
দেশি প্রজাতির পাখি হলেও বিরল দর্শন। তবে গোত্রের অন্য প্রজাতির বিচরণ যথেষ্ট। এ প্রজাতির অন্যসব পাখি দেশের সর্বত্র বিচরণ করলেও এরা সাধারণত শালবন এলাকায় কিংবা বৃহত্ আকারের জলাশয়ের আশপাশে উড়ে বেড়ায়। সুন্দরবন এলাকায় কদাচিত্ দেখা মেলে। গাছের মগডালে বসে থেকে উড়ন্ত কীটপতঙ্গের দিকে নজর রাখে। শিকার ধরেই পুনরায় গাছের ডালে এসে বসে তা গলধ:করণ করে। মৌমাছি এদের প্রধান শিকার। শিকারের সময় সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় থাকে। বিচরণ করে ছোট ছোট দলে। ডাকে ‘তিরিপ…. টি-টিউ..টি-টিউ’ সুরে। খুব ঘন ঘন ডাকে। সুর শ্রুতিমধুর না হলেও মন্দ নয়। ওড়ার ভঙ্গি আকর্ষণীয়। তারচেয়েও আকর্ষণীয় হচ্ছে ওদের লেজের মাঝখান থেকে বেরিয়ে আসা সুচালো লম্বা পালকটি।
এ পাখির বাংলা নাম: ‘নীলপুচ্ছ বাঁশপাতি’, ইংরেজি নাম: ‘ব্লু-টেইলড বি ঈটার'(Blue-tailed Bee-eater), বৈজ্ঞানিক নাম: Merops philippinus | গোত্রের নাম: ‘মেরোপিদি’। অঞ্চলভেদে সুইচোর, নরুন চেরা, লেজকাঠি, গুঁজকাঠি ইত্যাদি নামে পরিচিত।
এরা লম্বায় ২৩-২৫ সেন্টিমিটার। লেজের মাঝখান থেকে বেরিয়েছে লম্বা সুচালো পালক। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫-৬ সেন্টিমিটার। ঠোঁট লম্বা, বাঁকানো, কালো। ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখের উপর দিয়ে ঘাড়ের কাছ পর্যন্ত চওড়া কালো টান রয়েছে। ছোখের তারা লাল। পিঠ সবুজ। ডানা গাঢ় লালচে সবুজ। গলা লালচে বাদামি। বুক ফিকে সবুজ। পরবর্তী অংশ থেকে লেজের কাছ পর্যন্ত নীল। বস্তিপ্রদেশ সবুজ। পা ছাই সিসা বর্ণ। বাইরের তিনটি আঙ্গুল জোড়া লাগানো। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।
প্রধান খাদ্য: উড়ন্ত পতঙ্গ। মৌমাছি, ফড়িংয়ের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা। প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন। বাসা বাঁধে নদীর উঁচু পাড়ে। খড়কুটা পরিহার করে সরাসরি সুড়ঙ্গ বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৪-৫টি। ডিমের বর্ণ চকচকে সাদা।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, 14/07/2013