
ভারি চঞ্চল স্বভাবের, তবে ঝামেলায় জড়ায় না। ক্ষতিও করে না অন্য পাখির। অধিকাংশ সময় জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। মাঝে-মধ্যে একাকীও দেখা যায়। শীত মৌসুমে সমতলের ঝোপ-ঝাড়ে বেশি ঘোরাফেরা করে। ‘চুইচ চুইচ চুউ’ সুরে ডেকে ছুটে বেড়ায় তখন। এত চঞ্চল যে, ভালো করে ওদের চেহারাটাও দেখার উপায় থাকে না অনেক সময়। তার ওপর মানুষ দেখলে তো আর কথাই নেই। মনে হয় সারাক্ষণ ব্যস্ত। দুই দণ্ড তিষ্ঠানোর সময় নেই।
আমদের দেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এদের দেখা যায়। দেখতে বেশ সুন্দর। বলা যায় নজরকাড়া চেহারা। মায়াবীও বটে। এদের থেকে চট করে চোখ ফিরিয়ে নেয়া কঠিন। সুচিকন গড়নের তনুতে নীলের দ্যুতি ঢেউ খেলে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় বুঝি ওদের শরীরে কেউ নীল মিশানো জল ঢেলে দিয়েছে।
পাখিটার বাংলা নাম: ‘কালোঘাড় নীলাকটকটিয়া’। ইংরেজি নাম: ‘ব্ল্যাক নেপড মোনার্স'(Black Naped Monarch), বৈজ্ঞানিক নাম: Hypothymis azurea | উপগোত্রের নাম: ‘ডিক্রুরিনি’। অনেকে এদের ‘কালো গ্রীবা পতঙ্গভুক’ নামে ডাকে।
এরা লম্বায় ১৬ সেন্টিমিটার। এদের ঘাড়ে কালো প্যাঁচ। গলার নিচে সরু চিলতে কালো রেখা। পুরুষ পাখির প্রধান রঙ লালচে নীল। তবে নীলের আধিক্য বেশি থাকাতে লালচে ভাবটা খুব একটা দেখা যায় না। বুক নীল। নীলটা ফ্যাকাশে হয়ে তলপেটে পর্যন্ত সাদাটে হয়ে পৌঁছেছে। চোখ কালো। ঠোঁট নীল-কালো। পা ও পায়ের আঙ্গুল নীলচে কালো। পুরুষ-স্ত্রী পাখির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। স্ত্রী পাখির বর্ণ পুরুষের তুলনায় নিষ্প্রভ। তাছাড়া গলায় কালো রেখাটি দেখা যায় না।
কালোঘাড় নীলাকটকটিয়া পতঙ্গভুক পাখি। উড়ন্ত অবস্থায় শিকার ধরতে পারে। প্রজনন সময় মার্চ থেকে আগস্ট। গাছের তেডালায় পেয়ালা আকৃতির মজবুত বাসা বানিয়ে ৩টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটাতে সময় লাগে ১২-১৪ দিন।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, 18/12/2012