
দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বিরল দর্শন। চেহারা মোটেও আকর্ষণীয় নয়। কেবল দেখা মেলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ ও আর্দ্র পাতাঝরা বনে। প্রশস্ত পাতার বন এদের বিচরণের ক্ষেত্রে অতি উত্তম স্থান। এ ছাড়াও পাহাড়ের পাদদেশের বন-বনানীতেও বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। পাখিতাত্ত্বিকদের মতে ম্যানগ্রোভ অরণ্যেও এদের বিস্তৃতি রয়েছে। তবে আমার নজরে পড়েনি কখনো। শিকারে বের হয় একাকী, জোড়ায় কিংবা পারিবারিক দলে। দলে সাধারণত ৩-৬টি পাখির বেশি দেখা যায় না। প্রজাতির অন্যদের মতো এরা তরঙ্গাকারে না উড়ে বরং সোজাসুজি ওড়ে। ডাকাডাকি করে উড়তে উড়তেই। এ সময় ভুতুড়ে কণ্ঠে ‘ওয়িক ওয়িক ওয়িক..’ সুরে আওয়াজ করে।
বাংলাদেশ ছাড়াও এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে হিমালয়াঞ্চল, ভারত, ভুটান ও ইন্দোনেশিয়ায়। বিশ্বে বিপন্মুক্ত হলেও বাংলাদেশে বিস্তৃতি সন্তোষজনক নয়। প্রজাতিটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। অবাধে চিরসবুজ অরণ্যের বড় বড় বৃক্ষ নিধনের ফলে এদের অস্তিত্ব হুমকির সন্মুখীন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মরা গাছের অভাবে এদের প্রজননে ভীষণভাবে বিঘ্ন ঘটছে। এমতাবস্থায় একমাত্র অভয়ারণ্যের মাধ্যমে বংশ বিস্তার ঘটিয়ে প্রজাতিটিকে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে ধারণা করছেন দেশের বন্যপ্রাণীবিশারদরা।
পাখির বাংলা নাম: ‘বড় মেটেকুড়ালি বা কাঠঠোকরা’, ইংরেজি নাম: ‘গ্রেট শ্লেটি উডপেকার’ (Great Slaty Woodpecker), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘মুল্লারিপাইকাস পালভেরুলেনটাস’ (Mulleripicus pulverulentus), গোত্রের নাম: ‘পাইকিদি’। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে মোট ২০ প্রজাতির কাঠঠোকরা বা কাঠ কুড়ালির সাক্ষাৎ মেলে।
লম্বায় ৪৮-৫৮ সেন্টিমিটার। ঘাড় ও ঠোঁট অস্বাভাবিক লম্বা। ঘাড়-গলা পালকহীন। প্রাপ্তবয়স্কদের দেহের সমস্ত পালক স্লেট-ধূসর। থুঁতনি ও গলা ফ্যাকাসে হলুদ। ঠোঁট ফ্যাকাসে। চোখ বাদামি থেকে লালচে, চোখের বলয়ের চামড়া স্লেট রঙের। পা ও পায়ের পাতা কালচে স্লেট রঙের সঙ্গে নীলাভ আভার মিশ্রণ। স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির চোখ ও ঘাড়ের মাঝামাঝি গাঢ় লাল পট্টি আছে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের পিঠ অনুজ্জ্বল। পিঠে অসংখ্য ফ্যাকাসে ফুটকি। বাদবাকি স্ত্রী পাখির মতো দেখতে।
প্রধান খাবার: গাছের মরা কাণ্ডের ভেতর লুকিয়ে থাকা পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। মরা গাছের কাণ্ডে নিজেরা গর্ত খুড়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে কত দিন লাগে সে তথ্য জানা যায়নি।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 25/04/2014