
মূলত এদের বাস পাকিস্তানের পার্বত্য এলাকায় ও হিমালয়ের গিরিচূড়ায়। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে আমাদের দেশে। দেশের প্রায় সব বিভাগেই কম বেশি নজরে পড়ে তখন। দেখা যায় ধানক্ষেতের পাশের গাছে কিংবা বিদ্যুতের তারে বসে থাকতে। আবার পাহাড়ের ঢালেও দেখা যাওয়ার নজির রয়েছে। একাকী অথবা জোড়ায় মিলে উড়তে উড়তে অনেক উপরে উঠে যায়। শূন্যে উঠে হঠাৎ স্থির হয়ে ভাসতে থাকে। ওই অবস্থায়ই শিকারে মনোযোগী হয় এরা। নিচে শিকারের সন্ধান পেলে গোত্তা খেয়ে ভূমিতে নেমে শিকার ধরে গাছের ডালপালায় অথবা পছন্দসই জায়গায় বসে খাবার খেয়ে নেয়।
শিকারি পাখি হলেও এরা খুব বেশি হিংস নয়। রোগাটে চেহারার এ পাখিরা ডাকে ‘কি কি কি টিটি উইই’। এদের পর্যবেক্ষণ করার যথেষ্ট সুযোগ হয়েছে আমার। একবার মুমূর্ষু একটি পাখিকে দুষ্ট ছেলেদের কবল থেকে মুক্ত করে আকাশে ওড়ার সুযোগও করে দিয়েছি। প্রিয় পাঠক, বিপদগ্রস্ত পাখ-পাখালির সাহায্যার্থে আপনারাও এগিয়ে আসবেন কিন্তু। এবং প্রতিহত করবেন শিকারিদের। বন্যপ্রাণীদের বাঁচিয়ে রেখে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে সাহায্য করবেন। তাতে উপকৃত হবে সমগ্র জাতি তথা আপনি আমিও। সুতরাং বন্যপ্রাণীদের প্রতি আমরা একটু সদয় হতে চেষ্টা করি।
এ প্রজাতির পাখির বাংলা নাম: ‘পাতি শিকারি বাজ’, ইংরেজি নাম: ‘কমন কেস্ট্রেল’ (Common Kestrel), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘ফালকো টিনুনকুলাস’ (Falco tinnunculus), গোত্রের নাম: ‘ফালকনিদি’। এরা ‘পাতি কেস্ট্রেল’ নামেও পরিচিত।
লম্বায় ৩৪-৩৬ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও ডানা গাঢ় বাদামি। পিঠের ওপর কালো চিতি। ডানার প্রান্ত কালো। ঠোঁটের গোড়া হলদেটে, ডগা কালো। মধ্যখানটা সিসা-নীল। পা ও পায়ের পাতা হলদেটে কমলা। নখ কালো। স্ত্রী পাখি আকারে একটু বড়। ওদের সমস্ত শরীর হাল্কা বাদামি।
প্রধান খাবার: ব্যাঙ, গিরগিটি, ইঁদুর, ছোট পাখি ও পোকামাকড়। প্রজনন সময় ফেব্র“য়ারি থেকে মার্চ। নিজ বাসভূমি পাকিস্তান ও হিমালয়ের চূড়ার ফাটলে শুকনা ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে। অনেক সময় কাকের পরিত্যক্ত বাসায়ও ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৩-৬টি। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে মিলে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৭-২৯ দিন।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 14/02/2014