কালামুখ প্যারাপাখি | Masked Finfoot | Heliopais personata

3771
কালামুখ প্যারাপাখি | ছবি: ইন্টারনেট

এরা বিপন্ন প্রজাতির জলচর পাখি। দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। দেখতে অনেকটাই রাজহাঁসের মতো। লম্বা গলার কারণেও অমনটি মনে হতে পারে। শরীরের গড়ন পানকৌড়ি পাখির মতো লম্বা ধাঁচের। বিচরণ করে শুধুমাত্র সুন্দর বনাঞ্চলে। দিনভর সুন্দরবনের নোনা জলের নদ-নদীর ওপর খাদ্যের সন্ধানে ভেসে বেড়ায়। সাধুজলের জলাশয়ে দেখা যায় না। একাকী কিংবা জোড়ায় বিচরণ করে। স্বভাবে লাজুক। জলজ আগাছার ভেতর নিজেদের লুকিয়ে রাখে। ওড়ার গতি ভালো নয়।

মাঝে মধ্যে অকারণে শরীরটাকে জলকাদায় মাখামাখি করে রাখে। দেশে খুব বেশি দেখা যায় না। প্রজননে বিঘ্ন ঘটায় এবং শিকারিদের অত্যাচারে এদের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে দেশে বিপন্নের তালিকায় স্থান পেয়েছে প্রজাতিটি। বিশ্বেও এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে ইতিমধ্যে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের আসাম, সুমাত্রা, পশ্চিম জাভা ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত।

পাখির বাংলা নাম: ‘কালামুখ প্যারাপাখি’, ইংরেজি নাম: ‘মাস্কেড ফিনফুট’ (Masked Finfoot), বৈজ্ঞানিক নাম: Heliopais personata | বাংলাদেশের পাখি গ্রন্থে (ড. রেজা খান) এদের নাম ‘মুখোশপরা জলার পাখি’ নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

দৈর্ঘ্য কমবেশি ৭৬ সেন্টিমিটার। মাথা ও ঘাড় ধূসর-কালো। দেহের উপরাংশ হলুদাভ-বাদামি। মুখমণ্ডল কালো। চোখের কিনার থেকে ঘাড় হয়ে সাদা টান নিচে নেমে গেছে। গলার মাঝামাঝি পর্যন্ত কালো। দেহতল ফিকে। পেটের নিচ থেকে বস্তিপ্রদেশ পর্যন্ত সাদা-কালো অসংখ্য ছিট। চোখের বলয় হলুদাভ, তারা লালচে-বাদামি। ঠোঁট শক্তমজবুত এবং ধারালো, রঙ কমলা-হলুদ। পা মোটাসোটা, বর্ণ সবুজ। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্র্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির ঠোঁটের গোড়ায় রয়েছে ছোট্ট শিঙ এবং কালো চিবুক। স্ত্রী পাখির চিবুক সাদা, ঠোঁটের গোড়ায় শিঙ নেই।

প্রধান খাবার: মাছ, শামুক, ছোট চিড়িং, পোকামাকড় ও ঘাসের কচিডগা। প্রজনন মৌসুম জুলাই থেকে আগস্ট (প্রজনন সময় নিয়ে খানিকটা বিতর্ক রয়েছে)। চিকন কাঠি দিয়ে প্যাড আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৫-৬টি।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 18/09/2015

মন্তব্য করুন: