খয়রাডানা বনফুটকি | Brownish-flanked Bush Warbler | Cettia fortipes
খয়রাডানা বনফুটকি | ছবি: ইন্টারনেট পরিযায়ী পাখি। উপমহাদেশীয় অঞ্চলে কমবেশি নজরে পড়লেও গ্রামীণ বনবাদাড়ে বেশি নজরে পড়ে। বিশেষ করে বাঁশঝাড়ের আশপাশে বেশি নজরে পড়ে। চটপটে চালচলন। উঁচু কণ্ঠে গান গায়। কণ্ঠস্বর সুমধুর। ফুর্তিবাজ পাখি। সারাদিন নাচানাচি, ওড়াউড়ি এসব করেই কাটায়। ছোট গাছ-গাছালি বিশেষ করে ঝোপঝাড়ের ভেতর বেশি বিচরণ। একাকী ঘুরে বেড়ায়। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক। পাখির বাংলা নাম: ‘খয়রাডানা বনফুটকি’| ইংরেজি নাম: ‘ব্রাউনিস ফ্ল্যাঙ্কেড বুশ ওয়ার্বলার’ (Brownish-flanked Bush Warbler)| বৈজ্ঞানিক নাম: Cettia fortipes | এরা ‘শক্ত-পা ঝোপের টুনি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১১-১২.৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৮-১২ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। মাথা, ঘাড় ও পিঠ বাদামি। ডানা খয়েরি। লেজ গাঢ় বাদামি। দেহতল বাদামি মিশ্রিত সাদাটে। চোখ বাদামি। ঠোঁট খয়েরি, প্রান্তটা ফ্যাকাসে। পা গোলাপি বাদামি। তুলনামূলক পা লম্বা ও শক্ত। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়ের লাভা ও ডিম। প্রজনন মৌসুম মে থেকে আগস্ট। ভূমি থেকে ১ মিটার উঁচুতে ছোট প্রজাতির গাছের ডালে শুষ্ক ঘাস পাতা দিয়ে কাপ আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 05/01/2018
দেশি ময়ূর | Indian Peafowl | Pavo cristatus
দেশি ময়ূর | ছবি: ইন্টারনেট অতি সুদর্শন এক প্রজাতির পাখি ‘দেশি ময়ূর’। স্ত্রী পাখি ‘ময়ূরী’ নামে পরিচিত। পুরুষ পাখি দেখতে ভীষণ সুন্দর হলেও কণ্ঠস্বর কর্কশ। সাধারণত এরা পাতাঝরা বনে বা বনতলে ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করে। মোরগ-মুরগির মতো মাটি আঁচড়ে খাবার সংগ্রহ করে। প্রজনন মৌসুমে পরুষ পাখি পেখম উঁচিয়ে নাড়তে থাকে। যা ‘ময়ূর নৃত্য’ নামে পরিচিত। ময়ূর আমাদের দেশের স্থায়ী বাসিন্দা কিনা তা আজ অব্দি জানা যায়নি। এ নিয়ে রয়েছে খানিকটা বিতর্কও। দেশের বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও পাখি গবেষকদের মতে, ‘ঢাকা বিভাগের পাতাঝরা বনে দেশি ময়ূর দেখা যাওয়ার নজির রয়েছে। দেশ স্বাধীনের পরেও নাকি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের বন্য পরিবেশে এ প্রজাতির সাক্ষাৎ মিলেছে। ভারতে রয়েছে এদের ব্যাপক বিস্তৃতি, সেখান থেকে এতদাঞ্চলে উড়ে আসা বৈচিত্র্যের কিছু নয়। দেশি ময়ূর বিশ্বে বিপদমুক্ত হলেও বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। ফলে প্রজাতিটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত রয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘দেশি ময়ূর’, ইংরেজি নাম: ‘ইন্ডিয়ান পিফাউল’, (Indian Peafowl), বৈজ্ঞানিক নাম: Pavo cristatus | প্রজাতির পুরুষ পাখি লম্বায় পেখম ছাড়া ১০০-১১৫ সেন্টিমিটার। পেখমসহ ১৯৫-২২৫ সেন্টিমিটার। ওজন প্রায় ৪-৬ কেজি। অপরদিকে স্ত্রী পাখি লম্বায় ৯০-১০০ সেন্টিমিটার। শুধু আকারেই নয়, স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ও ওজন ভিন্ন। এদের মাথা, ঘাড় ও গলা উজ্জ্বল নীল। মাথার ঝুঁটি উপরের দিকে ছড়ানো। পিঠ ও কোমর ধাতব সবুজ। ডানার ওপর নীলাভ মিহি সাদা-কালো রেখা। ডানার প্রান্ত বাদামি। লেজের ওপর লম্বা পালক, যা ‘পেখম’ নামে পরিচিত। পেখমের পালক উজ্জ্বল নীল, পেখমের পালকে চোখ আকৃতির চক্র থাকে, নীলাভ-তামাটে বর্ণের। স্ত্রী পাখির মুখ ও গলা সাদা। ঘাড় সবুজ, নিচের দিকটা ধাতব সবুজ। বুক পীতাভ-বাদামি মিশ্রণ। পেট সাদা। লেজের ওপর পেখম নেই। উভয় পাখির মুখের পাশে রয়েছে সাদা চামড়া। ঠোঁট কালচে, পা ও পায়ের পাতা ধূসর বাদামি। প্রধান খাবার: শস্যবীজ, গিরগিটি, সাপ, কেঁচো, পোকামাকড় ও ফলমূল। প্রজনন সময় জানুয়ারি থেকে মার্চ। বাসা বাঁধে ঝোপের নিচে মাটিতে। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ফুটতে সময় লাগে ২৬-২৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/07/2018
পাতি চখাচখি | Common Shelduck | Tadorna tadorna
পাতি চখাচখি | ছবি: ইন্টারনেট উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপের বহু দেশেই বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। এছাড়াও ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, চীন, তিব্বত, জাপান, মালয়েশিয়া, ইরান ও ইরাকে দেখা যায়। বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও সুলভ দর্শন। দর্শনীয় চেহারাও বটে। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। দেশের প্রায় বিভাগেরই নদ-নদীতে কম-বেশি বিচরণ করে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার সদ্য জেগে ওঠা চরাঞ্চলে কিংবা মোহনাতে বেশি পরিলক্ষিত হয়। খাদ্যের সন্ধানে বড় বড় দলে বিচরণ করে অগভীর জলাশয়ে। শিকার কৌশল দেশীয় গোত্রের পাতি হাঁসের মতো। সাধারণত এরা নিরীহ গোত্রের পাখি। নিজেদের মধ্যেও কোনো ধরনের কলহ-বিবাদ ঘটায় না। বলা যায় সারাদিন চুপচাপ কাটিয়ে দেয়। পুরুষ পাখি পারতপক্ষে তেমন ডাকাডাকিও করে না। স্ত্রী পাখির মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে কালেভদ্রে নিচু গলায় শিস কাটে। সঙ্গী জবাব দেয় তখন ‘গ্যাগ-গ্যা-গ্যা’ সুরে। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। শিকারি দ্বারা নির্যাতিত হওয়া সত্ত্বেও প্রজাতিটি দেশে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমরা আরেকটু সদয় হলে বোধ করি এদের আগমন আরো বেশি বেশি ঘটবে দেশে। পাখির বাংলা নাম: ‘পাতি চখাচখি’, ইংরেজি নাম: ‘কমন শেল ডাক’ (Common Shelduck), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘টাডোর্না টাডোর্না’, (Tadorna tadorna) গোত্রের নাম: ‘আনাটিদি’। অনেকে ‘শাহ চখা বা সাচ্কা’ নামেও ডাকে। দেশে দুই প্রজাতির চখাচখি নজরে পড়ে। যথা: খয়রা চখাচখি ও পাতি চখাচখি। এরা লম্বায় ৫৮-৬৭ সেন্টিমিটার। ওজন ১ কেজি। কপাল, মাথা ও গলা ধাতব সবুজ। ঠোঁট রক্ত লাল, গোড়া স্ফীত লাল পুঁটলি। বুক ও ঘাড়ে সাদার ওপর পাটকিলে চওড়া বন্ধনী। পিঠ ধবধবে সাদা। ডানা কুচকুচে কালো। লেজ ও কোমর সাদা। দেহতল ধবধবে সাদা। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা মেটে-লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি চেহারা ও আকার ভিন্ন। পুরুষের চেয়ে স্ত্রী পাখি খানিকটা ছোট। এ ছাড়াও স্ত্রী পাখির বুকে পাটকিলে বর্ণের প্রান্তটা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে মাথার তালু, গলার পেছন ও পিট কালচে-বাদামি। প্রধান খাবার: জলজ কীট, ছোট শামুক, চিংড়ি, ধান, শৈবাল, কেঁচো, সরীসৃপ ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মে-জুন। মধ্য এশিয়ার পাহাড়ের খাড়া দেয়ালে প্রাকৃতিক ফাটলে কিংবা মাটির প্রাকৃতিক গর্তে পালক দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৬-১০টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 18/04/2014
সাদা ডানা লালগির্দি | Daurian Redstart | Phoenicurus auroreus
সাদা ডানা লালগির্দি | ছবি: ইন্টারনেট শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, চীন, মঙ্গোলিয়া, কোরিয়া, জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব রাশিয়া পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাসস্থল নদ-নদীর কাছাকাছি ঘন ঝোপ-জঙ্গল। এরা দোয়েল আকৃতির পাখি। পুরুষ পাখি দেখতে ভীষণ সুন্দর। স্ত্রী পাখির চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির মনে হয়। প্রজাতির কণ্ঠস্বর সুমধুর। এদের খাদ্য গ্রহণে বাছবিচার রয়েছে। যেমন গ্রীষ্মে পোকামাকড় এবং শীতে বীজ বা উদ্ভিজ খাবার খায়। সমগ্র বিশ্বে প্রজাতির অবস্থান তত সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে প্রজাতিটি হুমকি নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘সাদাডানা লালগির্দি’, ইংরেজি নাম: ‘ডাউরিয়ান রেডস্টার্ট’ (Daurian Redstart), বৈজ্ঞানিক নাম: Phoenicurus auroreus | এরা ‘ডাউরিয়ান গির্দি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৪-১৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১১-২০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় বিস্তর তফাৎ। পুরুষ পাখির মাথা, গলা, ঘাড় ও পিঠ নীলাভ ধূসর। ডানা কালো, মধ্যখানে সাদা চওড়া টান। লেজে লালচে কমলার সঙ্গে নীলাভ কালচে পালক। দেহতল কমলা লালচে। চোখ নীলচে কালো। ঠোঁট ও পা নীলচে কালো। স্ত্রী পাখির মাথা, গলা ঘাড় ও পিঠ বাদামি-ধূসর। ডানার পালক কালচে ধূসর, মধ্যখানে সাদাটান। কোমর শেয়ালে লাল। দেহতল ধূসর কমলা। বাদ বাকি পুরুষের মতো। যুবাদের রং ভিন্ন। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, ছোট ফল, বীজ ইত্যাদি। প্রজনন সাইবেরিয়া অঞ্চলে এপ্রিল-জুন। মঙ্গোলিয়া, তিব্বতে মে-আগস্ট। অন্যান্য স্থানেও প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা কাপ আকৃতির। বাসা বাঁধার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, শৈবাল, তন্তু আর সরু লতাপাতা। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ফুটতে সময় লাগে সপ্তাহ দুয়েক। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 24/11/2017
বন খঞ্জন | Forest Wagtail | Dendronanthus indicus
বন খঞ্জন | ছবি: ইন্টারনেট বাংলা নাম: ‘বনখঞ্জন,’ ইংরেজি নাম: ‘ফরেস্ট ওয়াগটেল’ (Forest Wagtail), বৈজ্ঞানিক নাম: Dendronanthus indicus | এরা লম্বায় ১৬-১৮ সেন্টিমিটার। ঘাড়ের দুপাশ জলপাই রঙা। বুক ও পেট সাদা। তার ওপর চওড়া কালো দুটি দাগ। ডানার প্রান্তের পালক ময়লা হলুদ। লেজ পাটকিলে কালো। তবে লেজের দুপাশের পালক সাদা। শরীরের তুলনায় লেজটা বড়। চোখ দুটো বেশ মায়াবী। চোখের ওপরে সাদা বাঁকানো টান। পা হালকা গোলাপি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে প্রায় একই রকম। সব ধরনের খঞ্জনই দেখতে সুন্দর। সে তুলনায় বনখঞ্জন একটু নিষ্প্রভ। তবে চেহারাটা মায়াবী। বনখঞ্জন হিংসুটে কিংবা ঝগড়াটে নয়। বিচরণ করে একাকী। এরা পরিযায়ী পাখি। শীত শুরু হওয়ার আগেই উপমহাদেশে চলে আসে। থেকে যায় গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। অন্যসব খঞ্জন সাধারণত মাঠ-প্রান্তরে বিচরণ করলেও এরা বনে জঙ্গলে বেশি বিচরণ করে। তুলনামূলকভাবে ফাঁকা জঙ্গল এদের পছন্দ। সাধারণত আমাদের দেশে প্রায় আট প্রজাতির খঞ্জন দেখা যায়। বনখঞ্জন, সাদা খঞ্জন, বড় পাকড়া খঞ্জন, পাকড়া খঞ্জন, ধূসর খঞ্জন, হলুদ খঞ্জন, হলদে মাথা খঞ্জন, কালো মাথা খঞ্জন। বড় পাকড়া খঞ্জন ছাড়া অন্যরা পরিযায়ী হয়ে আসে। কয়েক প্রজাতি এ দেশে ডিম বাচ্চাও ফোটায়। সব ধরনের খঞ্জনই চঞ্চল প্রকৃতির। স্থিরতা এদের মাঝে নেই বললেই চলে। নাচের ভঙ্গিতে লেজ দোলাতে থাকে সর্বক্ষণ। অবশ্য কোমরের গড়ন ভিন্নতার কারণে কোমরটা সারাক্ষণ কাঁপতে থাকে। ফলে মনে হয় এরা বুঝি সারাদিন নেচে বেড়ায়। প্রকৃতপক্ষে তা নয়। সব ধরনের খঞ্জনের প্রিয় খাবার পোকামাকড়। বনখঞ্জনরাও তদ্রুপ বনপ্রান্তরে ঘুরে ঘুরে পোকামাকড় খেয়ে থাকে। প্রজনন সময় মে-জুলাই। বাসা বাঁধে ঘাসবনে অথবা গাছের গোড়ার খোঁদলে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, নরম লতাপতা। বাসার আকৃতি লম্বাটে। ডিমের সংখ্যা ২-৫টি। ডিম ফুটতে সময় নেয় ১৭-১৯ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 12/10/2012
কালো পেঁচা | Brown Hawk owl | Ninox scutulata
কালো পেঁচা | ছবি: ইন্টারনেট প্রিয় পাঠক, মুকিত মজুমদার বাবু সম্পাদিত ‘প্রকৃতি বার্তা’র (১ম বর্ষ ১ম সংখ্যায়) পেঁচা নিয়ে ফিচার পাঠে জানতে পারি যে, একটি পেঁচা বছরে প্রায় ৭০০টি ইঁদুর খেতে সক্ষম। আর একটি ইঁদুর বছরে ১০ কেজি ফসল সাবাড় করতে সক্ষম। অথচ সেই উপকারী বন্ধু পেঁচাকে অলুক্ষণে বলে গালি দেই আমরা। আর ‘কালো পেঁচা’ হলে তো কথাই নেই, বেশি বেশি অলুক্ষণে বলি ওদের ভয়ঙ্কর কণ্ঠস্বরের কারণে। ওরা এক নাগাড়ে ‘কু-উক-কু-উু-কু-উক’ সুরে ডাকতে থাকলে মানুষের পিলে চমকে ওঠে। মানুষের ধারণা এই বুঝি কোনো বিপদ হানা দিচ্ছে পেঁচার ডাকে। অথচ ভুল সবই ভুল! এরা আমাদের দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। সুর্লভ দর্শনও বটে। গ্রামীণ বন-বাদাড়ের বড় গাছের পাতাল আড়ালে কিংবা বাঁশ ঝোঁপে দিনের বেলায় লুকিয়ে থাকে। সাঁঝের বেলায় বেরিয়ে পড়ে শিকারের উদ্দেশ্যে। বিচরণ করে জোড়ায় কিংবা একাকি। পাখির বাংলা নাম: ‘কালো পেঁচা’, ইংরেজি নাম: ‘ব্রাউন হাক আউল’ (Brown Hawk-owl), বৈজ্ঞানিক নাম: Ninox scutulata| এরা ‘খয়রা শিকারে পেঁচা’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ২৭-৩৩ সেন্টিমিটার। মুখ ও মাথা কালচে-বাদামি। ঘাড় লালচে-বাদামি ফোঁটা। পিঠ গাঢ় বাদামি। দেহতল লালচে-বাদামির ওপর সাদা ডোরা টান। ঠোঁট কালচে, ঠোঁটের গোড়ায় সাদা ফোঁটা। চোখের তারা হলুদ। দূর থেকে চোখের তারা নজরে পড়লে মনে হয় বুঝি জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। পা হলুদ, নখ কালো। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। প্রধান খাবার: ইঁদুর, সরীসৃপ, ছোট পাখি, ব্যাঙ ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের দেখা যায়। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৩-২৫ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে মাসখানেক। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 13/03/2015
ধলাকোমর মুনিয়া | White rumped munia | Lonchura striata
ধলাকোমর মুনিয়া | ছবি: ইন্টারনেট দল বেঁধে বিচরণ করে। অস্থিরমতি পাখি। মাটিতে হাঁটতে কষ্ট হয়। লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটে। গাছের ডালে বসে জোড়ায় জোড়ায় গায়ের সঙ্গে গা মিলিয়ে রাত কাটায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিটি অঞ্চলে কমবেশি নজরে পড়ে। হালে যত্রতত্র দেখা যায় না। আশঙ্কাজনক পর্যায়ে না পৌঁছলেও এরা স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। যার ফলে অইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ধলাকোমর মুনিয়া’, ইংরেজি নাম: ‘হোয়াইট-রামপেড মুনিয়া’, (White-rumped Munia), বৈজ্ঞানিক নাম: Lonchura striata | দেশে প্রায় পাঁচ প্রজাতির মুনিয়ার সাক্ষাৎ মেলে। প্রজাতির দৈর্ঘ্য ১১-১২ সেন্টিমিটার। ওজন ৯-১৩ গ্রাম। মাথা, চিবুক, ঘাড়, বুক গাঢ় কালচের ওপর বাদামি আভা বের হয়। পিঠ কালচে-বাদামির নিচে চওয়া সাদাটান, যা কোমর পর্যন্ত ঠেকেছে। লেজ কালো, অগ্রভাগ চোখা। লেজতল হালকা পাটকিলে। বুকের নিচ থেকে তলপেট পর্যন্ত সাদা। চোখের মনি গাঢ় পাটিকিলে। ত্রিকোণাকৃতির ঠোঁট, নীলাভ কালো। পা স্লেট কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার: ধান, কাউন ও শস্যবীজ। প্রজনন সময় ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। কাঁটা ঝোপ, কাশবন অথবা নল খাগড়ার বনে বাসা বাঁধে। শুকনো খড় লতাপাতা বাসা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 07/10/2016