বাজপাখি | Common Buzzard | Buteo buteo
বাজপাখি | ছবি: ইন্টারনেট শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। নজরে পড়ে খোলা মাঠ-বিল প্রান্তরে। খরগোশ, সাপ, গলিত মাংস, কীটপতঙ্গ এসব শিকার করে। পারতপক্ষে জলাশয় থেকে মাছ শিকার করে না। চাষাবাদ হয় এমন ক্ষেত-খামারের কাছাকাছি বেশি নজরে পড়ে। ফসলের ক্ষেত্রেও বিচরণ রয়েছে। বিচরণ করে জোড়ায় কিংবা ছোট দলে। অনেক ক্ষেত্রে ১০-১৫টির দলেও দেখা যায়। আকাশের অনেক উঁচুতে উঠে অনেকখানি পরিধি নিয়ে ঘুরতে থাকে। দীর্ঘক্ষণ শূন্যে ভেসে থাকতে পছন্দ করে। এরা শিকারি পাখি হলেও স্বভাবে তেমন হিংস নয়। প্রজাতির চারাভিযান বাংলাদেশ, ভারত, ইউরোপ, রাশিয়া, আফ্রিকা, তুরস্ক, জাপান, থাইল্যান্ড, হংকং এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। বিশ্বে এরা ভালো অবস্থানে নেই। >পাখির বাংলা নাম: ‘বাজপাখি’, ইংরেজি নাম: ‘কমন বাজার্ড’ (Common Buzzard), বৈজ্ঞানিক নাম: Buteo buteo | এরা ‘পাতি তিসাবাজ’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ৪০-৫৮ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৪২৭ গ্রাম। প্রসারিত পাখা ১০৯-১৩৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী পাখি সামান্য বড়। মাথা, ঘাড়, পিঠ, ডানা ও লেজ কালচে বাদামির সঙ্গে সাদা ছোপ। ঘাড়ে, গলায় সাদা ছোপ স্পষ্ট। বুক, পেট ও বস্তি প্রদেশ হলদে বাদামির ওপর হলদে সাদা ছিট। চোখের বলয় হলুদ। কালো মণির চারপাশ বাদামি। বড়শির মতো বাঁকানো ঠোঁট কালো, গোড়া হলুদ রঙের। মুখের কিনারটাও হলুদ। পা হলুদ ও নখ কালো। প্রধান খাবার: খরগোশ, ছোট সাপ, ইঁদুর, টিকটিকি, ব্যাঙ, কাঁকড়া, পোকামাকড় ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মধ্য এপ্রিল। গাছের উঁচু শিখরে সরু ডালপালা দিয়ে অগোছালো বাসা বাঁধে। মাটিতে বা পাথুরে এলাকায়ও বাসা বাঁধে। একই বাসা বারবার ব্যবহার করে। ডিমের সংখ্যা ২-৪টি। তিন দিন অন্তর ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৩-৩৫ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৬-৮ সপ্তাহ। তিন বছর বয়সে বয়োপ্রাপ্ত হয়। গড় আয়ু ২৫ বছর। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 05/05/2017
পাতারি হাঁস | Common teal | Anas crecca
পাতারি হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট প্রচণ্ড শীতে সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী হয়ে আসে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে। শীতের শুরুতে লতাগুল্ম আচ্ছাদিত বৃহৎ জলাশয়ে কিংবা হাওর-বাওরে ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করতে দেখা যায়। দেখা যায় জলাশয়ের ওপর ওড়াউড়ি করতেও। এদের ওড়ার গতিও ভালো। উড়তে উড়তে অনেক সময় পুরুষ পাখি নিচুস্বরে ডাকে ‘ক্রিট..ক্রিট’। প্রজাতিটি সুলভ দর্শন হলেও আমাদের দেশে এরা নিরাপদ নয়। বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। গত দশক আগেও দেশে এদের ব্যাপক বিচরণ ছিল। সে তুলনায় বর্তমান সময়ে নজরে পড়ছে না তেমনটি। ১৯৯৭ সালের দিকেও ঢাকা চিড়িয়াখানার লেকে ব্যাপক দর্শনের নজির রয়েছে। দ্রুত এদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার প্রধান কারনটিই হচ্ছে শিকারিদের দৌরাত্ম্য। দেখতে ভীষণ সুন্দর, ওজনে সামান্য হলেও এরা রেহাই পায় না নিষ্ঠুর শিকারিদের হাত থেকে। রসনাবিলাসিরা যদি একটু সংযত হন বোধ করি দেশের শিকরিরাই বিপাকে পড়ে যাবে এবং তারা পাখি শিকারে নিরুৎসাহী হয়ে পড়বে। তাতে করে হ্রাস পাওয়া প্রজাতির সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এ পাখির বাংলা নাম: ‘পাতারি হাঁস’, ইংরেজি নাম: ‘কমন টিল’ (Common teal), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘আনাস ক্রেককা’ (Anas crecca)। এরা ‘পাতি তিলিহাঁস’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ৩৪-৩৮ সেন্টিমিটার। ওজন ২৮০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির বর্ণে পার্থক্য রয়েছে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রঙ বদলায়। এ সময় এদের মাথার রঙ লালচে-বাদামি এবং শরীরে গুঁড়ি গুঁড়ি রেখা দেখা যায়। মাথার দু’পাশে লম্বা দুটি সাদা ডোরা। চোখের ওপর থেকে ঘাড় পর্যন্ত দেখা যায় চওড়া ধাতব-সবুজ পট্টি। ডানা কালো, ধাতব সবুজ ও হলদেটে। লেজের নিচের পালক হলুদাভ ছোপ। স্ত্রী পাখির রূপ নিষ্প্রভ। মাথার তালু ও ঘাড় কালচে-লালচের মিশ্রণ। উভয়ের চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা জলপাই-ধূসর। অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাখির সঙ্গে মা পাখির বর্ণের খানিকটা মিল রয়েছে। প্রধান খাবার: জলজ উদ্ভিদের কচিডগা ও বীজ। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট। জন্মভূমি সাইবেরিয়া অঞ্চলের জলাশয়ের পাশের ভূমিতে শুকনো লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৮-১২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১-২৩ দিন। শাবক উড়তে শিখে ২৫-৩০ দিনের মধ্যেই। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 28/02/2014
ছোট ফুলঝুরি | Pale-billed Flowerpecker | Dicaeum erythrorynchos
ছোট ফুলঝুরি | ছবি: ইন্টারনেট এরা অতি সুলভ দর্শন স্থানীয় প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পশ্চিম মিয়ানমার পর্যন্ত। বিচরণ করে পর্ণমোচী অরণ্য, ফুল এবং ফল বাগানে। অস্থিরমতি পাখি। সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটায় গাছের চিকন ডালে লাফিয়ে লাফিয়ে। আর ‘চিক্..চিক্..চিক্..’ সুরে গান গাইতে থাকে। পাখির বাংলা নাম: ‘ছোট ফুলঝুরি’, ইংরেজি নাম: ‘প্লেইন-বেলিড্ ফ্লাওয়ার পেকার’ (Pale-billed Flowerpecker), বৈজ্ঞানিক নাম: Dicaeum erythrorynchos। এরা ‘মেটেঠোঁট ফুলঝুরি’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ৮ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত ধূসরাভ-জলপাই। দেহতল ধূসরাভ। ঠোঁট ত্বক রঙের। ঠোঁটের গোড়া প্রশস্ত, ডগা সরু। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা কালো। প্রধান খাবার: ফুলের মধু, মাকড়সা, ছোট পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের দেখা যায়। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ৩-৭ মিটার উঁচুতে গাছের চিকন ডালে। বাসা নাশপতি আকৃতির। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে গাছের সরু তন্তু, শ্যাওলা, তুলা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৪ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, ১৯/০৬/২০১৫
নীলঘাড় শুমচা | Blue naped Pitta | Pitta nipalensis
নীলঘাড় শুমচা | ছবি: ইন্টারনেট বনচর পাখি। ত্রিভুজাকৃতির গড়ন। দেহের তুলনায় লেজ খাটো। পা লম্বা। চিরসবুজ অরণ্যের বাসিন্দা। বিচরণ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বা ক্রান্তীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বনাঞ্চলে। বিশেষ করে ক্রান্তীয় বা আর্দ্র পার্বত্য অরণ্যের বাঁশঝাড় বা লতা গুল্মাদির ভেতর নরম মাটি ঠুকরিয়ে খাবার খুঁজতে দেখা যায়। মূলত এরা ঝরাপাতা উল্টিয়ে পোকামাকড় খায়। বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায়। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। ওড়ার চেয়ে লাফায় বেশি। খুব ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। রাতেও খাবার খোঁজে। অথচ রাতে খুব বেশি চোখে দেখে না। মানুষকে এড়িয়ে চলে। মাঠ-প্রান্তরের চেয়ে জঙ্গলের ভেতর ফাঁকা স্থানে বিচরণ করে বেশি। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে গলা ছেড়ে কর্কশ কণ্ঠে শিস দেয়। শিস অনেকটাই বাঁশির সুরের মতো শোনায়। এরা মাথা ঝাঁকিয়ে ঠোঁট ঊর্ধ্বমুখী করে শিস কাটে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, লাওস ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘নীলঘাড় শুমচা’, ইংরেজি নাম: ‘ব্লু ন্যাপেড পিট্টা’ (Blue-naped Pitta), বৈজ্ঞানিক নাম: Pitta nipalensis | কারো কারো কাছে এরা ‘নীলপাখি’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে মোট পাঁচ প্রজাতির শুমচা দেখা যায়। যথাক্রমে: প্যারা শুমচা, নীল শুমচা, নীলঘাড় শুমচা দেশি শুমচা ও খয়রামাথা শুমচা। ত্মধ্যে খয়রামাথা শুমচা পরিযায়ী হয়ে আসে। বাদবাকিরা দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ২২-২৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১১০-১৩২ গ্রাম। মাথা পাটকিলে। ঘাড় নীল। ঘাড়ের পাশে কালো টান। পিঠ ও লেজ জলপাই সবুজ। ডানায় বাদামি টান। খাটো লেজের মধ্যখানে বাদামি পালক। গলা ও দেহতল শেয়ালে লাল। ঠোঁট কালচে, শক্ত মজবুত ত্রিকোণ আকৃতির। চোখ বাদামি। পা ফ্যাকাসে হলদে। প্রধান খাবার: ভূমিজকীট, কেঁচো, টিকটিকি ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে আগস্ট। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের দেখা যায়। বাসা বাঁধে মাটিতে অথবা ফার্নে আবৃত গাছের কাণ্ডে। বাসা গম্বুজ আকৃতির। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস বা বাঁশপাতা। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৬ দিন। শাবক উড়তে শেখে ২০-২৫ দিনের মধ্যে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/09/2016
লাললেজ মৌটুসি | Fire tailed Sunbird | Aethopyga ignicauda
লাললেজ মৌটুসি | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। যত্রতত্র দেখা না গেলেও সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে নজরে পড়ে। মনোহর রূপ। কণ্ঠস্বরও সুমধুর। প্রথম দর্শনেই যে কেউ মুগ্ধ হবেন। তবে সেটি অবশ্যই পুরুষ পাখির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারায় বিস্তর তফাত রয়েছে। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি অনেকটাই নিষ্প্রভ। রূপের এমন পার্থক্য সত্ত্বেও নবীন পাখি দেখিয়েদের পক্ষে স্ত্রী-পুরুষ শনাক্ত করা কঠিন। ‘লাল লেজ মৌটুসি’ নামের এই পাখি যথেষ্ট অস্থিরমতি ও ফুর্তিবাজ। সারা দিন নেচেগেয়ে ব্যস্ত সময় পার করে। যেন কোথাও একদণ্ড বসার সময় নেই ওদের। বিশেষত পুরুষ পাখির চঞ্চলতায় মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। লাফালাফি বা নাচতে গেলে ওদের লম্বা লেজটা সোজা দাঁড়িয়ে যায়। সেই দৃশ্যটাও মনে রাখার মতোই। স্ত্রী পাখির লেজ খাটো হওয়ায় সেভাবে লেজের কারিশমা দেখাতে পারে না। প্রজনন মৌসুমে লাল লেজ মৌটুসির দেখা মেলে জোড়ায় জোড়ায়। আবার প্রজননের বাইরে একাকী দেখা যায়। মূলত এরা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বাসিন্দা। দেখা মেলে ক্রান্তীয় আর্দ্র পার্বত্য অরণ্যে। ভূপৃষ্ঠ থেকে চার হাজার মিটার উচ্চতায়ও এদের দেখা যাওয়ার নজির রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া এই পাখির বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও তিব্বত পর্যন্ত। হিমালয় অঞ্চলেও দেখা যায়। পাখির বাংলা নাম: ‘লাললেজ মৌটুসি’, ইংরেজি নাম: ‘ফায়ার-টেইলড সানবার্ড’ (Fire-tailed Sunbird), বৈজ্ঞানিক নাম: Aethopyga ignicauda | এরা ‘আগুন-রঙের বৃহত্তম মৌটুসি’ নামেও পরিচিত। এই প্রজাতির পুরুষ পাখি দৈর্ঘ্যে ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার ও স্ত্রী পাখি সাত থেকে আট সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথার রং নীলাভ। ঘাড় রক্ত লাল। পিঠ ও লেজ কমলা-লাল। ডানায় জলপাই রঙের সঙ্গে নীল টান। গলা নীলাভ কালচে। বুকে হলুদের ওপর কমলা-হলুদ রঙের ডিম্বাকৃতি টান। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত জলপাই হলুদ। শরীরের তুলনায় লেজ বেশ লম্বা। অন্যদিকে স্ত্রী পাখির মাথা ধূসর জলপাই। পিঠ গাঢ় জলপাই। ডানায় নীলচে কালো পালক। লেজ খাটো ও বাদামি রঙের। উভয়ের ঠোঁট নীলচে কালো, লম্বা ও কাস্তের মতো বাঁকানো। চোখ ও পা কালো। প্রধান খাবার: ফুলের মধূ, ছোট পোকামাকড়, মাকড়সা ইত্যাদি। পাখিটির প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত। তবে অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। মোচাকৃতির বাসা বাঁধে। বাসা বানায় গাছের তন্তু, শ্যাওলা ও মাকড়সার জাল দিয়ে। ডিম পাড়ে দুটি। তা দিয়ে ডিম ফুটাতে সময় লাগে ১৫ থেকে ১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 18/05/2018
দাঁড় কাক | Large Billed Crow | Corvus macrorhynchos
দাঁড় কাক | ছবি: ইন্টারনেট ইতিপূর্বে পাতি কাক নিয়ে লেখা হলেও ‘দাঁড় কাক’ নিয়ে লেখা হয়নি। প্রজাতির কণ্ঠস্বর একইরকম হলেও চেহারায় তফাৎ রয়েছে। পাতি কাকের তুলনায় এদের চেহারাও আকর্ষণীয়। নীলাভ-কুচকুচে কালো। পর্যবেক্ষণ দৃষ্টিতে তাকালে এদের সৌন্দর্য যে কারো চোখে ধরা পড়বেই। এরা দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বিচরণ যত্রতত্র করলেও পাতি কাকের মতো বাড়ির আশপাশে বিচরণ করে না। দূরত্ব বজায় রাখে। বিশেষ করে বনভূমির কাছাকাছি বেশি দেখা যায়। শহরাঞ্চলে নজরে পড়লেও যত্রতত্র নয়। সামাজিক পাখি। দলের কেউ অন্যায় করলে নিজেদের ভেতর বোঝাপড়া করে। মানুষ বা অন্য কারো দ্বারা আক্রান্ত হলে দলের সবাই মিলে একত্রিত হয়ে সমবেদনা জানায়। স্বভাবে চৌর্য্যবৃত্তি লক্ষ্য করা যায়। মানুষের অগোচরে খাবার বা অন্য যে কোনো জিনিস নিয়ে পালায়। এমনকি সাবানও চুরি করে। সর্বোপরি পচাগলা খেয়ে মানুষের যথেষ্ট উপকারও করে। প্রজাতির অবস্থান দেশে সন্তোষজনক। বিশ্বেও ভালো অবস্থানে রয়েছে। মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপক নজরে পড়ে। ইরান, কম্বোডিয়ায়ও দেখা যায় দাঁড় কাক। পাখির বাংলা নাম: ‘দাঁড় কাক’, ইংরেজি নাম: ‘লার্জ-বিল্ড ক্রো’ (Large-billed Crow), বৈজ্ঞানিক নাম: Corvus macrorhynchos। দেশে দুই প্রজাতির কাক দেখা যায়। যথা: পাতি কাক ও দাঁড় কাক। গড় দৈর্ঘ্য ৪৬-৫৯ সেন্টিমিটার। ওজন ৪৫০-৫০০ গ্রাম। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ কুচকুচে কালো। ডানার প্রান্ত পালক নীলাভ কালো। দেহতল কুচকুচে কালো। চোখের মনি কাজল কালো। ঠোঁট ও পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রধান খাদ্য: যে কোনো ধরনের উচ্ছিষ্ট খাবার। বলা যায় সর্বভুক পাখি এরা। প্রজনন মৌসুম বছরের যে কোনো সময়। বাসা বাঁধে গাছের উঁচু শাখায় অথবা বাড়ির কার্নিসে এবং বিদ্যুতের খুঁটিতেও। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে সরুডাল, ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৯ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 18/08/2017
পাহাড়ি কানকুয়া | Lesser Coucal | Centropus bengalensis
পাহাড়ি কানকুয়া | ছবি: ইন্টারনেট কোকিল পরিবারের সদস্য হলেও নিজেরা বাসা বানাতে সক্ষম। দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃতি রয়েছে। দেশের সর্বত্রই কমবেশি দেখা যায়। স্বভাবে হিংস্র। গাছ-গাছালির চেয়ে স্যাঁতসেঁতে মাটিতে বেশি দেখা যায়। ওড়াউড়ি তেমন পছন্দের নয়। অবশ্য খুব ভালো উড়তেও জানে না। ঝোপ-জঙ্গলের ভেতরে হেঁটে হেঁটে খাবার সংগ্রহ করে। ক্ষণে ক্ষণে ‘বুট-বুট-বুট’ সুরে উচ্চকণ্ঠে ডেকে ওঠে। নির্জন দুপুরে কিংবা গভীর রাতে আচমকা ডেকে ওঠে মানুষের পিলে চমকে দেয়। পাখিদের কাছে এরা ডাকাত পাখি নামে পরিচিত। বিশেষ করে ছোট পাখিদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে। ছোট পাখিদের বাসার সন্ধান পেলে তছনছ করে দেয়। পায়ের শক্ত নখ এবং তীক্ষ ঠোঁট দিয়ে বাসা ফালা ফালা করে ডিম-বাচ্চা খায়। যেসব পাখি গাছের কোটরে ডিম পাড়ে ওদের ডিম-বাচ্চাও রেহাই পায় না। গাছের কোটরে লম্বা পা ঢুকিয়ে ডিম-বাচ্চা বের করে আনে। হিংস্রতায় অদ্বিতীয় হলেও এরা নিজেদের সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখে। নিয়ম করে প্রত্যহ গোসলাদি সেরে নেয়। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক। পাখির বাংলা নাম: ‘পাহাড়ি কানকুয়া’, ইংরেজি নাম: ‘লেসার কুকাল’ (Lesser Coucal), বৈজ্ঞানিক নাম: Centropus bengalensis | অঞ্চলভেদে ‘কানাকোকা, হাঁড়িকুড়ি, কুক্কাল, বাংলা কুবো’ নামে পরিচিত। সাধারণত দুই প্রজাতির কানকুয়া দেখা যায়। বড় কানকুয়া ও পাহাড়ি কানকুয়া। দৈর্ঘ্য ৩১-৩৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৮৮ গ্রাম। স্ত্রী পাখি পুরুষের তুলনায় কিছুটা বড়। চেহারায় পার্থক্য নেই। দেহের তুলনায় লেজ খানিকটা লম্বা। মাথা, ঘাড়, বুক, পেট নীলাভ কালো। পিঠ উজ্জ্বল বাদামি। লেজ ধাতব কালো। চোখ টকটকে লাল। তবে মনিটা কালো। নীলচে কালো ঠোঁটের অগ্রভাগটা বাঁকানো। পা ধাতব কালো। যুবাদের চেহারা ভিন্ন। প্রধান খাবার: পাখির ডিম-বাচ্চা, ছোট সাপ, গিরগিটি, ইঁদুর, কেঁচো, পঙ্গপাল, ফড়িং, লোমশ শুঁয়োপোকা ইত্যাদি। প্রজনন সময় জুন থেকে সেপ্টেম্বর। বাসা বানায় বাঁশঝাড় অথবা ঘন পাতার গাছে। এছাড়াও অন্যান্য ঝোপ জঙ্গলের ভেতরেও বাসা বাঁধে। বাসা বানাতে ব্যবহার করে কাঠি, বাঁশপাতাসহ নানা ধরনের লতাপাতা। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৬ দিন। শাবক উড়তে শেখে ৪০ দিনের মধ্যে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/09/2015