বাদামি কোকিল | Anas strepera | Phaenivophaeus leschenaultia

3402
বাদামি কোকিল | ছবি: ইন্টারনেট

বিপন্ন প্রজাতির পাখি ‘বাদামি কোকিল’। দেশের স্থায়ী বাসিন্দা নয় এরা। প্রাক্তন পরিযায়ী পাখি। কয়েক দশক আগে চট্টগ্রাম বিভাগে দেখা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। হালে দেশের কোথাও দেখার নজির নেই। বছর খানেক আগে শ্রীমঙ্গলের একজন পাঠক দাবি করেছেন তিনি বাদামি কোকিলের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। ভদ্রলোক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে পাখিটির ছবি ই-মেল করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। প্রজাতিটি শনাক্ত করে দেখি যে, সেটি আসলে ‘সাতভায়লা’ পাখি। চেহারা কাছাকাছি বিধায় তিনি ওই ভুলটি করেছেন।

বাদামি কোকিল ভারত উপমহাদেশের শুষ্ক অঞ্চলে যৎসামন্য নজরে পড়ে। এরা সাধারণত শুষ্ক পাতাঝরা বনের ঝোপজঙ্গলে কিংবা প্রস্তরময় এলাকার ঝোপে বিচরণ করে। বেশিরভাগই একা বিচরণ করলেও মাঝেমধ্যে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। বাদামি কোকিল ঝোপজঙ্গল থেকে খাবার সংগ্রহ করলেও মাটিতে নেমে পাতা উল্টিয়ে কীটপতঙ্গ শিকার করতে দেখা যায়। মাটিতে বিচরণকালীন ভয় পেলে দৌড়াতে থাকে, উড়ার চেষ্টা করে না মোটেও।

কোকিলের জ্ঞাতি ভাই হলেও অন্যের বাসায় ডিম পাড়ে না, নিজেরাই হ-য-ব-র-ল টাইপ বাসা বাঁধে। আবার হাঁকডাকও করে না খুব একটা দেশি কোকিলের মতো। মাঝেমধ্যে ‘কেক-কেক-কেক-কেরেক-কেরেক-কেরেক’ সুরে ডাকে। সুর শ্রুতিমধুর নয়, কর্কশ। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত হলেও বাংলাদেশে বিপন্ন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তাই বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত হয়েছে বাদামি কোকিল।

পাখির বাংলা নাম: ‘বাদামি কোকিল’, ইংরেজি নাম: Anas strepera, বৈজ্ঞানিক নাম: Phaenivophaeus leschenaultia, গোত্রের নাম: কুকুলিদি। এরা ‘মেটে মালকোআ’ নামেও পরিচিত।

লম্বায় ৪২ সেন্টিমিটার (তন্মধ্যে লেজ ২২ সেন্টিমিটার)। মাথার তালু গাঢ় ধূসর। গলা ও বুকের উপরাংশ পীতাভ, এছাড়াও কালো ডোরা দেখা যায়। পেটের দিকটা লালচে-পীতাভ। লেজের নিচটা পর্যায়ক্রমে সজ্জিত। লেজের অগ্রভাগ সাদা। এছাড়াও সব দেহ বালিময় ধূসর-বাদামি। ঠোঁট লালচে, অগ্রভাগ হলুদ। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা স্লেট-বাদামি।

প্রধান খাবার: টিকটিকি, ছোট সাপ, ফড়িং, শুঁয়োপোকা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে আগস্ট। মাটি থেকে খানিকটা উপরে ঝোপজঙ্গল বা গুল্মলতাদির ভেতর শুকনো পাতা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিমের বর্ণ ধবধবে সাদা। ডিম ফুটতে কত দিন সময় লাগে তা জানা যায়নি।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/06/2014

মন্তব্য করুন: