নীলটুনি | Purple sunbird | Nectarinia asiatica

4056
নীলটুনি | ছবি: গুগল |

পাখিটার বাংলা নাম: ‘নীলটুনি’। ইংরেজি নাম: ‘পার্পল সানবার্ড’ (Purple Sunbird)। বৈজ্ঞানিক নাম: Ncetarinia asiatica| এ পাখি ওপার বাংলায় ‘দুর্গাটুনি’ নামে পরিচিত।

বাংলাদেশের সর্বত্রই কমবেশি নজরে পড়ে এ পাখি। প্রতিবেশী পাখিদের মধ্যে অন্যতম এ প্রজাতি গেরস্থ বাড়ির ঘরের আঙিনা ছাড়া পারতপক্ষে দূর কোথাও বাসা বাঁধে না। ঘরের আশপাশে লাগানো সিম, লাউগাছ কিংবা ছোট ছোট সব ধরনের গাছে সারাদিন নেচে বেড়ায়। মনের আনন্দে গায়, ‘হুইউ-ই…চি হি হি..হুইচো…ইচিইট…।’

দেহের রং নীলচে-কালো হলেও দেখতে ভারি সুন্দর। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এরা। অনেক মিথও আছে এদেরকে নিয়ে। শেষ নেই গালগল্পেরও। বিষয়টা মাথায় রেখে কেউ এ পাখির খুব একটা ক্ষতি করে না।

ফলে এদের বিচরণ দেশে সন্তোষজনক রয়েছে। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১০-১১ সেন্টিমিটার। তন্মধ্যে ঠোঁট ২ সেন্টিমিটার। কিছুটা কাস্তের মতো বাঁকানো। পুরুষ পাখির গায়ের বর্ণ ধাতব-বেগুনি। বুকে তামাটে-লাল বন্ধনী রয়েছে এবং পাশে কমলা-হলুদ পালক। পুরুষ পাখি নাচানাচির সময়ে এ পালক দেখা যায়। দূর থেকে পুরুষ পাখিকে কালো মনে হলেও আসলে কালো নয়। নীল-কালোর মিশ্রণ। প্রজননের বাইরে স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম মনে হলেও সামান্য পার্থক্য রয়েছে। তখন পুরুষ পাখির থুঁতনি থেকে বুক পর্যন্ত ছোপ কালো মোটা ডোরা দাগ দেখা যায়। স্ত্রী পাখির পিঠ হালকা হলুদ। তার ওপর বাদামি টান। রঙের ভিন্নতায় না গেলে জলপাই-পাটকেলে মনে হয়। লেজের অগ্রভাগ কালচে। উভয় পাখির ঠোঁট, পা কালো।

প্রধান খাবার: ফুলের মধু। মধুসংকটে ছোট কীটপতঙ্গ খায়। প্রজনন সময় বছরের যে কোনো ঋৃতু। বসন্তকালে শতকরা ৬৫, শীতে শতকরা ২৩ এবং অন্যান্য ঋতুতে শতকরা ১২ ভাগ প্রজনন ঘটে। এরা বাসা বাঁধে ছোট গাছে। অনেক সময় মাটি থেকে ৭০-৮০ সেন্টিমিটার উচ্চতায়ও বাসা বাঁধতে দেখা যায়। বাসা বানানোর দায়িত্ব স্ত্রী পাখির ওপরই বর্তায়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। শাবক ১৭-২০ দিনের মধ্যে মা-বাবার সান্নিধ্যের বাইরে চলে যায়।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, 22/03/2019

মন্তব্য করুন: