শিয়ালে কীট কুড়ানি | Chestnut bellied Nuthatch | Sitta castanea
শিয়ালে কীট কুড়ানি | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না, বিরল দর্শন। পার্বত্য চট্টগ্রামে যৎসামান্য দেখা যেতে পারে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল ক্রান্তীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বন, ক্রান্তীয় পার্বত্য অরণ্য, খোলা পর্ণমোচী বন। শালবন বেশি পছন্দের। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। হিংস নয়। স্বভাবে অত্যন্ত চঞ্চল। কাঠঠোকরা পাখিদের মতো গাছের খাড়া কাণ্ডে খুব দ্রুত হেঁটে উঠতে পারে। নিমেষেই গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে কীট-পতঙ্গ খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে যায়। হয়তো এ জন্যই এদের নামকরণ হয় ‘কীট-কুড়ানি’। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, তিব্বত, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। এরা বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘শিয়ালে কীট-কুড়ানি’, ইংরেজি নাম: ‘চেস্টনাট বেলিড নাটহ্যাচ’ (Chestnut-bellied Nuthatch), বৈজ্ঞানিক নাম: Sitta castanea | এরা ‘খয়রাপেট বনমালী’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি গড় দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৯ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য আছে। কপাল ও ঘাড় রূপালী-ধূসর। পিঠ ধূসর। লেজ খাটো, কালো-ধূসর। মাথার দু’পাশ দিয়ে কালোটান ঘাড়ের কাছে পৌঁছে নিচে নেমেছে। ডানার প্রান্ত পালক কালচে-ধূসর। দেহতল শিয়ালে রঙের অথবা খয়েরি। ঠোঁট কালচে। পা ধূসর-কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথা, পিঠ ও লেজ বাদামি ধূসর। দেহতল হালকা খয়েরি। বাদবাকি একই রকম। প্রধান খাবার: কীট-পতঙ্গ, পোকামাকড়, মাকড়সা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে। শ্যাওলা, তন্তু, শুকনো ঘাস, পালক ইত্যাদি বাসা বানানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/03/2017
কলজেবুটি কাঠকুড়ালি | Heart spotted woodpecker | Hemicircus canente
কলজেবুটি কাঠকুড়ালি | ছবি: ইন্টারনেট অনিয়মিত ও বিরলতম পরিযায়ী পাখি। কচ্ছপ আকৃতির গোলাকার গড়ন। দেখতে মন্দ নয়। শরীরে সাদা-কালো আঁকিবুকি। পরখ করে দেখলে বোঝা যায় ডানার প্রান্তে কালো রঙের হৃৎপিণ্ড আকৃতির দাগ। যা থেকেই এদের নামকরণের সূত্রপাত। স্বভাবে চঞ্চল। অন্যসব প্রজাতির কাঠঠোকরাদের মতো যত্রতত্র দেখা যায় না। দেখা মেলে চিরসবুজ ও আর্দ্র পাতাঝরা বনে। দেখা মেলে বাঁশবনেও। বিচরণ করে একা কিংবা জোড়ায় জোড়ায়। গাছের কাণ্ডের চারপাশে লাফিয়ে ঘুরে ঘুরে শিকার খোঁজে। এ সময় শক্ত-মজবুত ঠোঁট চালিয়ে গাছের বাকলের ভিতর থেকে কীটপতঙ্গ বের করে আনে। শিকার পেলে তীক্ষ কণ্ঠে ‘ক্লিক-ক্লিক’ সুরে ডেকে ওঠে। এ ছাড়াও মাঝে মাঝে গাছের ডালের চারপাশে ঘুরে ঘুরে ‘টুই-টুই-টিটিটিটিটি…’ সুরে ডাকতে থাকে। বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের গহিন বনাঞ্চলে দেখা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ইন্দোচীন পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। এরা বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। অন্যসব কাঠঠোকরার মতোই এদের শক্রসংখ্যা নগণ্য। তথাপিও এদের সংখ্যা অপ্রতুল। প্রধান কারণটি হচ্ছে অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে। পাখির বাংলা নাম: ‘কলজেবুটি কাঠকুড়ালি’, ইংরেজি নাম: ‘হার্ট-স্পটেড উডপেকার’(Heart-spotted woodpecker) বৈজ্ঞানিক নাম: Hemicircus canente | এরা ‘হৃৎপিণ্ড- ফোঁটাযুক্ত কাঠঠোকরা’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ১৫-১৬ সেন্টিমিটার। ওজন ৩৬ গ্রাম। পুরুষ পাখির কপাল কালো, স্ত্রী পাখির কপাল সাদা। এ ছাড়া উভয়েরই ঝুঁটি পেছনের দিকে খাড়া। ঘাড় কালো, দুই পাশ পীতাভ সাদা। শরীরের ওপরের অংশ কালোর ওপর সাদা। ডানার সাদা বাজু অংশে কালো রঙের ছোট হৃৎপিণ্ড আকারের ফোঁটা। খাটো লেজটি কালো বর্ণের। দেহতল কালচে-জলপাই। ঠোঁট শিঙ-বাদামি। চোখ জলপাই বাদামি। পা ও পায়ের পাতা স্লেট কালো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা অনেকটাই স্ত্রী পাখির মতো দেখতে। প্রধান খাবার: গাছ পিঁপড়া, উইপোকা ও পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত। বাসা বাঁধে গাছের মরা কাণ্ডে গর্ত বানিয়ে। নিজেরাই গর্ত খুঁড়ে নেয়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে কত দিন সময় লাগে সে তথ্য জানা যায়নি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকন্ঠ 09/11/2018
বড় সাদাকপাল রাজহাঁস | Greater White fronted Goose | Anser albifrons
বড় সাদাকপাল রাজহাঁস | ছবি: ইন্টারনেট ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার আবাসিক পাখি। বাংলাদেশে অনিয়মিত বিরলতম পরিযায়ী পাখি। আগমন ঘটে সাইবেরিয়া থেকে। আকারে বেশ বড়সড়। দেখতে অনেকটাই গৃহপালিত রাজহাঁসের মতো। দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। বিচরণ করে মিঠাপানির জলাশয়ে, বাদাবন কিংবা আর্দ্র তৃণভূমিতেও। উড়তে বেশ পারদর্শী। ওড়ার সময় নাকি সুরে গান গায় ‘ইহ..ঈয়ি..’। সমগ্র বিশ্বে এদের বিস্তৃতি ১৫ লাখ ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত। কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা অপরিবর্তিত বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত। কেবল দেশের ঢাকা বিভাগে একবার দেখা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের দেখা মেলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। পাখির বাংলা নাম: ‘বড় সাদাকপাল রাজহাঁস’, ইংরেজি নাম: গ্রেটার ফ্রন্টেড গুজ’ (Greater White-fronted Goose), বৈজ্ঞানিক নাম: Anser albifrons| পরিযায়ী উত্তর আমেরিকায় এদের ‘আঁশটেপেট’ নামে ডাকা হয়। লম্বায় ৬৪-৮১ সেন্টিমিটার। ওজন ২.৫ কেজি। কপাল সাদা। মাথা, গলা ও পিঠ গাঢ় ধূসরাভ-বাদামি। যা দূর থেকে মাছের আঁশের মতো মনে হতে পারে। ডানার পালকে চিকন সাদা টান। লেজ গাঢ় বাদামি, লেজতল সাদা। লেজের ডগায় সরু সাদা বলয়। বুক ও পেটে ময়লা সাদার ওপর কালচে রেখা। ঠোঁট গোলাপি। পা ও পায়ের পাতা কমলা হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে তেমন কোনো তফাত নেই। প্রধান খাবার: শস্যদানা, ঘাসের কচি ডগা, জলজ উদ্ভিদ, শামুক ও পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বাঁধে সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো নরম ঘাস ও পালক। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। ডিম ফুটতে সময় নেয় ২২-২৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: মানব কণ্ঠ, 21/11/2014
বড় চোখগেলো | Large Hawk cuckoo | Hierococcyx sparverioides
বড় চোখগেলো | ছবি: ইন্টারনেট বিরল পরিযায়ী পাখি (বাংলাদেশে খুব একটা দেখা যায় না)। শীতে কদাচিৎ সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে নজরে পড়ে। এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি পূর্ব ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে। মূলত এরা চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। পাতার আড়ালে-আবডালে থাকতে পছন্দ করে। বিচরণ করে একাকি। সামাজিক বন্ধন খুব একটা নেই এদের মধ্যে। প্রজনন মৌসুমে খুব ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে ডাকাডাকি করে। এ ছাড়াও পূর্ণিমা রাতে মধুর কণ্ঠে ডাকে ‘পিপক পিপকক.. সুরে। সুরে এক ধরনের মাদকতা রয়েছে। বারবার শুনতে ইচ্ছ করে। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত হলেও বাংলাদেশে এদের অবস্থান মোটেই সন্তোষজনক নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘বড় চোখগেলো’, ইংরেজি নাম: ‘লার্জ হাক কুক্কু’ (Large Hawk-cuckoo), বৈজ্ঞানিক নাম: Hierococcyx sparverioides | লম্বায় ৩৮ সেন্টিমিটার। ওজন ১২৫ গ্রাম। মাথার তালু ও ঘাড় ছাই-ধূসর। দেহের উপরাংশ ছাই-বাদামি ডোরা হলেও কিছু জায়গা থেকে লালচে-বাদামির আভা বের হয়। দেহতল সাদাটে। বুক থেকে লেজের তলা পর্যন্ত মোটা বাদামি বলয়যুক্ত। লেজের কালো ও বাদামি বিন্যাস থরে থরে সজ্জিত। লেজের অগ্রভাগ সাদা। চোখ কমলা-হলুদ। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। ঠোঁটের উপরের অংশ কালচে শিঙরঙা, নিচের অংশ সবুজাভ-সেøট রঙের। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের রঙে তফাৎ রয়েছে। ওদের ঘাড়ের পেছন দিক ফ্যাকাসে লালচে। বাদামির পরিবর্তে পিঠে লালচে ডোরা। বুকে স্পষ্ট বাদামি ডোরা। প্রধান খাবার: শুঁয়োপোকা, ছারপোকা, ফড়িং, গুবরে পোকা, মাকড়সা ও পিঁপড়া। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন ঋতু ভিন্ন হয়। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না বিধায় ডিম পাড়ে পেঙ্গা অথবা মাকড়মার পাখির বাসায়। ডিমের সংখ্যা ১-২টি। প্রকৃতি এদেরকে ডিমের আকার ও বর্ণ ভিন্নতর করার ক্ষমতা দিয়েছে। যার ফলে এরা ছোট পাখির বাসাতে যখন ডিম পাড়ে তখন ডিমের আকৃতি ওই পাখিদের ডিমের সমান পাড়তে পারে। আবার বড় পাখিদের বাসায় বসলে বড় সাইজের ডিম পাড়ে। এমনকি ডিমের বর্ণও হুবহু মিলিয়ে ফেলতে পারে। যেমন পেঙ্গার বাসার জন্য ডিমের বর্ণ নীল, মাকড়মারের বাসার জন্য বাদামি ডিম পাড়ে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/06/2014
উদয়ি ধলা চোখ | Oriental White Eye | Zosterops palpebrosus
উদয়ি ধলা চোখ | ছবি: ইন্টারনেট বছর দুয়েক আগে কুমিল্লার ‘বার্ডস’-এ গিয়েছি। নানা জাতের দুষ্প্রাপ্য গাছ-গাছালির সমাহার ওখানে। পরিকল্পিত উদ্যান। বলা যায় দেখার মতো। সহকর্মীরা উদ্যানের ভেতর হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়েছেন। আমি খুব বেশি ভেতরে প্রবেশ করিনি। উদ্যানের ভেতরের পাকা রাস্তার ধার ঘেঁষে মৃদু পায়চারি করছি। মাঝেমধ্যে দুর্লভ গাছগুলোর শাখা প্রশাখায় নজর বুলিয়ে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছি। কাজ তো শুধু দু’টিই। বন আর বন্যপ্রাণী সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া। বার্ডসে ঢুকে বেশ কিছু পরিচিত পাখি নজরে পড়েছে। যাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়তই সাক্ষাৎ হয় এমন ধরনের পাখিই বেশি ওখানে। শুধু সোনালু গাছে বসা একটি পাখিই দেখেছি, যাকে আর কখনো কোথাও দেখিছি বলে মনে হয়নি। সোনালু ফুলের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে পাখিটি। ফলে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়েছে। পাখিটি দেখতে ভারি চমৎকার। ওর উড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি সেদিকে তাকিয়ে রয়েছি। অপরূপ রূপের অধিকারী পাখিটি উড়ে গেলেও স্মৃতিতে গেঁথে রয়েছে ওর দুটি চোখ। মনে হয়েছ সাদা চশমা পরেছে পাখিটা। চশমার ফ্রেমের ভেতর কুতকুতে দুটি চোখ প্রসারিত করে রেখেছে। পাখিটির ইংরেজি নাম: ‘ওরিয়েন্টাল হোয়াইট আই’, (Oriental White Eye) বৈজ্ঞানিক নাম: ‘জসটেরোপস্ পালপেব্রোসাস’, (Zosterops palpebrosus) গোত্র: ‘জোসটেরোপিদি’| বাংলা নাম: অনেক। বাবুনাই, চশমা পাখি, সিত নয়ন, শ্বেতার্ফী, সাদা চোখ ইত্যাদি। আমাদের দেশের পাখি বিশারদরা নাম রেখেছেন ‘উদয়ি ধলা চোখ’। বাবুনাই এ দেশের ক্ষুদ্রতম পাখি ফুলঝুরির চেয়ে আড়াই সেন্টিমিটার বড়। এটি লম্বায় ১০ সেন্টিমিটার। গায়ের বর্ণ সবুজাভ সোনালি হলুদ। অনেক সময় উজ্জ্বল হলুদও দেখায়। চোখের চারপাশে গোলাকার সাদা বলয়। সরু কালো ঠোঁট নিচ দিকে সামান্য বাঁকানো। চিবুক ও গলা উজ্জ্বল হলুদ। পেটের দিকের পালক সাদাটে ধূসর। পা কালচে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। খাবার হিসাবে এদের প্রিয় পোকমাকড়, ফুলের মধু, ছোট বুনোফল। এ পাখি আমৃত্যু গাছের শাখায় বিচরণ করে। জীবদ্দশায় মাটিতে নামে না। মধুপান করে পানির পিপাসা মেটায়। অথবা বৃষ্টির পানি গাছের গায়ে লেগে থাকলে তা খেয়ে নেয়। এরা নির্জনতাপ্রিয়। একাকি চলাফেরা করে। প্রজনন সময় হলে জোড়া বাঁধে। এ সময় বেশ মিষ্টি সুরে গান গায় পুরুষ পাখিটি। গান গাওয়ার ঢং বেশ চমকপ্রদ। প্রথমে নিচুস্বরে গায়। পর্যায়ক্রমে স্বর বাড়িয়ে পুনরায় নিুস্বরে নিয়ে আসে। দীর্ঘসুরে গান গাইতে পারে না। দম ছোট এবং কণ্ঠস্বর চাপা। বড়জোর ৮-১০ সেকেন্ড দম আটকে রাখতে পরে। ‘সিসি.. টিসির..’ শব্দে ডাকাডাকি করে। বাংলাদেশের সর্বত্রই কমবেশি নজরে পড়ে। এপ্রিল থেকে জুন এদের প্রজনন সময়। বাসা বাঁধতে সময় নেয় ৩-৪ দিন। ঘন পাতার আড়ালে বাসা বাঁধে। বাসাটা ঝুলন্ত। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে মাত্র ১০-১২ দিন। বাংলাদেশের আর কোনো পাখির ডিম এত অল্প সময়ে ফুটতে দেখা যায় না। বাবুনাইদের বাচ্চা স্বাবলম্বী হতে সময় নেয় ৩০-৩৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 29/09/2012
সাদাটে মেঠো চিল | Pallid Harrier | Circus macrourus
সাদাটে মেঠো চিল | ছবি: ইন্টারনেট বিরল প্রজাতির ভবঘুরে পাখি। লম্বা পা, হলুদ গোলাকার চোখ ওদেরকে রাগী চেহারায় রূপ দিয়েছে। মূলত এরা হিংস্র নয়। বরং প্রজাতির অন্যদের তুলনায় দেখতে খানিকটা সুদর্শন। দেশে শীত মৌসুমে দেখা মেলে। উপমহাদেশীয় অঞ্চলে এরা মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত বিচরণ করে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। এছাড়াও মধ্য এশিয়া, পশ্চিম ইউরোপে এবং পূর্ব আফ্রিকায়ও দেখা মেলে। দেখা মেলে ফিনল্যান্ডেও। এদের বিচরণ ক্ষেত্র ধানক্ষেত, গমক্ষেত, উচুঁ বনভূমি, ছোট নদ-নদী, জলাশয়ের আশপাশ এবং মালভূমির ওপর পর্যন্ত। এরা ক্ষেত খামারের ওপর চক্কর দিয়ে শিকার খোঁজে। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। মূলত শস্যক্ষেতে ব্যাপক কীটনাশক ব্যবহারের কারণে প্রজাতিটি হুমকির মুখে পড়েছে এবং প্রজননে বিঘœ ঘটছে। ফলে আইইউসিএন এদের ইতিমধ্যে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘সাদাটে মেঠো চিল’, ইংরেজি নাম: ‘প্যালিড হ্যারিয়ার’ (Pallid Harrier), বৈজ্ঞানিক নাম: Circus macrourus| এরা ‘ধলা কাপাসি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ৪০-৪৮ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৯৫-১২০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে খানিকটা তফাত রয়েছে। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি আকারে বড় এবং গায়ের রংও ভিন্ন। পুরুষ পাখির গড় ওজন ৩১৫ গ্রাম, স্ত্রী পাখির গড় ওজন ৪৪৫ গ্রাম। পুরুষ পাখির মাথা সাদাটে ধূসর। পিঠ ধূসর। লেজের গোড়া ও অগ্রভাগ বাদামি-কালো। গাঢ় কালো রঙের ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। ঠোঁটের গোড়া হলুদ। চোখ উজ্জ্বল হলুদ, মণি কালো। পা ও পায়ের পাতা হলুদ, নখ কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির গায়ের পালক মরিচা-বাদামি। দেহতল হালকা বাদামি সাদা। প্রধান খাবার: ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, ইঁদুর, বড় পোকামাকড়, ফড়িং ও পঙ্গপাল। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। প্রজনন পরিসীমা দক্ষিণ রাশিয়া, ইউক্রেন, উত্তর-পশ্চিম চীন ও পশ্চিম মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত। বাসা বাঁধে ঝোপের ভেতর, জলাভূমির কাছে মাটিতে অথবা ঘেসো ভূমিতে লম্বা ঘাস বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। শাবক ৩৫-৪৫ দিনের মধ্যে উড়তে শিখে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 01/07/2016
ডোরা আবাবিল | Striated Swallow | Hirundo striolata
ডোরা আবাবিল | ছবি: ইন্টারনেট চেহারা হিংস মনে হলেও আসলেই ওরা নিরীহ প্রকৃতির। কেবল আক্রান্ত হলে আক্রমণ করে। সেক্ষেত্রে খুব বেশি হলে ওদের পায়ের নখের খামচি বসিয়ে দেয়। দেখতে মন্দ নয়। স্লিম গড়নের। কণ্ঠস্বরও সুমধুর। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। প্রাকৃতিক আবাসস্থল পাহাড়ি অঞ্চল, নদ-নদী, গর্ত, জলাশয়, ধানক্ষেত কিংবা চাষাবাদ হয় অমন ক্ষেতের আশপাশ। অর্থাৎ পোকামাকড় বা কীটপতঙ্গ আছে এমন স্থানে ওদের বিচরণ বেশি। পত্রপল্লবহীন ডালে বসতে পছন্দ করে। বিচরণ করে জোড়ায় কিংবা ছোট দলে। অন্যসব প্রজাতির আবাবিলের দলেও বিচরণ করে। দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক। পাখির বাংলা নাম: ‘ডোরা আবাবিল’, ইংরেজি নাম: ‘স্ট্রিটেড সোয়ালো’ (Striated Swallow), বৈজ্ঞানিক নাম: Hirundo striolata। এরা ‘দাগি আবাবিল’ নামেও পরিচিত। গড় দৈর্ঘ্য ১৯ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ২২ গ্রাম। কপাল, মাথা ও ঘাড় নীলচে কালো। ডানার প্রান্ত পালক। সুচালো চেরালেজ, রং কালো। কোমরে সাদা দাগ। দেহতল সাদার ওপর কালা খাড়া ডোরা। চোখের ওপর দিয়ে উজ্জ্বল বাদামি টান ঘাড়ের দিকে প্রসারিত হয়েছে। ঠোঁট খাটো কালো। পা ধূসর কালো। প্রধান খাবার: উড়ন্ত কীটপতঙ্গ, যে কোনো ধরনের পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুলাই। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। পুরনো সেতু কিংবা কালভার্টের কার্নিশে মাটি দিয়ে বাসা বাঁধে। বাসা দেখতে বাঁধাকপির মতো। ডিম পাড়ে ২-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৬-১৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 26/01/2018