চিতিপাক গোশালিক | Spot winged Starling | Saroglossa spiloptera
চিতিপাক গোশালিক | ছবি: ইন্টারনেট বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাস্থল পরিষ্কার বনপ্রান্ত, খোলা বন, কৃষিজমি। এ ছাড়াও পর্বতের ৭০০-১০০০ মিটার উঁচুতে দেখা যায়। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না। বেশির ভাগই জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। বিচরণ করে ছোট দলেও। স্বভাবে অন্যসব শালিকের মতোই ঝগড়াটে। সারাদিন খুনসুটি করে কাটায়। তবে ওদের ঝগড়া খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায় না, কিচির-মিচির পর্যন্তই ঝগড়া। পরক্ষণে আবার মিলেও যায়। আবার শুরু। এভাবেই দিন কাটে। পারতপক্ষে কেউ কাউকে আক্রমণ করে না। চলাফেরায় খুব হুঁশিয়ারি। বিশ্বে এদের অবস্থান তত ভালো নয়। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘চিতিপাক গোশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘স্পট-উইংড স্টার্লিং’ (Spot-winged Starling), বৈজ্ঞানিক নাম: Saroglossa spiloptera। এরা ‘লালচেগলা শালিক’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১০ প্রজাতির শালিক নজরে পড়ে। যথাক্রমে: গো-শালিক, ভাত শালিক, ঝুঁটি শালিক, গাঙ শালিক, পাতি কাঠশালিক, গোলাপি কাঠশালিক, চিতিপাখ গোশালিক, খয়রালেজ কাঠশালিক, বামুন কাঠশালিক ও ধলাতলা শালিক। এরা লম্বায় ১৯-২০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা বাদামি। ঘাড় ও পিঠ ধূসর এবং কালো-বাদামি। ডানার প্রান্ত নীলাভ কালো। লেজ লালচে বাদামি। গলা লালচে। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত সাদাটে। বুকের দু’পাশ শেয়ালে লাল। ঠোঁট নীলাভ কালো। চোখের বলয় সাদা। পা বেগুনি কালো। দেখতে একই রকম মনে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। আকারেও সামান্য ছোট। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, পিঁপড়া, ছোট ফল, ফুলের মধু। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বাঁধে ৬-১০ মিটার উচ্চতার গাছের প্রাকৃতিক কোটরে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, লতাপাতা, দড়ি, কাপড়ের টুকরো ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/08/2017
হলদেবাদামি ভূতম পেঁচা | Buffy Fish Owl | Ketupa ketupu
হলদেবাদামি ভূতম পেঁচা | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন আবাসিক পাখি। দেশের সুন্দরবন ছাড়া অন্যত্র দেখা যাওয়ার রেকর্ড নেই। কেউ দেখে থাকলে সেটি বিপদগ্রস্ত পাখি হতে পারে। মূলত এরা নদ-নদী, হ্রদ কিংবা বড়সড়ো জলাশয়ের কাছাকাছি বৃক্ষে বিচরণ করে। বিচরণের ক্ষেত্রে ম্যানগ্রোভ এলাকা বেশি পছন্দের। এছাড়াও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উচ্চতায় দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। অন্যসব পেঁচাদের মতো এরাও দিনের বেলায় গাছ-গাছালির ঘন পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। দিনের আলো ফুরিয়ে এলে বা গোধূলিলগ্নে শিকারে বের হয়। একাকী কিংবা জোড়ায় খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। দলবেঁধে বিচরণ করে না। দেখতে ভয়ঙ্কর দর্শন হলেও একেবারেই নিরীহ গোত্রের পাখি। স্বভাবে লাজুক। অন্যসব শিকারি পাখিদের মতো হিংস নয়। কণ্ঠস্বর ভৌতিক। ভরাট কণ্ঠে ‘বুপ্-বুপ্-বুপ্-বুপ্’ আওয়াজ করে মানুষের কলজে কাঁপিয়ে দেয়। বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের মানুষ এদের কণ্ঠস্বর শুনতে না পেলেও সুন্দরবনে কর্মরত বাওয়াল, মৌয়াল কিংবা জেলেরা মাঝে মধ্যে শুনতে পান। বাংলাদেশের বাইরে এদের বিস্তৃতি ভারত, দক্ষিণ মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার জাভা-বালি পর্যন্ত। আমাদের দেশে প্রজাতিটি বিরল দর্শন হলেও বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘হলদে-বাদামি ভূতম পেঁচা’, ইংরেজি নাম: ‘বাফি ফিস আউল’ (Buffy Fish Owl), বৈজ্ঞানিক নাম: Ketupa ketupu | এরা ‘মেটে মেছোপেঁচা’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৮-৪৮ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। মাথা ও ঘাড় হলদে-বাদামি ডোরাযুক্ত। মাথার দু’পাশে আছে কান পশম, যা ঝুঁটি আকৃতির দেখায়। চোখের দু’পাশে কপালের ওপর সাদা টান। মুখমণ্ডল হলদে-বাদামি। দেহের উপরাংশ গাঢ় বাদামি রঙের ঘন মিহি রেখা। ডানার ওপরে সাদাটে দাগ। দেহের নিচের দিকে হলদে-বাদামির আড়াআড়ি রেখা। গোলাকার চোখের বলয় হলুদ রঙের। তারা গাঢ় বাদামি। ঠোঁট শিং রঙা, আকারে খাটো, নিচের দিকে বড়শির মতো বাঁকানো। পায়ের আঙুল ফ্যাকাসে হলদে। প্রধান খাবার: মাছ, কাঁকড়া সরীসৃপ, ইঁদুর, ব্যাঙ ও বাগদাচিড়িং। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। অঞ্চলভেদে ভিন্ন। মরা গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ১টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-২৯ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে মাসখানেক সময় লেগে যায়। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 02/10/2015
ধলালেজ ঈগল | White-tailed Eagle | Haliaeetus albicilla
ধলালেজ ঈগল | ছবি: ইন্টারনেট ধলালেজ ঈগল পরিযায়ী সামুদ্রিক পাখি। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। দেশে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার জলাশয় নদ-নদীর মোহনায় এদের সাক্ষাৎ মেলে। দেশের বিচরণরত ঈগল প্রজাতির পাখিদের মধ্যে আকারে সর্ববহৎ। খানিকটা হিংস্রও। অন্যসব শিকারী পাখিদের খাবার চিনিয়ে নিতে ইতস্ততবোধ করে না। শিকারের লোভে জলের ২০-৩০ মিটার ওপরে ধীর গতিতে বৃত্তাকারে উড়ে বেড়ায়। শিকার নজরে পড়লে ঝাঁপিয়ে পড়ে পায়ের তীক্ষè নখে বিঁধিয়ে নিয়ে উড়ন্ত অবস্থায় খেয়ে ফেলে। এ ছাড়াও গাছের ডালে অথবা মাটিতে নেমে খাবার খেতে দেখা যায়। সুযোগ পেলে এরা গবাদি পশুর মৃতদেহও খায়। এরা অনায়াসে সমুদ্র-সমতল থেকে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি সাইবেরিয়া, আলাস্কা, নরওয়ে, স্কল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড পর্যন্ত। দেশে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন এ প্রজাতিটিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ধলালেজ ঈগল’, ইংরেজি নাম: ‘হোয়াইট টেইলড ঈগল’ (White-tailed Eagle), বৈজ্ঞানিক নাম: Haliaeetus albicilla | এরা ‘সাদালেজী ঈগল’ নামেও পরিচিত। এরা দৈর্ঘ্যে ৬৬-৯৪ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৪-৫ কেজি। মাথা ফ্যাকাসে বাদামি। পিঠ গাঢ় বাদামি। কোমর কালো। লেজ সাদা। বুক ও পেট ফ্যাকাসে বাদামি। ওড়ার পালক কালো। হলুদ রঙের ঠোঁট শক্ত মজবুত, অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। পা বাদামি পালকে আবৃত। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম হলেও স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য বড়। অপ্রাপ্ত বয়য়স্কদের রঙ ভিন্ন। প্রধান খাবার: মাছ, সাপ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, ইঁদুর, ভোঁদড় ও পানকৌড়ি। অন্যসব পাখির চেয়ে জলচর পাখি বেশি ওদের শিকারে পরিণত হয়। প্রজনন সময় মার্চ থেকে এপ্রিল। তবে স্থানভেদে প্রজনন ঋতুর হেরফের দেখা যায়। বাসা বাঁধে বড় গাছের উঁচু ডালে। ডালপালা দিয়ে বড়সড়ো অগোছালো বাসা বানায়। এক বসায় বহু বছর ধরে ডিম বাচ্চা তোলে। ডিম পাড়ে ১-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৮-৪০ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৬-১০ সপ্তাহ এবং প্রজননক্ষম হতে সময় লাগে ৪-৫ বছর। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/06/2016
এশীয় তালবাতাসি | Asian Palm Swift | Cypsiurus balasiensis
এশীয় তালবাতাসি | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন, স্থানীয় প্রজাতির পাখি। দেখতে হিংস মনে হলেও তত হিংস নয়। কেবল আক্রান্ত হলে আক্রমণ করে। মানুষের হাতে বন্দি হলে ঠোঁট এবং নখের আঁচড়ে জখম করে। উড়ন্ত অবস্থায় এদের ঠোঁট, মাথা ও লেজ সমান্তরাল থাকে। ফলে দূর থেকে মাথা এবং লেজ শনাক্ত করা কঠিন হয়। শুধুমাত্র উড়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার কারণে মাথা-লেজ শনাক্ত করা যায়। শরীরের তুলনায় ডানা লম্বা থাকার কারণে উড়ন্ত অবস্থায় ডানা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে এরা উড়ন্ত অবস্থায় জল পান করে। গাছে জমে থাকা অথবা জলাধারের জল পানকালীন স্থির উড়তে থাকে। কণ্ঠস্বর কর্কশ, কিচিরমিচির শোনায়। বেশিরভাগই তালগাছে আশ্রয় নেয়। বাসাও বাঁধে তাল পাতায়। মাঝেমধ্যে সুপারি পাতায়ও বাসা বাঁধে। তাল পাতার সঙ্গে লেপ্টে রাত কাটায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি এশীয় অঞ্চল পর্যন্ত। ছোট-বড় দলে বিচরণ করে। মাঝেমধ্যে জোড়ায়ও দেখা যায়। প্রজাতি বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘এশীয় তালবাতাসি’, ইংরেজি নাম: ‘এশিয়ান প্লাম সুইফট’ (Asian Palm Swift), বৈজ্ঞানিক নাম: Cypsiurus balasiensis। এরা ‘নাককাটি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির দৈর্ঘ্যে ১১-১৩ সেন্টিমিটার। ওজন ৮-১০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। মাথা কালচে বাদামি, পিঠ গাঢ় নীল বাদামি। মধ্যখানে সাদা ছোপ। ডানার প্রান্তপালক কালচে ধূসর। ডানা দীর্ঘ, লেজের কাছাকাছি ঠেকেছে। লেজ লম্বা, বাদামি। লেজ প্রান্তর মাছের লেজের মতো ছেঁড়া। গলা ধূসরাভ বাদামি। দেহতল সাদা। ঠোঁট কালো, ছোট। ঠোঁটের অগ্রভাগ কিঞ্চিত বাঁকানো। পা ছোট। পায়ের তুলনায় নখ বড় এবং ধারালো। প্রধান খাবার: উড়ন্ত পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে আগস্ট। ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বাঁধে তাল গাছের পাতায়। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 14/07/2017
গাঙশালিক | Bank myna | Acridotheres ginginianus
গাঙশালিক | ছবি: ইন্টারনেট যত্রতত্র বিচরণ না করলেও দেশে কম-বেশি দেখা যায় এ পাখি। তবে বেশি দেখা যায় নদ-নদীর অববাহিকায়। দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। নামে বহুল পরিচিত হলেও অনেকেই দেখেনি এখনো এদের। এ পাখি দেশে তত সুলভও নয় আজকাল। খানিকটা অসুলভ হয়ে পড়েছে বলা যায়। এর জন্য অধিকাংশ দায়ী পাখি শিকারিরা। শিকারিরা অতি সহজে এদের জীবন্ত শিকার করতে পারে। আর এ কাজটি করে তারা ওদের প্রজনন মৌসুমে। এ সময়ে ওরা নদ-নদীর বা খালপাড়ের খাড়া কিনারে গর্ত করে বাসা বাঁধে। বাসা বাঁধে কলোনি আকারে। পাশাপাশি অনেক পাখি গর্ত করে ডিম পাড়ে। আবার এও দেখা যায়, একই বাসায় একাধিক দম্পতি ঘর বাঁধে। সামাজিকতার বন্ধন এদের মাঝে ব্যাপক। আর সে সুযোগটিই নেন শিকারিরা। তারা প্রজনন মৌসুমে রাতের আঁধারে গর্তে হাত ঢুকিয়ে এদের জীবন্ত ধরে রাজধানীর বিভিন্ন পাখির দোকানে সরবরাহ করে। এদের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। দোকানিরা এদের বুনো ময়না বলে চালিয়ে দেন। চেহারাটাও সে ধাঁচের। অনেকটাই ময়না পাখির মতোই। পাখি সম্পর্কে যাদের ধারণা কম তারাই এদের ক্রেতা। এ পাখির বাংলা নাম: ‘গাঙশালিক’, ইংরেজি নাম: ‘ব্যাংক ময়না’ (Bank myna), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘অ্যাকরিডোথেরেস জিনজিনিয়ানাস’ (Acridotheres ginginianus), গোত্রের নাম:‘স্টুরনিদি’। গাঙশালিক লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। মাথা মসৃণ কালো। থুঁতনি গলা পর্যন্তও তদ্রপ। কপালে ছোট কারো ঝুঁটি। দেহের অধিকাংশ পালক নীলচে ধূসর। ডানার পালক কালো। ওড়ার পালক সাদাটে ছোপ। পেটের নিচের দিকে বাদামি-কমলা। লেজ কালো। কনীনিকা গাঢ় লাল। ঠোঁট লালচে হলুদ। চোখের দু’পাশ পালকহীন পাটকিলে হলদে-লাল। পা কমলা-লাল। গাঙশালিকের প্রধান খাবার পোকা-মাকড়। এছাড়া শস্যদানাও খেতে দেখা যায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। নদী বা খালের খাড়া পাড়ে গর্ত করে বাসা বাঁধে। এছাড়াও দালান-কোঠা, পুরনো পুলের ফোঁকরে বাসা বাঁধে। মাটিতে বাসা বাঁধলে সে ক্ষেত্রে গর্তটা লম্বা করে বেশ। অনেক শাখা-প্রশাখা থাকে। এর মধ্যে শুকনো ঘাস লতাপাতা ঢুকিয়ে ডিম পাড়ার উপযোগী করে নেয়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/05/2014
কালোটুপি মাছরাঙা | Black capped Kingfisher | Halcyon pileata
কালোটুপি মাছরাঙা | ছবি: ইন্টারনেট সুললভ দর্শন পরিযায়ী পাখি হলেও স্থানভেদে অসুলভ। দেখা মেলে সুন্দরবনের নির্জনে। উপকূলীয় প্যারাবনেও কিছু দেখা যায়। হালে নাকি পাখি পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ ঢাকার আশপাশে দেখেছেন, সেরকম তথ্যও আমরা জানতে পেরেছি। তবে এ অঞ্চলে দেখার নজির থাকলেও আজ পর্যন্ত ঢাকার কাছাকাছি কোথাও আমার নজরে পড়েনি। আমি দেখেছি দেড় যুগ আগে সুন্দরবনের সুপতি রেঞ্জসংলগ্ন (শরণখোলা রেঞ্জের অধীন) নদীর কিনারে পানির ওপর নুয়ে থাকা গাছের ডালে। শিকারে মনোযোগী ছিল পাখিটি, ওর গতিবিধি লক্ষ্য করার সুযোগ হয়েছে খানিকটা তাই। ওকে দেখেছি পানিতে ঝাঁপিয়ে না পড়ে নদীর কিনারের কাদামটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুনরায় একই গাছের ডালে বসে শিকার গলাধঃকরণ করতেও দেখেছি। এরা সাধারণত জোয়ার-ভাটাসিক্ত এলাকার খাঁড়ি বা মোহনায় বিচরণ করে। বিচরণ করে জোড়ায় কিংবা একাকী। অন্যসব প্রজাতির মাছরাঙাদের মতো ওড়ার সময় খুব একটা ডাকাডাকি করে না। মাঝেমধ্যে ডাকলেও ‘কিকিকিকিকি’ সুরে ডাকে। তবে প্রজনন মৌসুমে বেশি ডাকাডাকি করে। স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করতে এ প্রয়াস। প্রজাতিটির বিস্তৃতি রয়েছে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, চীন, লাওস, কোরিয়া, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায়। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপদমুক্ত, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। এ পাখির বাংলা নাম: ‘কালো-টুপি মাছরাঙা’, ইংরেজি নাম: ‘ব্ল্যাক-ক্যাপড কিংফিশার’ (Black-capped Kingfisher), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘হালসিয়ন পাইলিয়েটা’ (Halcyon pileata), গোত্রের নাম: ‘হালসিওনিদি’। এরা ‘মাথা কালো মাছরাঙা’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১২ প্রজাতির মাছরাঙা নজরে পড়ে। প্রজাতি লম্বায় ২৮ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার। কপাল, মাথা ও ঘাড়ের উপরাংশ কুচকুচে কালো। গলাবন্ধ সাদা। পিঠ থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত নীলাভ-বেগুনি। ডানার ওপর রয়েছে কালো পট্টি। গলা থেকে বুক পর্যন্ত সাদা। বুকের নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত ফিকে লালচে হলুদ। ঠোঁট প্রবাল লাল। পা ও পায়ের আঙুল কালচে লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্কদের রং ভিন্ন। এদের গলাবন্ধ ও বুক কালচে। প্রধান খাবার: মাছ, কাঁকড়া, ব্যাঙ ও টিকটিকি। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে বনভূমির কাছাকাছি নদীর খাড়া পাড়ে সুড়ঙ্গ বানিয়ে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৬ থেকে ১৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।প্রকাশ: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 17/08/2018
হিমালয়ী কাঠঠোকরা | Himalayan Goldenback | Dinopium shorii
হিমালয়ী কাঠঠোকরা | ছবি: ইন্টারনেট অসুলভ দর্শন আবাসিক পাখি। সুশ্রী গড়ন। দেখা মেলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বনাঞ্চলে। বিচরণ করে মিশ্র-চিরসবুজ ও পাতাঝরা বনে। এরা পারিবারিক দলে এবং একাকী বিচরণ করে। পিঁপড়া খেতে মাঝে মধ্যে মাটিতে নামে। হাঁটে লাফিয়ে। গাছের কাণ্ডের চারদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরে শিকার খোঁজে। কণ্ঠস্বর কর্কশ। শিকাররত অবস্থায় ঘনঘন ‘ক্লাক-ক্লাক-ক্লাক…’ সুরে ডাকাডাকি করে। প্রজনন মৌসুমে হাঁকডাক বেড়ে যায়। এ সময় ‘কি-কি-কি-কি’ সুরে ডাকে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান পর্যন্ত। বিশেষ করে হিমালয়াঞ্চল থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত অধিক নজরে পড়ে। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্নমুক্ত। বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এদের সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়নি। পাখির বাংলা নাম: হিমালয়ী কাঠঠোকরা, ইংরেজি নাম: হিমলয়ান গোল্ডেনব্যাক, (Himalayan Goldenback), বৈজ্ঞানিক নাম: Dinopium shorii | লম্বায় ৩০-৩১ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথার চাঁদি ও চূড়া টকটকে লাল। অপরদিকে স্ত্রী পাখির কপাল ও চাঁদির সামনের অংশ বাদামি কালো, চূড়া লম্বা সাদাডোরাসহ কালো। উভয়ের পিঠ সোনালি-হলুদ। ডানার প্রান্ত পালক কালো। লেজ কালো। ঘাড় কালো। গলার মধ্যভাগ বাদামি-পীতাভ। কোমর উজ্জ্বল লাল। দেহতল কালোর ওপর খাড়া দাগ। চোখ ও ঘাড়ের মাঝে ফ্যাকাসে বাদামি অস্পষ্ট কালো ডোরা। চোখের পেছন থেকে প্রশস্ত সাদা ভ্রƒ ঘাড়ে গিয়ে ঠেকেছে। ঠোঁট কালচে। চোখ লালচে-বাদামি। পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে। প্রধান খাবার: পোকামাকড় এবং পিঁপড়া। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। গাছের মোটাসোটা ডালে নিজেরা খোড়ল বানিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, ০৮/০৫/২০১৫