দর্শন ঘটে। এ সময় হাওরের ওপর দিয়ে এরা নিঃশব্দে ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ায়। উড়তে উড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়লে হাওরের আগাছাযুক্ত স্থানে লুকিয়ে শরীরটাকে চাঙ্গা করে নেয়। তার পর দল বেঁধে শিকারে বের হয়। জলে ডুব দিয়ে শিকার খোঁজে। জলের কীটপতঙ্গ, ঘাসবীজ এসব খায়। মাছের প্রতি আসক্তি নেই বললেই চলে। সামুদ্রিক অঞ্চল বা লবণ জল এড়িয়ে চলে। সুপেয় জলেই এদের বিচরণ। দেশে পরিযায়ী হয়ে আসা হাঁস প্রজাতির মধ্যে এরা সবচেয়ে বেশি সুন্দর পাখি। শীতে হাওর অঞ্চল মাতিয়ে রাখে। পাখি দেখিয়েদের প্রধান আকর্ষণ থাকে এদের দর্শন লাভ করা। আমাদের দেশে মোটামুটি সুলভ দর্শন ঘটে এদের। এক দশক আগের তুলনায় বর্তমান সময়ে এদের উপস্থিতি অনেকটাই কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরা এতই ভীরু যে, একবার কোনো ধরনের আক্রমণের শিকার হলে বা ভয় পেলে আর ওই এলাকায় সহসাই ভিড়ে না। আর সেই কাজটিই করছেন এতদাঞ্চলের শিকারিরা। শিকারিদের অত্যাচারে এরা খুবই অতিষ্ঠ। নিপীড়ন বন্ধ না হলে হয়তো একদিন এ দেশে আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে রাঙ্গামুড়ি পাখিদের। এ পাখির বাংলা নাম: ‘রাঙ্গামুড়ি’, ইংরেজি নাম: ‘রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড’ (Red-crested pochard), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘রোডোনেসা রুফিনা’ (Rhodonessa rufina), গোত্রের নাম : ‘আনাটিদি’। এরা রাঙাঝুঁটি হাঁস নামেও পরিচিত। লম্বায় ৫৩-৫৭ সেন্টিমিটার। ঠোঁট প্রবাল লাল। গোলগাল মাথায় কদমফুলের মতো খোঁচা পালক। ঘাড়ের ওপরের অংশ ও গলার ওপরের দিক শেয়াল-কমলা মিশ্রিত। ফলে দূর থেকে লালচে দেখায়। গলার নিচের দিক থেকে কালো। ডানার ওপরের দিক হাল্কা বাদামি। ডানা প্রসারিত করলে সাদা পট্টি নজরে পড়ে। দেহের দু’পাশ সাদা। পা-আঙুল কমলা হলুদ। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির মাথার পালক বাদামি-সোনালী-কমলা রঙ হয়। ওই সময় চোখ উজ্জ্বল লাল বর্ণ ধারণ করে। স্ত্রী পাখির ঠোঁট কালো। ওপরের দিক বাদামি। ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখের পাশ দিয়ে গাঢ় বাদামি রঙ মাথা ও ঘাড়ে গিয়ে ঠেকেছে। কপাল এবং গলা সাদা। ডানার ওপরটা সাদা, যা ওড়ার সময় নজরে পড়ে। খাদ্য হিসাবে এরা গ্রহণ করে জলজ পোকামাকড়, ঘাসবীজ ইত্যাদি। প্রজনন সময় বসন্তের শেষদিকে। জলাশয়ের পাশে ঘাসের ওপরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৮-১২টি। ডিম ফোটে ১৮-২০ দিনে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 14/08/2013
খয়রামাথা সুইচোরা | Chestnut headed Bee eater | Merops leschenaultia
খয়রামাথা সুইচোরা | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন, স্থানীয় প্রজাতির পাখি ‘খয়রামাথা স্ইুচোরা’। দেখতে ভীষণ সুন্দর। স্বভাবে চঞ্চল হলেও হিংস্র নয়। এক সময় দেশের শালবনে প্রচুর দেখা যেত। হালে সেভাবে দেখা যায় না। মূলত এদের বিচরণ মিশ্র পাতাঝরা ও চিরসবুজ বনে। বিচরণ করে প্যারাবনেও। দেশে তুলনামূলক বেশি দেখা যায় সুন্দর বনাঞ্চলে। ছোট-বড় দলে দেখা গেলেও বেশিরভাগই থাকে জোড়ায় জোড়ায়। গাছের চিকন পত্রপল্লবহীন ডালে কিংবা টেলিফোনের তারে বসে শিকারের প্রতিক্ষায় অস্থির সময় পার করে। তবে যেখানেই বসুক না কেন, আশপাশটা ঝোপ-জঙ্গল, লতাপাতা কিংবা ঘন ডালপালাবিহীন মুক্তাঞ্চল হওয়া চাই। যাতে করে কিছু সময় পর পর উড়তে সুবিধা হয়। সব ধরনের সুইচোরা উড়ন্ত অবস্থায়ই পতঙ্গ শিকার করে। আবার জলপানেও রয়েছে বৈচিত্রতা। জলের ওপর উড়ে উড়ে ছোঁ মেরে জলপান করে। স্থিরতা এদের মাঝে খুবই কম। কোথাও একদণ্ড বসে থাকার ফুরসত নেই যেন। এরা গায়ক পাখিদের তালিকায় না পড়লেও মাঝেমধ্যে নিচু স্বরে ডাকে ‘পের্রিপ-পের্রিপ’। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও চীন পর্যন্ত। বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘খয়রামাথা সুইচোরা’, ইংরেজি নাম: ‘চেস্টনাট-হেডেড বি-ইটার’ (Chestnut-headed Bee-eater), বৈজ্ঞানিক নাম: Merops leschenaultia | এরা ‘পাটকিলে মাথা বাঁশপাতি’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে চার প্রজাতির সুইচোরা দেখা যায়। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৮-২০ সেন্টিমিটার। ওজন ৩০ গ্রাম। থুতনি, গলা ও মুখ উজ্জ্বল হলুদ। গলায় লালচে-কালো বেষ্টনী। কপাল, মাথা, ঘাড় এবং পিঠাবরণ উজ্জ্বল তামাটে। পিঠ ঘাস-সবুজ। চেরা লেজের বর্ণ সবুজ। প্রজাতির অন্যদের মতো লেজে সরু লম্বা পালক থাকে না। দেহতল সবুজাভ। শিং-কালো রঙের, ঠোঁট নিচের দিকে বাঁকানো। চোখ লাল। পা ও পায়ের পাতা কালচে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মাথার তালু ঘন সবুজ। প্রধান খাবার: উড়ন্ত কীটপতঙ্গ, মৌমাছি, উইপোকা এবং ফড়িং প্রিয় খাবার। খেজুরের রসের প্রতি আসক্তি লক্ষ্য করা যায়। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে জুন। কলোনি টাইপ বাসা। নদী বা জলাশয়ের খাড়া পাড়ে নিজেরাই সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৫-৬টি। ফুটতে সময় লাগে ২০-২১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/08/2018
শঙ্খচিল | Brahminy Kite | Haliastur indus
শঙ্খচিল | ছবি: ইন্টারনেট অনেক পরিচিত পাখি এরা। এদের নিয়ে অনেক কবিতা, উপন্যাস রচিত হয়েছে। গাঁও-গ্রামের সবাই এ পাখিকে চেনেন। দেশের সর্বত্রই কম-বেশি এদের বিচরণ রয়েছে। এমনকি শহরের বাসিন্দারাও এদের সঙ্গে পরিচিত। এরা জোড়ায় জোড়ায় জলাশয়ের পাশে, গাছের ডালে শিকারের উদ্দেশ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। হাঁস-মুরগির ছানার প্রতি এদের লোভ কম। যার কারণে গৃহস্থবাড়ির আশপাশে ওড়াওড়ি করে সময় নষ্ট করে না। আবার সুযোগ পেলে তা হাতছাড়াও করে না। তবে অন্যান্য প্রজাতির চিলের মতো এরা অত হিংস্র নয়। এদের কণ্ঠস্বর কর্কশ। ‘আঁ-হা-আঁ-হা’ সুরে ডাকে। কণ্ঠস্বরে এক ধরনের আর্তনাদ ফুটে ওঠে। ওদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটেছে সেই ছোট বেলায়। রায়পুরের (লক্ষ্মীপুর) ডাকাতিয়া নদীর তীরে। রায়পুর বাজারসংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীর ওপর তখন কাঠেরপুল ছিল। ভাঙা সেই কাঠেরপুলের ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের স্কুলে যাতায়াত করতে হতো। সেই সুবাদে ওদের প্রায়ই দেখতাম শিকারের নেশায় নদীর ওপর চক্কর দিতে। আবার নদীর পাড়ে নানা ধরনের গাছ-গাছালির ডালে বসে থাকতেও দেখা যেত। এখন আর ওখানে এ পাখি দেখা যায় না। মাস তিনেক আগেও গিয়েছি সেখানে। কিন্তু এদের দেখা পাইনি। পাখিটার বাংলা নাম: ‘শঙ্খচিল,’ ইংরেজি নাম: ‘ব্রাহ্মণী কাইট’ (Brahminy Kite), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘হালিয়াস্টুর ইন্ডাস’ (Haliastur indus)। এদের বহুবিদ নাম রয়েছে। যেমন: চণ্ডীচিল, সোনালি ডানাচিল, মদনচিল, ফতাচিল ইত্যাদি। অনেকে শঙ্করচিল নামেও ডাকে। এ চিল লম্বায় ৪৬-৪৮ সেন্টিমিটার। এদের ঠোঁট গোড়া থেকে বাঁকানো চ্যাপ্টা গড়নের। বর্ণ ধূসর-নীলচে। মাথা, ঘাড়, গলা, বুক, পেটের মাঝামাঝি পর্যন্ত সাদা। তার ওপর সরু মরিচা ধরা খাড়া টান। ডানা লালচে। লেজ, ডানার প্রান্ত কালো। তলপেট থেকে বস্তিপ্রদেশ পর্যন্ত লালচে। পা, আঙ্গুল ময়লা হলুদ, নখ কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার: মাছ, সাপ, গিরগিটি, ব্যাঙ। এরা মৃত পচা মাছও খায়। তাছাড়া যে কোনো ধরনের পচাগলার প্রতি এদের আকর্ষণ রয়েছে। বলা যায় সর্বভূক পাখিদের কাতারে রয়েছে ওরা। প্রজনন সময় ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল। বড়সড়ো গাছের উঁচু ডালে সরু ডাল-পালা দিয়ে বাসা বাঁধে। স্ত্রী পাখি ডিম পাড়ে ২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৫-২৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/11/2012
সাদাডানা গাংচিল | White winged Tern | Chlidonias leucopterus
সাদাডানা গাংচিল | ছবি: ইন্টারনেট দেখতে রাগী রাগী চেহারার মনে হলেও স্বভাবে এরা শান্ত। ঝগড়াঝাটি তেমন পছন্দ নয়। তবে নিজেদের মধ্যে কম-বেশি ঝগড়া বাধলেও তা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত গড়ায় না এবং খুব বেশি হিংস্রতাও দেখায় না। এ সময় বিরক্ত হয়ে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে ওঠে ‘ক্রাআ-ক্রা-আ’ সুরে। প্রজাতির উপস্থিতি দেশে তত সন্তোষজনক নয়। শিকারি পাখি ব্যতিরেকে এদের পারতপক্ষে কেউ তেমন একটা ঘাটায় না। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ-মধ্য এশিয়ার উপকূল, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, নিউজল্যান্ড, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত। এ ছাড়াও উত্তর আমেরিকার আটলান্টিক উপকূলীয় এলাকায়ও বিচরণ রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ মিটার উচ্চতায়ও এদের দেখা মেলে। ‘সাদাডানা গাংচিল’ পরিযায়ী প্রজাতির পাখি। সিøম গড়ন। উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে দেখা মেলে। বিচরণ করতে দেখা যায় বালুবেলাতেও। এ ছাড়া কৃষি জমিতে বিচরণ রয়েছে। মিঠা জলের চেয়ে লবণ জলে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সাগরের কাছাকাছি এলাকায় বেশি দেখা যাওয়ার মূল কারণই এটি। বিচরণ করে ছোট-বড় দলে। কলোনি টাইপ বাসা বাঁধে। চলাচলরত নৌযানকে অনুসরণ করতে দেখা যায় প্রায়ই। নৌযানের পেছন পেছন চক্কর মেরে উড়ে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছ শিকারের উদ্দেশে। পাখির বাংলা নাম: ‘সাদাডানা গাংচিল’, ইংরেজি নাম: ‘হোয়াইট-উইংগেড টার্ন’, (White-winged Tern), বৈজ্ঞানিক নাম: Chlidonias leucopterus | এরা ‘ধলাপাখ পানচিল’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ২২-২৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৬৩ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। মাথা, ঘাড়, গলা, বুক ও পেট কুচকুচে কালো। ডানার গোড়া ধবধবে সাদা। মধ্যখান থেকে লেজ পর্যন্ত ধূসর সাদা। লেজতল সাদা। ওড়ার পালক কালো-ধূসর সাদা। চোখের বলয় কালো। ঠোঁট বাদামি। পা ও আঙ্গুল কমলা-লাল। প্রধান খাবার: ছোট মাছ, সামুদ্রিক কৃমি। এ ছাড়াও বালুচরে ঘুরে পোকামাকড় সরীসৃপ, শুককীট খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। জলাশয়ের কাছাকাছি বেলাভূমি এলাকায় ঘাস, লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। অথবা মাঠের পাশে ভাসমান গুল্মঝোপেও বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২২ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ২৮-৩৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/05/2016
চিতিপাক গোশালিক | Spot winged Starling | Saroglossa spiloptera
চিতিপাক গোশালিক | ছবি: ইন্টারনেট বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাস্থল পরিষ্কার বনপ্রান্ত, খোলা বন, কৃষিজমি। এ ছাড়াও পর্বতের ৭০০-১০০০ মিটার উঁচুতে দেখা যায়। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না। বেশির ভাগই জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। বিচরণ করে ছোট দলেও। স্বভাবে অন্যসব শালিকের মতোই ঝগড়াটে। সারাদিন খুনসুটি করে কাটায়। তবে ওদের ঝগড়া খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায় না, কিচির-মিচির পর্যন্তই ঝগড়া। পরক্ষণে আবার মিলেও যায়। আবার শুরু। এভাবেই দিন কাটে। পারতপক্ষে কেউ কাউকে আক্রমণ করে না। চলাফেরায় খুব হুঁশিয়ারি। বিশ্বে এদের অবস্থান তত ভালো নয়। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘চিতিপাক গোশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘স্পট-উইংড স্টার্লিং’ (Spot-winged Starling), বৈজ্ঞানিক নাম: Saroglossa spiloptera। এরা ‘লালচেগলা শালিক’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১০ প্রজাতির শালিক নজরে পড়ে। যথাক্রমে: গো-শালিক, ভাত শালিক, ঝুঁটি শালিক, গাঙ শালিক, পাতি কাঠশালিক, গোলাপি কাঠশালিক, চিতিপাখ গোশালিক, খয়রালেজ কাঠশালিক, বামুন কাঠশালিক ও ধলাতলা শালিক। এরা লম্বায় ১৯-২০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা বাদামি। ঘাড় ও পিঠ ধূসর এবং কালো-বাদামি। ডানার প্রান্ত নীলাভ কালো। লেজ লালচে বাদামি। গলা লালচে। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত সাদাটে। বুকের দু’পাশ শেয়ালে লাল। ঠোঁট নীলাভ কালো। চোখের বলয় সাদা। পা বেগুনি কালো। দেখতে একই রকম মনে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। আকারেও সামান্য ছোট। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, পিঁপড়া, ছোট ফল, ফুলের মধু। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বাঁধে ৬-১০ মিটার উচ্চতার গাছের প্রাকৃতিক কোটরে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, লতাপাতা, দড়ি, কাপড়ের টুকরো ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/08/2017
কোকিল | Asian Cuckoo | Eudynamys scolopaceus
কোকিল | ছবি: ইন্টারনেট আদতেই এ পাখি এতটা ভদ্র নয়। বড়রা মোটামুটি ধাড়িবাজ। ধূর্ত কাকের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওদের বাসায় ডিম পেড়ে নিজের বংশ বৃদ্ধি ঘটায়। ‘সুসময়ের বন্ধু’ পাখি নামে পরিচিত, বলা হয় বসন্তের দূতও। বসন্তকালে লোকালয়ে চলে আসে ওরা। পুরুষ পাখি ‘কুহু-কুহু-কুহু’ ডেকে মানুষের মন মাতিয়ে তোলে। সুরে এক ধরনের মাদকতা রয়েছে। স্ত্রী পাখির কণ্ঠ তত সুরেলা নয়। কর্কশ। ডাকে ‘খিক্-খিক্-খিক্’ স্বরে। বৃক্ষচারী পাখি এরা। পারতপক্ষে ভূমি স্পর্শ করে না। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। গায়ে পড়ে কারো সঙ্গে বিবাদ বাধায় না। এ পাখির বাংলা নাম: ‘কোকিল বা কুলি’| ইংরেজি নাম: ‘এশিয়ান কুক্কু’ (Asian Cuckoo)| বৈজ্ঞানিক নাম: (Eudynamys scolopaceus), গোত্রের নাম: ‘কুকুলিদি’। এরা লম্বায় ৩৯-৪৬ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির বর্ণ কুচকুচে কালো হলেও উজ্জ্বল সবুজের আভা বের হয় শরীর থেকে। চোখের তারা টকটকে লাল (কাক-কোকিলের মধ্যে বড় তফাত এটি)। স্ত্রী পাখির বর্ণ কালোর ওপর বাদামি ফোঁটাযুক্ত। সমস্ত পিঠে অসংখ্য বাদামি ফোঁটা। এদের নিচের দিকটা সাদাটে বর্ণের ওপর বাদামি ফোঁটা। লেজের ওপর সাদা ফোঁটার সঙ্গে স্পষ্ট ডোরাদাগ। উভয় পাখির ঠোঁট নীলচে-সবুজ এবং পা পায়ের পাতা কালচে। কোকিলের প্রিয় খাবার ফল-ফলাদি। ফুলের মধু, খেজুরের রস এবং কীটপতঙ্গেও ভাগ বসায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না বিধায় পরের বাসায় ডিম পাড়ে। বিশেষ করে কাক, সাতভায়লা পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ১-২টি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: বাংলাদেশের খবর, 07/03/2018
সাদালেজ ফিদ্দা | White tailed Stone Chat | Saxicola leucurus
সাদালেজ ফিদ্দা | ছবি: ইন্টারনেট প্রাকৃতিক আবাসস্থল ঝাউবন, গুল্মলতাদির ঝোঁপ। এছাড়াও জলাশয়ের কাছাকাছি ঘাসবন ও নলখাগড়ার বনে বিচরণ রয়েছে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও পাকিস্তান পর্যন্ত। চেহারা বেশ আকর্ষণীয়। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি নিষ্প্রভ। বিচরণ করে একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে। স্বভাবে চঞ্চল। উড়ন্ত অবস্থায় পোকামাড়ক শিকার করতে পটু। নিচে নেমেও শিকার ধরে। খেয়েদেয়ে ঘাসের ডগায় ঠোঁট ঘঁষে পরিষ্কার করে নেয়। এরা ভূমিতে খুব বেশি বিচরণ করে না। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। লম্বা ঘাসের ডগায় বসে দোল খেতে পছন্দ করে। গান গাওয়ার সময় শরীরের পেছনের অংশ দোলাতে থাকে। দেশে প্রজাতিটি বিরল দর্শন। শুধু দেখা মিলে পদ্মা তীরবর্তী অঞ্চলে। বিশেষ করে ঘাসবনে। প্রজাতিটি বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়। আইইউসিএন এদেরকে উদ্যোগ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘সাদালেজ ফিদ্দা’, ইংরেজি নাম: হোয়াইট টেলড স্টোন চ্যাট (White-tailed Stone Chat), বৈজ্ঞানিক নাম: Saxicola leucurus | এরা ‘ধলালেজ শিলাফিদ্দা’ ‘সাদালেজি শিলাফিদ্দা’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ১২-১৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৩০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা ও ঘাড় কালো। ঘাড়ের দু’পাশ সাদা। পিঠ কালচে বাদামি। ডানার প্রান্ত পালক হালকা বাদামি। লেজ সাদা-কালো। গলা কালো। বুক গাঢ় কমলা। দেহতল ফিকে সঙ্গে পীতাভ আভা। ঠোঁট ও পা কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির দেহের ওপরের দিকটায় গাঢ় ধূসর এবং নিচের দিকটায় কমলার আভা লক্ষ্য করা যায়। প্রধান খাবার: শুঁয়োপোকা, গুবরেপোকা, ফড়িং, মাছি, পিঁপড়াসহ অন্যান্য পোকামাকড়। এ ছাড়া শস্যবীজের প্রতি আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ঝাউ প্রজাতির গাছপালায়। পেয়ালা আকৃতির বাসা। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে পালক, ঘাস, তন্তু ও শিকড় ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৪ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ২০-২১ দিন। লেখক: আলমশাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 13/01/2017