রঙিলা বক | Painted Stork | Mycteria leucocephala
রঙিলা বক | ছবি: ইন্টারনেট সুদর্শন পরিযায়ী পাখি ‘রঙিলা বক’। দেশে খুব একটা দেখার নজির নেই। আমাদের দেশে সর্বশেষ দেখা গেছে গত ২২ মে চট্টগ্রামের ষোলো শহর এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) কাছে বাঁশঝাড়ে। এরা অতি বিপন্ন প্রজাতির পাখি। সৌভাগ্যক্রমে দেশে দেখা গেছে। একটা সময়ে বাংলাদেশে ভালো অবস্থানে ছিল এরা। পাশাপাশি দেখা যেত ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, লাওস ও মিয়ানমারে। বর্তমানে এতদঞ্চলেও খুব বেশি দেখা যায় না। তবে পাকিস্তানের ‘সিন্ধু’ উপত্যকায় এবং নেপালের ‘তেরাই’ অঞ্চলে যৎসামান্য দেখা মেলে। সমগ্র বিশ্বে এদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে আইইউসিএন প্রজাতিটিকে বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। রঙিলা বক জলচর পাখি। বিশেষ করে জলাশয়ের কিনারে হেঁটে হেঁটে শিকার করে। বিচরণ করে জোড়ায় কিংবা ছোট দলে। বিচরণকালে লম্বা ঠোঁটটি কাদাজলে ঢুকিয়ে শিকার খুঁজতে থাকে। ঠোঁটে কিছুর স্পর্শ পেলে অমনি বন্ধ করে দেয়। এরা তেমন হিংস নয়। তেমন একটা গলাবাজিও করে না। তবে ভয় পেলে বা উত্তেজিত হলে ঠোঁট দুটিকে একত্রিত করে শব্দ করতে থাকে। পাখির বাংলা নাম: রঙিলা বক, ইংরেজি নাম: পেইন্টেড স্টর্ক (Painted Stork), বৈজ্ঞানিক নাম: মিকটেরিয়া লিউকোসেফালা (Mycteria leucocephala), গোত্রের নাম: সিকোনিআইদি’। এরা রাঙা মানিকজোড়, চিত্রাবক, ও সোনাজঙ্ঘ নামে পরিচিত। লম্বায় ৯৩ সেন্টিমিটার (ঠোঁট থেকে পা পর্যন্ত)। ওজন ৩ কেজি। ঠোঁট নিচের দিকে হেলানো, অগ্রভাগ পাটকিলে, গোড়া কমলা-হলুদ। মুখ ও মাথা পালকহীন কমলা-হলুদ বর্ণের। প্রজনন মৌসুমে রঙ বদলিয়ে লালচে রঙ ধারণ করে। ঘাড়, লম্বা গলা ও পিঠ সাদা। ডানার মধ্য পালক এবং প্রান্ত পালক কালো-সাদার মিশ্রণ। লেজ খাটো, পালক উজ্জ্বল লাল, তন্মধ্যে ক’টি কালো পালক দেখা যায়। দেহতল সাদা। বুকে কালো পট্টি। পা অস্বাভাবিক লম্বা। বর্ণ হালকা গোলাপি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার: মাছ, ব্যাঙ, জলজকীট ও ছোট সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম জুলাই থেকে অক্টোবর। জলের কিনারে উঁচু গাছে মাচাকৃতির বাসা বাঁধে। কলোনি টাইপ বাসা। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো সরু ডালপালা, শুকনো কচুরিপানা ও শুকনো শ্যাওলা। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৬০ দিনের মতো। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 30/05/2014
মরুর ফিদ্দা | Desert wheatear | Oenanthe deserti
মরুর ফিদ্দা | ছবি: ইন্টারনেট শরৎকালে পরিযায়ী হয়ে আসে মরু কিংবা রুক্ষ অঞ্চল থেকে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি পশ্চিম সাহারা, মিসরের পশ্চিম অংশ, চীন, পাকিস্তানের বেলুচিস্তান, আফগানিস্তান, তুর্কিস্তান, দক্ষিণ ককেশাস, উত্তর মঙ্গোলীয়া, মরক্কো, ইরাক, ইরান, উত্তর আরব উপদ্বীপ ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা। ইউরোপের কিছু কিছু অঞ্চলেও দেখা যায়। প্রজাতিটি তেমন বাহারি রঙের না হলেও দেখতে মন্দ নয়। গায়ের রং বালির মতো। বালির ওপর বিচরণকালীন দূর থেকে চেনা কঠিন হয়ে পড়ে। বিচরণ করে একাকী। জোড়ায়ও খুব বেশি দেখা যায়। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। মরুময় কিংবা পাথুরে এলাকায় ঘুরেফিরে পোকামাকড় শিকার করে। তবে এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা যে কোনো রুক্ষ পরিবেশে অনায়াসে টিকে থাকতে পারে। তথাপিও বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে ইতিমধ্যে। পাখির বাংলা নাম: ‘মরুর ফিদ্দা’, ইংরেজি নাম: ডেজার্ট হুইটইয়ার (Desert wheatear), বৈজ্ঞানিক নাম: Oenanthe deserti | এরা ‘ঊষর কানকালি’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৪-১৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৩৪ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির রঙে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। গ্রীষ্মে পুরুষ পাখির মাথা ও ঘাড় ফ্যাকাসে। চিবুক, গলা ও কানের দু’পাশ কুচকুচে কালো, যা ঘাড়ের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। পিঠ ফ্যাকাসে বাদামি। ডানার প্রান্ত পালকে কালো-সাদার মিশ্রণ। লেজের গোড়ার দিক ফ্যাকাসে বাদামি। লেজের পালক কালো। বুকের ওপর বাদামি-সাদা, দেহতল ফ্যাকাসে বাদামি। শীতে রং উজ্জ্বল হয়। স্ত্রী পাখির চিবুক, গলা ও কানের দু’পাশের কালো অংশের পরিবর্তে বালি বাদামি। পিঠ বালি বাদামি। ডানার প্রান্ত পালক ধূসর কালো। উভয়ের চোখ গাঢ় বাদামি। ঠোঁট ও পা কালো। প্রধান খাবার: শুঁয়োপোকা, গুবরেপোকা, মাছি, পিঁপড়াসহ অন্যান্য পোকামাকড়। এছাড়া শস্যবীজের প্রতি আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে পাথুরে পাহাড়ের ওপর। এ ছাড়াও চিরহরিৎ কাঁটাঝোঁপের ভেতরও সংসার পাতে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে ঘাস, শিকড় ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৪ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ২০-২১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 23/10/2015
ধলালেজ ঈগল | White-tailed Eagle | Haliaeetus albicilla
ধলালেজ ঈগল | ছবি: ইন্টারনেট ধলালেজ ঈগল পরিযায়ী সামুদ্রিক পাখি। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। দেশে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার জলাশয় নদ-নদীর মোহনায় এদের সাক্ষাৎ মেলে। দেশের বিচরণরত ঈগল প্রজাতির পাখিদের মধ্যে আকারে সর্ববহৎ। খানিকটা হিংস্রও। অন্যসব শিকারী পাখিদের খাবার চিনিয়ে নিতে ইতস্ততবোধ করে না। শিকারের লোভে জলের ২০-৩০ মিটার ওপরে ধীর গতিতে বৃত্তাকারে উড়ে বেড়ায়। শিকার নজরে পড়লে ঝাঁপিয়ে পড়ে পায়ের তীক্ষè নখে বিঁধিয়ে নিয়ে উড়ন্ত অবস্থায় খেয়ে ফেলে। এ ছাড়াও গাছের ডালে অথবা মাটিতে নেমে খাবার খেতে দেখা যায়। সুযোগ পেলে এরা গবাদি পশুর মৃতদেহও খায়। এরা অনায়াসে সমুদ্র-সমতল থেকে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি সাইবেরিয়া, আলাস্কা, নরওয়ে, স্কল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড পর্যন্ত। দেশে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন এ প্রজাতিটিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ধলালেজ ঈগল’, ইংরেজি নাম: ‘হোয়াইট টেইলড ঈগল’ (White-tailed Eagle), বৈজ্ঞানিক নাম: Haliaeetus albicilla | এরা ‘সাদালেজী ঈগল’ নামেও পরিচিত। এরা দৈর্ঘ্যে ৬৬-৯৪ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৪-৫ কেজি। মাথা ফ্যাকাসে বাদামি। পিঠ গাঢ় বাদামি। কোমর কালো। লেজ সাদা। বুক ও পেট ফ্যাকাসে বাদামি। ওড়ার পালক কালো। হলুদ রঙের ঠোঁট শক্ত মজবুত, অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। পা বাদামি পালকে আবৃত। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম হলেও স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য বড়। অপ্রাপ্ত বয়য়স্কদের রঙ ভিন্ন। প্রধান খাবার: মাছ, সাপ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, ইঁদুর, ভোঁদড় ও পানকৌড়ি। অন্যসব পাখির চেয়ে জলচর পাখি বেশি ওদের শিকারে পরিণত হয়। প্রজনন সময় মার্চ থেকে এপ্রিল। তবে স্থানভেদে প্রজনন ঋতুর হেরফের দেখা যায়। বাসা বাঁধে বড় গাছের উঁচু ডালে। ডালপালা দিয়ে বড়সড়ো অগোছালো বাসা বানায়। এক বসায় বহু বছর ধরে ডিম বাচ্চা তোলে। ডিম পাড়ে ১-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৮-৪০ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৬-১০ সপ্তাহ এবং প্রজননক্ষম হতে সময় লাগে ৪-৫ বছর। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/06/2016
ধূসর ডানা কালো দামা | Grey winged Blackbird | Turdus boulboul
ধূসর ডানা কালো দামা | ছবি: ইন্টারনেট পরিযায়ী ভূচর পাখি। শালিক আকৃতিক গড়ন। চেহারা সাদা-কালো হলেও দেখতে মন্দ নয়। প্রাকৃতিক আবাস্থল ওক প্রজাতির গাছ অথবা সুঁচালো চিরহরিৎ বন। বিচরণ রয়েছে পাথুরে এলাকায়ও। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না। পরিত্যক্ত বা স্যাঁতসেঁতে এলাকার লতাপাতা উল্টিয়ে খাবার খোঁজে। বেশিরভাগই একাকী বিচরণ করে। পুরুষ পাখির তুলনায় স্ত্রী পাখি নিষ্প্রভ। ভিন্ন প্রজাতির মনে হতে পারে। স্ত্রী পাখি দেখতে কিছুটা কাঠশালিকের মতো। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, লাওস, তিব্বত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়, ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পাখির বাংলা নামঃ ধূসর ডানা কালো দামা, ইংরেজি নামঃ গ্রে-উইংগড ব্ল্যাকবার্ড (Grey-winged Blackbird), বৈজ্ঞানিক নামঃ Turdus boulboul | এরা ‘ধলাপাখ কালিদামা’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ২৭-২৯ সেন্টিমিটার লম্বা। ওজন ৮৫ থেকে ১০৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ আঁশটে কুচকুচে কালো। ডানার প্রান্ত পালক কালো মধ্যখানে ধূসর সাদা। দেহতল কালো হলেও পেটের দুপাশে সাদা ছিট দেখা যায়। চোখের বলয় হলদেটে। ঠোঁট ও পা কমলা-হলুদ। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথা ও পিঠ ধূসর বাদামি। চোখের বলয় কালচে। ঠোঁট ও পা পুরুষ পাখিদের মতো উজ্জ্বল হলুদ নয়। প্রধান খাবারঃ শুককীট, শুঁয়োপোকা, কেঁচো, পোকামাকড় ছোট ফল ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুলাই। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ১-৩ মিটার উঁচুতে। কাপ আকৃতির বাসা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শৈবাল, শুকনো ঘাস ও লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
কালাগলা মানিকজোড় | Black necked Stork | Ephippiorhychus asiaticus
কালাগলা মানিকজোড় | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন পরিযায়ী পাখি। হালে দেখা যাওয়ার নজির নেই। বাংলাদেশে সর্বশেষ দেখা গেছে প্রায় ৬৭ বছর আগে। এদের বিচরণ হাওর-বাঁওড় জলাশয় এলাকায়। হাঁটুজলে নেমে শিকার খোঁজে। এরা দলবদ্ধ হয়ে বিচরণ করে না। সাধারণত এক জোড়ার বেশি কোথাও দেখা যায় না। তবে শিকারে বের হলে শামুকখোল পাখির সঙ্গে দল বাঁধতে দেখা যায়। খাবারে তেমন কোনো বাছবিচার নেই। পচাগলা থেকে শুরু করে সব ধরনের খাবার এদের প্রিয়। রাত যাপন করে গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালে। দিনের বেলা জলাশয়ের পাড়ে হাঁটুগেড়ে বিশ্রাম নেয়। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওস পর্যন্ত। এ ছাড়াও পাপুয়া নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ায় সামান্য নজরে পড়ে। পাখিবিশারদদের মতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বড়জোর এক হাজার ‘কালাগলা মানিকজোড়’ রয়েছে। সারা বিশ্বে এদের অবস্থান তত ভালো নয় বিধায় আইইউসিএন এদের লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নামঃ কালাগলা মানিকজোড়, ইংরেজী নামঃ ব্লাক নেকেড স্টর্ক (Black necked Stork) বৈজ্ঞানিক নামঃ Ephippiorhychus asiaticus। এরা ‘কালোগলা বক ও লোহারজঙ্গ’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৫০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামন্য পার্থক্য রয়েছে। পাখিবিশারদ ব্যতীত এ পার্থক্য নিরুপণ করা বড়ই কঠিন। সূক্ষ্ম সেই পার্থক্যটা হচ্ছে স্ত্রী পাখির চোখের তারা হলুদ, পুরুষ পাখির চোখের তারা বাদামি-কালো। এ ছাড়া বাদবাকি একই রকম। বলা যায়, এরা সাদা-কালো রঙের পাখি। মাথা ও গলা কালো। পিঠের মাঝখান থেকে লেজের উপরিভাগ পর্যন্ত কালো। দেহের বাকি অংশ সাদা। ঠোঁট কালো। পা ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল লাল। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের রং ভিন্ন। ওদের মাথা থেকে পিঠের দিক বাদামি। ওড়ার পালক কালচে। পা গাঢ় লাল। প্রধান খাবারঃ ছোট সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর, বাইম মাছ। শিঙ-মাগুর মাছের প্রতিও আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে জলাশয়ের কাছাকাছি গাছের উঁচু ডালের তেমাথায়। বাসা মাচা আকৃতির। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো সরু ডালপালা। ডিম পাড়ে তিন-চারটি। ফুটতে সময় লাগে ২৯-৩১ দিন। লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
কালোঘাড় নীলাকটকটিয়া | Black naped monarch | Hypothymis azurea
কালোঘাড় নীলাকটকটিয়া | ছবি: ইন্টারনেট পাখির বাংলা নাম: ‘কালোঘাড় নীলাকটকটিয়া’। ইংরেজি নাম: ‘ব্ল্যাক নেপড মোনার্ক’ (Black-naped monarch)| বৈজ্ঞানিক নাম: Hypothymis azurea। প্রজাতিটি ‘কালাঘাড় রাজন’ বা ‘কালো গ্রিবা পতঙ্গভুক’ নামেও পরিচিত। এ পাখি চঞ্চল হলেও হিংস্র নয়। গায়ে পড়ে কারও সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করে না। বেশির ভাগই জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। মাঝে মধ্যে একাকীও দেখা যায়। শীত মৌসুমে সমতলের ঝোপ-জঙ্গলে বেশি চোখে পড়ে। লুকিয়ে-চুকিয়ে ‘চুইচ চুইচ চুউ’ সুরে ডাকাডাকি করে। মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়। কোথাও একদণ্ড দাঁড়ানোর জো নেই এ পাখির। রাজ্যের ব্যস্ততা নিয়ে দিন কাটায়। উড়ন্ত অবস্থায়ই শিকার ধরে। এরা দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এদের বিস্তৃতি। দেখতে ভীষণ সুন্দর। স্লিম গড়ন। নজরকাড়া রূপ। মায়াবীও বটে। এদের দিকে নজর পড়লে নিমিষেই চোখ ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য লম্বায় ১৬ সেন্টিমিটার। ঘাড়ে কালো প্যাঁচ। গলার নিচে সরু চিলতে কালো রেখা। পুরুষ পাখির প্রধান রং লালচে নীল। তবে নীলের আধিক্য বেশি থাকায় লালচে ভাবটা খুব একটা দেখা যায় না। বুক নীল। নীলটা ফ্যাকাসে হয়ে তলপেট পর্যন্ত সাদাটে হয়ে পৌঁছেছে। চোখ কালো। ঠোঁট নীল-কালো। পা ও পায়ের আঙ্গুল নীলচে কালো। মেয়ে-পুরুষ পাখির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মেয়ে পাখির বর্ণ পুরুষের তুলনায় নিষ্প্রভ। তা ছাড়া গলায় কালো রেখা দেখা যায় না। এদের প্রধান খাবার কীটপতঙ্গ। প্রজনন সময় মার্চ থেকে আগস্ট। গাছের তে-ডালায় পেয়ালা আকৃতির মজবুত বাসা বানিয়ে তিনটি ডিম পাড়ে। ফুটতে সময় লাগে ১২-১৪ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, 29/08/2018
পাতি কাক | House Crow | Corvus splendens
পাতি কাক | ছবি: ইন্টারনেট দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বিচরণ করে যত্রতত্র। শুধু তাই নয়, মানুষের সান্নিধ্য পেতে এরা বাড়ির আশপাশে বিচরণ করে। পচাগলা খেয়ে মানুষের যথেষ্ট উপকারও করে। সামাজিক পাখি। দলের কেউ অন্যায় করলে নিজেদের ভেতর বোঝাপড়া করে। মানুষ বা অন্য কারো দ্বারা আক্রান্ত হলে দলের সবাই মিলে একত্রিত হয়ে সমবেদনা জানায়। স্বভাবে চৌর্যবৃত্তি লক্ষ্য করা যায়। মানুষের অগোচরে খাবার বা অন্য যে কোনো জিনিস নিয়ে পালায়। এমনকি সাবানও চুরি করে। এসব না খেলেও বাসায় নিয়ে জমা করে। মজাদার বিষয়টি হচ্ছে আমরা সবাই জানি কোকিল গায়ক পাখি, অপরদিকে কাকের কণ্ঠস্বর কর্কশ বলে ওদেরকে অগায়ক পাখি হিসেবে জানি। অথচ সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয়টি। বরং কাক গায়ক পাখি, কোকিল সেই তালিকায় পড়ে না। কারণ কাকের গলায় স্বরযন্ত্র রয়েছে যা কোকিলের গলায় নেই। পাতি কাকের বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও ইরান পর্যন্ত। কাক সম্পর্কে বোধ করি আর বিশেষ কিছু বলার নেই। আমরা প্রত্যেকেই এ পাখিটি সম্পর্কে কমবেশি জানি। পাখির বাংলা নাম: ‘পাতি কাক’, ইংরেজী নাম: ‘হাউস ক্রো’ (House Crow), বৈজ্ঞানিক নাম: Corvus splendens | দেশে দুই প্রজাতির কাক দেখা যায়। যথা: পাতি কাক ও দাঁড় কাক। এরা দৈর্ঘ্যে ১৬-১৮ সেন্টিমিটার। মাথা ও গলা নীলাভ কালো। ঘাড়, পিঠ ও গলা ধূসর রঙের সঙ্গে পাটকিলে আভার মিশ্রণ। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত নিষ্প্রভ কালচে পাটকিলে। শরীরের বাদবাকি সমস্ত পালক কালোর ওপর বেগুনি নীলের সঙ্গে সবুজ আভার মিশ্রণ। চোখের মণি বাদামি কালো। ঠোঁট ও পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার: যে কোনো ধরনের উচ্ছিষ্ট খাবার। বলা যায় সর্বভূক পাখি এরা। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। বাসা বাঁধে গাছের উঁচু শাখায়। অথবা বাড়ির কার্নিসে এবং বিদ্যুতের খুঁটিতেও। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে সরুডাল, ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 12/02/2016