লালঘাড় চাপাখি | Red-necked Stint | Calidris ruficollis

1785
লালঘাড় চাপাখি | ছবি: ইন্টারনেট

পান্থ পরিযায়ী (চলার পথের পরিযায়ী)। আগমন ঘটে উত্তর-পূর্ব সাইবেরিয়া থেকে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা পর্যন্ত। মধ্য আমেরিকা, আলাস্কা, নিউজিল্যান্ডেও কমবেশি দেখা যায়। শীতে বাংলাদেশের মোহনা অঞ্চলে বিচরণ করে। কাদাময় বা বালিয়াড়ি এলাকায় পোকামাকড় ও ছোট অমেরুদণ্ডী প্রাণী খুঁজে বেড়ায়। শিকার খুঁজতে গিয়ে খুব দ্রুতলয়ে ঠোঁট চালায়। এ প্রজাতির পাখি বেশিরভাগই একাকি বিচরণ করে, আবার ছোট দলেও দেখা যায়। প্রায় সারাদিনই নদী কিংবা সমুদ্রতটে ছুটে বেড়ায়। ঢেউয়ের তোড়ে জলজ পোকামাকড় কিনারে আচড়ে পড়লে তা খেয়ে নেয়। আর পানি ঘেঁষে ঘন ঘন লেজ নেড়ে মাথা ঝাঁকিয়ে হাঁটতে থাকে।

পানির কাছাকাছি বিচরণ করলেও হাঁটু পরিমাণের বেশি পানিতে নামে না। তবে এরা যাই-ই করুক না কেন লক্ষ্য কিন্তু একটাই থাকে ওদের, আর তা হচ্ছে শিকারের খোঁজ নেয়া। আকারে খাটো। স্বভাবে শান্ত প্রকৃতির। অযথা চেঁচামেচি করে না। পারতপক্ষে নিজেদের মধ্যেও বচসায় লিপ্ত হয় না। বরং সৈকতচারী অন্যপ্রজাতির পাখিদের সঙ্গে মিলেমিশে খাবার খোঁজে। বিপদে পড়ার সম্ভাবনা দেখলে লেজ উঁচিয়ে দৌড়ে পালায় আর কর্কশ কণ্ঠে চেঁচিয়ে ওঠে। কণ্ঠস্বর শ্রুতি মধুর নয়।

পাখির বাংলা নাম: ‘লালঘাড় চাপাখি’, ইংরেজি নাম: ‘রেড নেকেড স্টিন্ট’, (Red-necked Stint), বৈজ্ঞানিক নাম: Calidris ruficollis | এদের আরেকটি অদ্ভুত নাম আছে। জানা যায়নি সে নামকরণের কারণটি। নামটি হচ্ছে ‘লাল গ্রীব কৃপণতা’। কেন কৃপণতা শব্দটি যোগ হয়েছে তা বোধগম্য নয়।

দৈর্ঘ্য কম বেশি ১৩ থেকে ১৬ সেন্টিমিটার। মাথা লালচে খয়েরি। ঘাড় ও গলা লালচে। পিঠের পালক বাদামি-কালো-সাদার মিশ্রণ। ডানার পালক ধূসর বাদামির সঙ্গে সাদার যোগ লক্ষ্য করা যায়। দেহতল ধবধবে সাদা। ঠোঁট সোজা, কালো। চোখ বাদামি। চোখের ওপর ডোরা কাটা সাদা ভ্রু। পা খাটো, কালো। প্রজনন পালক ভিন্ন। এ সময় মাথা থেকে বুক লালচে বাদামি হয়। পিঠের পালকও তদ্রুপ দেখায়।

প্রধান খাবার: জলজ পোকামাকড় ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুলাই। তুন্দ্রা অঞ্চলের তৃণভূমিতে শুকনো লতা-ঘাস দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটে ২২-২৫ দিনে।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/04/2015

মন্তব্য করুন: