
সুন্দরবনের আশপাশের এলাকাগুলোতে অল্পবিস্তর দেখা মেলে এ পাখির। অন্যত্র খুব একটা নজরে পড়ে না। তবে পাখি বিশারদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, লাউয়াছড়ার জঙ্গলে এদের নাকি দেখা মিলে। এদের মূল আবাস হিমালয় অঞ্চলে। এরা আমাদের দেশে শীতে নয়, গ্রীষ্মে পরিযায়ী হয়ে আসে। থাকে চার-পাঁচ মাস। সুখবরটি হচ্ছে এ পাখি আমাদের দেশে এসেই ডিম বাচ্চা ফোঁটায়। সে মতে, জন্মসূত্রে এরা এদেশেরই।
দুঃসংবাদটি হচ্ছে এদের প্রজনন পরিবেশ সংকুচিত হয়ে যাওয়াতে এরা আমাদের দেশে এখন আর আগের মতো আসছে না। এ পাখিদের গলা ভারী মিষ্টি। ‘হুই-হুই’ সুরে ডাকে। সুনসান পরিবেশ পেলে গলা ছেড়ে শিস দেয়। বেশ দূর থেকেও শিস শোনা যায়। মানুষকে এড়িয়ে চলা এদের পছন্দ। মাঠ-প্রান্তরের চেয়ে জঙ্গলের বেতর ফাঁকাস্থানে বিচরণ করে বেশি। ঝরাপাতা উল্টে উল্টে খাবার খোঁজা এদের একটা বড় বৈশিষ্ট্য।
পাখিটার বাংলা নাম: ‘সবুজাভ সুমচা’, ইংরেজি নাম: ‘হুডেড পিট্টা'(Hooded Pita), বৈজ্ঞানিক নাম: Pitta Sordida গোত্রের নাম: ‘পিট্টিদি’। অঞ্চলভেদে এরা নীলপাখি বা হালতি পাখি নামে পরিচিত।
লম্বায় ১৬-১৯ সেন্টিমিটার। মাথা পাটকিলে। ঘাড়ের চারপাশ, গলা এবং বুকের উপরের অংশ কালো। বুকের কালো অংশের নিচ দিকে সবুজ। তলপেট থেকে লেজের নিচ পর্যন্ত টকটকে লাল। ফিট জলপাই রঙের। ডানায় নীল ছোপ। ডানার প্রান্তে সামান্য কালো টান। উড়লে সাদা ছোপ নজরে পড়ে। লেজ একেবারেই খাটো। লেজের অগ্রভাগ কালচে। ঠোঁট কালো। পা আঙ্গুল ছাই বর্ণের। ভূমিজ কীটপতঙ্গ এদের প্রধান খাদ্য।
প্রজনন সময় ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে। বাসা বাঁধে ভূমির কাছাকাছি। ঝোপজঙ্গলের ভেতরে। বাসা তৈরির উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করে শুকনো লতা-পাতা। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৬ দিন। জন্মের সপ্তাহ দুয়েক পরে শাবক উড়তে শেখে।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, 21/09/2018