
দেশি প্রজাতির পাখি। দেখতে কবুতরের মতো। আকারে খাটো। তাগড়া শরীর। নজরকাড়া রূপ। স্বভাবে শান্ত। অতীতে দেশে সুলভ দর্শন ছিল। গ্রামের বট-পাকুড় গাছে বেশি দেখা যেত। ফল পাকলে গাছে ঝাঁক বেঁধে নামত। এরা আজীবন বৃক্ষচারী। জলপান ব্যতিরেকে মাটিতে নামে না খুব একটা। বর্তমানে সুন্দরবন ছাড়া লোকালয়ে খুব একটা দেখার নজির নেই। কেওড়া ও হেঁতাল ফল খেয়ে সেখানে দিনাতিপাত করছে। শিকারিদের অত্যাচারে প্যারাবন বনবাসী হয়েছে ওরা। তাছাড়া অবাধে বৃক্ষনিধনও বনবাসী হওয়ার আরেকটি কারণ। প্যারাবনে শিকারিদের উপদ্রব না থাকাতে কিছুটা নিরাপদেই বাস করছে সেখানে কমলাবুক হরিয়াল।
আমাদের দেশে মোট ৬ প্রজাতির হরিয়ালের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিশ্বে মোট ২৩ প্রজাতির হরিয়াল রয়েছে, যা এশিয়া ও আফ্রিকাতে বিস্তৃত।
এ পাখির বাংলা নাম: ‘কমলাবুক হরিয়াল’, ইংরেজি নাম: ‘অরেঞ্জ ব্রেস্টেড্ গ্রিন পিজিয়ন’(Orange-breasted Green Pigeon), বৈজ্ঞানিক নাম: Treron bicinctus| অনেকে হরিকল নামেও ডাকে।
এরা লম্বায় ২৮-৩০ সেন্টিমিটার। কপাল সবুজাভ-হলুদ। মাথার পেছন ও ঘাড় নীলাভ-ধূসর। গলা ও বুকের বেশির ভাগ বেগুনি-কমলার সঙ্গে গোলাপী রঙ মিশ্রিত। স্ত্রী পাখির বর্ণ কিছুটা ম্লান। তবে ডানায় হলুদ পট্টি পুরুষের তুলনায় খানিকটা বেশি অনুভূত হয়। লেজ গাঢ় ধূসর, মাঝের পালক ফিকে ধূসর। লেজের ডগায় সামান্য ধূসর বন্ধনী। ঠোঁট সবুজাভ-ধূসর। পা প্রবাল লাল।
কমলাবুক হরিয়ালদের প্রধান খাবার ছোট বুনোফল। বিশেষ করে বট-পাকুড় ফল এদের প্রিয়। উল্লেখ্য, সব প্রজাতির হরিয়ালদেরই প্রিয় খাবার বট-পাকুড় কিংবা ছোট ফল-ফলাদি। প্রজনন সময় জুন-জুলাই। দেশ ভেদে প্রজনন সময় আলাদা। গাছের উঁচু ডালে সরু কাঠি দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২টি। ডিমের বর্ণ সাদা। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৪ দিন।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 05/07/2013