
আমার অত্যন্ত প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব তিনি। তিনি প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। শত ব্যস্ততার মাঝেও বন্যপ্রাণীদের খোঁজখবর রাখেন প্রতিনিয়ত। প্রিয় পাঠক, তার আন্তরিকতার কারণেই মানবকণ্ঠ পত্রিকায় পাখ-পাখালিদের নিয়ে সিরিজটি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। সেই তিনি নিজেই জানিয়েছেন, পানকৌড়ি এবং ডাহুক পাখিদের নিপীড়ন-নির্যাতনের কথা। কেন শিকারিদের কবলে এরা বেশি পড়ছে তা জানান দিতে এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। ইতিপূর্বে পত্রিকায় ডাহুক এবং ছোট পানকৌড়ি সম্পর্কে লেখা হওয়ার কারণে আজ ‘বড় পানকৌড়ি’ সম্পর্কে আপনাদেরকে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছি।
বিশ্বে মোট ৩৬ প্রজাতির পানকৌড়ি পাখির দেখা মেলে। এশিয়া অঞ্চলে দেখা মেলে ১১ প্রজাতির। তন্মধ্যে বাংলাদেশে কমবেশি চার প্রজাতির পানকৌড়ি নজরে পড়ে। মাঝেমধ্যে দুর্লভ দর্শন বড় পানকৌড়ি হাওর-বাঁওড় বা বিলাঞ্চলে অল্প সংখ্যক দেখা যায়। স্থানীয় প্রজাতির হলেও যত্রতত্র এদের দেখা যায় না। শীতকালে কাপ্তাই হ্রদে কিছু সংখ্যক নজরে পড়ে। এ ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এদের বিস্তৃতি লক্ষণীয়। এরা জলচর, ডুবুরি পাখি। দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। একাকীও দেখা যায়। অনেক সময় বক বা অন্য জলচর পাখিদের সঙ্গেও এরা শিকারে বের হয়।
প্রজনন মৌসুমে বকের সঙ্গে একই গাছে বাসা বাঁধে। দেখতে কালো শ্রীহীন হলেও এরা নিরীহ প্রকৃতির। ঝগড়াঝাটির ধার ধারে না। এরা ডুবসাঁতারে ওস্তাদ। সারাদিন শিকারের খোঁজে ব্যস্ত সময় পার করে। ক্লান্ত হয়ে পড়লে জলাশয়ের ওপরে কঞ্চি অথবা গাছের ডালপালাতে বিশ্রাম নেয়। এ সময় ডানা মেলে রোদে শুকিয়ে নিতে দেখা যায়। রাতের আঁধার নেমে এলে এরা দলবদ্ধ হয়ে আশ্রয় নেয় গাছগাছালিতে। জলচর পাখিদের মধ্যে এ প্রজাতির পাখি শিকারিদের হাতে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়। খোদ রাজধানী শহরেও শিকারিদের এদেরকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এদের মাংস বেশ সুস্বাদু। তার ওপর ওজন প্রায় দেড় কেজির মতো। ফলে ভোজনরসিকরা চড়া দামে কিনতে কৃপণতাবোধ করেন না। এ ছাড়াও ভালো পোষ মানে বিধায় খাঁচায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে এদেরকে।
পাখির বাংলা নাম: ‘বড় পানকৌড়ি’, ইংরেজি নাম: ‘গ্রেট করমোরেন্ট’ (Great cormorant), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘ফালাক্রোকোরাসিদি কার্বো’ (Phalacrocorax carbo), গোত্রের নাম: ‘ফালাক্রোকোরাসিদি।
সর্বসাকল্যে লম্বায় ৮০- ১০০ সেন্টিমিটার। অন্যসব পানকৌড়ির তুলনায় এদের মাথা বড় এবং ঘাড় মোটা। থুতনি, ঠোঁটের পেছন এবং চোখের নিচে সাদা পট্টি। প্রজনন সময়ে ঘাড় ও গলার পাশের পালক সাদাটে দেখায়। পিঠের পালক পালিশ কালোর ওপর মর্মরিত দেখায়। ঊরুতে ডিম্বাকৃতির সাদা ছোপ। পায়ের পাতা হাঁসের পায়ের মতো জোড়া লাগানো। ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই।
প্রধান খাবার: মাছ। এ ছাড়াও ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড় শিকার করে। প্রজনন সময় জুনের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি। জলাশয় সংলগ্ন গাছের ডালে বাসা বাঁধে। শুকনো ডালপালা বাসা বানানোর প্রধান উপকরণ। বাসা অগোছালো, শ্রীছাদ নেই। কলোনি টাইপের বাসা। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফোটে ১৭-১৯ দিনে।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/09/2013