সাদা হাঁস | Smew | Mergellus albellus

3907
সাদা হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট

বাংলাদেশে অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি। বলা যায় বিরলতম প্রজাতি। দেশে খুব একটা দেখা যায় না। সর্বপ্রথম ২০০৩ সালে প্রজাতিটি বাংলাদেশে দেখা যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। মূলত রাশিয়া ও তৎসংলগ্ন তুন্দ্রা অঞ্চলের বাসিন্দা ‘সাদা হাঁস’। এ ছাড়াও ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, চীন ও জাপানে বৈশ্বিক বিস্তৃতি লক্ষ্য করা যায়। সমগ্র বিশ্বে ১৯ লাখ বর্গ কিলোমিটারব্যাপী এদের বিস্তৃতি থাকলেও প্রজাতির সংখ্যা তেমন সন্তোষজনক নয়। যার ফলে আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদযুক্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

প্রজাতিটি অন্য সব জলচর পাখিদের মতোই জলাশয়ে বিচরণ করে। তবে বড় ধরনের জলাভূমি এদের বেশি পছন্দ। বিচরণ করে ছোট দলে। দিবাচর পাখি এরা। খাবার খোঁজে ডুবিয়ে ডুবিয়ে। ডুবিয়ে জলের তলা স্পর্শ করে শিকার ধরে। উড়তে পারে দ্রুত। প্রায় শব্দহীনভাবে ওড়ে। প্রজননকালীন সময়ে পুরুষ পাখি উড়তে পারে না। এ সময় ওদের নতুন পালক গজায়। হাঁকডাক খুব একটা দেয় না। মাঝেমধ্যে ব্যাঙের মতো নিচু স্বরে শিস কাটে। স্বভাবে শান্ত।

পাখির বাংলা নাম: ‘সাদা হাঁস’, ইংরেজি নাম: ‘স্মিউ’ (Smew), বৈজ্ঞানিক নাম: Mergellus albellus|

লম্বায় ৩৮-৪৬ সেন্টিমিটার। ওজন প্রায় ৬৮০ গ্রাম। বর্গাকার মাথায় সাদা ঝুলানো ঝুঁটি। ঘাড় কালো। ডানা ও বুকের পাশটা কালচে। এ ছাড়া সমস্ত দেহ ধবধবে সাদা। ঠোঁট আকারে খাটো, অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। উভয়ের লেজ চুঁচালো। প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী-পুরুষ পাখির তফাৎ লক্ষ্য করা যায়। এ সময় পুরুষ পাখির ঠোঁটের গোড়া ও চোখের পাশ কালো রঙ ধারণ করে। বুকের পাশ এবং লেজ ধূসর দেখায়। চোখ লালচে এবং পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে দেখায়। স্ত্রী পাখির মাথায় লালচে-বাদামি টুপি এবং ঘাড় ও ঝুঁটি ধূসর বাদামি দেখায়। পা ও পায়ের পাতা সবুজ। প্রজননের বাইরে স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই।

প্রধান খাবার: ছোট চিংড়ি, শামুক, কেঁচো, ব্যাঙ ও জলজকীট। মাছ তেমন একটা খায় না। তবে শীত ও বসন্তের শুরুতে মাছ শিকার করে। প্রজনন সময় এপ্রিল-মে। সাইবেরিয়া অঞ্চলের গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৭-৯টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৬-২৮ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 16/05/2014

মন্তব্য করুন: