কালাপেট পানচিল | Black bellied Tern | Sterna acuticauda
কালাপেট পানচিল | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। সুচালো স্লিম আকৃতির গড়ন। দেখতে মন্দ নয়। উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে এদের দেখা মিললেও মূলত এরা সামুদ্রিক পাখি। হ্রদ কিংবা নদ-নদীতে বিচরণের পাশাপাশি দেখা মেলে বালুময় দ্বীপাঞ্চলেও। এ ছাড়া কৃষিজমিতে বিচরণ রয়েছে। মিঠা জলের চেয়ে লবণ জলে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সাগরের কাছাকাছি এলাকায় বেশি দেখা যাওয়ার মূল কারণই এটি। বিচরণ করে ঝাঁক বেঁধে। কলোনি টাইপ বাসা বাঁধে। চলাচলরত নৌযানকে অনুসরণ করতে দেখা যায় প্রায়ই। নৌযানের পেছন পেছন চক্কর মেরে উড়ে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে। স্বভাবে শান্ত। ঝগড়াঝাটি পছন্দ নয়। তবে নিজেদের মধ্যে কমবেশি ঝগড়া বাধে। এ সময় বিরক্ত হয়ে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে ওঠে ‘ক্রাআ-ক্রা-আ’ সুরে। শিকারি পাখি ব্যতিরেকে এদেরকে পারতপক্ষে কেউ তেমন একটা বিরক্ত করে না। ফলে এরা দেশে মোটামুটি ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়া পর্যন্ত। বিশ্বের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এদের অবস্থান কিছুটা ভালো। পাখির বাংলা নাম: ‘কালাপেট পানচিল’, ইংরেজি নাম: ‘ব্ল্যাক-ব্যালিড টার্ন’ (Black-bellied Tern), বৈজ্ঞানিক নাম: Sterna acuticauda | এরা ‘কালো গাংচিল’ নামেও পরিচিত। এরা দৈর্ঘ্যে ৩২-৩৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রজনন পালক ভিন্ন। মাথায় টুপি আকৃতির ঘন কালো পালক, যা ঘাড়ের উপরিভাগ অবধি নেমে গেছে। পিঠ, ডানা ও লেজ সাদাটে ধূসর। ডানা এবং লেজের অগ্রভাগ সরু। গলা সাদা। বুক ধূসর কালো। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত গাঢ় কালো। ওড়ার পালক সাদা। চোখের কালো। হলুদ ঠোঁটের গোড়ার দিক মোটা হলেও প্রান্তটা সুচালো। পা ও আঙ্গুল কমলা হলুদ। প্রধান খাবার: ছোট মাছ। এ ছাড়াও বালুচরে ঘুরে পোকামাকড়, সরীসৃপ, শুককীট খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম ফ্রেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। জলাশয়ের কাছাকাছি বেলাভূমি এলাকায় ঘাস, লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২২-২৩ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে ৪-৫ সপ্তাহ সময় লাগে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 26/02/2016
চোখগেলো | Common Hawk Cuckoo | Hierococcyx varius
চোখগেলো| ছবি: ইন্টারনেট শীতকালে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে এরা নিজেদের আড়াল করে রাখে। আগমন ঘটে বসন্তের মাঝামাঝি সময়। গ্রীষ্মের শুরু থেকে মোটামুটি দেশে কম-বেশি সবখানেই দেখা যায় এ পাখি। এরা পছন্দ করে গাছের উঁচু শিখরে বসতে। বিশেষ করে আম-জাম গাছের উঁচু শিখরে বসে বেশি। পারতপক্ষে এরা মাটিতে নামে না। গাছে গাছে কিংবা শূন্যে ওড়াউড়ি করেই সময় কাটায়। পতঙ্গ ভক্ষণের লোভে ঝোপ-জঙ্গলের কাছাকাছি বেশিরভাগ সময় উড়ে বেড়াতে দেখা যায়। দেখা যায় রসালো নরম ছোট ফল গাছের আশপাশেও। সাধারণত একাকী বিচরণ করে। প্রজনন সময় ঘনিয়ে এলে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। তবে কম। তখন পুরুষ পাখিটির সুর উতলে ওঠে। দিন-রাত ডাকতে থাকে ‘চোখগেলো চোখগেলো’ অথবা ‘পিউ-কাঁহা পিউ-কাঁহা’ সুরে। ওদের সুরে রয়েছে চমৎকার তাল-লয়। নিচু স্বর থেকে ক্রমেই উচ্চৈঃস্বরে ডাকে ওরা। সুরে থাকে এক ধরনের মাদকতাও। শুনলে কান খাড়া হয়ে ওঠে এবং আরো শোনার আগ্রহবোধ হয়। গগনবিদারী আর্তচিৎকারটা শুনলে মনটা আবেগে ভরে ওঠে যে কারো। এ পাখির বাংলা নাম: “চোখগেলো”, ইংরেজি নাম: “কমন হাক কুক্কু”, (Common Hawk Cuckoo), বৈজ্ঞানিক নাম: “হাইরোকক্সিস ভেরিয়াস”, (Hierococcyx varius), গোত্রের নাম: কুকুলিদি। এরা লম্বায় ৩৩-৩৪ সেন্টিমিটার। ঠোঁট তীক্ষ। ঠোঁটের ডগা কালো বাদবাকি হলদেটে সবুজ। মাথা থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত ধূসর। তবে লেজের ওপর কিছু কালো বলয় রয়েছে। গলার নিচ থেকে বুক পর্যন্ত লালচে বাদামি। বুকের দু’পাশে সরু বাদামি দাগ। চোখের তারা, বলয় হলুদ। পা, আঙুল হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়, ছোটখাটো সরীসৃপ। ছোট নরম ফল-ফলাদিও খায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না। জ্ঞাতিভাই কোকিলের মতো পরের বাসায় ডিম পেড়ে পালিয়ে যায়। বেশিরভাগ সময় ডিম পাড়ে একটি। ডিম পাড়ে সাতভায়লা, ফিঙ্গে, হলদে পাখির বাসায়। এতে ডিম ফোটার সঠিক সময়টা নির্ধারণ করা যায়নি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 07/12/2012
বড় সুইচোরা | Blue bearded Bee eater | Nyctyornis athertoni
বড় সুইচোরা | ছবি: ইন্টারনেট সুইচোরা, পুরো নাম ‘বড় সুইচোরা’। দুর্লভ আবাসিক পাখি। স্লিম গড়ন। সুদর্শনও বটে। চাহনি রুক্ষ হলেও স্বভাবে অহিংস। যত্রতত্র দেখা মেলে না। মাঝে-মধ্যে এদের খোঁজ মেলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আর্দ্র পাতাঝরা ও চিরসবুজ অরণ্যের স্রোতধারায়। আবাদযোগ্য জমির আশপাশেও দেখা যায়। সুইচোরা অরণ্যের ভেতর ফাঁকা স্থানে বা জলাশয়ের কিনারে গাছের ওপর একাকী বসে থাকে শিকারের প্রতীক্ষায়। তবে যেখানেই বসুক না কেন, আশপাশটা ঝাপ-জঙ্গল-লতাপাতা কিংবা ঘন ডালপালাবিহীন মুক্তাঞ্চল হওয়া চাই-ই। যাতে কিছু সময় পর পর উড়তে সুবিধা হয়। সব ধরনের সুইচোরা পাখি উড়ন্ত অবস্থায়ই পতঙ্গ শিকার করে। দৃষ্টিসীমার মধ্যে যে কোনো ধরনের কীটপতঙ্গ দেখলেই ছোঁ মেরে ধরে ফেলে এ পাখি। জলপানেও রয়েছে এদের বৈচিত্র্যতা। জলের ওপর উড়ে উড়ে ছোঁ মেরে এরা জল পান করে। স্থিরতা এদের মাঝে খুবই কম। কোথাও একদণ্ড বসে থাকার ফুরসত নেই যেন। বিরক্ত হলে ‘কর-র-র…কর-রর…’ কণ্ঠে আওয়াজ করে। বাংলাদেশ ছাড়া সুইচোরার বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ত পর্যন্ত। আইইউসিএনের ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে এ পাখি অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বণ্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘বড় সুইচোরা’, ইংরেজি নাম: ‘ব্লুবারডেড বী-ইটার’ (Blue-bearded Bee-eater), বৈজ্ঞানিক নাম: Nyctyornis athertoni | এরা ‘নীলদাড়ি সুইচোর’ বা ‘পাহাড়ি সুইচোরা’ নামেও পরিচিত। সুইচোরা লম্বায় ৩৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তফাৎ নেই। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কপাল নীল। ঘাড়, পিঠ ও লেজ সবুজ। লেজের নিচের দিক হলুদাভ। লেজের ডগা ভোঁতা। ডানার নিচের পালক হলুদাভ-পীতাভ। গলায় রয়েছে দাড়িসদৃশ নীল রঙের পালক, যা বুকের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। বুক কালচে নীল। পেট হলুদাভ-পীতাভ ডোরা। বাঁকানো ঠোঁট শিঙ বাদামি রঙের। নিচের ঠোঁটের গোড়া ধূসর। চোখ উজ্জ্বল সোনালি-কমলা। পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে সবুজ। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের নীলদাড়ি থাকে না। প্রধান খাবার: মৌমাছি, ফড়িং, বোলতা, গুবরে পোকা ইত্যাদি। ফুলের মধুর প্রতি যথেষ্ট আসক্তি রয়েছে। এদের প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট। বন-জঙ্গল বেষ্টিত জলাধারের খাড়া কিনারে অথবা পাহাড়ের গায়ে এরা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২০-২১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 26/10/2018
পাতি সারস | Common Crane | Grus grus
পাতি সারস | ছবি: ইন্টারনেট পরিযায়ী পাখি। হালে দেখা যাওয়ার নজির নেই। বিচরণ করে জলাশয়ের কাছাকাছি তৃণভূমি, কৃষি ক্ষেত, চারণভূমি, অগভীর আশ্রিত উপসাগরীয় অঞ্চল, নদী ও অগভীর হ্রদে। মাঝেমধ্যে হাঁটু পরিমাণ জলে নেমে খাবার খুঁজতে দেখা যায়। খাদ্যের সন্ধানে বের হয় জোড়ায় অথবা ছোট-বড় দলে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করতে নাচের কসরৎ দেখায়। নাচের কসরৎ দেখতে দেখতে স্ত্রী পাখি তখন আর নিজকে ধরে রাখতে পারে না। নিজেও নাচে অংশ নিয়ে প্রেমে মজে যায়। এ সময় জোরে জোরে দ্বৈত সংগীতের মতো গান গায়। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ-পূর্ব চীন, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত। সমগ্র বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন লাল তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশে সংকটাপন্ন বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে দেশি সারস। পাখির বাংলা নাম: ‘পাতি সারস’, ইংরেজি নাম: ‘কমন ক্রেন’ (Common Crane), বৈজ্ঞানিক নাম: Grus grus | দেশে তিন প্রজাতির সারস দেখা যায়। যথাক্রমে: দেশি সারস, পাতি সারস ও ধূসর সারস। এরা সবাই পরিযায়ী প্রজাতির। গড় দৈর্ঘ্য ১১৫ সেন্টিমিটার। প্রশস্ত ডানা ১৮০-২০০ সেন্টিমিটার। ওজন পুরুষ পাখি ৫.১-৬.১ কেজি। স্ত্রী পাখি ৪.৫-৫.৯ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। কপাল কালো। মাথার তালুর রক্ত লাল। মাথার পেছন থেকে শুরু করে ঘাড়, থুতনি ও গলা কালো। চোখের পেছন থেকে ঘাড় ও গলার কালো দ্বিখণ্ডিত হয়ে সাদায় রূপ নিয়েছে। পিঠ গাঢ় ধূসর। ডানার পালকের ওপর কালো ছোপ। ওড়ার পালক কালো। লেজ কালো। ডানার বাড়তি পালক লেজের ওপর ঝালরের মতো ঝুলে থাকে। দেহতল গাঢ় ধূসর। ঠোঁট সবুজাভ, ডগা হলুদ। চোখের তারা লাল। পা ও পায়ের পাতা কালো। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের চেহারা ভিন্ন। প্রধান খাবার: শস্যবীজ, ঘাসবীজ, কন্দ, গাছের কচিডগা, ব্যাঙ, কাঁকড়া কেঁচো, মাকড়সা, ছোট পাখি, কীটপতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম বর্ষাকাল। বাসা বাঁধে জলাশয়ের কাছাকাছি মাটির ওপরে। শুকনো চিকন ডালপালা, লতাপাতা উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩১ দিন। শাবক উড়তে শিখে ৬ সপ্তাহের মধ্যে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 30/10/2015
সবুজ টিয়া | Rose ringed parakeet | Psittacula krameri
সবুজ টিয়া | ছবি: ইবার্ড এ পাখি হিংস্র হলেও বেশ মিশুক। দোষগুণ দু’টিই এদের মাঝে বিদ্যমান। পোষ মানে দ্রুত, শিখালে কথাও বলে। অজস ছড়া-কবিতা রচিত হয়েছে এদের নিয়ে। দেশের প্রায় প্রতিটি স্থানেই কমবেশি এদের সাক্ষাৎ মিলে। বেশি দেখা যায় আর্দ্র পাতাঝরা বনে। পাহাড়ি বনবনানীতেও প্রচুর দেখা যায়। দেখা যায় বসতঘরের আশপাশে এবং শহরেও দেখা মেলে। এদের বাংলা নাম: ‘সবুজ টিয়া’, ইংরেজি নাম: ‘রোজ রিংগডপ্যারাকিট’ (Rose-ringed parakeet), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘সিট্টাক্যুলা ক্রামেরি’(Psittacula krameri), গোত্রের নাম: ‘সিট্টাসিদি’। লম্বায় ৪০ সেন্টিমিটার। দেহের তুলনায় লেজ লম্বা। ঠোঁট রক্ত লাল, শক্ত-মজবুত ও ধারালো। উপরের ঠোঁট বড়শির মতো বাঁকানো। জিভ শক্ত। চোখের বলয় কমলা রঙের, মনি হলুদ-সাদা। দেহের অধিকাংশ পালক কলাপাতা-সবুজ। পিঠের কিছু অংশ ফিকে নীলচে, ধূসর আভাযুক্ত ও হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম মনে হলেও পার্থক্য আছে খানিকটা। পুরুষ পাখির থুতনির নিচে কালো দাগ, গলায় ও ঘাড়ে গোলাপি-কালো মিশ্রণ কণ্ঠী। স্ত্রী পাখির ঘাড়ে সবুজ পালকে আবৃত। এ ছাড়াও পুরুষ পাখি কিছুটা লম্বা। প্রধান খাবার: ফল, গাছের কচিপাতা, শস্যবীজ। ধান, বাদাম, দুধভাত বেশ প্রিয়। প্রজনন সময় মার্চ-মে। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে অথবা পুরাতন দরদালানের ফাটলে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফোটে ২২-২৪ দিনে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 18/05/2013
ছোট ধলা বক | Little egret | Egretta garzetta
ছোট ধলা বক | ছবি: ইন্টারনেট জলচর পাখিদের আনাগোনাটা ছিল লক্ষণীয়। এর মধ্যে ‘ছোট বক’-এর দেখা পেয়েছি যত্রতত্র। এরা শিকারের প্রতীক্ষায় কচুরিপানা কিংবা জলদামের ওপরে সাধুসন্ন্যাসীর বেশে দাঁড়িয়ে শিকার খুঁজছে। একটা ধবধবে সাদা ছোট বককে ভেসাল জালের ওপরে উড়ে উড়ে শিকার ধরতে দেখেছি। সাধারণত এ রকমটি খুব কমই দেখা যায়। কারণটা হচ্ছে এদের প্রভূত ধৈর্যশীলতা। পারতপক্ষে হন্যে হয়ে শিকার খোঁজে না এরা। তাই অন্যসব জলচর পাখির চেয়ে ওর প্রতি আমার আগ্রহটা একটু বেশিই ছিল বোধকরি। ইঞ্জিনচালিত নৌকা থেকে নেমে শুকনো ভূমিতে দাঁড়িয়ে পাখিটার কীর্তি দেখেছি কিছুটা সময় লাগিয়ে। বিষয়টা মনে গেঁথে রেখে পাখিটার পরিচিতি তুলে ধরেছি পাঠকদের কাছে। এ পাখির বাংলা নাম: ‘ছোট বক’, ইংরেজি নাম: ‘লিটল ইগ্রেট’ (Little egret). বৈজ্ঞানিক নাম: ‘ইগ্রেটা গারজেটা’ (Egretta garzetta), গোত্রের নাম: ‘আরডিদি’। এরা ‘ছোট ধলা বক’ নামেও পরিচিত। দেশে পরিজায়ীসহ প্রায় ১৫-১৮ প্রজাতির বক নজরে পড়ে। এরা লম্বায় ৫৫-৫৬ সেন্টিমিটার। ওজন ৩৫০-৪০০ গ্রাম। দেহের গড়ন লম্বাটে চিকন। দেহের সমস্ত পালক ধবধবে সাদা। ঠোঁট সরু, লম্বা ও কালো। পা লম্বা, কালো। প্রজনন মৌসুমে মাথার ঝুঁটির পালক পিঠের ওপর দিয়ে ঝুলে পড়ে। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। মৎস্যভুক পাখি এরা। এ ছাড়াও ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড় ও ঘাসফড়িং শিকার করে। প্রজনন মৌসুম জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। জলাশয়ের কাছাকাছি গাছগাছালিতে দলবদ্ধ হয়ে বাসা বাঁধে। কলোনি টাইপ বাসা। বাসা বাঁধতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চিকন শুকনো ডালপালা। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১-২৫ দিন। শাবক সাবলম্বী হতে সময় নেয় ৪০-৪৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 30/08/2013
আমুর শাহিন | Amur Falcon | Falco amurensis
আমুর শাহিন | ছবি: ইন্টারনেট পাখির নাম ‘আমুর শাহিন’। আমুরল্যান্ডে বিচরণ আধিক্য বিধায় হয়তো এই নাম ওদের। এরা উপমহাদেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। সুদর্শন, স্লিম গড়নের পাখি। দেখতে কিছুটা ককাটিল পাখিদের মতো। পুরুষদের চেহারা চকচকে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ; ভিন্ন বর্ণের। প্রাকৃতিক আবাসস্থল খোলা মাঠপ্রান্তর, খোলা বনাঞ্চল। শিকারি পাখি হলেও স্বভাবে হিংস নয়। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আমুরল্যান্ড, ট্রান্সবিকালিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব সাইবেরিয়া, উত্তর-পূর্ব মঙ্গোলিয়া উত্তর-পূর্ব চীন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়, উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে আইসিইউএন এদের শনাক্ত করেছে তাই। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘আমুর শাহিন ’, ইংরেজি নাম: ‘আমুর ফ্যালকন’, (Amur Falcon), বৈজ্ঞানিক নাম: Falco amurensis | এরা ‘লালপা তুরমুতি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ৩০-৩৬ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৬৫-৭৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৯৭-১৫৫ গ্রাম। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি খানিকটা বড়। চেহারায় বিস্তর তফাৎ। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ গাঢ় ধূসর। ডানা খানিকটা লম্বা। দেহতল ধূসর। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত লাল। চোখের বলয় কমলা হলুদ। ঠোঁটের অগ্রভাগ কালচে বাঁকানো, গোড়া কমলা হলুদ। পা লালচে কমলা। অপরদিকে স্ত্রী পাখির চেহারা ভিন্ন। শরীরে ধূসর, হলুদ, সাদা, বাদামির মিশ্রণ ছিট। বাদবাকি পুরুষের মতো। প্রধান খাবার: ঘাসফড়িং, পতঙ্গ, ছোট পাখি ও ছোট সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। গাছের উঁচু ডালে চিকন ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। মাস খানেকের মধ্যেই শাবক স্বাবলম্বী হয় এবং বাবা-মাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/10/2017