পাতি চ্যাগা | Common snipe | Gallinago gallinago

4172
পাতি চ্যাগা | ছবি: ইন্টারনেট

সুলভ দর্শন, পরিযায়ী পাখি। লোনা কিংবা মিঠা উভয় ধরনের জলার ধারে বিচরণ করে। উপকূলীয় অঞ্চল, বিল-ঝিল, হাওর-বাঁওড় কিংবা পাহাড়ি এলাকার ঝর্ণার কিনারেও দেখা যায়। দেখা যায় একাকি কিংবা ছোট-বড় দলে। কাদাময় জলে ঘুরে ঘুরে লম্বা ঠোঁটের সাহায্যে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খাবার সংগ্রহ করে। এদের প্রধান শত্র“ সূর্যের আলো। মোটেই সইতে পারে না আলো। উত্তাপ এড়াতে খুব ভোরে অথবা শেষ বিকেলের দিকে এরা খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লুকিয়ে পড়ে ঘাসবনে, কচুরিপানা অথবা যে কোনো ঝোপের ছায়ায়। এতদস্থানে লুকালে সহজে এদের দেখাও যায় না। পরিবেশের সঙ্গে শরীরটাকে মিশিয়ে ফেলে নিমেষেই। ফলে চট করে কারো নজরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না।

প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখির মনোযোগ আকর্ষণ করতে বেসুরো কণ্ঠে গান শোনায় ‘চিপ-পার, চিপ-পার’। সুর শুনতে কিছুটা ছাগলের ডাকের মতো বিধায় জার্মানদের এরা ‘আকাশ ছাগল’ নামে পরিচিত। তবে ভয় পেলে এ পাখির কণ্ঠস্বর পাল্টে যায়, অনেকটা নাকি সুরে ‘চেঙ্ক-চেঙ্ক’ আওয়াজ করে এঁকে-বেঁকে উড়ে মাটিতে অথবা জলজ উদ্ভিদের ওপরে নামে। ওখান থেকে কিছুটা পথ হেঁটে লুকিয়ে পড়ে নিরাপদ স্থানে। শত্র“ সরে গেলে পূর্বের জায়গায় আশ্রয় নেয়। অতঃপর লুকিয়ে-চুকিয়েই সময় পার করে। এ সময় পিঠের পালকের ভেতর ঠোঁট গুঁজে রেখে দাঁড়িয়ে থাকে বা ঘুমিয়ে কাটায়।

এ প্রজাতির বাংলা নাম: ‘পাতি চ্যাগা’, ইংরেজি নাম: ‘কমন স্নাইপ’ (Common snipe). বৈজ্ঞানিক নাম: ‘গাল্লিনাগো গাল্লিনাগো’ (Gallinago gallinago), গোত্রের নাম: ‘স্কোলোপাসিদি’। এরা ‘কাদাখোঁচা’ নামেও পরিচিত।

এ পাখি লম্বায় ২৫-২৭ সেন্টিমিটার। গায়ের রঙ বাদামির ওপর সাদা-কালো-হলদে ছোপ। দেহতল সাদা। ঠোঁট অস্বাভাবিক লম্বা। ঠোঁটের অগ্রভাগ ঈষৎ বাঁকানো। পা খাটো।

প্রধান খাবার: কাদা বা পলিমাটির নিচের শূককীট এবং ছোট কম্বোজ। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। বাসা বাঁধে উত্তর হিমালয়াঞ্চলে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 07/02/2014

মন্তব্য করুন: