
প্রিয় পাঠক, এরা বিরল পরিযায়ী পাখি। শীতে কালেভদ্রে দেখা মেলে মিঠাজলের জলাশয়ে কিংবা বাদাবন অথবা লতাগুল্মে আচ্ছাদিত জলাভূমিতে। বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায়। হাঁস গোত্রের পাখিদের সঙ্গে বেশ সখ্য রয়েছে। খাবার খোঁজে অগভীর জলে। প্রজনন মৌসুমে সাঁতার কাটতে কাটতে মুরগির মতো আওয়াজ করে। তবে ওড়ার সময় ভিন্নভাবে আওয়াজ করে। এ সময় উচ্চৈঃস্বরে শিস কাটতে শোনা যায়। তৎসঙ্গে শোনা যায়, ডানা ঝাপটানো ভন্ভন্ আওয়াজ। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, চীন, মঙ্গোলিয়া, সাইবেরিয়া, ভিয়েতনাম ও জাপান পর্যন্ত। এরা বিশ্বে প্রায় বিপদগ্রস্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত নয়।
পাখির বাংলা নাম: ‘ফুলুরি হাঁস’, ইংরেজি নাম: ‘ফালক্যাটেড ডাক’, (Falcated Duck), বৈজ্ঞানিক নাম: Anas falcata | এরা ‘শিখাযুক্ত হাঁস’ নামেও পরিচিত।
লম্বায় ৫১ সেন্টিমিটার। ওজন ৬৫০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তফাৎ রয়েছে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রং বদলায়। এ সময় পুরুষ পাখির বর্গাকার মাথা গাঢ় সবুজ দেখায়। প্রজননের বাইরে বাদামি মিশ্রণ। প্রজনন মৌসুমে ডানার পালক লেজের ওপর গিয়ে কাস্তের মতো ঝুলে পড়ে। পিঠ ধূসর। সাদা গলায় সবুজ বেল্ট। বুকে সাদা-কালো অসংখ্য কারুকাজ। বস্তিপ্রদেশ হলুদ-কালো। ঠোঁট কালো। চোখ ঘন বাদামি। পা কালো। স্ত্রী পাখির মাথা ধূসর। শরীরে বাদামি ডোরা। ওড়ার পালক ধূসরাভ ও সাদা। প্রজনন বাইরে পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় কালো। বাদবাকি স্ত্রী পাখির মতোই দেখতে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা স্ত্রী পাখির মতো।
প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ ও জলজ উদ্ভিদের কচি ডগা। প্রজনন মৌসুম মে থেকে অক্টোবর। সাইবেরিয়ার পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্ব চীনের জলাশয়ের কাছাকাছি ভূমিতে শুকনো লতা ও পালক বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৬-১০টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৩-২৫ দিন।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/02/2015